Recent Post
Loading...

 শিখনফল-


  • অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন কাকে বলে বলতে পারবে।
  • অ্যালকিন কাকে বলে বলতে পারবে।
  • অ্যালকিনের পরীক্ষাগার প্রস্তুতি লিখতে পারবে।
  • অ্যালকিনের শিল্পোৎপাদন বিক্রিয়া লিখতে পারবে।
  • অ্যালকিনের অন্যান্য প্রস্তুতির বিক্রিয়া লিখতে পারবে।
  • বিভিন্ন বিকারকের সাথে অ্যালকিনের সংযোজন বিক্রিয়া লিখতে পারবে।
  • বিভিন্ন বিকারকের সাথে অ্যালকিনের সংযোজন বিক্রিয়া লিখতে পারবে।
  • সংযোজন বিক্রিয়ায় মারকনিকভ নিয়ম ব্যাখ্যা ও প্রধান উৎপাদ নির্ণয় করতে পারবে।
  • সংযোজন বিক্রিয়ায় বিপরীত মারকনিকভ নিয়ম ব্যাখ্যা ও প্রধান উৎপাদ নির্ণয় করতে পারবে।
  • অ্যালকিনের ওজোনীকরণ ও জারন বিক্রিয়া লিখতে পারবে।
  • অ্যালকিনে দ্বিবন্ধনের উপস্থিতি নির্ণয় তথা অসম্পৃক্ততার পরীক্ষার বিক্রিয়া লিখতে পারবে।
  • অ্যালকিনে দ্বিবন্ধনের অবস্থান নির্ণয়ের বিক্রিয়া লিখতে পারবে।


হাইড্রোকার্বনের মুক্ত কার্বন শিকলে কমপক্ষে একটি কার্বন-কার্বন দ্বিবন্ধন অথবা ত্রিবন্ধন থাকলে তাদেরকে অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন বলে।

আর অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন দু শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। (ক) অ্যালকিন ও (খ) অ্যালকাইন।

কার্বন শিকলে কমপক্ষে একটি কার্বন-কার্বন দ্বিবন্ধন থাকলে তাদেরকে অ্যালকিন এবং ত্রিবন্ধন থাকলে তাদের অ্যালকাইন বলে।

তাহলে, যে সব হাইড্রোকার্বনের মুক্ত কার্বন শিকলে একটি মাত্র কার্বন-কার্বন দ্বিবন্ধন থাকে তাদেরকে অ্যালকিন বলে। অ্যালকিনের সাধারণ সংকেত CnH2n। যেমন: ইথিন (C2H4), ২-বিউটিন (CH3-CH=CH-CH3ইত্যাদি।

অ্যালকিনের প্রস্তুতি:

পরীক্ষাগারে-

ইথানল ও দ্বিগুন পরিমান গাঢ় H2SO4 এর মিশ্রণকে 160-1700তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা হলে প্রথমে 1000তাপমাত্রায় ইথাইল হাইড্রোজেন সালফেট ও পানি এবং পরে 160-1700তাপমাত্রায় ইথাইল হাইড্রোজেন সালফেট বিযোজিত হয়ে ইথিন গ্যাস ও H2SO4 উৎপন্ন করে। এ বিক্রিয়ায় গাঢ় H2SOনিরুদক হিসেবে ক্রিয়া করে।


শিল্পক্ষেত্রে-


প্রায় 350-4000তাপমাত্রায় উত্তপ্ত অ্যালুমিনা (Al2O3বা থোরিয়া (ThO2পাউডারের উপর দিয়ে অ্যালকোহলের বাষ্পকে চালনা করলে অ্যালকোহল থেকে এক অনু অপসারিত হয়ে অ্যালকিন উৎপন্ন করা হয়।



এছাড়া, উত্তপ্ত ক্রোমিয়াম অক্সাইডের উপর দিয়ে পেট্রোল বাষ্প (অ্যালকেন) চালনা করলে অ্যালিকন উৎপন্ন হয়।


অ্যালকিনের আরও কিছু প্রস্তুতি-


ক. অ্যালকোহলের নিরুদন: বিভিন্ন নিরুদক (গাঢ় H2SO, Al2O3, H3PO প্রভৃতি) দ্বারা অ্যালকোহলকে নিরুদিত করলে অ্যালকিন পাওয়া যায়


অধিকতর বিশুদ্ধ ইথিন প্রস্তুতির জন্য গাঢ় H2SO4 এর পরিবর্তে গাঢ় H3PO4 ব্যবহার করা হয়-


খ. অ্যালকাইন থেকে: Pd এবং BaSO4 এর উপস্থিতিতে H2 দ্বারা ইথাইন কে বিজারিত করলে ইথিন উৎপন্ন হয়।

(উৎপন্ন ইথিন যাতে পুনরায় বিজারিত হয়ে ইথেনে পরিণত হতে না পারে তাই ইথানের বিজারণ নিয়ন্ত্রন করার জন্য BaSO4 যুক্ত Pd প্রভাবক ব্যবহার করা হয়।)

গ. অ্যালকাইল হ্যালাইড থেকে হাইড্রোজেন হ্যালাইড অপসারণ: অ্যালকাইল হ্যালাইডকে অ্যালকোহলীয় কস্টিক সোডা (NaOH) বা কস্টিক পটাশ (KOH) দ্বারা উত্তপ্ত করা হলে যৌগ থেকে HX এর অপসারণ ঘটে এবং অ্যালকিন উৎপন্ন হয়।

ঘ. সন্নিহিত ডাই-হ্যালাইডের হ্যালোজেন অপসারণ: সন্নিহিত ডাই-হ্যালাইডকে জিংক চূর্ণসহ উত্তপ্ত করা হলে যৌগ থেকে হ্যালোজেন অপসারিত হয়ে অ্যালকিন উৎপন্ন হয়।


অ্যালকিনের বিক্রিয়া-

অ্যালকিনে অস্থায়ী দ্বিবন্ধন থাকায় এরা অত্যন্ত সক্রিয়। অ্যালকিনের বিক্রিয়া সমূহ দ্বিবন্ধনে ঘটে থাকে। এরা সংযোজন, জারন, ওজোনীকরণ, পলিমারকরণ ইত্যাদি বিক্রিয়া দেয়।


অ্যালকিনের সংযোজন বিক্রিয়া-
হাইড্রোজেন (H2), হ্যালোজেন (X2), হাইড্রোজেন হ্যালাইড (HX), হাইপো হ্যালাস এসিড (HOX), সালফিউরিক এসিড (H2SO4), ওজোন (O3) প্রভৃতি বিকারক অ্যালকিনের কার্বন-কার্বন দ্বিবন্ধনের সঙ্গে যুত বিক্রিয়ার মাধ্যমে যুত যৌগ উৎপন্ন করে। যেমন:

অ্যালকিনের সংযোজন বিক্রিয়া মূলত ইলেকট্রোফিলিক সংযোজন বিক্রিয়া। অ্যালকিনের কার্বন-কার্বন দ্বিবন্ধনে সঞ্চারণশীল পাই (π) ইলেকট্রনের মেঘ সহজেই ধনাত্মক ইলেকট্রন আকর্ষী বিকারক তথা ইলেকট্রোফাইল (E+দ্বারা আক্রান্ত হয়। ইলেকট্রন আকর্ষী বিকারকের আকর্ষনে π-ইলেকট্রন মেঘমালা আক্রান্ত কার্বন পরমাণুতে স্থানান্তরিত হয়। এবং এই ইলেকট্রন দ্বারা কার্বন পরমাণুটির সঙ্গে ইলেকট্রন আকর্ষী বিকারক (E+যুক্ত হয়। π-ইলেকট্রন একটি কার্বন পরমাণুতে স্থানান্তরিত হওয়ায় অপর কার্বন পরমাণুটি ধনাত্মক চার্জযুক্ত হয়। ফলে ক্ষণস্থায়ী কার্বোনিয়াম আয়ন (C+সৃষ্টি হয় যা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বিকারক অনুর ঋণাত্মক (Nu-) অংশের সাথে যুক্ত হয়ে যুত যৌগ গঠন করে।


H2 সংযোজন: Pt, Pd বা Ni প্রভাবকের উপস্থিতিতে অ্যালকিনের সঙ্গে হাইড্রোজেন যুক্ত হয়ে অ্যালকেন উৎপন্ন হয়।

Hসংযোজন কৌশল মূলত প্রভাবকীয় সংযোজন। প্রথমে Ni ধাতুর উপর H2 অধিশোষিত হয়। Ni ধাতুর পৃষ্ঠতলের পরমাণুসমূহ অধিশোষিত পরমাণুর সাথে বন্ধন তৈরী করে। পরবর্তীতে পরমাণুর সাথে ইথিন অন্তরবর্তী জটিল যৌগ গঠন করে সবশেষে উৎপাদ তৈরী করে।


HX সংযোজন হাইড্রোজেন হ্যালাইডের এর সঙ্গে অ্যালকিনের যুত বিক্রিয়ায় অ্যালকাইল হ্যালাইড উৎপন্ন হয়।

HX সংযোজন কৌশল:

১ম ধাপ: অ্যালকিনের সঞ্চারণশীল π-ইলেকট্রন HX-এর প্রোটন এর সাথে বন্ধনের মাধ্যমে ক্ষনস্থায়ী কার্বোনিয়াম আয়ন ও হ্যালাইড আয়ন উৎপন্ন করে। এই ধাপটি ধীর গতির।

২য় ধাপ: প্রথম ধাপে উৎপন্ন কার্বোনিয়াম আয়ন অত্যন্ত দ্রুত গতিতে নিকটস্থ হ্যালাইড আয়নের সাথে যুক্ত হয়ে অ্যালকাইল হ্যালাইড উৎপন্ন করে।

X2 সংযোজন: সাধারণ তাপমাত্রায় হ্যালোজেন অ্যালকিনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে সন্নিহিত ডাই-হ্যালাইড উৎপন্ন করে।

Br2 সংযোজন কৌশল:

HOX সংযোজন: হাইপোহ্যালাস এসিড অ্যালকিনের সাথে বিক্রিয়া করে হ্যালোহাইড্রিন উৎপন্ন করে।

HOCl সংযোজন কৌশল:

H2SO4 সংযোজন: কক্ষ তাপমাত্রায় অ্যালকিনের সাথে গাঢ় H2SO4 –এর বিক্রিয়ায় অ্যালকাইল হাইড্রোজেন সালফেট উৎপন্ন করে, যা আর্দ্র বিশ্লেষিত হয়ে অ্যালকোহল উৎপন্ন হয়। এ বিক্রিয়ার সাহায্যে অ্যালকিন থেকে অধিক পরিমাণে অ্যালকোহল প্রস্তুত করা যায়।

ওজোন সংযোজন বা ওজোনীকরণ: ক্লোরোফরম (CHCl3বা কার্বন টেট্রাক্লোরাইড (CCl4এ দ্রবীভূত অ্যালকিনের শীতল দ্রবণে ওজোন গ্যাস চালনা করলে দ্বিবন্ধনে এক অণু ওজোন যুক্ত হয়ে ওজোনাইড নামক যুত যৌগ উৎপন্ন করে। উৎপন্ন ওজোনাইড যৌগকে আর্দ্র বিশ্লেষণ করা হলে অ্যালকিনের গঠন ও দ্বিবন্ধনের অবস্থান অনুযায়ী অ্যালডিহাইড বা কিটোন ও H2O2 উৎপন্ন হয়। তাই এই বিক্রিয়ার মাধ্যমে দ্বিবন্ধনের অবস্থান নির্ণয় করা যায়। উৎপন্ন H2O2 এর উপস্থিতিতে অ্যালডিহাইড পুনরায় বিজারিত হয়ে কার্বক্সিলিক এসিডে পরিণত হওয়া রোধ করার জন্য Zn গুড়া যোগ করা হয়।


জৈব যৌগের সংযোজন বিক্রিয়ার মারকনিকভ নিয়ম:

অপ্রতিসম অসম্পৃক্ত জৈব যৌগের সাথে অপ্রতিসম অসম্পৃক্ত বিকারকের সংযোজন বিক্রিয়ায় বিকারক অণুর ঋণাত্মক অংশ সাধারণত কম সংখ্যক হাইড্রোজেন পরমাণু বিশিষ্ট অসম্পৃক্ত কার্বন (π-বন্ধনযুক্ত কার্বন) পরমাণুতে যুক্ত হয়। এটি মারকনিকভ নিয়ম নামে পরিচিত।
      যেমন অপ্রতিসম অসম্পৃক্ত জৈব যৌগ প্রোপিনের (CH3-CH=CH2সাথে অপ্রতিসম বিকারক হাইড্রোজেন হ্যালাইড ( যেমন: HBr) -এর বিক্রিয়ায় ঋণাত্মক হ্যালাইড আয়ন কম সংখ্যক হাইড্রোজেন পরমাণু বিশিষ্ট অসম্পৃক্ত কার্বনে যুক্ত হয়। তাই মারকনিকভ নিয়ম অনুসারে প্রোপিনের সাথে HBr –এর সংযোজন বিক্রিয়ায় ২-ব্রোমোপ্রোপেন প্রধান উৎপাদ পাওয়া যাবে।

উপরের উদাহরণে ২-নং অসম্পৃক্ত কার্বনে কম সংখ্যক (১-টি) হাইড্রোজেন পরমাণু আছে। তাই বিকারক অনুর ঋণাত্মক অংশ এই কার্বন (২-নং কার্বন) পরমাণুটির সাথে যুক্ত হয়ে প্রধান উৎপাদ ২-ব্রোমোপ্রোপেন উৎপন্ন করেছে।
      এর কারণ হচ্ছে বিক্রিয়াটি ইলেকট্রোফিলিক সংযোজন কৌশল অনুসারে ঘটে। ফলে এতে ১ ও ২ কার্বোনিয়াম আয়ন উৎপন্ন হয়। আর আমরা জানি ২ কার্বোনিয়াম আয়ন ১ কার্বোনিয়াম আয়নের চেয়ে অধিক সুস্থিত। তাই ২-ব্রোমোপ্রোপেন অধিক পরিমাণে উৎপন্ন হয়।

বিপরীত মারকনিক্ভ নিয়ম:

            স্বল্প পরিমাণ জৈব পারঅক্সাইড এর উপস্থিতিতে অপ্রতিসম অসম্পৃক্ত জৈব যৌগের সাথে অপ্রতিসম অসম্পৃক্ত বিকারকের সংযোজন বিক্রিয়ায় বিকারক অণুর ঋণাত্মক অংশ সাধারণত অধিক সংখ্যক হাইড্রোজেন পরমাণু বিশিষ্ট অসম্পৃক্ত কার্বন (π-বন্ধনযুক্ত কার্বন) পরমাণুতে যুক্ত হয়। একে খারাশের পার-অক্সাইড প্রভাব বা বিপরীত মারকনিকভ নিয়ম বলে।
যেমন জৈব পারঅক্সাইডের উপস্থিতিতে প্রোপিনের সাথে HBr -এর বিক্রিয়ায় 99.1% ১- ব্রোমোপ্রোপোন ও 0.9% ২- ব্রোমোপ্রোপেন উৎপন্ন হয়।

উপরের উদাহরণে ৩-নং অসম্পৃক্ত কার্বনে অধিক সংখ্যক (২-টি) হাইড্রোজেন পরমাণু আছে। তাই পারঅক্সাইড (RO-OR) -এর উপস্থিতিতে বিকারক অনুর ঋণাত্মক অংশ এই কার্বন (৩-নং কার্বন) পরমাণুটির সাথে যুক্ত হয়ে প্রধান উৎপাদ ১-ব্রোমোপ্রোপেন উৎপন্ন করেছে।

এর কারণ হচ্ছে, জৈব পার-অক্সাইডের উপস্থিতিতে প্রোপিনে HBr সংযোজন মূলত ফ্রী- রেডিকেল মেকানিজম অনুসারে ঘটে। নিম্নে পার-অক্সাইড প্রভাবের ক্রিয়া কৌশল দেখানো হল-

১ম ধাপ: এ ধাপে জৈব-পারঅক্সাইডের উপস্থিতিতে ব্রোমিন ফ্রী- রেডিকেল উৎপন্ন হয়।
২য় ধাপ: উৎপন্ন ব্রোমিন ফ্রী- রেডিকেল প্রোপিনকে আক্রমন করে অধিকতর স্থায়ী ২ ব্রোমো অ্যালকাইল ফ্রী- রেডিকেল উৎপন্ন করে।

৩য় ধাপ: এই  ব্রোমো অ্যালকাইল ফ্রী- রেডিকেল HBr এর সাথে বিক্রিয়ায় বিপরীত মারকনিকভ উৎপাদ ও Br  উৎপন্ন করে যা আবার প্রোপিনের সাথে বিক্রিয়া করে।


অ্যালকিনের জারন বিক্রিয়া:

অ্যালকিন ও ক্ষারীয় শীতল লঘু KMnOএর জলীয় দ্রবণ এর জারণ বিক্রিয়ায় দ্বিবন্ধন এ দুটি -OH মূলক যুক্ত হয়ে গ্লাইকল উৎপন্ন করে। এ বিক্রিয়ার ফলে KMnOগোলাপী বর্ণ দূরীভুত হয় বলে এ বিক্রিয়া দ্বারা অ্যালকিন শনাক্তকরণ তথা  দ্বিবন্ধনের উপস্থিতি নির্ণয় তথা জৈব যৌগের অসম্পৃক্ততা নির্নয় করা যায়।

জৈব যৌগের অসম্পৃক্ততা নির্ণয়:

ব্রোমিন পানি পরীক্ষা (Br2 সংযোজন):
অ্যালকিনের সাথে ও Br2 এর সংযোজন বিক্রিয়ায় সন্নিহিত ডাই-হ্যালাইড উৎপন্ন হয়। যেমন: ইথিন (CH2=CH2ও Br2 এর বিক্রিয়ায় ১,২-ডাইব্রোমো ইথেন উৎপন্ন হয়।

           অ্যালকেন এ বিক্রিয়া দেয় না। এ বিক্রিয়ায় ব্রোমিনের লাল বর্ণের জলীয় দ্রবন দূরীভুত হয় বলে এ বিক্রিয়ার সাহায্যে জৈব যৌগে দ্বিবন্ধনের উপস্থিতি  নির্ণয় করা বা অসম্পৃক্ততার পরীক্ষা করা যায়।

অ্যালকিনের জারণ:
অ্যালকিন ও লঘু ক্ষারীয় KMnO4 এর বিক্রিয়ায় সন্নিহিত ডাই-অল উৎপন্ন হয়। যেমন: যেমন: ইথিন (CH2=CH2ও  ক্ষারীয় KMnO4 এর বিক্রিয়ায় ইথেন ১,২-ডাইঅল বা ইথিলিন গ্লাইকল উৎপন্ন হয়।

অ্যালকেন এ বিক্রিয়া দেয় না। এ বিক্রিয়ায় KMnO4 এর গোলাপী বর্ণ দূরীভুত হয় বলে এ বিক্রিয়ার সাহায্যে জৈব যৌগে দ্বিবন্ধনের উপস্থিতি  নির্ণয় করা বা অসম্পৃক্ততার পরীক্ষা করা যায়।

জৈব যৌগে দ্বিবন্ধনের অবস্থান নির্ণয়:

ক্লোরোফরম (CHCl3বা কার্বন টেট্রাক্লোরাইড (CCl4এ দ্রবীভূত অ্যালকিনের শীতল দ্রবণে ওজোন গ্যাস চালনা করলে দ্বিবন্ধনে এক অণু ওজোন যুক্ত হয়ে ওজোনাইড নামক যুত যৌগ উৎপন্ন করে। উৎপন্ন ওজোনাইড যৌগকে আর্দ্র বিশ্লেষণ করা হলে অ্যালকিনের গঠন ও দ্বিবন্ধনের অবস্থান অনুযায়ী অ্যালডিহাইড বা কিটোন ও H2O2 উৎপন্ন হয়। তাই এই বিক্রিয়ার মাধ্যমে দ্বিবন্ধনের অবস্থান নির্ণয় করা যায়। উৎপন্ন H2O2 এর উপস্থিতিতে অ্যালডিহাইড পুনরায় বিজারিত হয়ে কার্বক্সিলিক এসিডে পরিণত হওয়া রোধ করার জন্য Zn গুড়া যোগ করা হয়।


 শিখনফল: 

  • সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন কাকে বলে বলতে পারবে।
  • অ্যালকেন কাকে বলে বলতে পারবে।
  • পরীক্ষাগারে অ্যালকেন প্রস্তুতির বিক্রিয়া লিখতে পারবে।
  • শিল্পক্ষেত্রে অ্যালকেন প্রস্তুতির বিক্রিয়া লিখতে পারবে।
  • অ্যালকেনের অন্যান্য প্রস্তুতির বিক্রিয়া লিখতে পারবে।
  • অ্যালকেনের হ্যালোজিনেশন, নাইট্রেশন, তাপীয় বিয়োজন ইত্যাদি বিক্রিয়া লিখতে পারবে।
  • অ্যালকেনের হ্যালোজিনেশন বিক্রিয়ার কৌশল লিখতে পারবে।


প্রথমেই আমরা দেখি সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন বা অ্যালকেন কী-

শুধুমাত্র কার্বন ও হাইড্রোজেন দ্বারা গঠিত যৌগের কার্বন শিকলে কেবল সিগমা (σবন্ধন অর্থাৎ কার্বন-কার্বন একক বন্ধন থাকলে তাদের সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন বা অ্যালকেন বলে। এদের সাধারণ সংকেত হল CnH2n+2। যেমন: মিথেন (CH4), বিউটেন (CH3-CH2-CH2-CH3ইত্যাদি। এদের কার্বন শিকল সম্পৃক্ত থাকায় এরা রাসায়নিকভাবে কম সক্রিয় তাই এদেরকে প্যারাফিন (‘parum অর্থ a little বা স্বল্প এবং affinis অর্থ affinity বা আসক্তি’) বলা হয়।

অ্যালকেনের প্রস্তুতি:

পরীক্ষাগারে-
সাধারণত কার্বোক্সিলিক এসিডের সোডিয়াম লবণের সাথে সোডালাইমের (NaOH+CaO) মিশ্রণকে তীব্রভাবে উত্তপ্ত করে অ্যলকেন প্রস্তুত করা হয়।




তাহলে পরীক্ষাগারে মিথেন ও ইথেন প্রস্তুতির বিক্রিয়া হবে-



শিল্পক্ষেত্রে-
(i)  কার্বন মনোক্সাইড ও হাইড্রোজেন এর মিশ্রণকে 3000তাপমাত্রায় উত্তপ্ত নিকেল চূর্ণের উপর দিয়ে চালনা করে মিথেন উৎপন্ন করা হয়-



(ii) কার্বন মনোক্সাইড ও স্টীমের মিশ্রণকে 2500-2700তাপমাত্রায় নিকেল কার্বনেট প্রভাবকের ওপর দিয়ে চালনা করে মিথেনের শিল্পোৎপাদন করা হয়।




অ্যালকেন প্রস্তুতির আরও কিছু বিক্রিয়া-

ক. অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বনে H2 সংযোজন




খ. উর্টজ বিক্রিয়া: শুষ্ক ইথারে দ্রবীভূত অ্যালকাইল হ্যালাইডের সাথে ধাতব সোডিয়ামের বিক্রিয়ায় অ্যালকেন উৎপন্ন হয়। এ বিক্রিয়াকে উর্টজ বিক্রিয়া বলে।




এই বিক্রিয়ার সাহায্য নিম্ন কার্বন বিশিষ্ট অ্যালকাইল হ্যালাইড থেকে উচ্চতর (মূল অ্যালকাইল হ্যালাইডের কার্বনের দ্বিগুন কার্বন বিশিষ্ট) অ্যালকেন প্রস্তুত করা যায়। যেমন ইথাইল আয়োডাইড থেকে বিউটেন প্রস্তুত করা যায়-



একক অ্যলকাইল হ্যলাইডের দুটি অণুর পরিবর্তে উর্টজ বিক্রিয়ায় যদি একাধিক অ্যালকাইল হ্যালাইডের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয় তবে উচ্চতর অ্যালকেনের মিশ্রণ পাওয়া যায়। এভাবে উর্টজ বিক্রিয়ার মাধ্যমে বিজোড় সংখ্যক কার্বনের অ্যালকেন ( যেমন: প্রোপেন) প্রস্তুত করা সম্ভব হয়-





গ. অ্যালকাইল হ্যালাইডের বিজারণ: Na-C2H5OH অথবা Zn-HCl এর মিশ্রণ হতে উৎপন্ন জায়মান হাইড্রোজেন [H+] দ্বারা অ্যালকাইল হ্যালাইডকে বিজারণ করলে অ্যালকেন উৎপন্ন হয়।



ঘ. কার্বোক্সিলিক এসিডের লবণের ডিকার্বোক্সিলেশন দ্বারা: কার্বোক্সিলিক এসিডের সোডিয়াম লবণের সাথে সোডালাইমের (NaOH+CaO) মিশ্রণকে তীব্রভাবে উত্তপ্ত করলে অ্যলকেন পাওয়া যায়।



ঙ. গ্রিগনার্ড বিকারক থেকে: গ্রিগনার্ড বিকারক (অ্যালকাইল ম্যাগনেসিয়াম হ্যালাইডকে গ্রিগনার্ড বিকারক বলে) ও পানির বিক্রিয়ায় অ্যালকেন পাওয়া যায়।



চ. কোব সংশ্লেষণ: কার্বোক্সিলিক এসিডের সোডিয়াম লবণের গাঢ় জলীয় দ্রবণকে তড়িৎ বিশ্লেষণ করলে অ্যানোডে উচ্চতর অ্যালকেন উৎপন্ন হয়।



অ্যালকেনের বিক্রিয়া-

সুদৃঢ় একক সিগমা (σবন্ধনের কারণে অ্যালকেনকে প্যারাফিন বলা হয়। প্যারাফিন অর্থ রাসায়নিকভাবে আসক্তিহীন। তবে কিছু বিশেষ শর্তে অ্যালকেন নিম্নোক্ত বিক্রিয়া দেয়-

অ্যালকেনের হ্যালোজেনেশন-
মৃদু সূর্যালোক বা অতিবেগুনি রশ্মির উপস্থিতিতে বা উচ্চ তাপমাত্রায় অ্যালকেনের হাইড্রোজেন পরমানু হ্যালোজেন (Cl2Br2দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। যেমন, সূর্যালোকের উপস্থিতিতে CH4 ও Cl2 এর বিক্রিয়ায় মিথেনের চারটি পরমাণু একে একে Cl পরমাণু দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে যথাক্রমে মিথাইল ক্লোরাইড (CH3Cl), মিথিলিন ক্লোরাইড (CH2Cl2), ক্লোরোফরম (CHCl3), ও কার্বন টেট্রাক্লোরাইড (CCl4) উৎপন্ন হয়।



(I2 হ্যালোজেন প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া দেয় না। 30>20>10 H পরমাণুতে প্রতিস্থাপন ঘটে)

হ্যালোজিনেশন বা ক্লোরিনেশেনের বিক্রিয়া কৌশল-

অ্যালকেনের হ্যালোজিনেশন বিক্রিয়া মৃদু সূর্যালোক, তাপ অথবা অতিবেগুণী রশ্মির (396Kjmol-1) প্রভাবে মুক্ত মূলক বিক্রিয়া কৌশল অর্থাৎ ফ্রী-রেডিক্যাল মেকানিজম অনুসারে ৩ ধাপে ঘটে-

সূচনা স্তর (১ম ধাপ): এ স্তরে আলো বা তাপশক্তির প্রভাবে ক্লোরিন (Cl2) অণুর সুষম ভাঙনে ক্লোরিন ফ্রি-রেডিক্যাল (.Cl) উৎপন্ন হয়।




বিস্তারণ স্তর (২য় ধাপ): উৎপন্ন ক্লোরিন ফ্রি-রেডিক্যাল অ্যালকেনের C-H বন্ধনকে আক্রমন করে HCl ও অ্যালকাইল (.R) ফ্রি-রেডিক্যাল উৎপন্ন করে। এ সক্রিয় অ্যালকাইল (.R) ফ্রি-রেডিক্যাল অপর একটি ক্লোরিন (Cl2) অণুর সঙ্গে বিক্রিয়ায় অ্যালকাইল ক্লোরাইড (RCl) ও নতুন ক্লোরিন ফ্রি-রেডিক্যাল (.Cl) উৎপন্ন করে। এ ধাপ বিক্রিয়ার পুনারাবৃত্তি ঘটতে থাকে। তাই এ ধরণের বিক্রিয়াকে চেইন বিক্রিয়া বলে।




সমাপ্তি স্তর (৩য় ধাপ): বিভিন্ন ফ্রি-রেডিক্যাল যুক্ত হয়ে বিক্রিয়া শেষ হয়।




ফ্রী-রেডিক্যালের স্থায়ীত্ব ও বিক্রিয়ার ক্রম-

ফ্রী-রেডিক্যালের স্থায়ীত্বের ক্রম 30>20>10  -এর কারণ-

সমযোজী সিগমা বন্ধনের সুষম ভাঙনের ফলে উৎপন্ন বিজোড় ইলেকট্রনযুক্ত পরমাণু বা মূলককে মুক্ত মূলক বা ফ্রি-রেডিক্যাল বলে। যেমন: মিথাইল ফ্রি-রেডিক্যাল CH3 , ক্লোরিন ফ্রি-রেডিক্যাল Cl ইত্যাদি। উৎপন্ন ফ্রী-রেডিক্যালে ইলেকট্রনের ঘাটতি থাকে।

ইলেকট্রনের ঘাটতিযুক্ত অ্যালকাইল ফ্রী-রেডিক্যালের কার্বন পরমাণুতে যদি ইলেকট্রন বিকর্ষী মূলক যেমন মিথাইল (CH3-), ইথাইল (C2H5-) ইত্যাদি যুক্ত থাকে তবে সেটি ইলেকট্রনের ঘাটতিযুক্ত অ্যালকাইল ফ্রী-রেডিক্যালের কার্বন এর চারপাশে ইলেকট্রন এর ঘনত্ব বৃদ্ধি করে তাই ফ্রী-রেডিক্যালের এর কার্বন পরমাণুতে যত বেশি সংখ্যক অ্যালকাইল মূলক যুক্ত থাকে সেটি তত বেশী স্থায়ী হয় তাই ফ্রী-রেডিক্যালের স্থায়ীত্বের ক্রম 30>20>10 
আর যে ফ্রী-রেডিক্যাল যত বেশী স্থায়ী সেটি তত বেশী সক্রিয় অর্থাৎ সেটি বেশী উৎপন্ন হবে। আর যেহেতু ফ্রী-রেডিক্যালের স্থায়ীত্বের ক্রম 30>20>10 এবং আমরা জানি, অ্যলকেনের হাইড্রোজেন পরমাণুর প্রতিস্থাপন মূলত ফ্রী-রেডিক্যাল মেকানিজম অনুসারে ঘটে থাকে তাই হাইড্রোজেন পরমাণুর প্রতিস্থাপনও এই ক্রমে 30>20>10 কার্বনে ঘটবে।

ব্যাখ্যা কর-প্রোপেনের ব্রোমিনেশনে ৯৭% ২-ব্রোমোপ্রোপেন আর ৩% ব্রোমোপ্রোপেন উৎপন্ন হয়।


অ্যালকেনের নাইট্রেশন বিক্রিয়া-
প্রায় 4000তাপমাত্রায় অ্যালকেন ও গাঢ় HNO3 এর বাষ্পকে একত্রে উত্তপ্ত করলে অ্যালকেনের হাইড্রোজেন (H) পরমাণু নাইট্রো (NO2মূলকদ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে নাইট্রো অ্যালকেন প্রস্তুত হয়।




অ্যালকেনের তাপীয় বিযোজন: 

উচ্চ চাপে ও তাপমাত্রায় তাপীয় ভাঙনে অথবা প্রভাবকের উপস্থিতিতে অপেক্ষাকৃত নিম্নতাপমাত্রায় প্রভাকীয় ভাঙনে বৃহত্তর অ্যালকেন ভেঙে ক্ষুদ্রতর অ্যালকেন ও অ্যালকিনের মিশ্রণ উৎপন্ন হয়। বিযোজনের ফলে সৃষ্ট অণুর প্রকৃতি নির্ভর করে অ্যালকেন অনুর আকৃতি, তাপ, চাপ, প্রভাবক ইত্যাদির উপর। এ বিক্রিয়ার সাহায্যে বৃহত্তর অ্যালকেন থেকে ক্ষুদ্রতর অ্যালকেন প্রস্তুত করা যায়-



অ্যালকেনের সমাণুকরণ বিক্রিয়া:

অনার্দ্র AlCl3 ও HCl গ্যাসের মিশ্রণের উপস্থিতিতে 2500-3000তাপমাত্রায় n-অ্যালকেনের সমাণুকরণ বিক্রিয়ায় শাখাযুক্ত iso-অ্যালকেন উৎপন্ন হয়-




এভাবে একইভাবে কম শাখাযুক্ত অ্যালকেন থেকে বেশি শাখাযুক্ত অ্যালকেন প্রস্তুত করা যায়।




অকটেন নাম্বার:

কোন পেট্রোল ইঞ্জিনে জ্বালানিরূপে গ্যাসোলিন ব্যবহারের ফলে ইঞ্জিনে যে পরিমাণ ধাক্কা বা নকিং সৃষ্টি করে, সে একই পরিমাণ নকিং সেই ইঞ্জিনে সৃষ্টি করতে ব্যবহৃত iso-অকটেন ও n-হেপ্টেনের কোন মিশ্রণে যে শতকরা পরিমাণ iso অকটেনের দরকার হয়, iso-অকটেনের সেই শতকরা পরিমাণ কে ঐ গ্যাসোলিন জ্বালানির অকটেন নাম্বার বলে কোন মোটর জ্বালানির অকটেন নাম্বার 85 বলতে বোঝায় ঐ জ্বালানিটি 15% n-হেপ্টেন ও 85% iso-অকটেন মিশ্রণের সমান জ্বালানি ক্ষমতাসম্পন্ন তৈল। যে জ্বালানির অকটেন নাম্বার যত বেশি সে জ্বালানি তত বেশী উৎকৃষ্ট।

জ্বালানির অকটেন নাম্বার বৃদ্ধির উপায়-

১। উচ্চতর অ্যলকেনের তাপীয় বিযোজনের মাধ্যমে:




২। অ্যালকেনের সমাণুকরণ বিক্রিয়ার মাধ্যমে:





 সিলিকন ডাই অক্সাইডে সিলিকন তার দুটি ইলেক্ট্রন দুটি অক্সিজেন পরমানুর সাথে শেয়ার করে এবং অপর দুটি ইলেক্ট্রন দুটি সিলিকনের সাতে শেয়ার করে, পরের সিলিকন আবার তাদের দুটি ইলেক্ট্রন অক্সিজেন ও সিলিকনের সাথে শেয়ার করে বৃহৎ পলিমার অনু গঠন করে তাই এটি কঠিন ও বড় অনু কিন্তু কার্বন ডাই অক্সাইড এ কার্বন তার ৪ টি ইলেক্ট্রনই দুটি অক্সিজেনের সাথে শেয়ার করে এবং অক্সিজেনেরও যোজ্যতা দুই পুর্ন হয়ে যায় ফলে আর কারও সাথে শেয়ার করে না বলে একক অনু হিসাবে সরলরৈখিক ভাবে অবস্থান করে বলে এটি খুবই ছোট এবং গ্যাস আকারে বিরাজ করে।