Recent Post
Loading...
শিখনফল: যৌগের সংকেত (আণবিক অথবা গাঠনিক) থেকে  সম্ভাব্য সমাণুগুলি নির্ণয় করতে পারবে।





আগের পর্বে আমরা যৌগের সমাণুতার প্রকারভেদ সম্পর্কে জেনেছি।


এই পর্বে আমরা শিখব কিভাবে যৌগের সংকেত থেকে সমাণু নির্ণয় করতে হয়।

সাধারণত যৌগের আনবিক সংকেতের সমাণু নির্ণয় করতে বলা হলে গাঠনিক সমাণু নির্ণয়ের চেষ্টা করতে হয় এবং গাঠনিক সংকেতের সমাণু নির্ণয় করতে বলা  হলে স্টেরিও সমাণু নির্ণয়ের চেষ্টা করতে হয়। তবে সম্ভাব্য সকল সমাণু নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সবরকম সমাণুর গঠন সম্ভব কিনা চেষ্টা করে দেখতে হবে।

গাঠনিক সমাণু নির্ণয়ের ক্ষেত্রে নিচের নিয়মগুলো অনুসরণ করতে হবে-

  • প্রথমেই প্রদত্ত যৌগের সংকেত থেকে যৌগটির সমগোত্রীয় শ্রেণী নির্ধারণ করতে হবে। একটি যৌগ শুধুমাত্র তার সমগোত্রীয় শ্রেণীর সমাণু গঠন করবে। নিচে যৌগের সাধারণ সংকেত ও তার সমগোত্রীয় শ্রেণী দেখানো হল-

আনবিক সংকেত
সমগোত্রীয় শ্রেণী
CnH2n+2
অ্যালকেন
CnH2n
অ্যালকিন, সাইক্লো অ্যালকেন
CnH2n-2
অ্যালকাইন, সাইক্লো অ্যালকিন, ডাই-ইন
CnH2n+2O
অ্যালকোহল, ইথার
CnH2n+1OH
অ্যালকোহল
CnH2nO
কার্বনাইল (অ্যালডিহাইড, কিটোন)
CnH2nO2
কার্বোক্সিলিক এসিড, এস্টার
CnH2n+3N
সম্পৃক্ত অ্যালিফেটিক অ্যামিন

  • কার্বন সংখ্যা অনুযায়ী সবচেয়ে দীর্ঘ শিকল তৈরী করতে হবে।
  • কার্বনের সংখ্যা কমিয়ে বিভিন্ন শাখা শিকল তৈরী করতে হবে। মূল শিকলে যতগুলি কার্বন সংখ্যা কমানো হবে শাখা শিকলে ঠিক ততগুলো কার্বন যুক্ত করতে হবে।
  • শিকলের সম্ভাব্য সকল স্থানে কার্যকরী মূলক বসাতে হবে।


সম্ভাব্য সকল গাঠনিক সমানু পাওয়ার পর স্টেরিও সমাণু হয় কিনা দেখতে হবে।

স্টেরিও সমাণু:

দ্বিবন্ধন যুক্ত যৌগ অথবা চাক্রিক যৌগ জ্যামিতিক সমাণুতা প্রদর্শণ করে। (অর্থাৎ যদি যৌগটি দ্বিবন্ধনযুক্ত যৌগ অথবা চাক্রিক যৌগ হয় তাহলে সেটি সিস-ট্রান্স সমাণু গঠণ করে কিনা দেখতে হবে)

কাইরাল কার্বন যুক্ত যৌগ আলোক সমাণুতা প্রদর্শণ করে। (অর্থাৎ যদি যৌগটিতে একটি কাইরাল কার্বন থাকে তবে ঐ কার্বন পরমাণুর স্বাপেক্ষে পরস্পর অসমপাতিত দর্পণ প্রতিবিম্ব তৈরী করতে হবে)

এইবার এই নিয়ম গুলো অনুসরণ করে আমরা  C4H8 এর সম্ভাব্য সকল সমাণু নির্ণয় করি-

১. যৌগের সংকেত থেকে সমগোত্রীয় শ্রেণী নির্ণয়-

C4Hঅর্থাৎ CnH2n  সাধারণ সংকেত বিশিষ্ট যৌগের সমগোত্রীয় শ্রেণী হল অ্যালকিন এবং সাইক্লো অ্যালকেন (অর্থাৎ যৌগটির শুধুমাত্র অ্যালকিন ও সাইক্লো অ্যালকেন সমাণু থাকবে)।

২. যেহেতু এই যৌগে ৪টি কার্বন পরমাণু তাই সবচেয়ে দীর্ঘ শিকলটি হবে ৪ কার্বন এর। আবার যেহেতু এটি অ্যালকিন সমগোত্রীয় শ্রেনীর যৌগ তাই দীর্ঘ শিকলে অবশ্যই একটি দ্বিবন্ধন থাকবে। তাহলে আমরা ৪ কার্বনের যে সমাণুগুলি সাজাতে পারছি তা হল-

(i) 

(ii)

(iii) 



(লক্ষ্য কর, আপাতদৃষ্টিতে (i) ও (iii) গাঠনিকভাবে ভিন্ন মনে হলেও জৈব যৌগের নামকরণের নিয়ম থেকে আমরা জানি এই দুটি আসলে একই গঠন এবং একই যৌগ। তাই (i) ও (iii) আসলে একই সমাণু। এদের দুইটি আলাদা সমাণু হিসেবে লেখা যাবে না।)

৩. ৪ কার্বনের পর দীর্ঘ শিকলে কার্বনের সংখ্যা কমিয়ে অনুরূপভাবে শিকল কাঠামো তৈরী করতে হবে। এক্ষেত্রে ৩ কার্বনের শুধুমাত্র নিম্নোক্ত গঠনের একটিমাত্র যৌগ তৈরী করা সম্ভব হয়।

(আপাত দৃষ্টিতে ভিন্ন কিন্তু একই গঠনের এবং একই নামের এই একটি যৌগই সম্ভব)


যেহেতু এই যৌগটি দিয়ে ২ কার্বনের আর কোন শিকল গঠন সম্ভব হয় না তাই আমরা পরবর্তী সমগোত্রক অর্থাৎ সাইক্লো অ্যালকেন সমাণু সাজানোর চেষ্টা করি-
৪.(ক) প্রতিটি কার্বন (৪টি) দিয়ে চক্রিয় কাঠামোর অ্যালকেন-


৪.(খ) কার্বনের সংখ্যা কমিয়ে চক্রিয় কাঠামোর অ্যালকেন-

(আপাত দৃষ্টিতে ভিন্ন কিন্তু একই গঠনের এবং একই নামের এই একটি যৌগই সম্ভব)

এভাবে সবগুলি গাঠনিক সমাণু নির্ণয় করার পর আমরা দেখব এই যৌগটির স্টেরিও সমাণু সম্ভব কিনা-

আমরা জানি দ্বিবন্ধন ও চক্রীয় যৌগ জ্যামিতিক সমাণু প্রদর্শন করে।

এর মধ্যে বিউট-২-ইন সমাণু গঠনটি সিস-ট্রান্স জ্যামিতিক সমাণুতা প্রদর্শণ করে- 


যেহেতু এই যৌগে কোন কাইরাল কার্বন নেই তাই এটি আলোক সমাণুতা প্রদর্শন করবে না।

তাহলে C4Hএর সম্ভাব্য সকল সমাণুগুলি হচ্ছে

গাঠনিক সমাণু:


স্টেরিও সমাণু:



এইবার আমরা জৈব যৌগের সমাণুতা-১ পর্বে বিভিন্ন প্রকারের সমাণু শেখার সেময় যে কাজগুলি ছিল সেগুলি মিলিয়ে দেখি-

C5H12-এর শিকল সমাণু নির্ণয় করার চেষ্টা কর-

(C5H12  অ্যালকেন সমগোত্রক। মূল শিকলে কার্বনের সংখ্যা কমিয়ে সম্ভাব্য সমাণু নির্ণয় করতে হবে)



C4H8এর অবস্থান সমাণু নির্ণয় করার চেষ্টা কর-

C4H8 অ্যলকিন সমগোত্রক, তাই দ্বিবন্ধনের অবস্থান দিয়ে সমাণুতা নির্ণয় করতে হবে)

C2H6O-এর কার্যকরী মূলক সমাণুতা নির্ণয় করার চেষ্টা কর-

(C2H6O এর সমগোত্রক অ্যালকোহল ও ইথার তাই এই দুটি কার্যকরী মূলকযুক্ত সমাণু নির্ণয় করতে হবে)

C4H10O –এর মেটামার নির্ণয় করার চেষ্টা কর-


(C4H10O এর সমগোত্রক অ্যালকোহল ও ইথার। আমরা জানি, ইথার, কিটোন ও সেকেন্ডারি অ্যামিনসমূহ মেটামারিজম প্রদর্শন করে। তাই ইথার মূলকের দুই পাশে ভিন্ন সংখ্যক কার্বন পরমাণু লিখে মেটামার সমাণু নির্ণয় করতে হবে)

CH3-CH(NH2)-COOH -এর আলোক সমাণু নির্ণয়-



(যৌগের দ্বিতীয় কার্বন পরমাণু টি কাইরাল কার্বন। এটির স্বাপেক্ষে দুটি একে অপরের অউপরিস্থাপণীয় দর্পন প্রতিবিম্ব অর্থাৎ আলোক সমাণু গঠিত হয়)

আশা করি, এই নিয়ম গুলো অনুসরণ করে এবং বেশী বেশী অনুশীলন করে আমরা জৈব যৌগের সমাণু নির্ণয় করতে পারবো।


নিম্নলিখিত যৌগসমূহের সমাণুতা নির্ণয় কর-

(i) C5H10O2
(ii) C6H5-CH-CH(NH2)-COOH

 শিখনফল: যৌগের আনবিক সংকেত থেকে সম্ভাব্য সমাণুগুলির গাঠনিক সংকেত লিখতে পারবে।


জৈব যৌগের সমাণুতা:

যেসব যৌগের আনবিক সংকেত এক হওয়া সত্ত্বেও এদের গাঠনিক সংকেতের ভিন্নতার কারণে এবং অণুস্থিত পরমাণুসমূহের ত্রিমাত্রিক বিন্যাসের ভিন্নতার কারণে এদের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের পার্থক্য দেখা যায় সেসব যৌগকে পরস্পরের সমাণু এবং যৌগের এরূপ ধর্মকে সমাণুতা বলে।

সমাণুতার প্রকারভেদ:

সমাণুতাকে প্রধানত দু শ্রেণীতে ভাগ করা যায়-

                        ক. গাঠনিক সমাণুতা।

এবং

                        খ. ত্রিমাত্রিক বা স্টেরিও সমাণুতা।

ক. গাঠনিক সমাণুতা:

যৌগের অণুস্থিত বিভিন্ন পরমাণুর সম্ভাব্য একাধিক অবস্থান তথা ভিন্ন ভিন্ন গাঠনিক সংকেতের পার্থক্যের জন্য যে সমাণুতার উদ্ভব হয় তাকে গাঠনিক সমাণুতা বলে।
           
গাঠনিক সমাণু পাঁচ প্রকার। যেমন-

১। শিকল সমাণুতা: যৌগের অণুস্থিত কার্বন শিকলের গঠনের পার্থক্যের জন্য সৃষ্ট সমাণুতাকে শিকল সমাণুতা বলে। যেমন- C4H10


(সমাণু দুটিতে যথাক্রমে ৪ টি ও ৩টি কার্বন পরমাণুর প্রধান শিকল)

C5H12-এর শিকল সমাণু নির্ণয় করার চেষ্টা কর।

২। অবস্থান সমাণুতা: কার্বন শিকলে দ্বিবন্ধন ও ত্রিবন্ধনের অবস্থান অথবা কার্যকরী মূলক বা প্রতিস্থাপিত পরমাণু বা মূলকের অবস্থানের পার্থক্যের জন্য সৃষ্ট সমাণুতাকে অবস্থান সমাণুতা বলে। যেমন- C3H8O

(সমাণু দুটিতে –OH মূলকের অবস্থান যথাক্রমে ১নং ও ২নং কার্বনে)

C4H8এর অবস্থান সমাণু নির্ণয় করার চেষ্টা কর।

৩। কার্যকরী মূলক সমাণুতা: কার্যকরী মূলকের বিভিন্নতার কারনে সৃষ্ট সমাণুতাকে কার্যকরী মূলক সমাণুতা বলে। যেমন-C3H6O

(প্রথমটিতে অ্যালডিহাইডের কার্যকরী মূলক এবং দ্বিতীয়টিত কিটোনের কার্যকরী মূলক)

C2H6O-এর কার্যকরী মূলক সমাণুতা নির্ণয় করার চেষ্টা কর।

৪। মেটামারিজম: একই সমগোত্রীয় শেণীর অন্তর্ভুক্ত সমাণুগুলোতে কার্যকরী মূলকের উভয় পার্শ্বে কার্বন পরমানুর সংখ্যার ভিন্নতার কারনে সৃষ্ট সমাণুতাকে মেটামারিজম বলে। এবং এসব সমাণুকে মেটামার বলে। যেমন- C5H10O

(একই সমগোত্রীয় (কিটোন) শ্রেণীর যৌগ, কিন্তু দুটি সমাণুতে কার্যকরী মূলকের (-CO-) দুপাশে কার্বনের সংখ্যা ভিন্ন। তাই এরা মেটামার। উপরের আলোচনা থেকে লক্ষ্য করে দেখ, এরা কিন্তু একই সাথে অবস্থান সমাণুক। সাধারণত ইথার,কিটোন,ও সেকেন্ডারী অ্যামিনসমূহ মেটমরিজম প্রদর্শন করে। )

C4H10O –এর মেটামার নির্ণয় করার চেষ্টা কর।

৫। টটোমারিজম: টটোমারিজম হল একটি বিশেষ ধরনের কার্যকরী মূলক সমাণুতা। এ প্রক্রিয়ায় সমাণুগুলো এক প্রকার কার্যকরী মূলক বিশিষ্ট গঠন থেকে স্বতঃস্ফুর্তভাবে অন্য প্রকার কার্যকরী মূলক বিশিষ্ট গঠনে রূপান্তরিত হয় এবং উভয় গঠনের মধ্যে সাম্যাবস্থা বিরাজমান থাকে। তাই টটোমারিজম কে গতিশীল কার্যকরী মূলক সমাণুতা বলে। এরূপ সমাণুর একটি কে অপরটির টটোমার বলে। যেমন: কিটো-ইনল টটোমারিজম।

(প্রথম যৌগের কিটোনের কার্যকরী মূলক পরিবর্তিত হয়ে দ্বিতীয় যৌগ অ্যালকোহলের কার্যকরী মূলক হয়েছে)

খ. স্টেরিও সমাণুতা:

            যে সব যৌগের আণবিক ও গাঠনিক সংকেত একই কিন্তু বিভিন্ন পরমাণু ও মূলকের ত্রিমাত্রিক অবস্থান বিন্যাসের কারনে এদের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মে পার্থক্য দেখা যায় সে সব যৌগকে স্টেরিও সমাণু এবং এদের এই ধর্মকে স্টেরিও বা ত্রিমাত্রিক সমাণুতা বলে।
            স্টেরিও সমাণুতা দু প্রকার। যেমন-

১। জ্যামিতিক সমাণুতা
২। আলোক সমাণুতা

১। জ্যামিতিক সমাণুতা: জৈব যৌগের কার্বন-কার্বন বন্ধনের অক্ষ বরাবর মুক্ত আবর্তন সম্ভব না হলে তখন ভিন্ন কনফিগারেশন বা জ্যামিতিক বিন্যাসযুক্ত দুধরনের যৌগ অণু সৃষ্টি হয়। এদেরকে জ্যামিতিক সমাণু এবং এ ধরণের সমাণুতাকে জ্যামিতিক সমাণুতা বলে। সাধারণত প্রতিস্থাপিত অ্যালকিনসমূহ এবং চাক্রিক যৌগসমূহ জ্যামিতিক সমাণুতা প্রদর্শন করে।
            জ্যামিতিক সমাণুতে দ্বিবন্ধনের দুপাশে একই পরমাণু বা মূলকদ্বয় যখন দ্বিবন্ধনযুক্ত কার্বন পরমাণুর একই পার্শ্বে থাকে তখন তাকে সিস (cis) সমাণু আর বিপরীত পার্শ্বে থাকলে তখন তাকে ট্রান্স (trans) সমাণু বলে। যেমন-

(দ্বিবন্ধনের দুপাশে একই পরমাণু Br ও H। এখানে Br  বা দ্বিবন্ধনের একদিকে যেদিকে আছে (Br নীচে এবং উপরে) দ্বিবন্ধনের অন্যদিকেও সেদিকে আছে। তাই এটি সিস সমাণু)

(দ্বিবন্ধনের দুপাশে একই পরমাণু Br ও H। এখানে Br বা দ্বিবন্ধনে একদিকে যে দিকে আছে অন্যদিকে তার বিপরীত দিকে আছে। তাই এটি ট্রান্স সমাণু)

২-বিউটিন -এর সিস-ট্রান্স সমাণু দুটি লেখার চেষ্টা কর।


২। আলোক সমাণুতা: একই আনবিক ও গাঠনিক সংকেত বিশিষ্ট যৌগের দুই বা ততোধিক ভিন্ন কনফিগারেশন যখন একবর্ণী এক-সমতলীয় আলোর প্রতি ভিন্ন আচরন প্রদর্শন করে তখন তাদের আলোক সক্রিয় সমাণু এবং একবর্ণী এক-সমতলীয় আলোর প্রতি তাদের এই আচরণকে আলোক সমাণুতা বলে।

            আলোক সমাণুগুলোর অপ্রতিসম কার্বন পরমাণু বা কাইরাল কেন্দ্র থাকে, এরা একে অপরের দর্পণ প্রতিবিম্ব হয় এবং কনফিগারেশন গুলো পরস্পর অসমপাতিত হয়। যেমন- ল্যাকটিক এসিডের (CH3.CH.(OH).COOH) দুটি আলোক সমাণু আছে। একটি d-ল্যাকটিক এসিড ( যেসব আলোক সমাণু এক-সমতলীয় আলোর তলকে ডানদিকে ঘুরায় তাদের দক্ষিনাবর্ত বা (+) বা d (dextro-rotatory) যৌগ বলে) এবং অপরটি l-ল্যাকটিক এসিড (যেসব আলোক সমাণু এক-সমতলীয় আলোর তলকে বামদিকে ঘুরায় তাদের বামাবর্ত বা (-) বা l (laevo-rotatory) যৌগ বলে)।

(একটি অপরটির দর্পন প্রতিবিম্ব)

CH3-CH(NH2)-COOH -এর আলোক সমাণুগুলি লেখার চেষ্টা কর।

কাইরাল কার্বন:

            একই কার্বন পরমাণুতে চারটি ভিন্ন মূলক যুক্ত থাকলে ঐ কার্বন পরমাণুর সাপেক্ষে যৌগটি অপ্রতিসম হয় তাই ঐ যৌগকে অপ্রতিসম বা কাইরাল যৌগ এবং ঐ কার্বন কে কাইরাল কার্বন (chiral) বলে। যৌগের সংকেতে একে তারকা (*) চিহ্ন দ্বারা দেখানো হয়। (একটি যৌগে যদি nটি কার্বন পরমাণু থাকে তবে তার 2n  সংখ্যক আলোক সমাণু থাকবে।)


এনানসিওমারিজম:

            অপ্রতিসম কার্বন পরমাণু যুক্ত কোন যৌগ অনু ও এর দর্পন প্রতিবিম্ব পরস্পর সমাপতিত না হলে এরূপ দুই ভিন্ন গঠনের অণু আলোক সক্রিয় হয়। এরূপ দুই আলোক সক্রিয় সমাণুকে এনানসিওমার বলা হয়।

রেসিমিক মিশ্রণ:

দুটি এনানসিওমার যেমন  d-ল্যাকটিক এসিড ও l-ল্যাকটিক এসিড উভয়েই এক-সমতলীয় আলোর তলকে সমান কৌণিক পরিমাণে বিপরীত দিকে ঘুরায়। তাই d-সামাণু ও l-সমাণুর সমপরিমান মিশ্রণ পরস্পরের বিপরীত ঘূর্ণন ক্রিয়াকে নষ্ট করে অর্থাৎ দুটি বিপরীত আলোক সক্রিয় মিশ্রণ আলোক নিষ্ক্রিয় হয়। দুটি এনানসিওমারের সমমোলার মিশ্রণকে রেসিমিক মিশ্রণ বা dl মিশ্রণ বা (+/-) মিশ্রণ বলে।

শিখনফল: IUPAC পদ্ধতিতে জৈব যৌগের নামকরণ করতে পারবে।




এই পর্বে আমরা চক্রিয় যৌগ (অ্যালিফেটিক) এবং বিশেষ করে অ্যারোমেটিক (বেনজিন ও জাতক) যৌগসমূহের নামকরণ শিখব।

সরল শিকল হাইড্রোকার্বনের নিয়ম অনুসরণ করে নামের আগে সাইক্লো (cyclo) শব্দ বসিয়ে চক্রিয় যৌগগুলির নামকরণ করা হয়। যেমন-


আগের পাঠ থেকেই আমরা জানি, যৌগের গঠনে ৩টি পরমানু এবং একক বন্ধন বিশিষ্ট হাইড্রোকার্বন বলে এটির নাম হবে প্রোপেন। শুধু যৌগটি চক্রিয় বলে এর নামের আগে সাইক্লো শব্ধটি বসিয়ে যৌগটির নামকরণ করা হয়েছে সাইক্লোপ্রোপেন।

অনুরূপভাবে-

(৫টি কার্বন এবং একটি দ্বিবন্ধন)


এভাবে সাইক্লো শব্ধটি বসিয়ে চক্রিয় অ্যালিফেটিক হাইড্রোকার্বনের নামকরণ করা হয়।

সাধারণত বেনজিন এবং বেনজিনের মত চক্র বিশিষ্ট যৌগসমূহ অ্যারোমেটিক হয়।
অ্যারোমেটিক যৌগের নামকরণে প্রথমেই মাতৃ চক্রের নাম, প্রতিস্থাপিত মূলকের অগ্রাধিকার, অবস্থান, বর্ণানুক্রম এসব বিষয়ের উপর ভিত্তি করে নামকরণ করতে হয়।

কিছু মাতৃ অ্যারোমেটিক চক্র-


এইবার নিচের অ্যারোমেটিক যৌগগুলির নামকরণ দেখি-

(মাতৃ বেনজিন চক্রে ক্লোরিন প্রতিস্থাপিত মূলক। তাই ক্লোরোবেনজিন)


অনুরুপভাবে-



একক প্রতিস্থাপিত মূলক যুক্ত কিছু বেনজিন চক্রের সাধারণ নাম রয়েছে। নিচের যৌগগুলিকে IUPAC স্বীকৃত মূলনাম হিসেবে বিবেচনা করা হয় (কার্যকরী মূলকের অগ্রাধিকার ক্রমে লেখা হলো)।






দ্বিপ্রতিস্থাপিত বেনজিন যৌগের নামকরণ-

প্রথম প্রতিস্থাপকের কার্বন কে ১নং কার্বন বিবেচনা করে এর স্বাপেক্ষে দ্বিতীয় প্রতিস্থাপক তিনটি সম্ভাব্য অবস্থানে প্রতিস্থাপিত হতে পারে। এই অবস্থান তিনটিকে অর্থো, মেটা এবং প্যারা বলা হয়। সংক্ষেপে এদেরকে o-, m- ও p- দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।

(এখানে এর স্বাপেক্ষে Y প্রতিস্থাপিত মূলক)

যেমন-



প্রচলিত নামের কিছু দ্বিপ্রতিস্থাপিত যৌগ-



আরও কিছু নাম (কার্যকরী মূলকের অগ্রাধিকার অনুসারে ১নং কার্বন নির্ধারণ করা হয়েছে)-



আশা করি এই নিয়মগুলো অনুসরণ করে এবং বেশি বেশি অনুশীলন করে আমরা IUPAC পদ্ধতিতে জৈব যৌগের নামকরণ করতে পারব।

নামকরণ কর-
i)                    CH3CH2CH(CH3)-C(CH3)3
ii)                  C(CH3)3- C(CH3)3
iii)                Cl3C-NO2
iv)                CH3CHCl2
v)                  CH3-CH2-CH=CH2
vi)                CH2=CHBr
vii)              (CH3)2C=C(CH3)2
viii)            CH3-C(CH3)=CH-CH=CH2
ix)                CH3-CH(Cl)-C(CH3)=CH2
x)                  CH3-CH(CH3)CH=C(CH3)-CH(CH3)2
xi)                (CH3)2CHCH=CHCH2COCH3
xii)              CH3-C≡C-C(CH3)3
xiii)            CH3-CH(Br)-C≡C-CH3
xiv)            (CH3)3C-OH
xv)              BrCH2CH2CH(OH)CH3
xvi)            OH-CH2-CH(OH)-CH2-OH
xvii)          CH3-CH(Cl)-CH(OH)-CH(CH3)-CH2-CH3
xviii)        CH3-CH(OH)-CH2-CHO
xix)            CH3-CH=CH-CO-CH3
xx)              CH3-CH2-CH(CHO)-CH2-CH(CH3)-CH3
xxi)            CH3-CH2-CO-CH2-C(CH3)3
xxii)          CH≡C-CH2-CHO
xxiii)        CH3-CH(OH)-CO-CH3
xxiv)        CH3-CO-CH(CH3)-CH2Br
xxv)          CH3-CH(CH3)-CH(NH2)-COOH
xxvi)        HOOC-COOH
xxvii)      CH3-CH(CH3)-CH(Cl)-COOH
xxviii)    CH3-(CH2)2-CH(Cl)-CH2(NH2)-COOH
xxix)        CH3-CH=CH-COOH
xxx)          CH3-(CH2)3-O-C3H7
xxxi)        ClCH2-CH2-N-(CH3)2
xxxii)      CH3-CH(N(CH3)2)-CH2-CH3
xxxiii)    CH3-CO-N(CH3)2
xxxiv)    CH3-CO-O-CH2-CH3
xxxv)      CH3-COOC6H5