আমরা জানি, জগতে জৈব যৌগের সংখ্যা অনেক। তার তুলনায় অজৈব যৌগের কম। তাই, এর নামকরণের জন্য সমস্যায় তেমন পড়তে হয় নাই।কিন্তু, যত দিন যাচ্ছে অজৈব যৌগের সংখ্যাও বাড়ছে এবং এদের নামকরণে তাই কিছু সমস্যা দেখা দেয়। কিছু কিছু যৌগের নাম তার যৌগতে উপস্থিত মৌলের নাম অনুসারে হয় একধরণের আর শিল্পক্ষেত্রে তার নাম ভিন্ন থাকে।আবার, অজৈব যৌগের গঠন ভৌত অবস্থার উপরে নির্ভর করে বলে নামকরণে অনেক ধরণের সমস্যা দেখা দেয়। এরকম নানান সমস্যা সমধানের জন্য IUPAC অজৈব যৌগের নামকরণের কিছু নিয়ম তৈরি করে। কিন্তু এসমস্ত নিয়ম সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য ছিল না বিধায় সেসকল নিয়মকে নামকরণের শ্রেনীবিভাগ হিসেবে বিবেচিত করা হয়।
যেমন –
নামের পূর্বে প্রতিস্থাপকের সংখ্যা ,
একইরকম লিগ্যান্ডের সংখ্যা,
ঘনীভূত এসিডে একই রকম পরমাণু,
অণু গঠনে একই রকম পরমাণু সংখ্যা ইত্যাদি প্রকাশে নামের পূর্বে mono,di,tri,tetra,penta ইত্যাদি ব্যবহৄত হয়।
**নামকরনের ক্ষেত্রে জারণ অবস্থার প্রকাশ**
১) যে সমস্ত মৌলের জারণ অবস্থা ২ টা থাকে তাদের বড় জারণ অবস্থার নামের শেষে (ইক) এবং ছোট জারণ অবস্থার নামের শেষে (আস) বসান হয়। যেমন- FeCl₂ (ফেরাস ক্লোরাইড); FeCl₃ (ফেরিক ক্লোরাইড)।
২) ১৯১৯ সালে স্টক জারণ অবস্থা প্রকাশের জন্য নামের পাশে রোমান সংখ্যা লিখার পক্ষে মতামত প্রকাশ করেন। যেমন- CuO কপার (II) অক্সাইড; Cu₂O কপার (I) অক্সাইড।
৩) উপরের নিয়মটা অনেক ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হয় না। যেমন - N₂O₄, Pb₃O₄ ইত্যাদিকে স্টক এর অনুসারে নাইট্রোজেন (IV) অক্সাইড, লেড (II,IV) অক্সাইড ইত্যাদি বলা হয়, যা NO₂, 2PbO, 2PbO₂ থেকে পৃথক করেনা। তাই, এরুপ থেকে ল্যাটিন বা গ্রিক শব্দ নামের পূর্বে mono, di, tri, tetra, penta সংযোজন করে নামকরন করা হয়। যেমন - N₂O₄ কে ডাইনাইট্রোজেন অক্সাইড, Pb₃O₄ কে ট্রাই-লেড টেট্রাঅক্সাইড বলা হয়।
**ধনাত্মক মূলকের নামকরণ**
১) স্থির যোজী মৌলের ক্ষেত্রে: মৌলের নাম + আয়ন
যেমন - Na⁺ ----> সোডিয়াম আয়ন
২) পরিবর্তনশীল যোজনীর ক্ষেত্রে: মৌলের নাম/ মৌলের ল্যাটিন নামের শব্দমূল + আস/ইক
[আস = নিম্ন জারণ অবস্থা ইক = উচ্চ জারণ অবস্থা]
{ বিঃদ্রঃ আধুনিক পদ্ধতিতে মৌলের নামের শেষে ব্র্যাকেটে জারণ অবস্থা রোমান সংখ্যায় লিখা হয় }
যেমন- Cu⁺ ----> কপার (আস); Cu²⁺ ----> কপার (ইক)
Fe²⁺ ----> ফেরাস/আয়রন (II); Fe³⁺ ----> ফেরিক /আয়রন (III)
**ধনাত্মক যৌগমূলকের নামকরণ**
ধনাত্মক যৌগমূলকের নামের শেষে ইয়াম/ আইল হয় ।
যেমন - H₃O⁺ ----> হাইড্রোনিয়াম; PH₄⁺ ----> ফসফোনিয়াম;
NO⁺ ----> নাইট্রোসাইল; SO₂⁺ ----> সালফনাইল।
**ঋনাত্মক মূলকের নামকরণ**
১) এক ও বহু পরমাণুযুক্ত ঋনাত্মক মূলকের শেষে আইড (ide) যুক্ত হয়।
যেমন - O²⁻ ----> অক্সাইড আয়ন; Cl⁻ ----> ক্লোরাইড আয়ন; CN⁻ ----> সায়ানাইড আয়ন ইত্যাদি ।
২) O⁻ যুক্ত যৌগমূলকের নামের শেষে আইট/ এট হবে।
যেমন - NO₂⁻ ----> নাইট্রাইট ; NO₃⁻ ----> নাইট্রেট
**দ্বি-মৌল যৌগের নামকরণ**
যে দুইটা মৌলের সমন্বয়ে দ্বি-মৌল যৌগ গঠিত হয়, উভয়ের মধ্যে অধিক তড়িৎধনাত্মক মৌলটির পুরো নাম প্রথমে লেখা হয় এবং পরে অপর মৌলটির নামের শেষের অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দিয়ে আইড (ide) যুক্ত করে ঐ নামকরন করা হয় ।
যেমন- CaC₂ = ক্যালসিয়াম কার্বাইড; CaH₂ = ক্যালসিয়াম হাইড্রাইড ।
**ত্রি-মৌল যৌগের নামকরণ**
১) ধনাত্মক মৌলের নাম + ঋনাত্মক যৌগমূলকের নাম
যেমন- CuSO₄ ----> কপার সালফেট।
২) ধনাত্মক যৌগমূলকের নাম + ঋনাত্মক মৌলের শব্দনাম
যেমন- NH₄Cl ----> অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড ।
**হাইড্রেটসমূহের নামকরণ**
এক্ষেত্রে প্রথমে মূল যৌগের নাম লিখতে হয় এবং পানির অণুর সংখ্যা লিখে হাইড্রেট লিখতে হয়।
যেমন- CuSO₄.5H₂O = কপার সালফেট পেণ্টাহাইড্রেট;
CaSO₄.2H₂O = ক্যালসিয়াম সালফেট ডাই হাইড্রেট (জিপসাম) ।
**অক্সি-এসিডের নামকরণ**
অক্সি-এসিডের সংকেত ও এসিডের পূর্ণ নাম
HClO
হাইপো- ক্লোরাস এসিড/ক্লোরিক (I) এসিড
HClO₂
ক্লোরাস এসিড/ক্লোরিক (III) এসিড
HClO₃
ক্লোরিক এসিড/ক্লোরিক (V) এসিড
HClO₄
পারক্লোরিক এসিড/ক্লোরিক (VII) এসিড
HPO₃
মেটা ফসফরিক এসিড
H₄P₂O₇
পাইরো ফসফরিক এসিড
H₃PO₄
অর্থো ফসফরিক এসিড
H₂SO₃
সালফিউরাস এসিড
H₂SO₄
সালফিউরিক এসিড
H₂S₂O₃
থায়ো সালফিউরিক এসিড