বাফার জিনিসটা কী?

 

“বাফার হলো এমন একটি দ্রবণ যা pH পরিবর্তনে বাধা প্রদান করে।” ব্যাপারটি অনেকটা এমন যে, বাফার হলো সেনাপতি আর pH হলো রাজা। রাজ্য দখল করার জন্য এসিড অথবা ক্ষার যে ই আসুক না কেন, বাফারের কাজই হলো শত্রুদের আপ্যায়ন করে pH কে ঠিক রাখা। একজন সেনাপতি কতটুকু দক্ষ তা নির্ভর করে শ্ত্রুর বিরুদ্ধে তার যুদ্ধকৌশলের উপর।  ঠিক একইভাবে বাফারের ক্ষমতা নির্ভর করে যে তা দ্রবণের pH কে পরিবর্তনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কতটুকু দক্ষ।

পানিতে যদি এসিড যোগ করা হয় তবে তার pH এর মান কমে যাবে। আবার যদি ক্ষার যোগ করা হয় তবে তার pH এর মান বেড়ে যাবে। এখন যদি আমরা, পানির বদলে বাফার দিই তবে দেখবো যে এসিড বা ক্ষার যাই যোগ করি না কেন দ্রবণে আগে যে pHছিল তার খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। এ পরিবর্তন সবসময় একটি নির্দিষ্ট রেঞ্জের ভেতর সীমাবদ্ধ থাকে। আর এই রেঞ্জকে যে বাফার যত ছোট রাখতে পারে সে তত শক্তিশালী বাফার। ধরা যাক, কোন বাফার দ্রবণের pH হলো  4.54। এখন তাতে যদি শক্তিশালী এসিড বা ক্ষার যা ই যোগ করি না তার pH পরিবর্তন না হয় তবে তা অনেক কার্যকরী বাফার।

বাফার দ্রবণ হলো দুর্বল এসিড ও তার অনুবন্ধী ক্ষার অথবা দুর্বল ক্ষার ও তার অনুবন্ধী এসিডের একটি মিশ্রণ। একটা বিষয় খেয়াল করেছ যে, ‘দুর্বল’ কথাটি বার বার চলে আসছে। এর দ্বারা বোঝা যায় যে বাফার দ্রবণ সাম্যাবস্থার ক্রিয়া কৌশল মেনে চলে।
( কোন ক্ষারের সাথে একটি প্রোটন যুক্ত হয়ে যে এসিড তৈরি করে তাকে ঐ ক্ষারের অনুবন্ধী অম্ল বলে। যেমন: NH₃ এর অনুবন্ধী অম্ল হচ্ছে NH₄⁺। )
বাফার সাধারনত দুই ধরনের হয়। অম্লীয় এবং ক্ষারীয়। যেকোন একটির ক্রিয়া কৌশল দেখলে অন্যটিও বোঝা যাবে। আমরা এখন এসিডিক বাফার কিভাবে কাজ করে তা দেখবো।

এসিডিক বাফার অ্যাসিটিক এসিড ও তার অনুবন্ধী ক্ষার নিয়ে গঠিত।

CH₃COOH ⇌ CH₃COO⁻ + H⁺
CH₃COO⁻  Na⁺ →  CH₃COO⁻ + Na⁺

এখন যদি এই সিস্টেমে এসিড যোগ করা হয় তবে তা অ্যাসিটেট আয়নের সাথে বিক্রিয়া করে অ্যাসিটিক এসিড হয়ে যাবে। তখন CH₃COO⁻(অ্যাসিটেট আয়ন) আয়নের ঘাটতি পড়বে। এই ঘাটতি তো পূরন করতে হবে। তখন এসিডের সাম্যাবস্থার বিক্রিয়াটি লা শাতেলীয় নীতি অনুসারে ডান দিকে চলে যায়। ফলে CH₃COO⁻ (অ্যাসিটেট আয়ন) এর উৎপাদন হয়। ঘাটতিও পূরণ হয় সাথে সাথে pH ও পরিবর্তন হয় না।
ব্যাপারটি এভাবে চিন্তা করা যাক, দুই গেরস্থ CH₃COOH (অ্যাসিটিক এসিড) এবং CH₃COONa (সোডিয়াম অ্যাসিটেট) সবাইকে বিরিয়ানী খাওয়াবে। সব মেহমানকেই বিরিয়ানী খাওয়াতে হবে এবং মোট বিরিয়ানীর পরিমাণ কিছুতেই কমানো যাবে না। বলে রাখা ভালো যে, বিরিয়ানীর নাম হচ্ছে CH₃COO⁻ (অ্যাসিটেট আয়ন)। প্রথমেই প্রোটন (H⁺) সাহেব চলে এলেন। যাওয়ার সময় বিরিয়ানী CH₃COO⁻ (অ্যাসিটেট আয়ন) নিয়ে CH₃COOH হয়ে চলে গেলেন। ফলে বিরিয়ানী কমে গেলো, মানে ঘাটতি দেখা গেল। তাই গেরস্থ (CH₃COOH) আরেকটা বিরিয়ানী (CH₃COO⁻) দেয়ার মাধ্যমে ঘাটতি পূরণ করে দিলো।
ঠিক একইভাবে যদি বাফার সিস্টেমে ক্ষার যোগ করা হয় তবে তা দ্রবণে যে প্রোটন (H⁺)আছে তার সাথে বিক্রিয়া করে পানি (H₂O) হয়ে যাবে। এখন, যেহেতু H⁺ এর ঘাটতি দেখা দিয়েছে তাই তা ভারসাম্য করার জন্য এসিডের সাম্যাবস্থার বিক্রিয়া ডান দিকে সরে যাবে এবং pH অপরিবর্তনীয় রাখবে।