Recent Post
Loading...


 ক্ষার ধাতুঃ  যে সকল ধাতু পানির সাথে বিক্রিয়া করে তীব্র ক্ষার গঠন করে তাদেরকে ক্ষার ধাতু বলে।

পর্যায় সারণির এক নম্বর গ্রুপে এদের অবস্থান। 
ক্ষার ধাতু ৬টি। লিথিয়াম (Li), সোডিয়াম (Na), পটাশিয়াম (K), রুবিডিয়াম (Rb), সিজিয়াম (Cs), এবং ফ্রান্সিয়াম(Fr). 
ইলেকট্রন বিন্যাস করলে এদের সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তরের s - অরবিটালে একটি ইলেকট্রন থাকে। ক্ষার ধাতু সমূহ অধাতুর সাথে বিক্রিয়া করে আয়নিক লবণ গঠন করে। ক্ষার ধাতু গুলির আয়নিকরণ শক্তি, ইলেকট্রন আসক্তি, তড়িৎ ঋণাত্মকতা যেকোনো পর্যায়ের অন্য মৌল গুলির চেয়ে কম হয়। ক্ষার ধাতু সমূহ সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তর থেকে একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে একক ধনাত্মক আয়ন গঠন করে এবং এদের নিকটতম নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাস অর্জন করে স্থিতিশীলতা লাভ করে। ক্ষার ধাতু সমূহ অধিক সক্রিয় হয়।

মৃৎক্ষার ধাতুঃ  পর্যায় সারণির গ্রুপ -২ এর মৌল সমূহ কে মৃৎক্ষারীয় ধাতু বলে। গ্রুপ- 2 এর মৌল ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামকে মাটির উপাদান হিসেবে পাওয়া যায়। ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম এর সাথে গ্রুপ -২ এর অন্য মৌল গুলির ধর্মের সাদৃশ্য থাকার কারণে এদেরকে মৃৎক্ষার ধাতু বলে। এ গ্রুপের মৌল সমূহ বেরিলিয়াম (Be), ম্যাগনেসিয়াম (Mg), ক্যালসিয়াম (Ca), স্ট্রোনসিয়াম (Sr), বেরিয়াম (Ba), রেডিয়াম (Ra). মৃৎক্ষারীয় ধাতুসমূহ পানির সাথে বিক্রিয়া করে হাইড্রোক্সাইড গঠন করে। মৃৎ ক্ষারীয় ধাতুর হাইড্রোক্সাইড গুলো এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে লবণ ও পানি গঠন করে। মৃৎক্ষার ধাতুর সক্রিয়তা ক্ষার ধাতুর থেকে কিছুটা বেশি। এদের আয়নিকরণ শক্তি, ইলেকট্রন আসক্তি, তড়িৎ ঋণাত্মকতা ক্ষার ধাতুর থেকে বেশি। মৃৎক্ষার ধাতুর বহিঃস্হ শক্তিস্তরে নিকটতম নিষ্ক্রিয় গ্যাস অপেক্ষা দুটি ইলেকট্রন বেশি থাকে এইজন্য এরা স্থিতিশীলতা লাভের জন্য সর্ববহিঃস্থ শক্তি স্তর থেকে দুইটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে দ্বি- ধনাত্মক আয়ন গঠন করে এবং স্থিতিশীলতা প্রাপ্ত হয়। এরা কার্বনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে ধাতুর কার্বাইড গঠন করে। আবার এরা নাইট্রোজেন এর সঙ্গে বিক্রিয়া করে ধাতুর নাইট্রাইড গঠন করে।



Na হতে একটি ইলেকট্রন অপসারিত হয়েছে।

Na~e---->Na+

অর্থাত্ Na+ এ ইলেকট্রন সংখ্যা (11-1)=10 টি কিন্তু এতে প্রটন রয়েছে 11 টি।তাই এতে একটি (+) চার্জ বিদ্যমান।অপরদিকে Na পরমাণুতে রয়েছে 11 টি প্রোটন।অর্থাত্ধনাত্মক ও ঋনাত্মক চার্জের সংখ্যা সমান তাই Na চার্জ নিরপেক্ষ।


 

সূত্র: কেন্দ্রীয় পরমাণুর সবশেষ স্তরের ইলেকট্রন সংখ্যা+হাইড্রোজেন বা হ্যালোজেন সংখ্যা(+ অথবা - চার্জ) যেমন: অ্যামোনিয়ার ক্ষেত্রে N এর সবশেষ স্তরের e সংখ্যা ৫ এবং এর সাথে ৩ টা H যুক্ত। সুতরাং ৫+৩=৮। অর্থাৎ অষ্টক সূত্র মানে।



ডিটারজেন্ট [Detergent]:-

ডিটারজেন্ট হল লবণ জাতীয় জৈব ও অজৈব পদার্থের মিশ্রণ । ডিটারজেন্টের গঠন অনেকটা সাবানের মত । এর অণুর একটি অংশ জলঅনুরাগী এবং অপরটি জলবিরাগী । এগুলি কয়লা ও পেট্রোলিয়ামের হাইড্রোকার্বন থেকে তৈরি হয় । হাইড্রোকার্বনের অংশটি জলবিরাগী এবং জলঅনুরাগী অংশটি সালফেট বা সালফোনেট দিয়ে গঠিত । ওয়াশিং পাউডারে প্রায় 10-30% ডিটারজেন্ট থাকে । ডিটারজেন্টে সোডিয়াম সালফেট ও সোডিয়াম সিলিকেট মেশানো হয়, কারণ এরা ডিটারজেন্টকে শুষ্ক রাখে । ডিটারজেন্টের সঙ্গে সোডিয়াম ট্রাইপলি ফসফেট বা সোডিয়াম কার্বনেট মিশিয়ে একে ক্ষারীয় করলে এর ময়লা পরিষ্কারের ক্ষমতা অনেকগুণ বেড়ে যায় । ডিটারজেন্টের কার্বক্সি মিথাইল সেলুলোজ উপাদানটি জলের মধ্যে ময়লার অণুগুলিকে প্রলম্বিত রাখে । ব্লিচিং পদার্থ হিসাবে সোডিয়াম পারবোরেট মেশালে শুভ্রতা বাড়ে ।
সাবানের পরিবর্তে জামা-কাপড় কাচা বা ধোয়ার জন্য বহুল পরিমাণে ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে । সমস্ত ডিটারজেন্ট কিন্তু একই সংযুক্তি থাকে না । প্রচলিত দুটি সিন্থেটিক ডিটারজেন্ট হল— (1) দীর্ঘ শৃঙ্খল সোডিয়াম অ্যালকিল সালফেট [CH3 - (CH2)10 - CH2 - SO-4Na+] এবং (2) দীর্ঘ শৃঙ্খল সোডিয়াম অ্যালকিল বেঞ্জিন সালফানেট [CH3 - (CH2)11 - C6H4 - SO-3Na+] । বর্তমানে দ্বিতীয় ডিটারজেন্টটি বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে ।
• প্রকৃতি:-
[i] ডিটারজেন্ট বস্তুটি গন্ধহীন, বর্ণহীন অনুদ্বায়ী কঠিন পদার্থ ।
[ii] এটি কঠিন ও তরল উভয় প্রকারের হয় এবং এটি একটি জৈব লবণ যা জলে সম্পূর্ণ দ্রবণীয় ।
[iii] সাধারণ অবস্থায় ডিটারজেন্ট প্রশম পদার্থ কিন্তু জলে দ্রবীভূত করলে ক্ষারীয় হয় ।
• ব্যবহার:- বর্তমান যুগে ডিটারজেন্টের ব্যবহার ব্যাপক । শুধুমাত্র কাপড় কাচার কাজ নয়, শ্যাম্পুতে, মুখ পরিষ্কার [Mouth wash] করতে ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা হয় । তাছাড়া জীবাণুনাশক হিসাবে ও খর জলে ফেনা উত্পন্ন করতে সাবানের অসুবিধা হলেও ডিটারজেন্টের হয় না । অ্যাসিড মিশ্রিত জল হলেও ডিটারজেন্ট ব্যবহারে অসুবিধা হয় না ।
• পরিবেশ দুষণ:- ডিটারজেন্টগুলি বায়োডিগ্রেডেবল নয়, সহজে এরা জল বা মাটির সঙ্গে মিশে অন্য পদার্থে বিয়োজিত হতে পারে না । এদের দীর্ঘ শৃঙ্খলগুলি প্রায় অবিকৃতভাবে জলের মধ্যে থাকে, তাতে জল দুষিত হয় । পরিণামে জলজ জীবনের ক্ষতি হয় এবং পরিবেশ দূষণ ঘটে ।



কোন নির্দিষ্ট উষ্ণতায় ১০০ গ্রাম দ্রাবকে গ্রামে প্রকাশিত যে পরিমাণ দ্রব দ্রবীভূত হয়ে সম্পৃক্ত দ্রবণ উৎপন্ন করে     তাকে ঐ উষ্ণতায় ঐ দ্রবের দ্রাব্যতা বলে। 

দ্রাব্যতা পদার্থের একটি ভৌত ধর্ম। কোন নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট পরিমাণ দ্রাবককে সম্পৃক্ত দ্রবণে পরিণত করতে যে পরিমাণ দ্রব দ্রবীভূত করতে হয় তাকেই ঐ তাপমাত্রায় ঐ দ্রবের দ্রাব্যতা বলে। কোন পদার্থের দ্রাব্যতা প্রকৃতপক্ষে ব্যবহৃত দ্রাবক, তাপমাত্রা ও চাপের উপর নির্ভর করে। তাপমাত্রার মত চাপও দ্রবণকে প্রভাবিত করে, সেটা তরল হোক বা বায়বীয়ই হোক। তাই দ্রাব্যতার সংজ্ঞা দেওয়ার সময় একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও চাপ উল্লেখ করা হয়। দ্রাব্যতা প্রকাশ করা হয় ঘনমাত্রা প্রকাশের বিভিন্ন একক (মোলারিটি, মোলালিটি, নরমালিটি ইত্যাদি) দ্বারা। কারণ দ্রাব্যতা মূলত কোন দ্রবণে দ্রবের সর্বোচ্চ ঘনমাত্রাকেই প্রকাশ করে । দ্রাব্যতা একটি আনুপাতিক রাশি। এর কোন একক নেই। যেমনঃ ৩৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় KNO3 এর দ্রাব্যতা হল 60 তাহলে বোঝা যাবে যে ঐ তাপমাত্রায় 100g পানিতে সর্বাধিক 60g KNO3 দ্রবীভূত হয়ে দ্রবণ উৎপন্ন করবে ।






বিক্রিয়া তাপের উপর ভিত্তি করে রাসায়নিক বিক্রিয়াকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

যথাঃ তাপোৎপাদী ও তাপহারী।

তাপোৎপাদী ও তাপহারী বিক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপঃ

১. যে রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে তাপশক্তির শোষণ এবং বিক্রিয়া অঞ্চলের তাপমাত্রা হ্রাস পায় তাকে তাপহারী বিক্রিয়া বলে।

অপরদিকে যে রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে তাপশক্তি উৎপন্ন হয় এবং বিক্রিয়া অঞ্চলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় তাকে তাপোৎপাদী বিক্রিয়া বলে।

২. তাপহারী বিক্রিয়ায় উৎপাদের মোট এনথালপি বিক্রিয়কের মোট এনথালপি অপেক্ষা বেশি হয়।

কিন্তু তাপোৎপাদী বিক্রিয়ায় উৎপাদের মোট এনথালপি বিক্রিয়কের মোট এনথালপি অপেক্ষা কম হয়।

 ৩. তাপহারী বিক্রিয়ায় তাপের শোষণ এবং ΔH এর মান ধনাত্মক হয়।

কিন্তু তাপোৎপাদী বিক্রিয়ায় তাপ উৎপন্ন হয় এবং ΔH এর মান ঋণাত্মক হয়।



জৈব রসায়নেঅ্যালকিন বা অলিফিন হলো অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন যাতে অবশ্যই একটি বা একাধিক কার্বন-কার্বন দ্বিবন্ধন (>C=C<) থাকবে।
সরলতম অ্যালকিনের উদাহরণ হল ইথিন(C2H4)।
অ্যালকোহল এর সাথে দ্বিগুণ পরিমাণ গাঢ় সালফিউরিক এসিড যোগ করে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় অ্যালকাইল হাইড্রোজেন সালফেট উৎপন্ন করা হয়। একে ১৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে অ্যালকিন। উৎপন্ন হয়।


CH3COOH + H2SO4(100 °C)→ CH3CHSO4 (165 °C) --> C2H4


C12H26 (500 °C)→ C10H22 + C2H4



i) অ্যালকাইন থেকে অ্যালকেন:

Ni চূর্ণ প্রভাবকের উপস্থিতিতে২০০' C তাপমাত্রায় প্রোপাইন এক অনু হাইড্রোজেন এর সাথে যুক্ত হয়ে প্রোপিন উৎপন্ন করে।উৎপন্ন প্রোপিন আবার এক অনু হাইড্রোজেনের সাথে যুক্ত হয়ে প্রোপেন উৎপন্ন করে।

ii) ফ্যাটি এসিডের সোডিয়াম লবনকে সোডালাইমের সাথে উওপ্ত করলে অ্যালকেন উৎপন্ন হয়।

iii) ধাতব প্রভাবক(Ni) উপস্থিতিতে ১৮০-২০০' C তাপমাত্রায় অ্যালকিন হাইড্রোজেনের বিক্রিয়া করে অ্যালকেন উৎপন্ন হয়।

iv) কার্বন মনোক্সাইড ও হাইড্রোজেন অথবা কার্বন ডাইঅক্সাইড ও হাইড্রোজেনের মিশ্রণকে ২৫০ তাপমাত্রায় উওপ্ত প্রভাবকের উপর দিয়ে প্রবাহিত করলে প্রচুর পরিমানে মিথেন উৎপন্ন হয়।


অ্যালকাইল হ্যালাইডের শুষ্ক ইথারীয় দ্রবণে ধাতব সোডিয়াম যোগ করে রিফ্লাক্স করলে উচ্চতর অ্যালকেন উৎপন্ন করার বিক্রিয়াকে উর্টজ বিক্রিয়া বলে।

   2RX + 2Na = R-R + 2NaX 

এখানে, R = অ্যালকাইল মূলক

         X= হ্যালাইড

উল্লেখ্য অনেকেই মনে করে উর্টজ বিক্রিয়া দ্বারা কেবল মাত্র জোড় সংখ্যক অ্যালকাইল মূলক বিশিষ্ট অ্যালকেন উৎপন্ন সম্ভব ! কিন্তু এ ধারণা ভুল !


একই ধরণের দুটি অ্যালকাইল হ্যালাইড ব্যবহার না করে যদি একটি জোড় ও একটি বিজোড় অ্যালকাইল হ্যালাইড ব্যবহার করা হয় তবে বিজোড় অ্যালকাইল মূলক বিশিষ্ট অ্যালকেন উৎপন্ন সম্ভব !

উদাহরণ-

CH3Cl + C2H5Cl + 2Na = 2NaCl + CH3-C2H5 (C3H8)



ডিকার্বক্সিলেশনঃ  জৈব এসিডের 

(R - COONa) সোডিয়াম লবণকে সোডালাইম {NaOH(CaO)} দ্বারা উত্তপ্ত করলে অ্যালকেন (R-H) প্রস্তুত হয়। 
জৈব এসিড থেকে অ্যালকেন প্রস্তুতির এ বিক্রিয়াকে ডিকার্বক্সিলেশন বিক্রিয়া বলে। 

এ বিক্রিয়ায় উৎপন্ন অ্যালকেনে, বিক্রিয়ক এসিডের লবণ থেকে একটি কার্বন পরমাণু কম থাকে বলে এরূপ নামকরণ করা হয়।

R-COONa+NaOH(CaO) ---->R-H +  Na₂CO₃(CaO)
 
যেমনঃ সোডিয়াম ইথানয়েট কে সোডালাইম সহ উত্তপ্ত করলে মিথেন উৎপন্ন হয়।

CH₃COONa + NaOH(CaO) ----->  CH₄ +  
                                                 Na₂CO₃(CaO)

 
এ বিক্রিয়ায় উৎপন্ন মিথেনে বিক্রিয়ক সোডিয়াম ইথানয়েট থেকে একটি কার্বন কম থাকে। 
এ বিক্রিয়ার মাধ্যমে জৈব যৌগে কার্বন পরমাণু হ্রাস করা যায়।