Recent Post
Loading...

 


লবণ

লবণের সংজ্ঞা

এসিডের প্রতিস্থাপনযোগ্য হাইড্রোজেন পরমাণু,ধাতু বা অন্য কোনো পজিটিভ তড়িৎ গ্রস্ত মূলক দ্বারা অথবা সম্পূর্ণরূপে প্রতিস্থাপিত হয়ে যে যৌগ উৎপন্ন করে তাকে লবণ বলে।
HCl+NaOH=NaCl+H2O
লবণ,তড়িৎ বিয়োজিত অবস্থায় হাইড্রোজেন আয়ন ছাড়া অন্য ক্যাটায়ন এবং হাইড্রোক্সিল ছাড়া অন্য অ্যানায়ন উৎপন্ন করে।
HCl=H++Cl
NaOH= Na++ OH
HCl+NaOH=H2O+Na++Cl
এখানে H+আয়ন দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে NaCl লবণ উৎপন্ন করে এবংNaCl তড়িৎ বিয়োজিত হয়ে H+এবং Cl– আয়ন উৎপন্ন করে।

লবনের শ্রেণীবিভাগ

  • ক) সমিত বা নরমাল লবণ
  • কোন অ্যাসিডের অণুতে প্রতিস্থাপনীয় সমস্ত হাইড্রোজেন পরমাণু, ধাতু বা অন্য কোনো পজিটিভ তড়িৎগ্রস্ত মূলক দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে যে লবণ উৎপন্ন করে তাকে নরমাল লবণ বা সমিত লবণ বলে।হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড থেকে উৎপন্ন সোডিয়াম ক্লোরাইড সালফিউরিক অ্যাসিড থেকে উৎপন্ন সোডিয়াম সালফেট নর্মাল লবণের উদাহরণ।
  • খ) ক্ষারকীয় লবণ
  • কোন ক্ষারকের সমস্ত হাইড্রোক্সিল মূলক এসিড দ্বারা সম্পূর্ণ প্রশমিত না হয় আংশিক প্রশমিত হওয়ার ফলে যে লবণ উৎপাদন হয় তাকে ক্ষারকীয় লবণ বলে
  • Pb(OH)2+HNO=Pb(OH)NO3-+H2O
  • ক্ষারীয় লেড কার্বনেট Pb(OH)2, 2PbCO3 ক্ষারীয় কপার কার্বনেটCuCO3,CuOH2 প্রভৃতি ক্ষারীয় লবণের উদাহরন।
  • গ) এসিড লবণ
  • এসিডের প্রতিস্থাপনীয় হাইড্রোজেন পরমাণু, ধাতু বা অন্য কোনো পজিটিভ তড়িৎগ্রস্ত মূলক দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে যে লবণ উৎপন্ন করে তাকে এসিড লবণ বলা হয়।
  • H2OSO4+NaOH=NaHSO4+H2Oহাইড্রোজেন পরমাণু দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে সোডিয়াম বাই সালফেট লবনের উৎপন্ন করেছে। NaHSO4 একটি এসিড লবণ।
  • সোডিয়াম বাই কার্বনেট NaHCO3, ডাই সোডিয়াম হাইড্রোজেন ফসফেটNa2HPO4 প্রভৃতি লবণগুলি এসিড লবণ।
  • ঘ) দ্বিধাতব লবণ
  • অনেক সময় দুটি লবণ নির্দিষ্ট আণবিক অনুপাতে যুক্ত হয়ে নতুন লবন সৃষ্টি করে।কঠিন অবস্থায় এই লবণ স্থায়ী কিন্তু জলে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ বিয়োজিত হয়ে উপাদান লবণ আয়ন উৎপন্ন করে। অ্যালাম K2SO4,AL(SO4)3, 24H2O ক্রম অ্যালাম K2SO4,Cr2(SO4)3, 24H2O এই জাতীয় লবণের উদাহরণ।

প্রশমন

প্রশমনের সংজ্ঞা

এসিড বা ক্ষারের মধ্যে বিক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে ধর্ম সম্পূর্ণরূপে লোপ পেয়ে লবণ ও জল উৎপন্ন হয়। এসিড ও ক্ষারের মধ্যে এইরকম বিক্রিয়াকে প্রশমন ক্রিয়া বলে।
তুল্য পরিমাণ এসিডের সঙ্গে তুল্য পরিমাণ ক্ষারের বিক্রিয়ায় লবণ ও জল উৎপন্ন হয়। উৎপন্ন দ্রবণে এসিড বা ক্ষারের ধর্ম প্রকাশ পায় না। এইরকম বিক্রিয়াকে প্রশমন বলে।
যেমন HCl এর সঙ্গে NaOH এর বিক্রিয়ায় NaCl লবণ ও জল উৎপন্ন হয়।
HCl+NaOH=NaCl+H2O

  • অ্যাসিডের দ্রবণে H+ আয়ন থাকে এবং দ্রবণে এসিডের ধর্ম এই H+ আয়নের জন্য। আবার ক্ষার দ্রবণে OH আয়ন থাকে দ্রবণের ক্ষারীয় ধর্ম OH আয়নের জন্য। জলের মধ্যে এসিডের ধর্ম ও নাই আবার ক্ষারের ধর্ম নেই।
    সুতরাং, জলীয় দ্রবণের তুল্যাঙ্ক পরিমাণে এসিড ও ক্ষার মেশালে এসিডের H+ আয়ন ও ক্ষারের OH আয়নের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তড়িৎ নিরপেক্ষ জলের অণু উৎপন্ন করে। দ্রবণে অতিরিক্ত H+ আয়ন অথবা অতিরিক্ত OH থাকে না। ফলে দ্রবণে এসিড বা ক্ষার এর কোন কোন প্রকাশ পায় না। এই দ্রবণ লাল লিটমাসকে নীল, নীল লিটমাসকে লাল করে না। এসিডের অ্যানায়ন এবং ক্যাটায়ন এর কোন পরিবর্তন হয়না।
  • HCl=H++Cl
    NaOH= Na++ OH
    HCl+NaOH=H2O+Na++Cl
    ল্যাবরেটরীতে এসিড ও ক্ষারের প্রশমন বিক্রিয়া ঘটানো হয় টাইট্রেশন পদ্ধতিতে।
বিলীয়মান রং

এমোনিয়া জলে দ্রবীভূত হয়ে অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড উৎপন্ন করে। অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড একটি মৃদু ক্ষার। অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড এর সঙ্গে সামান্য ফেনোফথ্যালিন নির্দেশক যোগ করলে দ্রবণের বর্ণ লালচে বেগুনি হয়ে যায়। সাদা কাপড়ে এই রং দিলে কাপড়টি লালচে বেগুনি হয়ে যায়। যেহেতু এমোনিয়া একটি গ্যাস,তাই বাতাসের সংস্পর্শে এলে ওই দ্রবণ থেকে অ্যামোনিয়া বাষ্পীভূত হয়ে উড়ে যায়।এমোনিয়া না থাকায় দ্রবণের ক্ষার ধর্ম আর থাকেনা প্রসম হয়ে যায়। প্রশম দ্রবণে ফেনোফথ্যালিন এর কোন বর্ণ নেই, তাই ওই লালচে বেগুনি রং অদৃশ্য হয়ে যায়। কাপর্টি আবার আগের মত সাদা হয়ে যায়। ফেনোফথ্যালিন যুক্ত অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড এর দ্রবণকে তাই বিলীয়মান রং বলে।

নির্দেশক এবং প্রশমন বিক্রিয়ায় নির্দেশক এর প্রয়োজনীয়তা

কতকগুলি জৈব যৌগ আছে যাদের বর্ণ এসিডে একরকম এবং ক্ষারে অন্যরকম হয়। এই জৈব যৌগ গুলিকে নির্দেশক বলে।টাইট্রেশন এর সময় অ্যাসিড এবং ক্ষারের মধ্যে বিক্রিয়ায়এই নির্দেশক গুলি নিজেদের বর্ণ পরিবর্তন করে বিক্রিয়ায় প্রশমন ক্ষন নির্দেশ করে। লিটমাস দ্রবণ, মিথাইল অরেঞ্জ, ফেনোফথ্যালিন প্রভৃতি এই জাতীয় জৈব যৌগ। এরা নির্দেশক। দ্রবণের নির্দেশক এর বর্ণ দেখে দ্রবণটি আম্লিক না ক্ষারীয় বা প্রশমন তা জানা যায়।

তুল্য পরিমাণ অ্যাসিড কাকে বলে

এসিডের যত ভাগ ওজনের একভাগ ওজনের প্রতিস্থাপনীয় হাইড্রোজেন থাকে তাকে তুল্য পরিমাণ এসিড বলে।

তুল্য পরিমাণ ক্ষার কাকে বলে

ক্ষারের যতভাগ ওজন এক তুল্য পরিমাণ অ্যাসিডকে প্রশমিত করে, তাকে তুল্য পরিমাণ ক্ষার বলে।

 


অ্যাসিড

অ্যাসিড কাকে বলে

হাইড্রোজেন যুক্ত যে যৌগের স্বাদ অম্ল এবং যে যৌগের হাইড্রোজেন পরমাণুকে ধাতু বা ধাতুর মতো আচরণকারি মুলক দ্বারা আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে প্রতিস্থাপন করা যায়, তাকে অ্যাসিড বলে।

আয়নীয় তত্ত্ব অনুযায়ী অ্যাসিডের সংজ্ঞা

যে হাইড্রোজেন ঘটিত যৌগ জলীয় দ্রবণে বিয়োজিত হয়ে ক্যাটায়ন রূপে শুধু H+ আয়ন দেয় সেই যৌগকে অ্যাসিড বলে। সালফিউরিক অ্যাসিড, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড, নাইট্রিক অ্যাসিড, ফসফরিক অ্যাসিড, কার্বনিক অ্যাসিড প্রভৃতি কয়েকটি প্রধান এসিড। খনিজ পদার্থ থেকে এগুলি প্রস্তুত করা হয় বলে এদেরকে খনিজ এসিড বলে। এসিডের জলীয় দ্রবণে H+ আয়ন ছাড়া অন্য ক্যাটায়ন থাকে না।
HCl⇋H++Cl
অ্যাসিটিক অ্যাসিড, ফরমিক অ্যাসিড প্রভৃতি অ্যাসিড জৈব পদার্থ থেকে পাওয়া যায় বলে এদেরকে জৈব এসিড বলে।

অ্যাসিডের ধর্ম

  • অ্যাসিডের ধর্ম (প্রধান) হল জলীয় দ্রবণে হাইড্রোজেন আয়ন উৎপন্ন করা। এই H+ আয়নের উপস্থিতির জন্য দ্রবণে অ্যাসিডের ধর্ম প্রকাশ পায়।
  • ক) এসিডের স্বাদ অম্ল হবেই। খুব পাতলা হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড এক ফোঁটা জিভে লাগালে টক লাগে।
  • খ) অ্যাসিড নির্দেশকের বর্ণ পরিবর্তন করে। যেমন অ্যাসিড লিটমাস কাগজকে লাল করে দেয় এবং মিথাইল অরেঞ্জকে গোলাপী লাল রঙে কনভার্ট করে দেয়।
  • গ) ক্ষার বা ক্ষারকের সঙ্গে বিক্রিয়ায় লবণ এবং জল উৎপন্ন করে যেমন হাইড্রোক্লোরিক এসিডের সঙ্গে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড এর বিক্রিয়ায় সোডিয়াম ক্লোরাইড লবণ এবং জল উৎপন্ন হয়।
  • HCl+NaOH=NaCl+H2O
  • ঘ) ধাতুর সঙ্গে বিক্রিয়া
  • হাইড্রোজেন এর চেয়ে বেশি তড়িৎ ধনাত্মক ধাতুর সঙ্গে বিক্রিয়ায় এসিডের প্রতিস্থাপনযোগ্য হাইড্রোজেন, ধাতু দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে লবণ উৎপন্ন করে এবং হাইড্রোজেন গ্যাস নির্গত হয়।
  • Mg+2HCl=MgCl2+H2
  • ঙ) কার্বনেট অথবা বাই কার্বনেট লবণ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন করে।
  • H2SO4+NaCO3=NaSO4+CO2+H2Oছ) এসিডের ক্ষারগ্রাহীতা
  • চ) কোন এসিডের একটি অনুর মধ্যে যত সংখ্যক প্রতিস্থাপনীয় হাইড্রোজেন পরমাণু থাকে সেই সংখ্যাকেই এসিডের ক্ষারগ্রাহীতা বলে।
  • হাইড্রোক্লোরিক এসিডের ক্ষারগ্রাহীতা 1। ফসফরিক এসিডের ক্ষারগ্রাহীতা 3। সালফিউরিক এসিডের ক্ষারগ্রাহীতা 2।
  • চ) আয়নীয় বিয়োজনে এসিডের জলীয় দ্রবণে ক্যাটায়ন রূপে শুধু H+ বর্তমান থাকে।

তীব্র অ্যাসিড কি

যে এসিড জলীয় দ্রবণে তড়িৎ বিভাজিত হয়ে বেশি পরিমাণ H+ আয়ন উৎপন্ন করে তাকে তীব্র অ্যাসিড বলে। যেমন HCl, H2SO4, HNO3

অ্যাসিডের শনাক্তকরণ

  • ক) লিটমাস দ্রবণ অ্যাসিড এর সংস্পর্শে এলে লাল হয়ে যায়। মিথাইল অরেঞ্জ নির্দেশক এসিডের মধ্যে দু’ফোঁটা যোগ করলে এসিডের বর্ণ লাল হয়ে যায়।
  • ‘খ) সোডিয়াম কার্বনেট দ্রবনে এসিড যোগ করলে প্রচুর বুদবুদ সৃষ্টি হয়। এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গত হতে থাকে।

ক্ষারক

যে যৌগ (সাধারণত ধাতব অক্সাইড বা হাইড্রোক্সাইড) অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবণ ও জল উৎপন্ন করে তাকে ক্ষারক বলে।
যেমনNa2O, MgO, Al(OH)3 প্রভৃতি।
ZnO+2HCl=ZnCl2+H2O

আয়নীয় তত্ত্ব অনুযায়ী ক্ষারের সংজ্ঞা

যেসব যৌগ জলীয় দ্রবণে আয়নিত হয় হাইড্রোক্সিল (OH-) আয়ন উৎপন্ন করে, এবং হাইড্রোক্সিল আয়ন ছাড়া অন্য কোন অ্যানায়ন উৎপন্ন করে না তাদের ক্ষারক বলে।
NaO+ H2O= 2NaOH
NH3, ধাতব অক্সাইড বা হাইড্রোক্সাইড নয়, কিন্তু যেহেতু NH3 এসিডের সঙ্গে বিক্রিয়ায় লবণ উৎপন্ন করে এবং জলীয় দ্রবণে OH আয়ন দেয়, তাই NH3 কে ক্ষারক হিসেবে গণ্য করা হয়।

ক্ষারকের ধর্ম

  • ক) ক্ষারক নির্দেশক এর বর্ণ পরিবর্তন করে
  • লিটমাস এ ক্ষারক যোগ করলে নীল বর্ণ ধারণ করে, মিথাইল অরেঞ্জ এর সাথে ক্ষারক যোগ করলে হলুদ বর্ণ ধারণ করে, ফেনালপ্থ্যালিনের সাথে ক্ষারক যোগ করলে বর্ণহীন হয়।
  • খ) জলে দ্রবণীয় ক্ষারক গুলি জলীয় দ্রবণে তড়িৎ বিয়োজিত হয়ে অ্যানায়ন রূপে কেবল OH আয়ন উৎপন্ন করে NaOH=Na++OH
  • গ) অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবণ এবং জল উৎপন্ন করে।
  • NaOH এর সঙ্গে HClএর বিক্রিয়ায় NaCl লবণ এবং জল উৎপন্ন হয়।
  • Cu এর সঙ্গে সালফিউরিক এর বিক্রিয়ায় CuSO4 লবণ এবং জল উৎপন্ন করে।
  • সুতরাংNaOH, CuSO4 প্রভৃতি ক্ষারক পদার্থ।
  • ঘ) ক্ষারক এর OH আয়ন সর্বদাই এসিডের OHআয়নের সঙ্গে বিক্রিয়া করে জলের অনু গঠন করে। সেই জন্য ক্ষারককে H+ আয়ন বা প্রোটন গ্রাহক বলে।

ক্ষার

যে সমস্ত ক্ষারক (ধাতব অক্সাইড বা হাইড্রোক্সাইড) জলে দ্রবীভূত হয়, তাদের ক্ষার বলে। ক্ষারের জলীয় দ্রবণ লাল লিটমাসকে নীল করে এবং অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া দ্বারা লবণ ও জল উৎপন্ন করে। ক্ষার দ্রবণে হাত দিলে সাবানের মত পিচ্ছিল বোধ হয়।

সব ক্ষারক জলে দ্রবণীয় না হতে পারে, কিন্তু ক্ষার মাত্রই জলে দ্রাব্য। সুতরাং সকল ক্ষারক ক্ষার নয় কিন্তু সকল ক্ষারই ক্ষারক। যেমনAl(OH)³ জলে দ্রবীভূত হয় না সুতরাং এটি ক্ষারক, ক্ষার নয়।

NaOH একটি ক্ষারক, কিন্তু জলে দ্রবীভূত হয়ে আয়নিত হয় এবং OH আয়ন দেয় তাই এটি ক্ষার। ক্ষারক জলে দ্রবীভূত হয়ে ক্ষার উৎপন্ন করে সুতরাং সব ক্ষারই ক্ষারক কিন্তু যেহেতু সব ক্ষারক জলে দ্রবীভূত হয় না তাই সব ক্ষারক ক্ষার নয়।

তীব্র ক্ষার

যে ক্ষার জলীয় দ্রবণে তড়িৎ বিভাজিত হয়ে বেশি পরিমাণে OH আয়ন উৎপন্ন করে তাকে তীব্র ক্ষার বলে।
যেমন সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইড ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড প্রভৃতি তীব্র ক্ষার।

মৃদু ক্ষার

যেসব ক্ষার জলীয় দ্রবণে তড়িৎ বিয়জিত হয়ে কম সংখ্যাক OH আয়ন উৎপন্ন করে তাকে মৃদু ক্ষার বলে। যেমন অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড NH4OH ফেরিক হাইড্রক্সাইড Fe(OH)3 ইত্যাদি।

ক্ষারক বা ক্ষারের অম্ল গ্রহীতা
কোন ক্ষারকের একটি অনুর মধ্যে যত সংখ্যক OH মূলক বর্তমান থাকে, ওই সংখ্যাকে ওই ক্ষারের অম্ল গ্রহীতা বলে। যেমন সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড NaOHএর অম্ল গ্রহীতা 1, ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড Ca(OH)2 এর অম্ল গ্রহীতা 2।

ক্ষার সনাক্তকরণ

  • ক) ক্ষারের জলীয় দ্রবণে দু’ফোঁটা লাল লিটমাস দ্রবণ যোগ করলে দ্রবণটি নীল হয়ে যায়।
  • খ) দু-এক ফোঁটা ফেনোলফ্থলেইন দ্রবণ ক্ষার দ্রবণে যোগ করলে দ্রবণের বর্ণ লালচে বেগুনি হয়ে যায়।

 


হাইড্রোজেন

হাইড্রোজেন এর চিহ্নH
হাইড্রোজেনের সংকেতH2
হাইড্রোজেনের যোজ্যতা1
হাইড্রোজেনের পারমাণবিক ওজন বা গুরুত্ব1
হাইড্রোজেনের আবিস্কারহেনরি ক্যাভেন্ডিস ( ১৭৬৬ সালে )
হাইড্রোজেন

হাইড্রোজেনের ধর্ম

  • হাইড্রোজেন এর ধর্ম H2 এর ধর্মকে আমরা মূলত দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি।
    ১.হাইড্রোজেন এর ভৌত ধর্ম এবং
  • ২. হাইড্রোজেন এর রাসায়নিক ধর্ম

১. হাইড্রোজেনের ভৌত ধর্ম:

  • ক) বিশুদ্ধ হাইড্রোজেন, বর্ণহীন, স্বাদহীন, গন্ধহীন।
  • খ) জলে প্রায় অদ্রাব্য গ্যাস।
  • গ) হাইড্রোজেন সবচেয়ে হালকা মৌল।
  • ঘ) বাতাস হাইড্রোজেন এর চেয়ে 14.4 গুণ ভারী।

২. হাইড্রোজেনের রাসায়নিক ধর্ম: 

  • ক) হাইড্রোজেন গ্যাস দাহ্য কিন্তু দহনে সাহায্য করে না। H2 গ্যাসপূর্ণ একটি গ্যাসজার উপুড় করে ধরে ওর মধ্যে একটি জ্বলন্ত পাটকাঠির ঢুকালে দেখা যাবে পাটকাঠির নিভে গেল এবং H2 গ্যাস নিজে জ্বলতে থাকলো।
  • খ) অক্সিজেনের সঙ্গে:
  • হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন গ্যাসের মিশ্রণ এ অগ্নিসংযোগ করলে বিস্ফোরণ ঘটে এবং H2 গ্যাস নীলাভ শিখাসহ জ্বলে এবং জল উৎপন্ন করে। 2H2 + O2 = 2H2O
  • গ) H2 গ্যাস একটি বিজারক পদার্থ, উত্তপ্ত ধাতব অক্সাইডকে বিজারিত করে ধাতু উৎপন্ন করে। কালো বর্ণের CuOকে উত্তপ্ত করে ওর উপর দিয়ে H2 গ্যাস চালনা করলে কালো CuO বিজারিত হয়ে লাল বর্ণের ধাতব কপার উৎপন্ন করে। CuO + H2=Cu + 2H2O
  • ঘ) ধাতুর সঙ্গে:
  • উত্তপ্ত সোডিয়াম,পটাশিয়াম বা ক্যালসিয়াম ধাতুর সঙ্গে হাইড্রোজেনযুক্ত হয়ে হাইড্রাইড যৌগ উৎপন্ন করে। 2Na +H2=2NaH
  • ঙ ) নাইট্রোজেনের সঙ্গে:
  • 500 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায় 200 বায়ুমণ্ডল চাপে লোহাকে অনুঘটক রূপে ব্যবহার করলে H2 এবং নাইট্রোজেন গ্যাসের বিক্রিয়ায় অ্যামোনিয়া গ্যাস উৎপন্ন হয়। N2 + 3H2 = 2NH3
  • চ) ক্লোরিনের সঙ্গে:
  • হাইড্রোজেনের সঙ্গে ক্লোরিন গ্যাস মিশিয়ে আলোতে রাখলে হাইড্রোজেন-ক্লোরাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়। H2 + Cl2 = 2HCl
  • ছ) উত্তপ্ত সালফারের উপর দিয়ে H2 গ্যাস চালনা করলে পচা ডিমের গন্ধ বিশিষ্ট হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়। H2 + S = H2S
  • জ) অন্তর ধৃতি:
  • কতগুলি ধাতু যথা আয়রন, প্যালাডিয়াম, প্লাটিনাম প্রভৃতি হাইড্রোজেন গ্যাসকে শোষণ করে। শোষিত H2 গ্যাস কঠিন ধাতুতে দ্রবীভূত হয়। ধাতুটিকে উত্তপ্ত করলে হাইড্রোজেন গ্যাস আবার নির্গত হয়। এই ঘটনাকে অন্তর ধৃতি বলে।
  • ঝ) জায়মান হাইড্রোজেন:
  • রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে হাইড্রোজেন ঘটিত কোন যৌগ থেকে সদ্যমুক্ত হাইড্রোজেনকে জায়মান হাইড্রোজেন বলে।
  • হাইড্রোজেনের ব্যবহার

    • H2 এর ব্যবহার বহুধা। নিচে H2 গ্যাসের ব্যবহার সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো
    • ক) H2 গ্যাস বিজারক হিসেবে পরীক্ষাগারে ব্যবহার করা হয়।
    • খ) ঝালাইয়ের কাজে অক্সি-হাইড্রোজেন শিখা 2000 সেন্টিগ্রেড উৎপন্ন করতে পারে এবং হাইড্রোজেন টর্চ রূপে 5000 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড উষ্ণতা সৃষ্টি করতে পারে।
    • গ) সবচেয়ে হালকা বলে H2 গ্যাস বেলুনে ব্যবহার করা হয়।
    • ঘ) তেলকে হাইড্রোজেনীকরন দ্বারা চর্বিতে পরিণত করতে এবং অসম্পৃক্ত জৈব যৌগের সম্পৃক্ত যৌগে পরিণত করতে ব্যবহার করা হয়।
    • ঙ) মিথাইল অ্যালকোহল, HCl এবং কৃত্রিম সার প্রস্তুতিতে H2 ব্যবহার করা হয়।
    • এই ছিল প্রধানত H2 গ্যাসের ব্যবহার।
  • হাইড্রোজেনের সনাক্তকরণ

    • কিভাবে H2 গ্যাস সনাক্ত করতে হয় তার নিম্নলিখিত আলোচনায় বোঝা যাবে।
    • ক) বাতাসে অক্সিজেনের মধ্যে H2 গ্যাস নীল শিখা জ্বলে জল উৎপন্ন করে। উৎপন্ন জল লাল নীল লিটমাসের বর্ণ পরিবর্তন করে না। কিন্তু সাদা কপার সালফেটের সংস্পর্শে নীল হয়।
    • খ) প্যালাডিয়াম নিকেল প্রভৃতি ধাতু দ্বারা H2 গ্যাস হয়।
    • গ) H2 গ্যাসপূর্ণ গ্যাসজারে একটি জ্বলন্ত পাটকাঠি প্রবেশ করালে পাটকাঠির নিভে যাবে কিন্তু জারের মধ্যস্থ H2 গ্যাস নিল শিখায় জ্বলতে থাকবে।
    • এভাবেই আমরা প্রধানত H2 গ্যাসের শনাক্ত করতে পারি।
  • পরীক্ষাগারে হাইড্রোজেন গ্যাস প্রস্তুতি

    H2 গ্যাস প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্য:
    ১. লঘু সালফিউরিক অ্যাসিড
    ২. জিংকের ছিবড়া

    হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরির নীতি:
    সাধারণ তাপমাত্রায় জিংকের ছিবড়ার সঙ্গে লঘু সালফিউরিক এসিডের বিক্রিয়া দ্বারা পরীক্ষাগারে H2 গ্যাস প্রস্তুত করা হয়। বিক্রিয়ার ফলে জিংক সালফেট এবং H2 গ্যাস উৎপন্ন হয়।
    Zn + H2SO4= H2SO4+ H2

  • পরীক্ষাগারে H2 তৈরির পদ্ধতি
  • ১. একটি উলফ বোতলে কিছু জিংকের ছিবরা নিয়ে একমুখে একটি দীর্ঘনল ফানেল এবং অন্য মুখে একটি নির্গমনল কর্কের মধ্যে দিয়ে লাগানো হলো। দীর্ঘনল ফানেলের শেষপ্রান্ত যেন বোতলের তলদেশ পর্যন্ত পৌঁছায়।
  • ২. দীর্ঘনল ফানেলের মধ্যে দিয়ে উল্ফ বোতলের মধ্যে কিছু পরিমাণ জল ঢালা হল, যেন দীর্ঘনল ফানেলের শেষপ্রান্তটি জলে ডুবে থাকে।
  • ৩. এইবার বোতলটি বায়ু নিরুদ্ধ হয়েছে কিনা জানার জন্য নির্গমনলের শেষ প্রান্তে মুখ দিয়ে ফুঁ দেওয়া হল। এর ফলে কিছুটা জল দীর্ঘনল ফানেল বেয়ে উপরে উঠে যাবে। এখন নির্গমনলের শেষপ্রান্তটি বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে বন্ধ করা হলো। দীর্ঘনলের মধ্যে জলস্তম্ভটি যদি স্থির অবস্থায় থাকে তাহলে বোঝা যাবে যে, বোতলটি বায়ু নিরুদ্ধ হয়েছে।
  • ঘ) এইবার দীর্ঘনল ফানেলের মধ্যে দিয়ে লঘু সালফিউরিক অ্যাসিড ঢালা হল।এর ফলে জিংক এর সঙ্গে লঘু সালফিউরিক এসিডের বিক্রিয়ায় H2 গ্যাস নির্গত হতে শুরু করে।
  • ঙ) প্রথমে কিছু গ্যাস বের হয়ে গেলে বোতলের মধ্যস্থিত বাতাস বের হয়ে যায়। এখন নির্গম নল এর শেষ প্রান্তকে একটি জলপূর্ণ গ্যাসদ্রোনীর মধ্যে ডোবানো হল।
  • চ) একটি জলপূর্ণ গ্যাস নির্গমনলের শেষ প্রান্তের উপর উপুর করে দেওয়া হলো।
  • হাইড্রোজেন গ্যাস সংগ্রহ
  • এর ফলে উল্ফ বোতলে উৎপন্ন H2 গ্যাস নির্গমনের মধ্যে দিয়ে এসে বুদবুদের আকারে জলের নিম্ন অপসারণ দ্বারা গ্যাসজারে জমা হয়।




রাসায়ানিক বিক্রিয়ার ফলে H2 ঘটিত কোন যৌগ থেকে সদ্য মুক্ত হাইড্রোজেনকে জায়মান হাইড্রোজেন বলে। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় যখন কোন পদার্থ থেকে H2 উতপন্ন হয়, তখন ওই হাইড্রোজেনের সদ্যজাত অবস্থা , অর্থাৎ ওই H2 অনুতে পরিনত হওয়ার আগের অবস্থাকে জায়মান অবস্থা বলে। এই অবস্থা সল্পকাল স্থায়ী। জিঙ্কের সাথে লঘু সালফিউরিক অ্যাসিডের বিক্রিয়ায় যে সদ্দ্যজাত Hউৎপন্ন হয়, তা প্রথমে পারমানবিক অবস্থায় থাকে। জায়মান হাইড্রোজেন সাধারন হাইড্রোজেনের থেকে অনেক শক্তিশালী ও সক্রিয় কারন এই অবস্থায় H2 পারমানবিক অবস্থায় থাকে।

 


অক্সিজেন O

অক্সিজেনের চিহ্নO
অক্সিজেনের সংকেতO
অক্সিজেনের যোজ্যতা2
অক্সিজেনের পারমাণবিক গুরুত্ব16
অক্সিজেনের আবিস্কারঅক্সিজেন আবিষ্কার করেন জোসেফ প্রিস্টলি 1774 সালে
অক্সিজেন

অক্সিজেন সম্বন্ধে জানার আগ্রহ আমাদের প্রত্যেকেরই অনেকটা বেশি। তার কারণ আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই আর্টিকেলে আমরা দেখব অক্সিজেনের ধর্ম, কিভাবে অক্সিজেন তৈরি হয় এবং অক্সিজেন এর ব্যবহার।

অক্সিজেনের ধর্ম

অক্সিজেন একটি গ্যাস। এর ধর্মকে আমরা প্রাথমিকভাবে দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি।
১. ভৌত ধর্ম এবং ২. রাসায়নিক ধর্ম

১. অক্সিজেনের ভৌত ধর্ম

  • ক) অক্সিজেন বর্ণহীন, স্বাদহীন এবং গন্ধহীন গ্যাস।
  • খ) এই গ্যাস বাতাসের চেয়ে সামান্য ভারী।
  • গ) জলে সামান্য দ্রবীভূত হয়।
  • ঘ) শ্বাসকার্যে সাহায্য করে।

২. রাসায়নিক ধর্ম

  • ক) অক্সিজেন দহনে সাহায্য করে, কিন্তু নিজে দাহ্য নয়। কোন পদার্থ যখন জ্বলে তখন পদার্থটির সঙ্গে অক্সিজেনের রাসায়নিক সংযোগ ঘটে, যার ফলে অগ্নিশিখার সৃষ্টি হয়। এই জাতীয় রাসায়নিক বিক্রিয়াকে দহন বলে।
  • খ) অক্সিজেনের রূপভেদ:
    তিনটি অক্সিজেন পরমাণু যুক্ত হয়ে একটি ওজোন গ্যাসের অনু উৎপন্ন করে। ওজন হলো অক্সিজেনের একটি রূপভেদ। 2O3 = 3O
  • গ) রাসায়নিক স্বক্রিয়তা:
    O2 অত্যন্ত সক্রিয় মৌল। সোনা, প্লাটিনাম প্রভৃতি কয়েকটি মৌল ছাড়া বেশিরভাগ ধাতু এবং অধাতু সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত হয়ে অক্সাইড যৌগ উৎপন্ন করে।
  • ঘ) অধাতুর সঙ্গে বিক্রিয়া-আম্লিক অক্সাইড গঠন:
    অধাতুর সঙ্গে O2 যুক্ত হয় আম্লিক অক্সাইড উৎপন্ন করে।
  • একটুকরো লোহিত তপ্ত কার্বন নিয়ে একটি অক্সিজেন পুর্ন গ্যাসজারে প্রবেশ করালে কার্বন টুকরোটি আরও উজ্জ্বল ভাবে জ্বলবে এবং পুড়ে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হবে। C + O2  = CO2
  • প্রজ্বলন চামচে একটুকরো সালফার জ্বালিয়ে অক্সিজেনপূর্ণ গ্যাসজারে প্রবেশ করালে সালফার নীল শিখা সৃষ্টি করে জ্বলবে। সালফার অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সালফার ডাই অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন করে।
  • এক টুকরো ফসফরাসের আগুন ধরিয়ে একটি অক্সিজেনপূর্ণ গ্যাসজারের মধ্যে প্রবেশ করালে ফসফরাস তীব্রভাবে জ্বলতে থাকে এবং অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ফসফরাস পেন্টা অক্সাইড উৎপন্ন করে।
  • এইভাবে যে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হলো তার সঙ্গে জল মেশালে দেখা যাবে কার্বনিক এসিড উৎপন্ন হয় যা নীল লিটমাসকে লাল করে দেয়। অনুরূপে সালফার ডাই অক্সাইড জলের সঙ্গে মিশে সালফিউরাস এসিড উৎপন্ন করে। ফসফরাস পেন্টা অক্সাইড জলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ফসফরিক এসিড উৎপন্ন করে।
  • ঙ) ধাতুর সঙ্গে বিক্রিয়া ক্ষারীয় অক্সাইড গঠন:
  • ধাতুর সঙ্গে অক্সিজেন যুক্ত হয়ে ক্ষারীয় অক্সাইড উৎপন্ন করে যা জলে দ্রবীভূত হলে হার উৎপন্ন করে।
  • একটি ম্যাগনেসিয়াম ফিতা জ্বালিয়ে অক্সিজেনপুর্ন গ্যাসজারের মধ্যে প্রবেশ করানো হলো। ফিতাটি তীব্রভাবে জ্বলবে এবং ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইডের সাদা চূর্ণ উৎপন্ন করবে। এটি একটি ক্ষারীয় অক্সাইড। 2Mg + O2 = 2MgO
  • প্রজ্বলন চামচে এক টুকরো সোডিয়াম নিয়ে বার্নারে দিয়ে উত্তপ্ত করে অক্সিজেন পূর্ণ গ্যাসজারের মধ্যে প্রবেশ করালে সোনালি শিখাসহ জ্বলবে এবং সোডিয়াম মোনোঅক্সাইড উৎপন্ন করবে। উৎপন্ন সোডিয়াম মোনোঅক্সাইড এর মধ্যে জল দিলে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড ক্ষার উৎপন্ন হবে, যা লাল লিটমাসকে নীল করে দেয়। সুতরাং O2কে ক্ষার উৎপাদক ও বলা যায়।
  • লোহিত তপ্ত লোহা অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে ফেরোসোফেরিক অক্সাইড উৎপন্ন করে।
  • চ) হাইড্রোজেনের সঙ্গে:
  • অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেন গ্যাসের মিশ্রণ এর মধ্যে আগুন দিলে বিস্ফোরণ ঘটে জলীয়বাষ্প উৎপন্ন হয়। জল হল একটি প্রশম অক্সাইড। 2H2 + O2 = 2H2O
  • ছ) নাইট্রোজেনের সঙ্গে:
  • 3000 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায় বিদ্যুত স্ফুলিঙ্গের সাহায্যে অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেন যুক্ত হয়ে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপন্ন হয়। নাইট্রিক অক্সাইড একটি প্রশম অক্সাইড। N2 + O2  = 2NO
  • জ) অক্সিজেন একটি উত্তম জারক:
  • বিভিন্ন পদার্থকে O2 জারিত করতে পারে। বিভিন্ন ধাতু এবং অধাতু অক্সিজেনের ( O) মধ্যে উত্তপ্ত করলে জারিত হয়ে অক্সাইডে পরিণত হয়। 2Cu +O2  = 2CuO
  • এই বিক্রিয়ায় সেই অক্সিজেন এর দ্বারা তাড়িত হয়ে সেই হতে পরিণত হয়েছে।
  • লঘু H2SO4 যুক্ত হালকা সবুজ বর্ণের ফেরাস সালফেট দ্রবণে অক্সিজেন গ্যাস চালনা করলে ফেরাস সালফেট অক্সিজেন দ্বারা জারিত হয়ে বাদামী বর্ণের ফেরিক সালফেট উৎপন্ন করে।
  • ঝ) O2 গ্যাস ক্ষারীয় পাইরোগ্যালেট দ্রবণ দ্বারা শোষিত হয়।

অক্সিজেনের ব্যবহার

  • অক্সিজেনের ব্যবহার নিম্নরূপ–
  • ১. অক্সি হাইড্রোজেন শিখা বিভিন্ন ধাতু গলাতে ব্যবহৃত হয়।
  • ২. অক্সি এসিটিলিন শেখার উষ্ণতা 3000 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। এই শিখাকে ঝালাইয়ের কাজে ব্যবহার করা হয়।
  • ৩. সালফিউরিক এসিড ও নাইট্রিক এসিডের শিল্প উৎপাদন O2 ব্যবহার করা হয়।
  • ৪. প্রাণিজগতের অস্তিত্বের মূলে আছে অক্সিজেন। O2 গ্যাস শ্বাসকার্যে সাহায্য করে।
  • ৫. জলের নিচে ডুবুরিদের জন্য, উড়োজাহাজের চালক ও যাত্রীদের জন্য এবং মরণাপন্ন রোগীর শ্বাসকষ্ট সময় কৃত্রিম উপায়ে O2 গ্যাস সরবরাহ করা হয়।
  • ৬. আগুন ছাড়া আমাদের দৈনন্দিন জীবন চলতে পারে না। অক্সিজেন আগুন জ্বালাতে সাহায্য করে।

O2 গ্যাসের সনাক্তকরণ বা কিভাবে অক্সিজেনকে সনাক্ত করতে হয়

  • ১. শিখাহীন জ্বলন্ত একটি পাটকাঠিকে অক্সিজেন পূর্ণ জারে প্রবেশ করালে কাঠিটি তীব্রভাবে জ্বলে ওঠে।
  • ২. বর্ণহীন নাইট্রিক অক্সাইড গ্যাস অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসলে বাদামী রঙের নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন করে। 2NO+O2=2NO2 ( বাদামি)
  • ৩. ক্ষারীয় পটাশিয়াম পাইরোগ্যালেট দ্রবণে O2 শোষিত হয় এবং দ্রবণের বর্ণ বাদামি হয়।

পরীক্ষাগারে অক্সিজেন প্রস্তুতি

  • ক) পরীক্ষাগারে O2 গ্যাস প্রস্তুত করার জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্য
    ১. পটাশিয়াম ক্লোরেট (KClO3)
    ২. ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড (MnO2)
  • খ) পরীক্ষাগারে অক্সিজেন প্রস্তুত করার নীতি
    পটাশিয়াম ক্লোরেটকে খুব উত্তপ্ত করলে 610 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায় বিশ্লিষ্ট হয়ে পটাশিয়াম ক্লোরাইড এবং অক্সিজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়।
    পটাশিয়াম ক্লোরেট এর সঙ্গে ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড মেশালে কম উষ্ণতায় (200 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে 240 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) সহজে এবং তাড়াতাড়ি অক্সিজেন গ্যাস নির্গত হয়।
    2KClO3 + [MnO2] = 2KCl + 3O+ [MnO2]
    এই বিক্রিয়ায় ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইডের নিজের কোন রাসায়নিক পরিবর্তন হয়না।বিক্রিয়ার সময় ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড উপস্থিত থেকে বিক্রিয়াটিকে দ্রুত করতে সাহায্য করে মাত্র। এই বিক্রিয়ায় ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড অনুঘটক বা ক্যাটালিস্ট রূপে ব্যবহৃত হয়।
    গ) অক্সিজেন তৈরির পদ্ধতি
  • চার ভাগ ওজনের পটাশিয়াম ক্লোরেট এর সঙ্গে একভাগ ওজনের ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড ভালো করে মিশিয়ে মিশ্রণটিকে শক্ত কাঁচের টেস্ট টিউবের মধ্যে অর্ধেক ভর্তি করা হল।
  • টেস্ট টিউবের মুখটি একটি সছিদ্র কর্ক দিয়ে বন্ধ করে ওই ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে একটি নির্গম নল লাগানো হলো। নির্গম নলের শেষ প্রান্তটি একটি গ্যাস দ্রনীর মধ্যে ডোবানো থাকে।
  • টেস্ট টিউবটিকে একটি ক্লাম্পের সাহায্যে স্ট্যান্ড এর সঙ্গে এমন ভাবে আটকানো হল যেন টেস্টটিউবের সামনের দিকটা একটু ঢালু থাকে।
  • এখন টেষ্ট টিউব থেকে একটি বুনসেন বার্নার দিয়ে ধীরে ধীরে সমভাবে উত্তপ্ত করা হলো। কিছুক্ষণ পর নির্গমনলের শেষপ্রান্তে গ্যাস নির্গত হতে দেখা যাবে। কিছুটা গ্যাস বের হয়ে যেতে দেওয়া হল।কারণ টেস্টটিউবের ফাঁকা অংশে যে বায়ু ছিল তাকে এইভাবে বের করে দিতে হবে।
  • এইবার একটি জলপূর্ণ গ্যাস জারকে গ্যাস দ্রোনীর মধ্যে ডোবানো একটি মধুকোষপিঠের উপর উপুড় করে বসানো হলো এবং নির্গম নলের শেষপ্রান্তটি কে মধকোষপিঠের ভেতর প্রবেশ করানো হলো।
  • ঘ) পরীক্ষাগারে অক্সিজেন সংগ্রহ
    টেস্টটিউবে উৎপন্ন O2 গ্যাস নির্গমনলের ভেতর দিয়ে এসে বুদবুদের আকারে গ্যাসজারে জলের নিম্ন অপসারণ দ্বারা জমা হতে থাকে। গ্যাস জারের জল সম্পূর্ণ অপসারিত হলে একটি কাচের চাকতি দিয়ে গ্যাস জারের মুখটি বন্ধ করে গ্যাসদ্রোনী থেকে উঠিয়ে নেওয়া হলো। এইভাবে O2 গ্যাস সংগ্রহ করা হলো।
জায়মান অক্সিজেন কি

জায়মান অক্সিজেন বলতে বিক্রিয়ায় তৈরি হওয়া সদ্যজাত O2 কে বঝায়। বিক্রিয়ায় উতপন্ন হওয়ার পরপরই এরা সমযোজী হয়ে উঠতে পারে না তাই স্বল্পস্থায়ী হয় এবং এটি তীব্র জারন ক্ষমতা ধারন করে। এই জায়মান অক্সিজেন রঙিন বস্তুকে বর্ণহীন করে দেয়। যেমন দাগযুক্ত কাপড়ে ব্লিচিং পাউডার দিয়ে কাপড় দাগমুক্ত করা হয়। ব্লিচিং + কার্বন ডাই অক্সাইড + জল বিক্রিয়া করে হাইপক্লরাস অ্যাসিড উতপন্ন করে। এই হাইপক্লরাস অ্যাসিড বিয়োজিত হয়ে জায়মান অক্সিজেন উতপন্ন করে।