Recent Post
Loading...

অ্যাসিড ক্ষার ও ক্ষারক: ধর্ম ও সনাক্তকরণ

 


অ্যাসিড

অ্যাসিড কাকে বলে

হাইড্রোজেন যুক্ত যে যৌগের স্বাদ অম্ল এবং যে যৌগের হাইড্রোজেন পরমাণুকে ধাতু বা ধাতুর মতো আচরণকারি মুলক দ্বারা আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে প্রতিস্থাপন করা যায়, তাকে অ্যাসিড বলে।

আয়নীয় তত্ত্ব অনুযায়ী অ্যাসিডের সংজ্ঞা

যে হাইড্রোজেন ঘটিত যৌগ জলীয় দ্রবণে বিয়োজিত হয়ে ক্যাটায়ন রূপে শুধু H+ আয়ন দেয় সেই যৌগকে অ্যাসিড বলে। সালফিউরিক অ্যাসিড, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড, নাইট্রিক অ্যাসিড, ফসফরিক অ্যাসিড, কার্বনিক অ্যাসিড প্রভৃতি কয়েকটি প্রধান এসিড। খনিজ পদার্থ থেকে এগুলি প্রস্তুত করা হয় বলে এদেরকে খনিজ এসিড বলে। এসিডের জলীয় দ্রবণে H+ আয়ন ছাড়া অন্য ক্যাটায়ন থাকে না।
HCl⇋H++Cl
অ্যাসিটিক অ্যাসিড, ফরমিক অ্যাসিড প্রভৃতি অ্যাসিড জৈব পদার্থ থেকে পাওয়া যায় বলে এদেরকে জৈব এসিড বলে।

অ্যাসিডের ধর্ম

  • অ্যাসিডের ধর্ম (প্রধান) হল জলীয় দ্রবণে হাইড্রোজেন আয়ন উৎপন্ন করা। এই H+ আয়নের উপস্থিতির জন্য দ্রবণে অ্যাসিডের ধর্ম প্রকাশ পায়।
  • ক) এসিডের স্বাদ অম্ল হবেই। খুব পাতলা হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড এক ফোঁটা জিভে লাগালে টক লাগে।
  • খ) অ্যাসিড নির্দেশকের বর্ণ পরিবর্তন করে। যেমন অ্যাসিড লিটমাস কাগজকে লাল করে দেয় এবং মিথাইল অরেঞ্জকে গোলাপী লাল রঙে কনভার্ট করে দেয়।
  • গ) ক্ষার বা ক্ষারকের সঙ্গে বিক্রিয়ায় লবণ এবং জল উৎপন্ন করে যেমন হাইড্রোক্লোরিক এসিডের সঙ্গে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড এর বিক্রিয়ায় সোডিয়াম ক্লোরাইড লবণ এবং জল উৎপন্ন হয়।
  • HCl+NaOH=NaCl+H2O
  • ঘ) ধাতুর সঙ্গে বিক্রিয়া
  • হাইড্রোজেন এর চেয়ে বেশি তড়িৎ ধনাত্মক ধাতুর সঙ্গে বিক্রিয়ায় এসিডের প্রতিস্থাপনযোগ্য হাইড্রোজেন, ধাতু দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে লবণ উৎপন্ন করে এবং হাইড্রোজেন গ্যাস নির্গত হয়।
  • Mg+2HCl=MgCl2+H2
  • ঙ) কার্বনেট অথবা বাই কার্বনেট লবণ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন করে।
  • H2SO4+NaCO3=NaSO4+CO2+H2Oছ) এসিডের ক্ষারগ্রাহীতা
  • চ) কোন এসিডের একটি অনুর মধ্যে যত সংখ্যক প্রতিস্থাপনীয় হাইড্রোজেন পরমাণু থাকে সেই সংখ্যাকেই এসিডের ক্ষারগ্রাহীতা বলে।
  • হাইড্রোক্লোরিক এসিডের ক্ষারগ্রাহীতা 1। ফসফরিক এসিডের ক্ষারগ্রাহীতা 3। সালফিউরিক এসিডের ক্ষারগ্রাহীতা 2।
  • চ) আয়নীয় বিয়োজনে এসিডের জলীয় দ্রবণে ক্যাটায়ন রূপে শুধু H+ বর্তমান থাকে।

তীব্র অ্যাসিড কি

যে এসিড জলীয় দ্রবণে তড়িৎ বিভাজিত হয়ে বেশি পরিমাণ H+ আয়ন উৎপন্ন করে তাকে তীব্র অ্যাসিড বলে। যেমন HCl, H2SO4, HNO3

অ্যাসিডের শনাক্তকরণ

  • ক) লিটমাস দ্রবণ অ্যাসিড এর সংস্পর্শে এলে লাল হয়ে যায়। মিথাইল অরেঞ্জ নির্দেশক এসিডের মধ্যে দু’ফোঁটা যোগ করলে এসিডের বর্ণ লাল হয়ে যায়।
  • ‘খ) সোডিয়াম কার্বনেট দ্রবনে এসিড যোগ করলে প্রচুর বুদবুদ সৃষ্টি হয়। এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গত হতে থাকে।

ক্ষারক

যে যৌগ (সাধারণত ধাতব অক্সাইড বা হাইড্রোক্সাইড) অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবণ ও জল উৎপন্ন করে তাকে ক্ষারক বলে।
যেমনNa2O, MgO, Al(OH)3 প্রভৃতি।
ZnO+2HCl=ZnCl2+H2O

আয়নীয় তত্ত্ব অনুযায়ী ক্ষারের সংজ্ঞা

যেসব যৌগ জলীয় দ্রবণে আয়নিত হয় হাইড্রোক্সিল (OH-) আয়ন উৎপন্ন করে, এবং হাইড্রোক্সিল আয়ন ছাড়া অন্য কোন অ্যানায়ন উৎপন্ন করে না তাদের ক্ষারক বলে।
NaO+ H2O= 2NaOH
NH3, ধাতব অক্সাইড বা হাইড্রোক্সাইড নয়, কিন্তু যেহেতু NH3 এসিডের সঙ্গে বিক্রিয়ায় লবণ উৎপন্ন করে এবং জলীয় দ্রবণে OH আয়ন দেয়, তাই NH3 কে ক্ষারক হিসেবে গণ্য করা হয়।

ক্ষারকের ধর্ম

  • ক) ক্ষারক নির্দেশক এর বর্ণ পরিবর্তন করে
  • লিটমাস এ ক্ষারক যোগ করলে নীল বর্ণ ধারণ করে, মিথাইল অরেঞ্জ এর সাথে ক্ষারক যোগ করলে হলুদ বর্ণ ধারণ করে, ফেনালপ্থ্যালিনের সাথে ক্ষারক যোগ করলে বর্ণহীন হয়।
  • খ) জলে দ্রবণীয় ক্ষারক গুলি জলীয় দ্রবণে তড়িৎ বিয়োজিত হয়ে অ্যানায়ন রূপে কেবল OH আয়ন উৎপন্ন করে NaOH=Na++OH
  • গ) অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবণ এবং জল উৎপন্ন করে।
  • NaOH এর সঙ্গে HClএর বিক্রিয়ায় NaCl লবণ এবং জল উৎপন্ন হয়।
  • Cu এর সঙ্গে সালফিউরিক এর বিক্রিয়ায় CuSO4 লবণ এবং জল উৎপন্ন করে।
  • সুতরাংNaOH, CuSO4 প্রভৃতি ক্ষারক পদার্থ।
  • ঘ) ক্ষারক এর OH আয়ন সর্বদাই এসিডের OHআয়নের সঙ্গে বিক্রিয়া করে জলের অনু গঠন করে। সেই জন্য ক্ষারককে H+ আয়ন বা প্রোটন গ্রাহক বলে।

ক্ষার

যে সমস্ত ক্ষারক (ধাতব অক্সাইড বা হাইড্রোক্সাইড) জলে দ্রবীভূত হয়, তাদের ক্ষার বলে। ক্ষারের জলীয় দ্রবণ লাল লিটমাসকে নীল করে এবং অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া দ্বারা লবণ ও জল উৎপন্ন করে। ক্ষার দ্রবণে হাত দিলে সাবানের মত পিচ্ছিল বোধ হয়।

সব ক্ষারক জলে দ্রবণীয় না হতে পারে, কিন্তু ক্ষার মাত্রই জলে দ্রাব্য। সুতরাং সকল ক্ষারক ক্ষার নয় কিন্তু সকল ক্ষারই ক্ষারক। যেমনAl(OH)³ জলে দ্রবীভূত হয় না সুতরাং এটি ক্ষারক, ক্ষার নয়।

NaOH একটি ক্ষারক, কিন্তু জলে দ্রবীভূত হয়ে আয়নিত হয় এবং OH আয়ন দেয় তাই এটি ক্ষার। ক্ষারক জলে দ্রবীভূত হয়ে ক্ষার উৎপন্ন করে সুতরাং সব ক্ষারই ক্ষারক কিন্তু যেহেতু সব ক্ষারক জলে দ্রবীভূত হয় না তাই সব ক্ষারক ক্ষার নয়।

তীব্র ক্ষার

যে ক্ষার জলীয় দ্রবণে তড়িৎ বিভাজিত হয়ে বেশি পরিমাণে OH আয়ন উৎপন্ন করে তাকে তীব্র ক্ষার বলে।
যেমন সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইড ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড প্রভৃতি তীব্র ক্ষার।

মৃদু ক্ষার

যেসব ক্ষার জলীয় দ্রবণে তড়িৎ বিয়জিত হয়ে কম সংখ্যাক OH আয়ন উৎপন্ন করে তাকে মৃদু ক্ষার বলে। যেমন অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড NH4OH ফেরিক হাইড্রক্সাইড Fe(OH)3 ইত্যাদি।

ক্ষারক বা ক্ষারের অম্ল গ্রহীতা
কোন ক্ষারকের একটি অনুর মধ্যে যত সংখ্যক OH মূলক বর্তমান থাকে, ওই সংখ্যাকে ওই ক্ষারের অম্ল গ্রহীতা বলে। যেমন সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড NaOHএর অম্ল গ্রহীতা 1, ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড Ca(OH)2 এর অম্ল গ্রহীতা 2।

ক্ষার সনাক্তকরণ

  • ক) ক্ষারের জলীয় দ্রবণে দু’ফোঁটা লাল লিটমাস দ্রবণ যোগ করলে দ্রবণটি নীল হয়ে যায়।
  • খ) দু-এক ফোঁটা ফেনোলফ্থলেইন দ্রবণ ক্ষার দ্রবণে যোগ করলে দ্রবণের বর্ণ লালচে বেগুনি হয়ে যায়।

0 comments:

Post a Comment