Recent Post
Loading...

 


১.   রাসায়নিক সাম্যাবস্থা বলতে কী বোঝ

রাসায়নিক সাম্যাবস্থা হল রাসায়নিক প্রক্রিয়ার এমন একটি পরিস্থিতি যাতে বিক্রিয়ক ও উপাদের পরিমাণের মাত্রা অপরিবর্তিত থাকে। এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যখন সম্মুখ বিক্রিয়ার গতিবেগ এবং পশ্চা বিক্রিয়ার গতিবেগ সমান থাকে।

 

2.  উভমুখী বিক্রিয়া বলতে কী বোঝ

উভমুখী বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক পদার্থসমূহ বিক্রিয়া করে উপাদে পরিণত হয়, একইসাথে উপন্ন পদার্থসমূহ বিক্রিয়া করে পুনরায় বিক্রিয়কে পরিণত হয়। উভমূখী বিক্রিয়ায় একইসাথে দুটি বিক্রিয়া চলমান থাকে। উভমুখী বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে বিক্রিয়ক ও উপাদের মধ্যে উভমুখী তীর চিহ্ন () ব্যবহার করে বিক্রিয়ার সমীকরণ উপস্থাপন করা হয়।

 

3.  জারন সংখ্যা ও যোজনীর পার্থক্য ব্যাখ্যা কর

 জারন সংখ্যা ও যোজনীর মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ

জারন সংখ্যা

যোজনী

ইলেকট্রন ত্যাগ বা গ্রহনের ফলে পরমানুতে সৃষ্ট ধনাত্বক বা ঋনাত্বক চার্জের সংখ্যাকেই জারন সংখ্যা বলে।

একটি মৌলের সাথে অন্য মৌলের সাথে যুক্ত হওয়ার ক্ষমতাই হচ্ছে যোজনী

জারন সংখ্যা ধনাত্বক বা ঋনাত্বক হতে পারে

যোজনী সব সময় ধনাত্বক

জারন সংখ্যা ভগ্নাংশ কিংবা পূর্ন সংখ্যা হয়

যোজনী সব সময় পূর্ন সংখ্যা,ভগ্নাংশ হয়না

যোজনী দ্বারা অন্য মৌলের সাথে যুক্ত হওয়ার ক্ষমতা বুঝায়

জারন সংখ্যা দ্বারা অন্য মৌলের সাথে যুক্ত হওয়ার প্রকৃতি প্রকাশ পায়

 
4.  লা-শাতেলীয়ার নীতি ব্যাখ্যা কর

বিক্রিয়ার সাম্যবস্থায় সম্মুখমুখী ও বিপরীতমুখী উভয় বিক্রিয়া চলমান থাকে। উভমুখী বিক্রিয়ার সাম্যবস্থায় উপাদের পরিমাণ লা শাতেলিয়ারের নীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় । নীতিটি নিম্নরূপ

উভমুখী বিক্রিয়ার সাম্যবস্থায় বিক্রিয়ার যে কোন একটি নিয়ামক যেমন: তাপমাত্রা/চাপ/ঘনমাত্রা পরিবর্তন করলে বিক্রিয়ার সাম্যবস্থা এমনভাবে পরিবর্তন হয় যেন নিয়ামক পরিবর্তনের ফলাফল প্রশমিত হয় ।

 

5.  জারক ও বিজারক বলতে কী বোঝায়

জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ায় যে বিক্রিয়ক ইলেকট্রন গ্রহণ করে তা জারক এবং যে বিক্রিয়ক ইলেকট্রন বর্জন করে তা বিজারক বলে। যেমন:

Zn + CuSO4  ZnSO4 + Cu

এখানে Cu জারক ও Zn বিজারক।

 

6.  লোহায় মরিচা পড়া রাসায়নিক পরিবর্তন। ব্যাখ্যা কর

লোহার তৈরি দ্রব্যকে মুক্ত অবস্থায় রেখে দিলে তা বাতাসের অক্সিজেন ও জলীয়বাষ্পের সাথে বিক্রিয়ায় অংশগ্রহন করে। লোহা বায়ুর জলীয়বাষ্পের সাথে বিক্রিয়া করে মরিচা উপন্ন করে ।

Fe + O2 + H2 Fe2O3.nH2O(মরিচা)

এখানে মরিচার ধর্ম Fe, O H2O হতে আলাদা। তাই লোহায় মরিচা পড়া রাসায়নিক পরিবর্তন।

 

7.  বর্ষাকালে পাকা বাড়ির ছাদ পিচ্ছিল হলে বালু দেয়া হয় কেন

বর্ষাকালে বাড়ির ছাদ পিচ্ছিল করে ক্ষার জাতীয় পদার্থ এবং এ ক্ষারকে প্রশমিত করার জন্য এসিড জাতীয় পদার্থ যোগ করতে হবে। বালু অম্লধর্মী। তাই বালু যোগ করা হয়। এতে পিচ্ছিলতা হ্রাস পায়।

 

8.  বিক্রিয়ার হার কী কী বিষয়ের উপর নির্ভরশীল

বিক্রিয়ার হার বা গতিবেগ বিক্রিয়ার তাপমাত্রা, বিক্রিয়ার ঘনমাত্রা, বিক্রিয়কের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল এবং বিক্রিয়ায় ব্যবহৃত প্রভাবকের উপর নির্ভরশীল । বিক্রিয়ার তাপমাত্রা, বিক্রিয়ার ঘনমাত্রা, বিক্রিয়কের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল বৃদ্ধির সাথে বিক্রিয়ার হার বৃদ্ধি পায় । প্রভাবক ব্যবহারে বিক্রিয়ার হার বৃদ্ধি এবং হ্রাস উ্ভয়ই হতে পারে । বিক্রিয়ায় ব্যবহৃত প্রভাবকের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে হার বা গতিবেগ বৃদ্ধি বা হ্রাস পায় । এমনকি প্রভাবকের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে উপাদ ও ভিন্ন হয় ।

 

9.  রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পরমানু সৃষ্টি বা ধ্বংস হয় না। ব্যাখ্যা কর

রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পরমানু সৃষ্টি বা ধ্বংস হয় না, সাধারণত কোন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিক্রিয়কে কোন মৌলের যত সংখ্যক পরমাণু থাকে, উপাদে ঠিক তত সংখ্যক পরমানু থাকবে। কোনভাবেই একটি নির্দিষ্ট বিক্রিয়ায় পরমানু সংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে না। তাই বলা যায় যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পরমানু সৃষ্টি বা ধ্বংস হয় না।  

 

10.     কোন ধরনের বিক্রিয়ায় দর্শক আয়ন উপন্ন হয়

সাধারনত নন রেডক্স বিক্রিয়ায় কোন রকম ইলেকট্রন স্থানাস্তর ঘটে না। ফলে বিক্রিয়কের কোন মৌলের জারণ সংখ্যার পরিবর্তন ঘটে না। এ সকল বিক্রিয়ায় সাধারণত দর্শক আয়ন উপন্ন হয়, যা জলীয় দ্রবনে উপস্থিত থাকে। তবে রেডক্স বিক্রিয়াতেও অনেক সময় দর্শক আয়ন উপন্ন হয়।

 

11. কপার সালফেটে পানি যোজন ঘটলে রং যোগ হয় কেন

আনহাইড্রেট কপার সালফেট বর্ণহীন। এর কেলাসের সাথে পা৭চ অনু পানি যুক্ত হলে এর রঙ পরিবর্তন হয়। এর কারণ হলো এই পানির অনু কপার সালফেটের কেলাসে যুক্ত হয়ে আলোর লাল ও হলুদ ফোটন শোষণ করে। যেহেতু লাল ও হলুদ ফোটন শোষিত হয় তাই কেবলমাত্র নীল রঙ প্রতিফলিত হয়। এর কারণে কপার সালফেটে পানি যোজন ঘটলে রং যোগ হয়।

 

12.     পানিযোজন একটি সংযোজন বিক্রিয়া। ব্যাখ্যা কর

আয়নিক যৌগ কেলাস গঠনের সময় এক বা একাধিক সংখ্যক পানির অণুর সাথে যুক্ত হবার প্রক্রিয়াকে পানিযোজন বিক্রিয়া বলে। যেমন:

CuSO4 + 5H2O  CuSO4.5H2

আবার দুই বা ততোধিক যৌগ বা মৌল যুক্ত হয়ে নতুন যৌগ উপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়ার নাম সংযোজন বিক্রিয়া।

পানিযোজন বিক্রিয়া সংযোজন বিক্রিয়ার অনুরূপ। এ বিক্রিয়ায় দুটি যৌগ যুক্ত হয়ে একটি যৌগ উপন্ন হয় এবং এতে ইলেকট্রনের স্থানাস্তর হয় না। তাই বলা যায় পানিযোজন একটি সংযোজন বিক্রিয়া।

 

13.     মোমের জ্বলনে রাসায়নিক ও ভৌত পরিবর্তন হয় কেন

মোম কঠিন পদার্থ হলেও এর জ্বলনের সময় মোম গলতে শুরু করে এবং এটি ভৌত পরিবর্তন। পরবর্তীতে বায়ুর উপস্থিতিতে এর দহন হতে থাকে। এটি রাসায়নিক পরিবর্তন। মোম পোড়ানোর সময় পদার্থের তিনটি অবস্থা পরিলক্ষিত হয়। এক্ষেত্রে যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে তা হলো-

মোম+O­­ CO+ H2O +তাপ+ আলো

 

14.     সংশ্লেষণ বিক্রিয়া বলতে কী বোঝায়

যে সংযোজন বিক্রিয়ায় দুই বা ততোধিক মৌলিক পদার্থ যুক্ত হয়ে একটি মাত্র যৌগ উপন্ন করে তাকে সংশ্লেষণ বিক্রিয়া বলে। যেমন:

 H2 + Cl2  2HCl

 

15.     উভমুখী বিক্রিয়াকে কিভাবে একমুখী বিক্রিয়ায় পরিনত করা যায়

উভমুখী বিক্রিয়াকে নিম্নলিখিতভাবে একমুখী বিক্রিয়ায় পরিনত করা যায়

১. যে কোনো একটি উপাদ সরিয়ে নিয়ে

২. যেকোনো একটি উপাদ গ্যাসীয় হলে তা খোলো পাত্রে সংঘটিত করলে

 

16.     তাপোপাদী ও তাপহারী বিক্রিয়ার পার্থক্য লিখ

তাপোপাদী ও তাপহারী বিক্রিয়ার পার্থক্য নিম্নরূপ

তাপোপাদী বিক্রিয়া

তাপহারী বিক্রিয়া

তাপোপাদী বিক্রিয়ায় তাপ শক্তি উপন্ন হয়

তাপহারী বিক্রিয়ায় তাপ শক্তি শোষিত হয়

এ বিক্রিয়ায় H এর মান ঋণাত্মক হয়।

এ বিক্রিয়ায় H এর মান ধনাত্মক হয়।

 

17.     জারন ও বিজারন এর মধ্যে পার্থক্য লিখ

জারন ও বিজারন এর মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ

জারন

বিজারন

জারন প্রক্রিয়ায় ইলেকট্রন অপসারিত হয়

বিজারন প্রক্রিয়ায় ইলেকট্রন গৃহীত হয়

এ প্রক্রিয়ায় ঋণাত্মক মুলক বা মৌলের সংযোজন ঘটে

এ প্রক্রিয়ায় ধনাত্মক মুলক বা মৌলের সংযোজন ঘটে

 

18.     প্রশমন বিক্রিয়া রেডক্স বিক্রিয়া নয়। ব্যাখ্যা কর

প্রশমন বিক্রিয়ায় জারন মানের কোন পরিবর্তন হয় না বলে প্রশমন বিক্রিয়া রেডক্স বিক্রিয়া নয়। একটি প্রশমন বিক্রিয়া নিম্নরূপ

Na+OH- + H+Cl-  Na+Cl- + H2O[H+OH-]

এখানে দেখা যাচ্ছে যে বিক্রিয়ার কোন মৌলের বা যৌগমুলকের জারন মানের পরিবর্তন হয় নি। তাই প্রশমন বিক্রিয়া রেডক্স বিক্রিয়া নয়।

 

19.     আ্যমোনিয়াম সায়ানেট  ইউরিয়া একে অপরের সমানু। ব্যাখ্যা কর

একাধিক যৌগের আনবিক সংকেত একই হলেও গাঠনিক সংকেত ভিন্ন তারা একে অপরের সমানু।আ্যমোনিয়াম সায়ানেট  ইউরিয়া পরস্পরের সমানু 

NH4CNO → NH2-CO-NH2

এখানে উভয় যৌগের আনবিক সংকেত একই হলেও গাঠনিক সংকেত ভিন্ন। সুতরাং আ্যমোনিয়াম সায়ানেট  ইউরিয়া একে অপরের সমানু ।

 

20.    পানি সংযোজন ও পানি বিশ্লেষণ বিক্রিয়া এক নয়। ব্যাখ্যা কর

আয়নিক যৌগ কেলাস গঠনের সময় এক বা একাধিক সংখ্যক পানির অণুর সাথে যুক্ত হবার প্রক্রিয়াকে পানিযোজন বিক্রিয়া বলে। যেমন:

CuSO4 + 5H2O  CuSO4.5H2O

কোনো যৌগের দুই অংশ পানির বিপরীত আধানবিশিষ্ট দুই অংশের সাথে যুক্ত হয়ে নতুন যৌগ পন্ন করার প্রক্রিয়াকে আর্দ্রবিশ্লেষন বিক্রিয়া বলে। যেমন:

AlCl+ 3H2→ Al(OH)+ 3HCl

সুতরাং পানি সংযোজন ও পানি বিশ্লেষণ বিক্রিয়া এক নয়।

 

21.     পলিমারকরণ বিক্রিয়া কী

যে বিক্রিয়ায় অসংখ্য মনোমার থেকে পলিমার পন্ন হয় তাকে পলিমারকরণ বিক্রিয়া বলে ।যেমন: ভিনাইল ক্লোরাইড এর অসংখ্য অণু পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে বৃ্হ আণবিক ভরবিশিষ্ট নতুন যৌগ পলিভিনাইল ক্লোরাইড গঠন করে 

nH2C=CHCl(g)  (-CH2-CHCl-)n

 

22.    সমানুকরণ বিক্রিয়া কী

কোন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় যৌগের পরমাণুসমূ্হের পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে একটি সমানু থেকে অপর একটি সমানু পন্ন হলে তাকে সমানুকরণ বিক্রিয়া বলে এই বিক্রিয়ায় একই অণুর মধ্যে পরমাণুসমূহ পূনর্বিন্যস্ত হয়। যেমন: আ্যমোনিয়াম সায়ানেট  ইউরিয়া পরস্পরের সমানু 

NH4CNO → NH2-CO-NH2

 

23.    সমানুকরণ বিক্রিয়ার পরমানুর পূনর্বিন্যাস ঘটে।ব্যাখ্যা কর

কোন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় যৌগের পরমাণুসমূ্হের পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে একটি সমানু থেকে অপর একটি সমানু পন্ন হলে তাকে সমানুকরণ বিক্রিয়া বলে। আ্যমোনিয়াম সায়ানেট  ইউরিয়া পরস্পরের সমানু 

NH4CNO → NH2-CO-NH2

এখানে উভয় যৌগের আনবিক সংকেত একই হলেও গাঠনিক সংকেত ভিন্ন। তাই বলা যায়, সমানুকরণ বিক্রিয়ার পরমানুর পূনর্বিন্যাস ঘটে।

 

24.    গ্যালভানাইজিং বলতে কী বোঝায়

কোন ধাতুর ওপর দস্তার প্রলেপ দেয়াকেই বলে গ্যালভানাইজিং। সাধাসণত অধিকাংশ ধাতু বায়ু ও পানির সাথে বিক্রিয়অ করে। ফলে ধাতু ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। তাই ধাতুর ক্ষয় রোধে এর উপর জিংক ধাতুর প্রলেপ দেয়া হয় যাতে ধাতু বায়ু বা পানির সাথে বিক্রিয়া না করে। এজন্যই গ্যালভানাইজিং করা হয়।

 

25.    বিক্রিয়া সংঘটনের একটি ভালো উপায় হচ্ছে বিক্রিয়কগুলোকে দ্রবীভূত করা। ব্যাখ্যা কর

বিক্রিয়া সংঘটনের ক্ষেত্রে একটি ভালো উপায় হচ্ছে বিক্রিয়কসমূহকে পরস্পরের সংস্পর্শে আনা। বিক্রিয়কসমূহকে একটি দ্রাবকে দ্রবীভূত করা হলে বিক্রিয়ক অণুগুলো পরস্পরের খুব কাছাকাছি চলে আসে। ফলে সংঘর্ষ সঠিক মাত্রায় ঘটার সুযোগ পায়। সুতরাং বিক্রিয়া সংঘটনের একটি ভাল উপায় হচ্ছে বিক্রিয়কগুলোকে দ্রবীভূত করা।

 

26.    রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটনে আলো এর ভূমিকা ব্যাখ্যা কর

রাসায়নিক বিক্রিয়ায় আলোর ভূমিকা অপরীসিম। এমন কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়া আছে যেগুলো অন্ধকারে সংঘটিত হয় না কিন্তু আলোতে হয়। যেমন: H2 এবং Cl2 এর বিক্রিয়া।

আবার কোন বিক্রিয়া মৃদু আলোতে এবং কোন বিক্রিয়া প্রখন আলোতে সংঘটিত হয়।

 

27.    রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটনে তাপ, চাপ এর ভূমিকা ব্যাখ্যা কর

তাপের প্রভাবে রাসায়নিক বিক্রিয়ার হার ত্বরান্বিত হয়। যেমন KClO3 সাধারণ তাপমাত্রায় বিয়োজিত হয় না কিন্তু উচ্চ তাপমাত্রায় পটাশিয়াম ক্লোরাইড অক্সিজেনে বিয়োজিত হয়। যেমন:

KClO32KCl+3O2

কোন কোন ক্ষেত্রে চাপ প্রয়োগ করলে রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হয়। যেমন: চাপের প্রভাবে Pb ও S এর মধ্যে সংযোগ ঘটে এবং PbS তৈরি হয়।

Pb+SPbS

 

28.    অত্যানুকুল তাপমাত্রা কী

নির্দিষ্ট চাপে এবং প্রভাবকের উপস্থিতিতে এমন একটি তাপমাত্রা নির্ধারন করা হয় যেন বিক্রিয়ার গতি এবং উপাদ সর্বোচ্চ পরিমাণ হয়, সেই তাপমাত্রাকে অত্যানুকুল তাপমাত্রা বলে। যেমন: NH3 উপাদনে অত্যানুকুল তাপমাত্রা 4500C-5500C নির্ধারন করা হয়েছে। কারন উক্ত তাপমাত্রায় NH3 এর সর্বোচ্চ উপাদ পাওয়া যায়।

 

29.    প্রভাবক, সহায়ক বা উত্তেজক বা বিবর্ধক বলতে কী বোঝায়

যেসব পদার্থ নিজে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে না কিন্তু কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ায় প্রভাবকের সাথে উপস্থিত থেকে প্রভাবকের প্রভাবন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, তাদের প্রভাবক সহায়ক বা প্রভাবক বিবর্ধক বলে। যেমন: হেবার বোস পদ্ধতিতে NH3 শিল্পোপাদনে Fe3O4 প্রভাবকের সাথে প্রভাবক সহায়ক হিসেবে KOH ও Al2O3 এর মিশ্রণকে ব্যবহার করা হয়। ফলে প্রভাবকের প্রভাবক ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পায়।

N2 + 3H2   2NH3

 

30.    বিক্রিয়ার ঘনমাত্রা বাড়ালে বিক্রিয়ার হার বাড়ে কেন

বিক্রিয়ার হার বিক্রিয়ার ঘনমাত্রার উপর নির্ভরশীল। বিক্রিয়ার সাম্যাবস্থায় যেকোনো বিক্রিয়কের ঘনমাত্রা বাড়ালে বিক্রিয়ার হার বৃদ্ধি পায়। এতে নির্দিষ্ট আয়তনে অনুর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এতে অনুসমূহের মধ্যে কার্যকর সংঘর্ষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তাই বিক্রিয়ার হার বেড়ে যায়।

 

31.     সাম্যাবস্থার গতিশীলতা কী

উভমুখী বিক্রিয়ায় রাসায়নিক সাম্যাবস্থা অর্জিত হয়। একটি উভমুখী বিক্রিয়ার শুরুতে বিক্রিয়ক বিক্রিয়া করে উপাদ তৈরি করে। একই সাথে উপাদসমূহও বিক্রিয়া করে বিক্রিয়কে পরিণত হয়। একসময় সম্মুখ ও পশ্চাতমুখী বিক্রিয়ার হার সমান হয়। এ সময়ই রাসায়নিক সাম্যাবস্থা অর্জিত হয়। এ অবস্থায় বিক্রিয়া স্থির বলে মনে হয়। কিন্তু আসলে এ অবস্থায় দুটি বিপরীতমুখী বিক্রিয়অ একই হারে সম্পন্ন হতে থাকে। অর্থা বিক্রিয়া গতিশীল থাকে। সুতরাং বলা যায়, রাসায়নিক সাম্যাবস্থা একটি গতিশীল অবস্থা।

 

32.    Fe2+  আয়নটি জারিত ও বিজারিত হতে পারে। ব্যাখ্যা কর

রাসায়নিক বিক্রিয়ায় জারণ ও বিজারণ প্রক্রিয়া একই সঙ্গে ঘটে ।

বিক্রিয়ায় আয়নটি ইলেকট্রন গ্রহন করে অর্থা জারিত হয়ে এ পরিনত হয়।

Fe2++2e-Fe

বিক্রিয়ায় আয়নটি ইলেকট্রন বর্জন করে অর্থা বিজারিত হয়ে এ পরিনত হয়।

Fe2+-e-Fe3+

 

33.    Naএকটি জারক। ব্যাখ্যা কর

জারন বিজারণ বিক্রিয়ায় যে বিক্রিয়ক ইলেকট্রন গ্রহণ করে, তাকে জারক বলে। Naএকটি জারক কারণ এটি সর্বদা 1টি ইলেকট্রন গ্রহণ করে ধাতুতে পরিনত হয়। Naহতে ইলেকট্রন অপসারণ করতে অনেক শক্তির প্রয়োজন হয়ে বলে এটি হতে ইলেকট্রন বর্জন করা অসম্ভব। তাই এটি সর্বদা ইলেকট্রন গ্রহণ করে অর্থা এটি একটি জারক।

Na++ e- Na

 

34.    MnO4 এ Mn এর জারন সংখ্যা বের কর

MnOএ Mn এর জারণ সংখ্যা= x

O এর জারণ সংখ্যা= -2

MnOনিরপেক্ষ যৌগ। অতএব, MnO4 এ পরমাণুসমূহের জারন মান 0 হবে।

সুতরাং x+(-2)4=0

বা, x-8=0

বা, x=8

 

35.    H2S একটি বিজারক পদার্থ কেন

রাসায়নিক বিক্রিয়ায় যে পদার্থ ইলেকট্রন বর্জন করে তাকে বিজারক পদার্থ বলে। যেমন:

H2S + Cl2  2HCl + S

বিক্রিয়াটিতে এর সালফাইড আয়ন হতে 2টি ইলেকট্রনের বর্জন হয়েছে এবং এর জারন মানের বৃদ্ধি ঘটেছে। তাই একটি বিজারক।

 

36.    NaOH + HCl = NaCl + H2O বিক্রিয়াটি প্রশমন বিক্রিয়া কেন

যে বিক্রিয়ায় এসিড ও ক্ষার বিক্রিয়া করে লবন ও পানি উপন্ন করে তাকে প্রশমন বিক্রিয়া বলে। এখানে NaOH ক্ষার; HCl এসিড; NaCl লবন; H2O পানি। এখানেও এসিড ও ক্ষার বিক্রিয়ায় লবন ও পানি উপন্ন হয়েছে বিধায় বিক্রিয়াটি প্রশমন বিক্রিয়া।

 

37.    2Na + Cl2 = 2NaCl  বিক্রিয়াটি একই সাথে সংযোজন ও সংশ্লেষণ কেন

যে বিক্রিয়ায় একাধিক মৌল বা যৌগ যুক্ত হয়ে একটি মাত্র যৌগ উপন্ন করে তাকে সংযোজন বিক্রিয়া বলে। যে সংযোজন বিক্রিয়ায় দুই বা ততোধিক মৌলিক পদার্থ যুক্ত হয়ে একটি মাত্র যৌগ উপন্ন করে তাকে সংশ্লেষণ বিক্রিয়া বলে। বিক্রিয়াটি

2Na + Cl2 = 2NaCl 

বিক্রিয়ায় দুটি মৌল বিক্রিয়া করে 2NaCl উপন্ন করে যা সংযোজন ও সংশ্লেষণ বিক্রিয়ার অনুরূপ। তাই 2Na + Cl2 = 2NaCl  বিক্রিয়াটি একই সাথে সংযোজন ও সংশ্লেষণ বিক্রিয়া।



আয়রন নিষ্কাশন: 

আয়রন বা লোহার গুরুত্ব অপরীসিম। যে কোনো দেশের শিল্পোন্নয়নের জন্য লোহার তৈরী বিভিন্ন জিনিসের প্রয়োজন। এ ছাড়া প্রকৃতিতে আয়রন যথেষ্ট পরিমানে বিদ্যমান। ভূত্বকের শতকরা 4.15 ভাগ হচ্ছে লোহা। প্রকৃতিতে লোহা বিভিন্ন যৌগ হিসেবে আকরিকে থাকে। গুরুত্বপূর্ণ আকরিক হলো 

1.          ম্যাগনেটাইট Fe3O4

2.         হেমাটাইট Fe2O3

3.         লিমোনাইট Fe2O3.H2O

এ সকল আকরিক হতেই লোহা নিষ্কাশন করা হয়।

বাত্যাচুল্লী

লোহা নিষ্কাশনের ব্যবহৃত চিমনি আকৃতির বাত্যাচুল্লি আকারে বেশ বড় এবং পুরু ইস্পাতের পাত দ্বারা তৈরী। শতাধিক ফুট দীর্ঘ এ চুল্লির মাঝখানটি অপেক্ষাকৃত বেশ চওড়া। ইস্পাতের ভিতরের দিকে অগ্নিসহ মৃত্তিকার পুরু আস্তরন দেওয়া থাকে। চুল্লির নিচের অংশ ও এর চারদিকে কয়েকটি শক্ত ও মোটা নল থাকে। এগুলোকে টুইয়ের বলা হয়। এর সাহায্যে ভেতরে বায়ু সরবরাহ করা হয়। টুইয়ের নিচে চুল্লির নিম্নতম অংশে যে প্রকোষ্ঠ থাকে তাতে উৎপন্ন লোহা ও ধাতুমল জমা হয়। আকরিক, চুনাপাথর ও কোক প্রবেশ করানোর জন্য চুল্লির উপরে কাপ ও কোন নামক বিশেল ব্যবস্থা থাকে যা দিয়ে খনিজ প্রভৃতি ঢোকানোর সময় ভিতরের উত্তপ্ত গ্যাস বাইরে বেরিয়ে না আসে। চুল্লির বর্জ্য গ্যাস নির্গমনের জন্য একটি নির্গমন নালি থাকে। বর্জ্য গ্যাসে কার্বন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন থাকে।


ভস্মীকৃত আকরিক, কোক ও চুনাপাথর উপর হতে কাপ ও কোনের সাহায্যে চুল্লির ভেতর প্রবেশ করানো হয়। টুইয়ের এর সাহায্যে প্রচুর শুষ্ক উত্তপ্ত বায়ু সর্বদা চুল্লিতে প্রবেশ করে। উত্তপ্ত বায়ুর সংস্পর্মে কোক জারিত হয়ে কার্বন মনোক্সাইডে পরিণত হয় ও প্রচুর উত্তাপের সৃষ্টি করে। ফলে চুল্লির বেতরের পদার্থগুলো অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়। এর নিচের দিকে তাপমাত্রা প্রায় 15000C এবং উপরের দিকে তা কমতে কমতে 3000C-4000C হয়। এসব স্থানে আয়রন অক্সাইডের সঙ্গে কার্বন মনোক্সাইডের বিক্রিয়া ঘটে এবং ধাতব লৌহ উৎপন্ন হতে থাকে। নিম্নে একটি অ্যানিমেশন দেখানো হলো।



বাত্যাচুল্লির বিক্রিয়াসমূহ: 

চুল্লির নিম্নাংশে কোক পুড়ে প্রথমে কার্বন ডাইঅক্সাইড হয়। পরে এ কার্বন ডাইঅক্সাইড লোহিত তপ্ত কোকের সাথে বিক্রিয়ায় কার্বন মনোক্সাইড উপন্ন করে।

C+O2 CO2

C+ CO22CO

এই কার্বন মনোক্সাইড বিভিন্ন ধাপে আয়রন অক্সাইডকে জারিত করে ধাতব লোহাতে পরিনত করে।

3Fe2O3+CO3Fe3O4+CO2

Fe3O4+CO3FeO+ CO2

FeO+COFe+CO2

ব্যবহৃত চুনাপাথর বিয়োজিত হয়ে চুন ও কার্বন ডাইঅক্সাইড এ পরিনত হয়। চুন খনিজের সিলিকার সাথে যাক্ত হয়ে ক্যালসিয়াম সিলিকেটে পরিনত হয়। এটি অন্যান্য সিলিকেট ও খনিজের অপদ্রব্য শোষন করে ধাতুমল উপন্ন করে।

CaCO3CaO+ CO2

CaO+SiO2CaSiO3

চুল্লির নিচের অংশে খনিজের সাথে মিশ্রিত 55 এবং সিলিকা বিজারিত হয়ে যথাক্রমে ফসফরাস, ম্যাংগানিজ ও সিরিকনে পরিনত হয়।

Ca(PO4)23CaO+P2O5

P2O5+5C2P+5CO

MnO2+CMn+2CO

Mn2O3+3C2Mn+3CO

SiO2+2CSi+2CO

বিজারিত মৌলগুলো এবং সামান্য পরিমানে কার্বন গলিত লোহায় দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে। ধাতুমল ও লোহা উভয়ই চুল্লির নিম্নতম প্রকোষ্ঠতে জমা হয়। ধাতুমল ধাতু অপেক্ষা হালকা বলে তা গলিত লোহার উপর ভাসমান অবস্থায় থাকে। দুইটি নির্গমণ পথের সাহায্যে ধাতুমল ও গলিত লোহাকে পৃথক পৃথকভাবে বের করে নেয়া হয়। গলিত লোহাকে ঠান্ডা করে পিন্ড করা হয়। একেই কাস্ট আয়রন বলে। এতে মোটামুটি 4% কার্বন, 0.4% ম্যাঙ্গানিজ, 1-1.5% সিলিকন ও 0.10% ফসফরাস থাকে। চুল্লি হতে নির্গত ধাতুমল রাস্তা নির্মানে, সিমেন্ট উপাদনে এবং অন্যান্য নানা কাজে ব্যবহৃত হয়।

 


ডাল্টনের পরমানুবাদ ও তার সীমাবদ্ধতা

সকল পদার্থ ক্ষুদ্রতম পদার্থ দ্বারা গঠিত। গ্রিক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে এ অভিমত প্রকাশ করেন যে সকল পার্থিব পদার্থ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অবিভাজ্য কণা দ্বারা গঠিত। ডেমোক্রিটাস এ অবিভাজ্য ক্ষুদ্রতম কণার নাম দেন atomos। এ শব্দটি দুইটি গ্রিক শব্দ হতে উদ্ভূত: a অর্থ না এবং tomos অর্থ ভাগ করা। তাই atomos শব্দটির অর্থ হলো যা ভাগ করা যায় না। বিখ্যাত দার্শনিক অ্যারিস্টটল এর প্রভাবে এ মতবাদ চাপা পড়ে যায়। অ্যারিস্টটলের মতে পদার্থ নিরবিচ্ছিন্ন, তাকে যত ইচ্ছা ক্ষুদ্রতম অংশে ভাগ করা যায়। দীর্ঘ দিন পরে ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে পরমাণু মতবাদ আবার বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিকগনের সমর্থন লাভ করে।

অবশেষে গ্রিক দার্শনিক জন ডাল্টন 1803 সালে এ মতবাদকে বৈজ্ঞানিক মতবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। আধুনিক রসায়নের ভিত্তি হচ্ছে এ পরমানুবাদ। তাই জন ডাল্টনকে আধুনিক রসায়নের জনক হিসেবে অভিহিত করা হয়। 


স্বীকার্য সমূহ


1.    সকল পদার্থ অসংখ্য ক্ষুদ্র  ক্ষুদ্র কনা দ্বারা গঠিত। এ কনা গুলোর নাম  অ্যাটম বা পরমাণু। মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কনার নাম সরল পরমাণু(simple atom) এবং যৌগের ক্ষুদ্রতম কনার নাম যৌগিক বা যৌগ পরমাণু(compound atom) ।

2.   পরমানু অবিভাজ্য। তার র্সৃষ্টি ও ধ্বংস নেই। 

3.   পরমাণু সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যাই না, রাসায়নিক বিক্রিয়ায় শুধু এর সংযোগের পরিবর্তন হয়।

4.   একই পদার্থের সকল পরমাণুর ভর ও ধর্ম অভিন্ন

5.   ভিন্ন ভিন্ন পদার্থের পরমাণু ভর ও ধর্ম ভিন্ন। 

6.   পরমানু রাসায়নিক বিক্রিয়াই অংশ নিতে পারে।

7.   দুই বা ততোধিক পদার্থের পরমাণু সংযোগে নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয়। এ সংযোগ পূর্ণ সংখ্যার নির্দিষ্ট সরল অনুপাতে হয়।


সীমাবদ্ধতা 

ডাল্টনের পরমানুবাদ পদার্থের গঠন সম্পর্কে সর্বপ্রথম কিছু বৈজ্ঞানিক ধারনা দিলেও এ মতবাদের বেশ কিছু ত্রুটি আছে। যেমন-

1. কিন্তু যৌগের ক্ষুদ্রতম কনা হল অনু আর মৌলের ক্ষুদ্রতম কনা হলো পরমানু। সুতরাং ডাল্টনের পরমাণুবাদ অনু ও পরমানুর মধ্যে পার্থক্য দেখাতে বার্থ।

2. পরমাণু অবিভাজ্য নয়। পরমানুকে ভাঙলে মুল কনিকা পাওয়া যায়। যেমনঃ ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন ।

3. ডাল্টনের মতে একই পদার্থের সকল পরমাণুর ভর ও ধর্ম অভিন্ন। কিন্তু আইসোটোপ গুলোর ভর একই নয়।

4. ভিন্ন মৌলের পারমানবিক ভর অনেক সময় অভিন্ন হয়। যেমন আইসোবার গুলোর ভর অভিন্ন।