ডাল্টনের পরমানুবাদ ও তার সীমাবদ্ধতা
সকল পদার্থ ক্ষুদ্রতম পদার্থ দ্বারা গঠিত। গ্রিক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে এ অভিমত প্রকাশ করেন যে সকল পার্থিব পদার্থ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অবিভাজ্য কণা দ্বারা গঠিত। ডেমোক্রিটাস এ অবিভাজ্য ক্ষুদ্রতম কণার নাম দেন atomos। এ শব্দটি দুইটি গ্রিক শব্দ হতে উদ্ভূত: a অর্থ না এবং tomos অর্থ ভাগ করা। তাই atomos শব্দটির অর্থ হলো যা ভাগ করা যায় না। বিখ্যাত দার্শনিক অ্যারিস্টটল এর প্রভাবে এ মতবাদ চাপা পড়ে যায়। অ্যারিস্টটলের মতে পদার্থ নিরবিচ্ছিন্ন, তাকে যত ইচ্ছা ক্ষুদ্রতম অংশে ভাগ করা যায়। দীর্ঘ দিন পরে ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে পরমাণু মতবাদ আবার বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিকগনের সমর্থন লাভ করে।
অবশেষে গ্রিক দার্শনিক জন ডাল্টন 1803 সালে এ মতবাদকে বৈজ্ঞানিক মতবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। আধুনিক রসায়নের ভিত্তি হচ্ছে এ পরমানুবাদ। তাই জন ডাল্টনকে আধুনিক রসায়নের জনক হিসেবে অভিহিত করা হয়।
স্বীকার্য সমূহ
1. সকল পদার্থ অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কনা দ্বারা গঠিত। এ কনা গুলোর নাম অ্যাটম বা পরমাণু। মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কনার নাম সরল পরমাণু(simple atom) এবং যৌগের ক্ষুদ্রতম কনার নাম যৌগিক বা যৌগ পরমাণু(compound atom) ।
2. পরমানু অবিভাজ্য। তার র্সৃষ্টি ও ধ্বংস নেই।
3. পরমাণু সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যাই না, রাসায়নিক বিক্রিয়ায় শুধু এর সংযোগের পরিবর্তন হয়।
4. একই পদার্থের সকল পরমাণুর ভর ও ধর্ম অভিন্ন
5. ভিন্ন ভিন্ন পদার্থের পরমাণু ভর ও ধর্ম ভিন্ন।
6. পরমানু রাসায়নিক বিক্রিয়াই অংশ নিতে পারে।
7. দুই বা ততোধিক পদার্থের পরমাণু সংযোগে নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয়। এ সংযোগ পূর্ণ সংখ্যার নির্দিষ্ট সরল অনুপাতে হয়।
সীমাবদ্ধতা
ডাল্টনের পরমানুবাদ পদার্থের গঠন সম্পর্কে সর্বপ্রথম কিছু বৈজ্ঞানিক ধারনা দিলেও এ মতবাদের বেশ কিছু ত্রুটি আছে। যেমন-
1. কিন্তু যৌগের ক্ষুদ্রতম কনা হল অনু আর মৌলের ক্ষুদ্রতম কনা হলো পরমানু। সুতরাং ডাল্টনের পরমাণুবাদ অনু ও পরমানুর মধ্যে পার্থক্য দেখাতে বার্থ।
2. পরমাণু অবিভাজ্য নয়। পরমানুকে ভাঙলে মুল কনিকা পাওয়া যায়। যেমনঃ ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন ।
3. ডাল্টনের মতে একই পদার্থের সকল পরমাণুর ভর ও ধর্ম অভিন্ন। কিন্তু আইসোটোপ গুলোর ভর একই নয়।
4. ভিন্ন মৌলের পারমানবিক ভর অনেক সময় অভিন্ন হয়। যেমন আইসোবার গুলোর ভর অভিন্ন।
0 comments:
Post a Comment