আয়রন নিষ্কাশন:
আয়রন বা লোহার গুরুত্ব অপরীসিম। যে কোনো দেশের শিল্পোন্নয়নের জন্য লোহার তৈরী বিভিন্ন জিনিসের প্রয়োজন। এ ছাড়া প্রকৃতিতে আয়রন যথেষ্ট পরিমানে বিদ্যমান। ভূত্বকের শতকরা 4.15 ভাগ হচ্ছে লোহা। প্রকৃতিতে লোহা বিভিন্ন যৌগ হিসেবে আকরিকে থাকে। গুরুত্বপূর্ণ আকরিক হলো
1. ম্যাগনেটাইট Fe3O4
2. হেমাটাইট Fe2O3
3. লিমোনাইট Fe2O3.H2O
এ সকল আকরিক হতেই লোহা নিষ্কাশন করা হয়।
বাত্যাচুল্লী:
লোহা নিষ্কাশনের ব্যবহৃত চিমনি আকৃতির বাত্যাচুল্লি আকারে বেশ বড় এবং পুরু ইস্পাতের পাত দ্বারা তৈরী। শতাধিক ফুট দীর্ঘ এ চুল্লির মাঝখানটি অপেক্ষাকৃত বেশ চওড়া। ইস্পাতের ভিতরের দিকে অগ্নিসহ মৃত্তিকার পুরু আস্তরন দেওয়া থাকে। চুল্লির নিচের অংশ ও এর চারদিকে কয়েকটি শক্ত ও মোটা নল থাকে। এগুলোকে টুইয়ের বলা হয়। এর সাহায্যে ভেতরে বায়ু সরবরাহ করা হয়। টুইয়ের নিচে চুল্লির নিম্নতম অংশে যে প্রকোষ্ঠ থাকে তাতে উৎপন্ন লোহা ও ধাতুমল জমা হয়। আকরিক, চুনাপাথর ও কোক প্রবেশ করানোর জন্য চুল্লির উপরে কাপ ও কোন নামক বিশেল ব্যবস্থা থাকে যা দিয়ে খনিজ প্রভৃতি ঢোকানোর সময় ভিতরের উত্তপ্ত গ্যাস বাইরে বেরিয়ে না আসে। চুল্লির বর্জ্য গ্যাস নির্গমনের জন্য একটি নির্গমন নালি থাকে। বর্জ্য গ্যাসে কার্বন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন থাকে।
ভস্মীকৃত আকরিক, কোক ও চুনাপাথর উপর হতে কাপ ও কোনের সাহায্যে চুল্লির ভেতর প্রবেশ করানো হয়। টুইয়ের এর সাহায্যে প্রচুর শুষ্ক উত্তপ্ত বায়ু সর্বদা চুল্লিতে প্রবেশ করে। উত্তপ্ত বায়ুর সংস্পর্মে কোক জারিত হয়ে কার্বন মনোক্সাইডে পরিণত হয় ও প্রচুর উত্তাপের সৃষ্টি করে। ফলে চুল্লির বেতরের পদার্থগুলো অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়। এর নিচের দিকে তাপমাত্রা প্রায় 15000C এবং উপরের দিকে তা কমতে কমতে 3000C-4000C হয়। এসব স্থানে আয়রন অক্সাইডের সঙ্গে কার্বন মনোক্সাইডের বিক্রিয়া ঘটে এবং ধাতব লৌহ উৎপন্ন হতে থাকে। নিম্নে একটি অ্যানিমেশন দেখানো হলো।
বাত্যাচুল্লির বিক্রিয়াসমূহ:
চুল্লির নিম্নাংশে কোক পুড়ে প্রথমে কার্বন ডাইঅক্সাইড হয়। পরে এ কার্বন ডাইঅক্সাইড লোহিত তপ্ত কোকের সাথে বিক্রিয়ায় কার্বন মনোক্সাইড উৎপন্ন করে।
C+O2→ CO2
C+ CO2→2CO
এই কার্বন মনোক্সাইড বিভিন্ন ধাপে আয়রন অক্সাইডকে জারিত করে ধাতব লোহাতে পরিনত করে।
3Fe2O3+CO→3Fe3O4+CO2
Fe3O4+CO→3FeO+ CO2
FeO+CO→Fe+CO2
ব্যবহৃত চুনাপাথর বিয়োজিত হয়ে চুন ও কার্বন ডাইঅক্সাইড এ পরিনত হয়। চুন খনিজের সিলিকার সাথে যাক্ত হয়ে ক্যালসিয়াম সিলিকেটে পরিনত হয়। এটি অন্যান্য সিলিকেট ও খনিজের অপদ্রব্য শোষন করে ধাতুমল উৎপন্ন করে।
CaCO3→CaO+ CO2
CaO+SiO2→CaSiO3
চুল্লির নিচের অংশে খনিজের সাথে মিশ্রিত 55 এবং সিলিকা বিজারিত হয়ে যথাক্রমে ফসফরাস, ম্যাংগানিজ ও সিরিকনে পরিনত হয়।
Ca(PO4)2→3CaO+P2O5
P2O5+5C→2P+5CO
MnO2+C→Mn+2CO
Mn2O3+3C→2Mn+3CO
SiO2+2C→Si+2CO
বিজারিত মৌলগুলো এবং সামান্য পরিমানে কার্বন গলিত লোহায় দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে। ধাতুমল ও লোহা উভয়ই চুল্লির নিম্নতম প্রকোষ্ঠতে জমা হয়। ধাতুমল ধাতু অপেক্ষা হালকা বলে তা গলিত লোহার উপর ভাসমান অবস্থায় থাকে। দুইটি নির্গমণ পথের সাহায্যে ধাতুমল ও গলিত লোহাকে পৃথক পৃথকভাবে বের করে নেয়া হয়। গলিত লোহাকে ঠান্ডা করে পিন্ড করা হয়। একেই কাস্ট আয়রন বলে। এতে মোটামুটি 4% কার্বন, 0.4% ম্যাঙ্গানিজ, 1-1.5% সিলিকন ও 0.10% ফসফরাস থাকে। চুল্লি হতে নির্গত ধাতুমল রাস্তা নির্মানে, সিমেন্ট উৎপাদনে এবং অন্যান্য নানা কাজে ব্যবহৃত হয়।
0 comments:
Post a Comment