Recent Post
Loading...


পলিমার

প্রকৃতিতে আমরা দৈনন্দিন কাজে যে সকল দ্রব্যাদি ব্যবহার করি তার বেশির ভাগই পলিমার। দুই
ধরনের পলিমার আছে। প্রাকৃতিক পলিমার ও কৃত্রিম পলিমার। প্রাকৃতিক পলিমারের মধ্যে তুলা, রাবার, ভাত, প্রোটিন এবং কৃত্রিম পলিমারের মধ্যে প্লাস্টিক দ্রব্য, তোমার হাতের কলম, পলিএস্টার কাপড় ইত্যাদি।

পলিমারকরন বিক্রিয়া

একই পদার্থের অসংখ্য অণু বা একাধিক পদার্থের অসংখ্য অণু পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে বৃহৎ অণু গঠন করার প্রক্রিয়াকে পলিমারকরণ বলে। এই বিক্রিয়ায় উৎপন্ন বৃহৎ অণুকে পলিমার এবং বিক্রিয়ক অসংখ্য ক্ষুদ্র অণুর প্রত্যেকটিকে মনোমার বলে।

ঘনীভবন পলিমারকরণ

একাধিক বিক্রিয়কের অসংখ্য অণু যুক্ত হয়ে পলিমার গঠন করার প্রক্রিয়াকে ঘনীভবন পলিমারকরণ বলে। ঘনীভবন পলিমারকরণে সাধারণত অ্যালডিহাইড, অ্যালকোহল, অ্যামিন ও জৈব এসিডের অণু মনোমার হিসেবে বিক্রিয়া করে। ঘনীভবন পলিমারকরণে অসংখ্য মনোমার অণু যুক্ত হওয়ার সময় পানি কার্বন ডাইঅক্সাইডের ন্যায় ক্ষুদ্র অণু অপসারিত হয়। কোনো বিক্রিয়কে দুই প্রান্তে দুই ধরনের কার্যকরীমূলক
থাকলে ঐ বিক্রিয়কের একাধিক অণু যুক্ত হয়ে এ পলিমারকরণ ঘটে। বহুল ব্যবহৃত ঘনীভবন পলিমারের নাম নাইলন।

পলিমারের ব্যবহার

পলিমারের ব্যবহার

পলিমার                                             মনোমার                                  ব্যবহার

পলিথিন                                         H_2C =CH_2                 প্লাস্টিক শিট, প্লাস্টিক ব্যাগ

পলিভিনাইলক্লোরাইড                    H_2C=CHCl            পানির   পাইপ,বিদ্যুৎ অপরিবাহী পদার্থ

পলিটেট্রাফ্লোরোইথেন বা টেফলন   F_2C=CF_2                      নন স্টিক, পাত্র

নাইলন                     HOOC-(CH_2)_x-COOH      কৃত্রিম  কাপড়, রশি, দাতের ব্রাশ ।


 


আ্যলকোহল, আ্যলডিহাইড ও জৈব এসিড প্রস্তুতি

পেট্রোলিয়ামের প্রধান উপাদান হাইড্রোকার্বন (অ্যালকেন, অ্যালকিন ও অ্যালকাইন)। হাইড্রোকার্বন থেকে সকল শ্রেণির জৈব যৌগ প্রস্তুত করা হয়। সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন বা অ্যালকেন হ্যালোজেনের সাথে বিক্রিয়া করে অ্যালকাইল হ্যালাইড উৎপন্ন করে। অ্যালকিন হাইড্রোজেন ব্রোমাইডের সাথে বিক্রিয়া করে অ্যালকাইল ব্রোমাইড উৎপন্ন করে। অ্যালকাইল হ্যালাইড সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইডের জলীয় দ্রবণের সাথে বিক্রিয়ায় অ্যালকোহলে পরিণত হয়। উৎপন্ন অ্যালকোহলকে শক্তিশালী জারক (H_2SO_4 ও K_2Cr_2O_7) দ্বারা জারিত করলে প্রথমে অ্যালডিহাইড/কিটোন এবং পরবর্তীতে জৈব এসিডে পরিণত হয়।

R-CH_2-CH_3 + Br_2 
ightarrow R-CH_2-CH_2Br + HB

R-CH = CH_ 2 + HBr 
ightarrow R-CH_ 2-CH_2Br

R-CH _2-CH_2Br + NaOH_ (_a_q_) ---> R-CH_ 2CH_2OH + NaBr

R-CH_ 2CH_2OH + [O] 
ightarrow R-CH_ 2-CHO

R-CH_ 2CHO + [O] 
ightarrow R-CH _2-COOH

আ্যলকোহলের ব্যবহার

মিথানল বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ। মিথানল মূলত অন্য রাসায়নিক পদার্থ প্রস্তুত করতে ব্যবহৃত হয়।
রাসায়নিক শিল্পে ইথানল থেকে ইথানয়িক এসিড, বিভিন্ন জৈব এসিডের এস্টার প্রস্তুত করা হয়। ইথানলকে প্রধানত পারফিউম, কসমেটিক্স ও ঔষধ শিল্পে দ্রাবক হিসেবে ব্যবহার করে। ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রেডের ইথানলকে ঔষধ শিল্পে এবং রেকটিফাইড স্পিরিটকে হোমিও ঔষধে ব্যবহার করা হয়। ইথানলের ৯৬% জলীয় দ্রবণকে রেকটিফাইড স্পিরিট বলে। যে সকল উপাদান পানিতে দ্রবণীয় নয় তাদেরকে ইথানলে দ্রবীভূত করে ব্যবহার করা যায়। পারফিউম শিল্পেও ইথানলের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। পারফিউমে ইথানল ব্যবহারের পূর্বে তাকে গন্ধমুক্ত করা হয়। ঔষধ ও খাদ্য শিল্প ব্যতীত অন্য শিল্পে ব্যবহৃত রেকটিফাইড স্পিরিট সামান্য মিথানল যোগে বিষাক্ত করে ব্যবহার করে। একে মেথিলেটেড স্পিরিট বলে। কাঠ এবং ধাতুর তৈরি আসবাবপত্র বার্নিশ করার জন্য মেথিলেটেড স্পিরিট ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে ব্রাজিলে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে ইথানলকে মটর ইঞ্জিনের জ্বালানিরূপে ব্যবহার করা হচ্ছে। গ্যাসহোল এক প্রকার জ্বালানি যেখানে পেট্রোলের সাথে ১০-২০% ইথানল মিশ্রিত থাকে।

স্টার্চ (চাল, গম, আলু ও ভূট্টা) থেকে গাঁজন প্রক্রিয়ায় অ্যালকোহল প্রস্তুত করা হয়। এছাড়া চিনি শিল্পের উপজাত উৎপাদ চিটাগুড় থেকে একই প্রক্রিয়ায় অ্যালকোহল (ইথানল) পাওয়া যায়। বাংলাদেশের দর্শনায় কেরু এন্ড কেরু কোম্পানিতে ইথানল প্রস্তুত করে দেশের চাহিদা পূরণ করা হয়।

আ্যলডিহাইডের ব্যবহার

শিল্প কারখানায় অ্যালডিহাইডের ব্যবহার তুলনামূলকভাবে কম। তবে অন্য রাসায়নিক পদার্থ প্রস্তুত করার
জন্য অ্যালডিহাইডের প্রচুর ব্যবহার রয়েছে। মিথান্যাল বা ফরমালডিহাইডের সম্পৃক্ত (৪০% আয়তন হিসেবে, ৩৭% ভর হিসেবে) জলীয় দ্রবণকে ১০০% ফরমালিন বলে যাহা মৃত প্রাণী সংরক্ষণ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
অ্যালডিহাইড থেকে পলিমারকরণ বিক্রিয়ায় প্লাস্টিক দ্রব্য তৈরি হরা হয়। নিম্ন আণবিক ভর বিশিষ্ট অ্যালডিহাইডের (মিথান্যাল) জলীয় দ্রবণকে অতি নিম্ন চাপে উত্তপ্ত করলে ডেরলিন নামক শক্ত পলিমার উৎপন্ন হয়। ডেরলিন পলিমার দিয়ে চেয়ার, ডাইনিং টেবিল, বালতি ইত্যাদি জাতীয় দ্রব্য তৈরি করা হয় যা পূর্বে কাঠ ও ধাতু দিয়ে তৈরি করা হত।

জৈব এসিডের ব্যবহার

জৈব এসিডসমূহ অজৈব এসিডের তুলনায় দুর্বল। জৈব এসিড মানুষের খাদ্যাপোযোগী উপাদান। আমরা লেবুর রস (সাইট্রিক এসিড), তেঁতুল (টারটারিক এসিড), দধি (ল্যাকটিক এসিড), এর সাথে জৈব এসিডকে খাবার হিসেবে গ্রহণ করি। জৈব এসিডের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করার ক্ষমতা থাকায় একে খাদ্য সংরক্ষক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ইথানয়িক এসিডের ৬-১০% জলীয় দ্রবণকে ভিনেগার বলে যাহা সস্ ওআচার সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
জৈব এসিড থেকেও পলিমারকরণ বিক্রিয়ায় প্লাস্টিক দ্রব্য তৈরি করা হয়। প্যান্ট, শার্টের কাপড় তৈরি করতে ব্যবহৃত টেরিলিন (পলিএস্টার) নামক রাসায়নিক ত ন্তু অ্যালকোহল ও জৈব এসিড থেকে ঘনীভবন পলিমারকরণ বিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়। এখানে উল্লেখ্য কার্বোহাইড্রেড ও তেল জাতীয় প্রাকৃতিক পলিমার অ্যালকোহল ও জৈব এসিড থেকে গঠিত হয়। তবে পলিএস্টার দ্বারা প্রস্তুত কাপড়ের চাহিদা দিন দিন ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে।

অ্যালকেনের হ্যালোজেন প্রতিস্থাপন

ডাইক্লোরোমিথেনকে (CH_2Cl_2) ইমালশন রং শিল্পে দ্রাবক হিসাবে, ট্রাইক্লোরোমিথেন বা ক্লোরোফরমকে (CHCl_3) চেতনানাশক হিসাবে এবং টেট্রাক্লোরোমিথেনকে (CCl_4) ড্রাইওয়াশ করতে দ্রাবক হিসাবে ব্যবহার করা হয় ।

 


আ্যলকেন প্রস্তুতি

শিল্পক্ষেত্রে CO ও H_2 অথবা CO_2 ও H_2 এর মিশ্রণকে 250^oC এ উত্তপ্ত নিকেল প্রভাবকের উপর দিয়ে প্রবাহিত করলে প্রচুর পরমাণে মিথেন উৎপন্ন হয় ।


আ্যলকেনের ব্যবহার

অ্যালকেনকে বিভিন্ন ইঞ্জিনের জ্বালানি, বিদ্যুৎ উৎপাদনে, পিচ্ছিলকারক তেল হিসেবে এবং রাসায়নিক শিল্পে অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য প্রস্তুতিতে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও বৃহৎ শিকল বিশিষ্ট অ্যালকেনকে মোম তৈরির জন্য ও রাস্তা পাকা করার জন্য ব্যবহার করা হয়। অ্যালকেন থেকে প্রস্তুত তরল মোম এবং কঠিন মোম নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশ্রিত করলে পেস্ট এর ন্যায় পদার্থ পাওয়া যায়, যা বিভিন্ন রকম মালিশ যেমন: ভিকস্ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

 

আ্যলকিন ও আ্যলকাইন

অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বনের কার্বন শিকলে অন্তত একটি দ্বি-বন্ধন অথবা ত্রি-বন্ধন থাকে এবং কার্বনের অবশিষ্ট যোজ্যতা হাইড্রোজেন দ্বারা পূর্ণ হয়। দ্বি-বন্ধন যুক্ত অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বনকে অ্যালকিন এবং ত্রি-বন্ধন যুক্ত অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বনকে অ্যালকাইন বলে। অ্যালকিন শ্রেণির ক্ষুদ্রতম ও সরল সদস্য ইথিন বা ইথিলিন । অ্যালকাইন শ্রেণির ক্ষুদ্রতম ও সরল সদস্য ইথাইন বা অ্যাসিটিলিন ।

আ্যলকিন প্রস্তুতি

অ্যালকিন শ্রেণির সামান্য যৌগ প্রকৃতিতে পাওয়া যায়। পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পে ব্যবহৃত অধিকাংশ অ্যালকিন পেট্রোলিয়াম থেকে প্রাপ্ত উচ্চতর অ্যালকেনের প্রভাবকীয় বিযোজনের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়। পেট্রোলিয়ামের আংশিক পাতনে প্রাপ্ত কেরোসিনের উপাদান ডোডেকেন (C_1_2H_2_6) কে অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড ও ক্রোমিয়াম অক্সাইডের উপস্থিতিতে 500^oC তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে ক্ষুদ্র শিকল যুক্ত অ্যালকেন ও ইথিন উৎপন্ন হয়।

C_1_2H_2_6 \xrightarrow {500^oC} C_10H_26 + H_2C= CH_2

ইথানলকে অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইডের উপস্থিতিতে উত্তপ্ত করলে বা সালফিউরিক এসিড দ্বারা নিরুদিত করলে পানি অপসারিত হয়ে ইথিলিন বা ইথিন উৎপন্ন করে।

CH_3CH_2OH \xrightarrow [-H_2O]{H_2SO_4} H_2C= CH_2

আ্যলকেনের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম

অ্যালকেনের ন্যায় অ্যালকিনসমূহ দাহ্য এবং গ্যাসীয়, তরল ও কঠিন অবস্থায় থাকে। অ্যালকিনের তাৎপর্যপূর্ণ রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের কারণে এদেরকে পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পে ব্যবহার করা হয়। অ্যালকিন অণুতে কার্বন-কার্বন দ্বি-বন্ধন থাকায় এরা রাসায়নিকভাবে অত্যন্ত সক্রিয়। কারণ দ্বি-বন্ধনের প্রথম বন্ধনটি
শক্তিশালী হলেও দ্বিতীয় বন্ধনটি তুলনামূলক দুর্বল ।

আ্যলকাইনের প্রস্তুতি

প্রাকৃতিক গ্যাস বা মিথেনকে 1500^oC তাপমাত্রায় বায়ুর উপস্থিতিতে দহন করলে ইথাইন উৎপন্ন হয়। মিথেনের আংশিক দহন থেকে এই বিক্রিয়ার প্রয়োজনীয় তাপ পাওয়া যায়। বিক্রিয়ার সময় মিথেন অণুতে বন্ধন ভাঙা-গড়ার মাধ্যমে ইথাইন উৎপন্ন হয়।

2CH_4 + 3/2 \; O_2 \rightarrow HC \equiv CH + 3H_2O + heat

শিল্পক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম কার্বাইড থেকে ইথাইন গ্যাস প্রস্তুত করা হয়। ক্যালসিয়াম কার্বাইডে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি যোগ করলে ইথাইন বা অ্যাসিটিলিন গ্যাস উৎপন্ন হয়।

CaC_2 + H_2O \rightarrow HC \equiv CH

আ্যলকাইনের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম

অ্যালকেন ও অ্যালকিনের ন্যায় অ্যালকাইনসমূহ গ্যাসীয়, তরল ও কঠিন অবস্থায় থাকে। দুই থেকে চার কার্বন বিশিষ্ট অ্যালকাইন গ্যাসীয়, পাঁচ থেকে এগার কার্বন বিশিষ্ট অ্যালকাইন তরল এবং উচ্চতর অ্যালকাইন কঠিন অবস্থায় থাকে। অ্যালকাইন শ্রেণির যৌগও রাসায়নিক বিক্রিয়ার প্রতি অত্যন্ত সক্রিয়,
তবে অ্যালকিনের তুলনায় সক্রিয়তা কিছুটা কম। অ্যালকাইন হাইড্রোজেন, ব্রোমিনের সাথে সংযোজন বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। অ্যালকিন হাইড্রোজেন, ব্রোমিনের সাথে সংযোজন বিক্রিয়ায় এক অণু (হাইড্রোজেন, ব্রোমিনের) যুক্ত হয়ে কার্বন-কার্বন একক বন্ধন বিশিষ্ট যৌগ উৎপন্ন করে। অপরদিকে অ্যালকাইন হাইড্রোজেন, ব্রোমিনের সাথে সংযোজন বিক্রিয়ায় প্রথমে এক অণু যুক্ত হয়ে কার্বন-কার্বন-বন্ধন বিশিষ্ট যৌগ এবং পরবর্তীতে অন্য এক অণু (হাইড্রোজেন, ব্রোমিনের) যুক্ত হয়ে একক বন্ধন বিশিষ্ট যৌগ উৎপন্ন করে।

ব্রোমিন পানি পরীক্ষা

ব্রোমিনকে জৈব দ্রাবকে বা পানিতে দ্রবীভূত করে লাল/বাদামি বর্ণের দ্রবণ প্রস্তুত করা হয়। সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বনের মধ্যে পৃকভাবে কয়েকফোঁটা ব্রোমিন দ্রবণ যোগ করে ঝাঁকাতে হয়। সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন লাল/বাদামি বর্ণের ব্রোমিন দ্রবণের সাথে বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না এবং দ্রবণের লাল/বাদামি বর্ণের কোনো পরিবর্তন হয় না। অপরদিকে অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন (অ্যালকিন বা অ্যালকাইন) লাল/বাদামি বর্ণের ব্রোমিন দ্রবণের সাথে বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে কার্বন-কার্বন দ্বি-বন্ধনে অথবা ত্রি-বন্ধনে ব্রোমিন অণু যুক্ত হয়। ফলে ব্রোমিন দ্রবণের লাল/বাদামি বর্ণ বিনষ্ট হয়। বিক্রিয়ায় ব্রোমিন দ্রবণের বর্ণ পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করে সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বনের মধ্যে পার্থক্য করা হয়।

CH_4 + Br_2 
ightarrow বিক্রিয়া হয় না ।

C_2H_4 + Br_2 
ightarrow BrCH_2 - CH_2Br (বর্ণ পরিবর্তন হয়)

C_2H_2 + Br_2 
ightarrow Br_2CH - CHBr_2 (বর্ণ পরিবর্তন হয়)

অ্যালকিনের প্রস্তুতির সময় একটি বিশেষ বিক্রিয়া সংঘটিত হয়। যেমন—C2H5OH থেকে অ্যালকিন প্রস্তুতির সময় যদি অতিরিক্ত অ্যালকোহল যোগ করা হয়, তবে অ্যালকিনের পরিবর্তে ইথার উৎপন্ন হবে। বিক্রিয়াটি নিম্নে দেওয়া হলো—

kalerkantho

বি.দ্র. : উপরোক্ত বিক্রিয়া থেকে প্রমাণিত হয় গাঢ় H2SO4 এখানে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।

* ইথাইন থেকে ইথিন প্রস্তুতি

kalerkantho

এখানে, BaSO4 প্রভাবক বিষ হিসেবে কাজ করে।

* প্রভাবক বিষ কী?

যেসব রাসায়নিক পদার্থ প্রভাবকের প্রভাবন ক্ষমতা কমিয়ে দেয় তাদের প্রভাবক বিষ বলা হয়।

* ইথাইন থেকে ইথেন প্রস্তুত করো।

kalerkantho

* অ্যালকোহলের প্রস্তুতি লেখো :

বিভিন্নভাবে অ্যালকোহল প্রস্তুত করা যায়। নিম্নে প্রস্তুতির বিক্রিয়া দেওয়া হলো—

(i) অ্যালকাইল হ্যালইড থেকে :

R-X+KOH(ag) ⟶R-OH+Nax

উদাহরণ : CH3I+KOH(ag) ⟶ CH3OH+KI

C2H5I+NaOH(ag) ⟶C2H5OH+NaI

বি.দ্র.: অ্যালকোহল তৈরির সময় জলীয় KOH ও NaOH উভয়ই ব্যবহার করা যায়।

* কস্টিক সোডা ও কস্টিক পটাশের সংকেত দাও :

কস্টিক সোডা = NaOH

কস্টিক পটাশ = KOH

* জৈব এসিড থেকে অ্যালকোহল প্রস্তুতি

kalerkantho

i. LiAlH4 একটি বিজারক পদার্থ

ii. এই বিজারক পদার্থের নাম লিথিয়াম অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রাইড। এর আরেকটি নাম আছে তা হলো—

টেট্রাহাইড্রিডোলিথিয়াম অ্যালুমিনেট

iii) ইহা সহজেই জৈব এসিড ও অ্যালডিহাইডকে বিজাড়িত করে অ্যালকোহলে রূপান্তরিত করে।

kalerkantho

* ইথানাল থেকে অ্যালকোহল

kalerkantho

মনে রাখার জন্য নিম্নের পদ্ধতি অনুসরণ করো—

* ফারমেন্টেশন বা চোলাইকরণ বা গাজন কী?

জটিল অণুবিশিষ্ট জৈব যৌগ যেমন—কার্বোহাইড্রেটকে এনজাইম নামক জটিল পদার্থের প্রভাবে বিযোজিত বা আর্দ্র বিশ্লেষণ করে অপেক্ষাকৃত সরল, ক্ষুদ্র অণুবিশিষ্ট পদার্থে পরিণত করার প্রক্রিয়াকে ফারমেন্টেশন বা চোলাইকরণ বা গাজন বলে।

এই পদ্ধতিতে শ্বেতসার বা স্টার্চ থেকে ইথানল তৈরি করা যায়।

স্টার্চের উৎস : আলু, ভুট্টা, গম, বার্লি ইত্যাদি।

নিম্নের বিক্রিয়ার মাধ্যমে ইথানল তৈরি করা যায়।

kalerkantho

* গ্যাসহোল কী?

গ্যাসহোল এক প্রকার জ্বালানি, যেখানে পেট্রোলের সঙ্গে 10-20% ইথানল মিশ্রিত থাকে।

 অপরিশোধিত তেল বা পেট্রোলিয়াম (তরল সোনা) মূলত হাইড্রোকার্বন ও অন্যান্য কিছু জৈব যৌগের মিশ্রণ । অপরিশোধিত তেলকর ব্যবহারযোগ্য করে তোলার জন্য  এর বিভিন্ন অংশকে আংশিক পাতন পদ্ধতিতে পৃথক করা হয় । অপরিশোধিত তেলের বিভিন্ন অংশ পৃথক করার প্রক্রিয়াকে পরিশোধন বলে । বাংলাদেশের চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারিতে তেল পরিশোধন করা হয় । পেট্রোলিয়ামে বিদ্যমান উপাদানের স্ফুটনাংকের উপর ভিত্তি করে তেল পরিশোধনাগারে পৃথককৃত বিভিন্ন অংশের নাম পর্যায়ক্রমে পেট্রোলিয়াম গ্যাস, পেট্রোল(গ্যাসোলিন), ন্যাপথা, কেরোসিন, ডিজেল তেল, লুব্রিকেটিং তেল, বিটুমিন ।


পেট্রোলিয়াম গ্যাস

অংশ কলামের মধ্যে 20^oC তাপমাত্রার নিচে পেট্রোলিয়াম গ্যাসের যে অংশ গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে তার নাম পেট্রোলিয়াম গ্যাস । পেট্রোলিয়ামে শতকরা 2 ভাগ পেট্রোলিয়াম গ্যাস থাকে । এ অংশে হাইড্রোকার্বন 1 থেকে 4 পর্যন্ত কার্বন সংখ্যা থাকে । একে তরলীভূত করে LPG গ্যাসরূপে রান্নায় এবং তাপ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় । 

পেট্রোল

অংশ কলামের  21^oC থেকে 70^oC তাপমাত্রা অঞ্চল থেকে পৃথকীকৃত অংশকে পেট্রোল(গ্যাসোলিন) বলে । পেট্রোলিয়ামে শতকরা 5 ভাগ পেট্রোল থাকে । এ অংশের হাইড্রোকার্বনে 5 থেকে 10 পর্যন্ত কার্বন সংখ্যা থাকে । পেট্রোলিয়ামের এই অংশকে পেট্রোল ইঞ্জিনের জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হয় ।

ন্যাপথা

অংশ কলামের  71^oC থেকে 120^oC তাপমাত্রা অঞ্চল থেকে পৃথকীকৃত অংশকে ন্যাপথা বলে । পেট্রোলিয়ামে শতকরা 10 ভাগ ন্যাপথা থাকে । এ অংশের হাইড্রোকার্বনে 7 থেকে 14 পর্যন্ত কার্বন সংখ্যা থাকে । পেট্রোলিয়ামের এই অংশকে জ্বালানি ও পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পে বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগ ও ব্যবহার্য দ্রব্য প্রস্তুতিতে ব্যবহার করা হয় ।

কেরোসিন

অংশ কলামের  121^oC থেকে 170^oC তাপমাত্রা অঞ্চল থেকে পৃথকীকৃত অংশকে কেরোসিন(প্যারাফিন : অনাসক্তি) বলে । পেট্রোলিয়ামে শতকরা 13 ভাগ কেরোসিন থাকে । এ অংশের হাইড্রোকার্বনে 11 থেকে 16 পর্যন্ত কার্বন সংখ্যা থাকে । পেট্রোলিয়ামের এই অংশকে জেট ইঞ্জিনের জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হয় ।

ডিজেল তেল

অংশ কলামের  171^oC থেকে 270^oC তাপমাত্রা অঞ্চল থেকে পৃথকীকৃত অংশকে ডিজেল তেল বলে । পেট্রোলিয়ামে শতকরা 20 ভাগ ডিজেল তেল থাকে । এ অংশের হাইড্রোকার্বনে 16 থেকে 20 পর্যন্ত কার্বন সংখ্যা থাকে । পেট্রোলিয়ামের এই অংশকে ডিজেল বাস ইঞ্জিনের এবং জাহাজের জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হয় ।

লুব্রিকেটিং তেল

অংশ কলামের  271^oC থেকে 340^oC তাপমাত্রা অঞ্চল থেকে পেট্রোলিয়ামের দুই অংশ, লুব্রিকেটিং তেল এবং জ্বালানি তেল পৃথক হয় । প্রথম পৃথকীকৃত অংশকে লুব্রিকেটিং তেল বলে । এ অংশের হাইড্রোকার্বনে 20 থেকে 35 পর্যন্ত কার্বন সংখ্যা থাকে । পেট্রোলিয়ামের এই অংশকে পিচ্ছিলকারক হিসাবে ব্যবহার করা হয় ।

বিটুমিন

340^oC তাপমাত্রায় পৃথক করার পর অবশিষ্ট অংশকে বিটুমিন বলে । পেট্রোলিয়ামে শতকরা 50 ভাগ লুব্রিকেটিং তেল এবং বিটুমিন থাকে । এ অংশের হাইড্রোকার্বনে কার্বন সংখ্যা 70 এর বেশি । বিটুমিন রাস্তা তৈরীতে ব্যবহৃত হয় ।

 ডেরলিনঃ  ডেরলিন হচ্ছে ফরমালডিহাইড বা মিথান্যাল 

(H-CHO) এর পলিমার।

 
মিথান্যালকে পলিমারকরণ করলে ডেরলিন নামক পলিমার গঠিত হয়। ডেরলিন এক ধরনের শক্ত পলিমার হওয়ায় প্লাস্টিকের চেয়ার, টেবিল তৈরিতে ডেরলিন নামক পলিমার ব্যবহার করা হয়  H                            H
         |                                  |
 n H-C=O ----------------->  [--C - O--]n
                                             |
                                            H