অপরিশোধিত তেল বা পেট্রোলিয়াম (তরল সোনা) মূলত হাইড্রোকার্বন ও অন্যান্য কিছু জৈব যৌগের মিশ্রণ । অপরিশোধিত তেলকর ব্যবহারযোগ্য করে তোলার জন্য এর বিভিন্ন অংশকে আংশিক পাতন পদ্ধতিতে পৃথক করা হয় । অপরিশোধিত তেলের বিভিন্ন অংশ পৃথক করার প্রক্রিয়াকে পরিশোধন বলে । বাংলাদেশের চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারিতে তেল পরিশোধন করা হয় । পেট্রোলিয়ামে বিদ্যমান উপাদানের স্ফুটনাংকের উপর ভিত্তি করে তেল পরিশোধনাগারে পৃথককৃত বিভিন্ন অংশের নাম পর্যায়ক্রমে পেট্রোলিয়াম গ্যাস, পেট্রোল(গ্যাসোলিন), ন্যাপথা, কেরোসিন, ডিজেল তেল, লুব্রিকেটিং তেল, বিটুমিন ।
পেট্রোলিয়াম গ্যাস
অংশ কলামের মধ্যে 20 তাপমাত্রার নিচে পেট্রোলিয়াম গ্যাসের যে অংশ গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে তার নাম পেট্রোলিয়াম গ্যাস । পেট্রোলিয়ামে শতকরা 2 ভাগ পেট্রোলিয়াম গ্যাস থাকে । এ অংশে হাইড্রোকার্বন 1 থেকে 4 পর্যন্ত কার্বন সংখ্যা থাকে । একে তরলীভূত করে LPG গ্যাসরূপে রান্নায় এবং তাপ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় ।
পেট্রোল
অংশ কলামের 21 থেকে 70 তাপমাত্রা অঞ্চল থেকে পৃথকীকৃত অংশকে পেট্রোল(গ্যাসোলিন) বলে । পেট্রোলিয়ামে শতকরা 5 ভাগ পেট্রোল থাকে । এ অংশের হাইড্রোকার্বনে 5 থেকে 10 পর্যন্ত কার্বন সংখ্যা থাকে । পেট্রোলিয়ামের এই অংশকে পেট্রোল ইঞ্জিনের জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হয় ।
ন্যাপথা
অংশ কলামের 71 থেকে 120 তাপমাত্রা অঞ্চল থেকে পৃথকীকৃত অংশকে ন্যাপথা বলে । পেট্রোলিয়ামে শতকরা 10 ভাগ ন্যাপথা থাকে । এ অংশের হাইড্রোকার্বনে 7 থেকে 14 পর্যন্ত কার্বন সংখ্যা থাকে । পেট্রোলিয়ামের এই অংশকে জ্বালানি ও পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পে বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগ ও ব্যবহার্য দ্রব্য প্রস্তুতিতে ব্যবহার করা হয় ।
কেরোসিন
অংশ কলামের 121 থেকে 170 তাপমাত্রা অঞ্চল থেকে পৃথকীকৃত অংশকে কেরোসিন(প্যারাফিন : অনাসক্তি) বলে । পেট্রোলিয়ামে শতকরা 13 ভাগ কেরোসিন থাকে । এ অংশের হাইড্রোকার্বনে 11 থেকে 16 পর্যন্ত কার্বন সংখ্যা থাকে । পেট্রোলিয়ামের এই অংশকে জেট ইঞ্জিনের জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হয় ।
ডিজেল তেল
অংশ কলামের 171 থেকে 270 তাপমাত্রা অঞ্চল থেকে পৃথকীকৃত অংশকে ডিজেল তেল বলে । পেট্রোলিয়ামে শতকরা 20 ভাগ ডিজেল তেল থাকে । এ অংশের হাইড্রোকার্বনে 16 থেকে 20 পর্যন্ত কার্বন সংখ্যা থাকে । পেট্রোলিয়ামের এই অংশকে ডিজেল বাস ইঞ্জিনের এবং জাহাজের জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হয় ।
লুব্রিকেটিং তেল
অংশ কলামের 271 থেকে 340 তাপমাত্রা অঞ্চল থেকে পেট্রোলিয়ামের দুই অংশ, লুব্রিকেটিং তেল এবং জ্বালানি তেল পৃথক হয় । প্রথম পৃথকীকৃত অংশকে লুব্রিকেটিং তেল বলে । এ অংশের হাইড্রোকার্বনে 20 থেকে 35 পর্যন্ত কার্বন সংখ্যা থাকে । পেট্রোলিয়ামের এই অংশকে পিচ্ছিলকারক হিসাবে ব্যবহার করা হয় ।
বিটুমিন
340 তাপমাত্রায় পৃথক করার পর অবশিষ্ট অংশকে বিটুমিন বলে । পেট্রোলিয়ামে শতকরা 50 ভাগ লুব্রিকেটিং তেল এবং বিটুমিন থাকে । এ অংশের হাইড্রোকার্বনে কার্বন সংখ্যা 70 এর বেশি । বিটুমিন রাস্তা তৈরীতে ব্যবহৃত হয় ।
0 comments:
Post a Comment