Recent Post
Loading...

 


1.    পাকা আম খেতে মিষ্টি লাগে কেন

কাঁচা আমে বিভিন্ন জৈব এসিড যেমন: সাক্সিনিক এসিডম্যালেয়িক এসিড ইত্যাদি থাকে বলে টক লাগে। আম পেঁকে গেলে তাতে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজের সৃষ্টি হয়। ফলে মিষ্টি লাগে।

 

2.         পেটে এসিডিটির জন্য এন্টাসিড খাওয়া হয় কেন

পাকস্থলীতে অতিরিক্ত হাইড্রোক্লোরিক এসিড জমা হলে পেটে এসিডিটির সমস্যা হয়। এ সময় রোগীকে এন্টাসিড (অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রোক্সইডম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্সাইড অথবা ক্ষার) খাওয়ানো হয় । তখন এন্টাসিড পেটের এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে লবণ+পানি উৎপন্ন করেএসিডকে প্রশমিত করে।

 

3.         বায়ূমণ্ডলী্য় বিজ্ঞানে রসায়নের গুরুত্ব কী

বায়ূমণ্ডলী্য় বিজ্ঞানে রসায়নের গুরুত্ব নিম্নরূপ

১. ওজোন ও ওজোন ক্ষয়কারী গ্যাসসমূহকে শনাক্ত করার জন্য রসায়নের ভূমিকা অনেক।

২. বায়ুমন্ডলে উপস্থিত কোন গ্যাস এসিড বৃষ্টি তৈরিতে সহায়ক তা নির্ণয়ে রসায়নের ভূমিকা রয়েছে।

 

4.         জীবদেহে খাবার গ্রহণে কীভাবে শক্তি উৎপন্ন হয়

জীবদেহে খাবার গ্রহণে বিপাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি উৎপাদিত হয়খাদ্য দ্রব্য অক্সিজেনের উপস্থিতিতে ভেঙে সরল অণু ও শক্তিতে রূপান্তরিত হয় |

মানবদেহের অভ্যন্তরে নিম্নলিখিত বিক্রিয়া সংঘটিত হয়

 

5.         গণিত শাস্ত্রের উপর রসায়নের নির্ভরশীলতা ব্যাখ্যা কর

গণিতের উপর রসায়নের নির্ভরশীলতা অত্যধিক। গণিত ব্যতীত রসায়ন বিজ্ঞানের তত্ত্ব প্রদান করা বা তত্ত্বীয় জ্ঞানার্জন অসম্ভব। রসায়নের হিসাব-নিকাশসূত্র প্রদান ও গাণিতিক সম্পর্ক সবইতো গণিত। তাছাড়া রসায়নের একটি গুরুত্বপুর্ণ শাখা কোয়ান্টাম ম্যাকানিকস যা মূলত গাণিতিক হিসাব-নিকাশ এর সাহায্যে পরমাণুর গঠন ব্যাখ্যা করে। রসায়নের বিভিন্ন লেখচিত্রজ্যামিতিক হিসাব নিকাশ ইত্যাদি গণিতেরই অংশ।

 

6.         রসায়ন বলতে কী বোঝায়

প্রকৃতিতে বিদ্যমান বস্তুসমূহের বিভিন্ন ধর্মকে কাজে লাগিয়ে মানব জাতি ও পরিবেশের কল্যাণ সাধনে নিয়োজিত যে বিজ্ঞান তার নামই হলো রসায়ন। রসায়নকে বলা হয় কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে রসায়নের উপস্থিতি সর্বত্র। গাছে ফল পাঁকালোহায় মরিচা পড়াআগুন জ্বালানো সবকিছুই রসায়ন।

 

7.         রসায়ন চর্চার মাধ্যমে কীভাবে মানুষের চাহিদা পুরণ হয়

প্রাচীন সভ্যতায় রসায়ণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে খনিজ থেকে মূল্যবান ধাতু আহরণ করা হথো। রাসায়নিক প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে আরো অনেক ধাতুযেমন: প্রভৃতির উৎপাদন সম্ভবপর হয়। আজ শিল্প কারখানায় ভোজ্য তৈলচিচিকাগজকলমঔষধপত্রকাপড় সাবানরডসিমেন্ট থেকে শুরু করে সকল জিনিস রসায়নের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে।

 

8.মরিচা কীভাবে তৈরী হয়

লোহা বা সাধারণ ইস্পাতের তৈরি সামগ্রী অনেক দিন খোলা বাতাসে রেখে দিলে এর ওপরে লালচে বাদামী রঙের প্রলেপ পড়ে। এই প্রলেপকে মরিচা বলা হয়। আর্দ্র বাতাসের সংস্পর্শে এলে বাতাসের অক্সিজেনের সাথে লোহা বিক্রিয়া করে মরিচা সৃষ্টি করে।

 

9.         অনুসন্ধান ও গবেষণা প্রক্রিয়ার ধাপ লিখ

অনুসন্ধান ও গবেষণা প্রক্রিয়ার ধাপ নিম্নরূপ

বিষয়বস্তু নির্ধারণ

বই বা পুর্বের গবেষণাপত্রের সাহায্যে বিষয়বস্তু সম্পর্কে কিছু ধারণা করা

প্রয়োজনীয় বস্তু ও পরীক্ষা প্রণালী নির্ধারণ

পরীক্ষণ

ফলাফল ও ফলাফল নিয়ে আলোচনা

 

10.        তেজস্ক্রিয় পদার্থ ব্যবহারে সতর্কতা প্রয়োজন কেন

তেজস্ক্রিয় পদার্থসমূহ আলফাবিটাগামাসহ বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গত করে। এসব পদার্থ থেকে নির্গত ক্ষতিকারক রশ্মি ক্যান্সারের মতো ব্যাধি সৃষ্টি করতে পারি। তাই এসব পদার্থ ব্যবহারের সময় বিশেষ সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

 

11.        উদ্ভিদ ও প্রাণী মৃত্যুর পর কী হয়

উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃত্যর পর দেহের পচন হয় এবং নানা অণুজীব মাটির সাথে মিশে যায়। ভূগর্ভে তা তাপ ও চাপের প্রভাবে মাটিতে মিশে যাওয়া পদার্থের আরও রাসায়নিক পরিবর্তন হয় এবং তা খনিজে পরিণত হয়।

 

12.        বিষাক্ত পদার্থকে আবদ্ধ অবস্থায় রাখতে হয় কেন

মারাত্মক বিষাক্ত গ্যাসীয়তরল বা কঠিন পদার্থের ক্ষেত্রে বিষাক্ত পদার্থ সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। এসব পদার্থ যাতে আমাদের সংস্পর্শে না আসে তাই বিষাক্ত পদার্থকে আবদ্ধ অবস্থায় রাখতে হয়।

 

13.        প্রিজারভেটিভস কীভাবে খাদ্যকে নষ্ট হবার হাত থেকে রক্ষা করে

প্রিজারভেটিভস নিম্নলিখিত উপায়ে খাদ্যকে নষ্ট হবার হাত থেকে রক্ষা করে

1. খাদ্যে অম্লীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে পচনের হাত থেকে রক্ষা করে

2. খাদ্যকে বায়ু ও পানির সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখে

3. এনজাইমের ক্রিয়া ব্যাহত করার মাধ্যমে খাদ্য গুণাগুণ বজায় রাখে

 

14.        আমাদের দেহের জন্য পানি প্রয়োজন কেন

পানি আমাদের শরীরে বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহন করে। এটি শরীরের মধ্যে বিভিন্ন পদার্থের দ্রাবক হিসেবে কাজ কর্ শরীরে সৃষ্ট বিষাক্ত পদার্থ পানিতে দ্রবীভূত হয়ে প্রস্রাব ও ঘামের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। খাবার পানিতে পানি ছাড়াও বিভিন্ন খনিজ লবণ যেমন: ক্যালসিয়ামম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি ধাতুর লবণ থাকেযা আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী।

 

15.        সার্বজনীন সাংকেতিক চিহ্ন বলতে কী বুঝ

রাসায়নিক পদার্থসমূহ সরবরাহ বা সংরক্ষণ করতে হলে তার গায়ে লেবেলের সাহায্যে শ্রেণিভেদ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।এ ধরণের চিহ্নই সাংকেতিক চিহ্ন। পৃথিবীর সকলদেশে একইভাবে একই উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। তাই এগুলোকে সাংকেতিক চিহ্ন বলা হয়।

 

16.        রসায়ন পরীক্ষাগারে রিসাইক্লিং গুরুত্বপূর্ণ কেন

রসায়ন পরীক্ষাগারে যে সকল বর্জ্য উৎপন্ন হয় সেগুলো যদি রিসাইক্লিং করা হয় তাহলে একদিকে যেমন উৎপাদনে খরচ কমবে তেমনি পরিবেশের ঝুকিঁও কম হবে। কারণ যেকোনো রিসাইক্লিং প্রক্রিয়া জ্বালানির অপচয় রোধ হয় এবং উৎপাদনের সময়কালও কমে আসে। তাই রসায়ন পরীক্ষাগারে রিসাইক্লিং গুরুত্বপূর্ণ।

 

17.        বিদ্যুৎ উৎপাদনে রসায়নের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর

জারন-বিজারণ বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ায় ইলেকট্রন আদান-প্রদানের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় এই জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ার ব্যাখ্যা রসায়নের দ্বারাই করা সম্ভব তাই বিদ্যুৎ উৎপাদনে রসায়নের ভূমিকা রয়েছে।


18.        রসায়নকে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান বলা হয় কেন

বিজ্ঞানের সব শাখার সাথে রসায়নের নিবিঢ় সম্পর্ক রয়েছে। মেডিকেল সাইন্সে জীবনের রহস্য বুঝকেরোগ-ব্যাধির কারণ অনুসন্ধানএর নিরাময় এবং পথ্য  নিরূপণে রসায়ন অগ্রণি ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও অন্যান্য সকল শাখায় রসায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই রসায়নকে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান বলা হয়।

 

19.  পেঁপে পাকলে হলুদ হয় কেন

পেঁপে যখন কাঁচা থাকে তখন জৈব এসিডের উপস্থিতির জন্য তা সবুজ দেখায়। পরবর্তীতে জীব রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে এস্টার জাতীয় পদার্থ সৃষ্টি হওয়ায় পেঁপে হলুদ হয়।

 

20. কাঁচা ফল টক হয় কেন

কাচা ফলে বিভিন্ন প্রকার জৈব এসিড যেমন-এসিটিক এসিডফরমিক এসিডটারটারিক এসিডএসকরবিক এসিড প্রভূতি বিদ্যমান। কোনো কোনো ফলে সামান্য পরিমাণ অজৈব এসিডও থাকে। কাচা ফলে এসিড বিদ্যমান থাকায় pH এর মান কম হয় এবং এসিডিটি বেড়ে যায়। এসিড টক স্বাদ যুক্ত। তাই কাচা ফল টক হয়।

 

21.  পোশাক শিল্পে  রসায়ন এর গুরুত্ব কী

পোশাক শিল্পে উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে শার্ট প্যান্ট ও উল রয়েছে। এগুলো জৈব যৌগ ও তন্তুর সমন্বয়ে গঠিত। রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন যৌগ থেকে তন্তুসমূহ সংগ্রহ করা হয়, যা রসায়নেরই অংশ। আবার এ সকল কৃত্রিম বা প্রাকৃতিক তন্তুর সাথে রণ্জকের সমন্বয় করে টেক্সটাইল ফেব্রিকস শিল্পে পোশাক তৈরি করা হয়। তন্তুর সাথে রণ্জকের সমন্বয়, তাও রসায়ন বিজ্ঞানেরই অংশ।

 

22. আমিষকে জৈব যৈাগ বলা হয় কেন

আমিষ সাধারণত কার্বন ও হাইড্রজেন এর সমন্বয়ে গঠিত। কার্বন ও হাইড্রোজেন যুক্ত যৌগকে জৈব যৌগ বলা হয়।যেহেতু আমিষ কার্বন ও হাইড্রোজেন দিয়ে তৈরি তাই আমিষ কে জৈব যৌগ বলা হয়

 


পাথুরে চুন বা ক্যালসিয়াম অক্সাইড

ক্যালসিয়াম অক্সাইড এর প্রকৃতি

  • ক) চুন হলো একটি কঠিন অনিয়তাকার অজৈব পদার্থ।
  • খ) ক্যালসিয়াম অক্সাইডের রং সাদা, উত্তাপে গলে না।
  • গ) পাথুরে চুনের কোন গন্ধ নেই।
  • ঘ) অক্সি হাইড্রোজেন শিখায় উজ্জ্বল আলো উৎপন্ন করে। একে লাইম লাইট বলে।
  • ঙ) আদ্র বাতাসে গরম হয়ে ওঠে এবং পাউডার এ পরিণত হয়।
  • চ) এটি একটি ক্ষারীয় অক্সাইড এসিডের সঙ্গে বিক্রিয়ায় লবণ উৎপন্ন করে।
  • ছ) ক্যালসিয়াম অক্সাইডের সঙ্গে জল মেশালে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয় ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড উৎপন্ন হয়।

পাথুরে চুন বা ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইডের ব্যবহার

  • ক) ক্যালসিয়াম কার্বাইড, সোডিয়াম কার্বনেট, কস্টিক সোডা প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।
  • খ) ধাতু নিষ্কাশনে বিগালক রূপে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয়।
  • গ) ইথাইল অ্যালকোহল, অ্যামোনিয়া প্রভৃতি জল মুক্ত করতে ব্যবহৃত হয়।
  • ঘ) গাঢ় কস্টিক সোডার সঙ্গে মিশিয়ে সোডা লাইম উৎপন্ন করা হয় যা মিথেন, বেনজিন ইত্যাদি প্রস্তুতিতে এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের শোষক রূপে ব্যবহৃত হয়।

কলিচুন

কলিচুনের প্রকৃতি

ক) কলিচুন একটি অজৈব পদার্থ।
খ) জলে সামান্য দ্রাব্য তাপমাত্রা বাড়লে এর দ্রাব্যতা কমে যায়।
গ) কলিচুন সাদা পাউডার
ঘ) জলে কলিচুন মেশালে উপরের অংশে যে স্বচ্ছ দ্রবণ পাওয়া যায়, তাকেই চুনজল বলে।
ঙ) কলিচুন তীব্র ক্ষারীয় পদার্থ।অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবণ এবং জল উৎপন্ন করে।
চ) অ্যামোনিয়াম লবণের সঙ্গে উত্তপ্ত করলে এমোনিয়া গ্যাস নির্গত হয়।
ছ) কলিচুন এর সঙ্গে ক্লোরিনের বিলিসিং পাউডার উৎপন্ন করা হয়।
জ) কলিচুন কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে। স্বচ্ছ চুন জলের মধ্যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড চালনা করলে অদ্রাব্য CaCO3 উৎপন্ন হয়, তাই চুল জল ঘোলা হয়ে যায়।

কলিচুন এর ব্যবহার

ক) ব্লিচিং পাউডার এবং কস্টিক সোডা প্রস্তুতিতে কলিচুন ব্যবহার করা হয়।
খ) সলভে পদ্ধতিতে প্রাপ্ত অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড এবং কয়লার অন্তর্ধূম পাতনে প্রাপ্ত অ্যামোনিয়াম দ্রব্য থেকে অ্যামোনিয়া গ্যাস পুনরুদ্ধারে ব্যবহৃত হয়।
গ) খর জলকে মৃদু করতে কলিচুন ব্যবহার করা হয়।
ঘ) সিমেন্ট কংক্রিট প্রস্তুতিতে এবং অট্টালিকা নির্মাণে কলিচুনের ব্যবহার হয়।

 


লবণ

লবণের সংজ্ঞা

এসিডের প্রতিস্থাপনযোগ্য হাইড্রোজেন পরমাণু,ধাতু বা অন্য কোনো পজিটিভ তড়িৎ গ্রস্ত মূলক দ্বারা অথবা সম্পূর্ণরূপে প্রতিস্থাপিত হয়ে যে যৌগ উৎপন্ন করে তাকে লবণ বলে।
HCl+NaOH=NaCl+H2O
লবণ,তড়িৎ বিয়োজিত অবস্থায় হাইড্রোজেন আয়ন ছাড়া অন্য ক্যাটায়ন এবং হাইড্রোক্সিল ছাড়া অন্য অ্যানায়ন উৎপন্ন করে।
HCl=H++Cl
NaOH= Na++ OH
HCl+NaOH=H2O+Na++Cl
এখানে H+আয়ন দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে NaCl লবণ উৎপন্ন করে এবংNaCl তড়িৎ বিয়োজিত হয়ে H+এবং Cl– আয়ন উৎপন্ন করে।

লবনের শ্রেণীবিভাগ

  • ক) সমিত বা নরমাল লবণ
  • কোন অ্যাসিডের অণুতে প্রতিস্থাপনীয় সমস্ত হাইড্রোজেন পরমাণু, ধাতু বা অন্য কোনো পজিটিভ তড়িৎগ্রস্ত মূলক দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে যে লবণ উৎপন্ন করে তাকে নরমাল লবণ বা সমিত লবণ বলে।হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড থেকে উৎপন্ন সোডিয়াম ক্লোরাইড সালফিউরিক অ্যাসিড থেকে উৎপন্ন সোডিয়াম সালফেট নর্মাল লবণের উদাহরণ।
  • খ) ক্ষারকীয় লবণ
  • কোন ক্ষারকের সমস্ত হাইড্রোক্সিল মূলক এসিড দ্বারা সম্পূর্ণ প্রশমিত না হয় আংশিক প্রশমিত হওয়ার ফলে যে লবণ উৎপাদন হয় তাকে ক্ষারকীয় লবণ বলে
  • Pb(OH)2+HNO=Pb(OH)NO3-+H2O
  • ক্ষারীয় লেড কার্বনেট Pb(OH)2, 2PbCO3 ক্ষারীয় কপার কার্বনেটCuCO3,CuOH2 প্রভৃতি ক্ষারীয় লবণের উদাহরন।
  • গ) এসিড লবণ
  • এসিডের প্রতিস্থাপনীয় হাইড্রোজেন পরমাণু, ধাতু বা অন্য কোনো পজিটিভ তড়িৎগ্রস্ত মূলক দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে যে লবণ উৎপন্ন করে তাকে এসিড লবণ বলা হয়।
  • H2OSO4+NaOH=NaHSO4+H2Oহাইড্রোজেন পরমাণু দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে সোডিয়াম বাই সালফেট লবনের উৎপন্ন করেছে। NaHSO4 একটি এসিড লবণ।
  • সোডিয়াম বাই কার্বনেট NaHCO3, ডাই সোডিয়াম হাইড্রোজেন ফসফেটNa2HPO4 প্রভৃতি লবণগুলি এসিড লবণ।
  • ঘ) দ্বিধাতব লবণ
  • অনেক সময় দুটি লবণ নির্দিষ্ট আণবিক অনুপাতে যুক্ত হয়ে নতুন লবন সৃষ্টি করে।কঠিন অবস্থায় এই লবণ স্থায়ী কিন্তু জলে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ বিয়োজিত হয়ে উপাদান লবণ আয়ন উৎপন্ন করে। অ্যালাম K2SO4,AL(SO4)3, 24H2O ক্রম অ্যালাম K2SO4,Cr2(SO4)3, 24H2O এই জাতীয় লবণের উদাহরণ।

প্রশমন

প্রশমনের সংজ্ঞা

এসিড বা ক্ষারের মধ্যে বিক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে ধর্ম সম্পূর্ণরূপে লোপ পেয়ে লবণ ও জল উৎপন্ন হয়। এসিড ও ক্ষারের মধ্যে এইরকম বিক্রিয়াকে প্রশমন ক্রিয়া বলে।
তুল্য পরিমাণ এসিডের সঙ্গে তুল্য পরিমাণ ক্ষারের বিক্রিয়ায় লবণ ও জল উৎপন্ন হয়। উৎপন্ন দ্রবণে এসিড বা ক্ষারের ধর্ম প্রকাশ পায় না। এইরকম বিক্রিয়াকে প্রশমন বলে।
যেমন HCl এর সঙ্গে NaOH এর বিক্রিয়ায় NaCl লবণ ও জল উৎপন্ন হয়।
HCl+NaOH=NaCl+H2O

  • অ্যাসিডের দ্রবণে H+ আয়ন থাকে এবং দ্রবণে এসিডের ধর্ম এই H+ আয়নের জন্য। আবার ক্ষার দ্রবণে OH আয়ন থাকে দ্রবণের ক্ষারীয় ধর্ম OH আয়নের জন্য। জলের মধ্যে এসিডের ধর্ম ও নাই আবার ক্ষারের ধর্ম নেই।
    সুতরাং, জলীয় দ্রবণের তুল্যাঙ্ক পরিমাণে এসিড ও ক্ষার মেশালে এসিডের H+ আয়ন ও ক্ষারের OH আয়নের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তড়িৎ নিরপেক্ষ জলের অণু উৎপন্ন করে। দ্রবণে অতিরিক্ত H+ আয়ন অথবা অতিরিক্ত OH থাকে না। ফলে দ্রবণে এসিড বা ক্ষার এর কোন কোন প্রকাশ পায় না। এই দ্রবণ লাল লিটমাসকে নীল, নীল লিটমাসকে লাল করে না। এসিডের অ্যানায়ন এবং ক্যাটায়ন এর কোন পরিবর্তন হয়না।
  • HCl=H++Cl
    NaOH= Na++ OH
    HCl+NaOH=H2O+Na++Cl
    ল্যাবরেটরীতে এসিড ও ক্ষারের প্রশমন বিক্রিয়া ঘটানো হয় টাইট্রেশন পদ্ধতিতে।
বিলীয়মান রং

এমোনিয়া জলে দ্রবীভূত হয়ে অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড উৎপন্ন করে। অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড একটি মৃদু ক্ষার। অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড এর সঙ্গে সামান্য ফেনোফথ্যালিন নির্দেশক যোগ করলে দ্রবণের বর্ণ লালচে বেগুনি হয়ে যায়। সাদা কাপড়ে এই রং দিলে কাপড়টি লালচে বেগুনি হয়ে যায়। যেহেতু এমোনিয়া একটি গ্যাস,তাই বাতাসের সংস্পর্শে এলে ওই দ্রবণ থেকে অ্যামোনিয়া বাষ্পীভূত হয়ে উড়ে যায়।এমোনিয়া না থাকায় দ্রবণের ক্ষার ধর্ম আর থাকেনা প্রসম হয়ে যায়। প্রশম দ্রবণে ফেনোফথ্যালিন এর কোন বর্ণ নেই, তাই ওই লালচে বেগুনি রং অদৃশ্য হয়ে যায়। কাপর্টি আবার আগের মত সাদা হয়ে যায়। ফেনোফথ্যালিন যুক্ত অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড এর দ্রবণকে তাই বিলীয়মান রং বলে।

নির্দেশক এবং প্রশমন বিক্রিয়ায় নির্দেশক এর প্রয়োজনীয়তা

কতকগুলি জৈব যৌগ আছে যাদের বর্ণ এসিডে একরকম এবং ক্ষারে অন্যরকম হয়। এই জৈব যৌগ গুলিকে নির্দেশক বলে।টাইট্রেশন এর সময় অ্যাসিড এবং ক্ষারের মধ্যে বিক্রিয়ায়এই নির্দেশক গুলি নিজেদের বর্ণ পরিবর্তন করে বিক্রিয়ায় প্রশমন ক্ষন নির্দেশ করে। লিটমাস দ্রবণ, মিথাইল অরেঞ্জ, ফেনোফথ্যালিন প্রভৃতি এই জাতীয় জৈব যৌগ। এরা নির্দেশক। দ্রবণের নির্দেশক এর বর্ণ দেখে দ্রবণটি আম্লিক না ক্ষারীয় বা প্রশমন তা জানা যায়।

তুল্য পরিমাণ অ্যাসিড কাকে বলে

এসিডের যত ভাগ ওজনের একভাগ ওজনের প্রতিস্থাপনীয় হাইড্রোজেন থাকে তাকে তুল্য পরিমাণ এসিড বলে।

তুল্য পরিমাণ ক্ষার কাকে বলে

ক্ষারের যতভাগ ওজন এক তুল্য পরিমাণ অ্যাসিডকে প্রশমিত করে, তাকে তুল্য পরিমাণ ক্ষার বলে।

 


অ্যাসিড

অ্যাসিড কাকে বলে

হাইড্রোজেন যুক্ত যে যৌগের স্বাদ অম্ল এবং যে যৌগের হাইড্রোজেন পরমাণুকে ধাতু বা ধাতুর মতো আচরণকারি মুলক দ্বারা আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে প্রতিস্থাপন করা যায়, তাকে অ্যাসিড বলে।

আয়নীয় তত্ত্ব অনুযায়ী অ্যাসিডের সংজ্ঞা

যে হাইড্রোজেন ঘটিত যৌগ জলীয় দ্রবণে বিয়োজিত হয়ে ক্যাটায়ন রূপে শুধু H+ আয়ন দেয় সেই যৌগকে অ্যাসিড বলে। সালফিউরিক অ্যাসিড, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড, নাইট্রিক অ্যাসিড, ফসফরিক অ্যাসিড, কার্বনিক অ্যাসিড প্রভৃতি কয়েকটি প্রধান এসিড। খনিজ পদার্থ থেকে এগুলি প্রস্তুত করা হয় বলে এদেরকে খনিজ এসিড বলে। এসিডের জলীয় দ্রবণে H+ আয়ন ছাড়া অন্য ক্যাটায়ন থাকে না।
HCl⇋H++Cl
অ্যাসিটিক অ্যাসিড, ফরমিক অ্যাসিড প্রভৃতি অ্যাসিড জৈব পদার্থ থেকে পাওয়া যায় বলে এদেরকে জৈব এসিড বলে।

অ্যাসিডের ধর্ম

  • অ্যাসিডের ধর্ম (প্রধান) হল জলীয় দ্রবণে হাইড্রোজেন আয়ন উৎপন্ন করা। এই H+ আয়নের উপস্থিতির জন্য দ্রবণে অ্যাসিডের ধর্ম প্রকাশ পায়।
  • ক) এসিডের স্বাদ অম্ল হবেই। খুব পাতলা হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড এক ফোঁটা জিভে লাগালে টক লাগে।
  • খ) অ্যাসিড নির্দেশকের বর্ণ পরিবর্তন করে। যেমন অ্যাসিড লিটমাস কাগজকে লাল করে দেয় এবং মিথাইল অরেঞ্জকে গোলাপী লাল রঙে কনভার্ট করে দেয়।
  • গ) ক্ষার বা ক্ষারকের সঙ্গে বিক্রিয়ায় লবণ এবং জল উৎপন্ন করে যেমন হাইড্রোক্লোরিক এসিডের সঙ্গে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড এর বিক্রিয়ায় সোডিয়াম ক্লোরাইড লবণ এবং জল উৎপন্ন হয়।
  • HCl+NaOH=NaCl+H2O
  • ঘ) ধাতুর সঙ্গে বিক্রিয়া
  • হাইড্রোজেন এর চেয়ে বেশি তড়িৎ ধনাত্মক ধাতুর সঙ্গে বিক্রিয়ায় এসিডের প্রতিস্থাপনযোগ্য হাইড্রোজেন, ধাতু দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে লবণ উৎপন্ন করে এবং হাইড্রোজেন গ্যাস নির্গত হয়।
  • Mg+2HCl=MgCl2+H2
  • ঙ) কার্বনেট অথবা বাই কার্বনেট লবণ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন করে।
  • H2SO4+NaCO3=NaSO4+CO2+H2Oছ) এসিডের ক্ষারগ্রাহীতা
  • চ) কোন এসিডের একটি অনুর মধ্যে যত সংখ্যক প্রতিস্থাপনীয় হাইড্রোজেন পরমাণু থাকে সেই সংখ্যাকেই এসিডের ক্ষারগ্রাহীতা বলে।
  • হাইড্রোক্লোরিক এসিডের ক্ষারগ্রাহীতা 1। ফসফরিক এসিডের ক্ষারগ্রাহীতা 3। সালফিউরিক এসিডের ক্ষারগ্রাহীতা 2।
  • চ) আয়নীয় বিয়োজনে এসিডের জলীয় দ্রবণে ক্যাটায়ন রূপে শুধু H+ বর্তমান থাকে।

তীব্র অ্যাসিড কি

যে এসিড জলীয় দ্রবণে তড়িৎ বিভাজিত হয়ে বেশি পরিমাণ H+ আয়ন উৎপন্ন করে তাকে তীব্র অ্যাসিড বলে। যেমন HCl, H2SO4, HNO3

অ্যাসিডের শনাক্তকরণ

  • ক) লিটমাস দ্রবণ অ্যাসিড এর সংস্পর্শে এলে লাল হয়ে যায়। মিথাইল অরেঞ্জ নির্দেশক এসিডের মধ্যে দু’ফোঁটা যোগ করলে এসিডের বর্ণ লাল হয়ে যায়।
  • ‘খ) সোডিয়াম কার্বনেট দ্রবনে এসিড যোগ করলে প্রচুর বুদবুদ সৃষ্টি হয়। এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গত হতে থাকে।

ক্ষারক

যে যৌগ (সাধারণত ধাতব অক্সাইড বা হাইড্রোক্সাইড) অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবণ ও জল উৎপন্ন করে তাকে ক্ষারক বলে।
যেমনNa2O, MgO, Al(OH)3 প্রভৃতি।
ZnO+2HCl=ZnCl2+H2O

আয়নীয় তত্ত্ব অনুযায়ী ক্ষারের সংজ্ঞা

যেসব যৌগ জলীয় দ্রবণে আয়নিত হয় হাইড্রোক্সিল (OH-) আয়ন উৎপন্ন করে, এবং হাইড্রোক্সিল আয়ন ছাড়া অন্য কোন অ্যানায়ন উৎপন্ন করে না তাদের ক্ষারক বলে।
NaO+ H2O= 2NaOH
NH3, ধাতব অক্সাইড বা হাইড্রোক্সাইড নয়, কিন্তু যেহেতু NH3 এসিডের সঙ্গে বিক্রিয়ায় লবণ উৎপন্ন করে এবং জলীয় দ্রবণে OH আয়ন দেয়, তাই NH3 কে ক্ষারক হিসেবে গণ্য করা হয়।

ক্ষারকের ধর্ম

  • ক) ক্ষারক নির্দেশক এর বর্ণ পরিবর্তন করে
  • লিটমাস এ ক্ষারক যোগ করলে নীল বর্ণ ধারণ করে, মিথাইল অরেঞ্জ এর সাথে ক্ষারক যোগ করলে হলুদ বর্ণ ধারণ করে, ফেনালপ্থ্যালিনের সাথে ক্ষারক যোগ করলে বর্ণহীন হয়।
  • খ) জলে দ্রবণীয় ক্ষারক গুলি জলীয় দ্রবণে তড়িৎ বিয়োজিত হয়ে অ্যানায়ন রূপে কেবল OH আয়ন উৎপন্ন করে NaOH=Na++OH
  • গ) অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবণ এবং জল উৎপন্ন করে।
  • NaOH এর সঙ্গে HClএর বিক্রিয়ায় NaCl লবণ এবং জল উৎপন্ন হয়।
  • Cu এর সঙ্গে সালফিউরিক এর বিক্রিয়ায় CuSO4 লবণ এবং জল উৎপন্ন করে।
  • সুতরাংNaOH, CuSO4 প্রভৃতি ক্ষারক পদার্থ।
  • ঘ) ক্ষারক এর OH আয়ন সর্বদাই এসিডের OHআয়নের সঙ্গে বিক্রিয়া করে জলের অনু গঠন করে। সেই জন্য ক্ষারককে H+ আয়ন বা প্রোটন গ্রাহক বলে।

ক্ষার

যে সমস্ত ক্ষারক (ধাতব অক্সাইড বা হাইড্রোক্সাইড) জলে দ্রবীভূত হয়, তাদের ক্ষার বলে। ক্ষারের জলীয় দ্রবণ লাল লিটমাসকে নীল করে এবং অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া দ্বারা লবণ ও জল উৎপন্ন করে। ক্ষার দ্রবণে হাত দিলে সাবানের মত পিচ্ছিল বোধ হয়।

সব ক্ষারক জলে দ্রবণীয় না হতে পারে, কিন্তু ক্ষার মাত্রই জলে দ্রাব্য। সুতরাং সকল ক্ষারক ক্ষার নয় কিন্তু সকল ক্ষারই ক্ষারক। যেমনAl(OH)³ জলে দ্রবীভূত হয় না সুতরাং এটি ক্ষারক, ক্ষার নয়।

NaOH একটি ক্ষারক, কিন্তু জলে দ্রবীভূত হয়ে আয়নিত হয় এবং OH আয়ন দেয় তাই এটি ক্ষার। ক্ষারক জলে দ্রবীভূত হয়ে ক্ষার উৎপন্ন করে সুতরাং সব ক্ষারই ক্ষারক কিন্তু যেহেতু সব ক্ষারক জলে দ্রবীভূত হয় না তাই সব ক্ষারক ক্ষার নয়।

তীব্র ক্ষার

যে ক্ষার জলীয় দ্রবণে তড়িৎ বিভাজিত হয়ে বেশি পরিমাণে OH আয়ন উৎপন্ন করে তাকে তীব্র ক্ষার বলে।
যেমন সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইড ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড প্রভৃতি তীব্র ক্ষার।

মৃদু ক্ষার

যেসব ক্ষার জলীয় দ্রবণে তড়িৎ বিয়জিত হয়ে কম সংখ্যাক OH আয়ন উৎপন্ন করে তাকে মৃদু ক্ষার বলে। যেমন অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড NH4OH ফেরিক হাইড্রক্সাইড Fe(OH)3 ইত্যাদি।

ক্ষারক বা ক্ষারের অম্ল গ্রহীতা
কোন ক্ষারকের একটি অনুর মধ্যে যত সংখ্যক OH মূলক বর্তমান থাকে, ওই সংখ্যাকে ওই ক্ষারের অম্ল গ্রহীতা বলে। যেমন সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড NaOHএর অম্ল গ্রহীতা 1, ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড Ca(OH)2 এর অম্ল গ্রহীতা 2।

ক্ষার সনাক্তকরণ

  • ক) ক্ষারের জলীয় দ্রবণে দু’ফোঁটা লাল লিটমাস দ্রবণ যোগ করলে দ্রবণটি নীল হয়ে যায়।
  • খ) দু-এক ফোঁটা ফেনোলফ্থলেইন দ্রবণ ক্ষার দ্রবণে যোগ করলে দ্রবণের বর্ণ লালচে বেগুনি হয়ে যায়।

 


হাইড্রোজেন

হাইড্রোজেন এর চিহ্নH
হাইড্রোজেনের সংকেতH2
হাইড্রোজেনের যোজ্যতা1
হাইড্রোজেনের পারমাণবিক ওজন বা গুরুত্ব1
হাইড্রোজেনের আবিস্কারহেনরি ক্যাভেন্ডিস ( ১৭৬৬ সালে )
হাইড্রোজেন

হাইড্রোজেনের ধর্ম

  • হাইড্রোজেন এর ধর্ম H2 এর ধর্মকে আমরা মূলত দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি।
    ১.হাইড্রোজেন এর ভৌত ধর্ম এবং
  • ২. হাইড্রোজেন এর রাসায়নিক ধর্ম

১. হাইড্রোজেনের ভৌত ধর্ম:

  • ক) বিশুদ্ধ হাইড্রোজেন, বর্ণহীন, স্বাদহীন, গন্ধহীন।
  • খ) জলে প্রায় অদ্রাব্য গ্যাস।
  • গ) হাইড্রোজেন সবচেয়ে হালকা মৌল।
  • ঘ) বাতাস হাইড্রোজেন এর চেয়ে 14.4 গুণ ভারী।

২. হাইড্রোজেনের রাসায়নিক ধর্ম: 

  • ক) হাইড্রোজেন গ্যাস দাহ্য কিন্তু দহনে সাহায্য করে না। H2 গ্যাসপূর্ণ একটি গ্যাসজার উপুড় করে ধরে ওর মধ্যে একটি জ্বলন্ত পাটকাঠির ঢুকালে দেখা যাবে পাটকাঠির নিভে গেল এবং H2 গ্যাস নিজে জ্বলতে থাকলো।
  • খ) অক্সিজেনের সঙ্গে:
  • হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন গ্যাসের মিশ্রণ এ অগ্নিসংযোগ করলে বিস্ফোরণ ঘটে এবং H2 গ্যাস নীলাভ শিখাসহ জ্বলে এবং জল উৎপন্ন করে। 2H2 + O2 = 2H2O
  • গ) H2 গ্যাস একটি বিজারক পদার্থ, উত্তপ্ত ধাতব অক্সাইডকে বিজারিত করে ধাতু উৎপন্ন করে। কালো বর্ণের CuOকে উত্তপ্ত করে ওর উপর দিয়ে H2 গ্যাস চালনা করলে কালো CuO বিজারিত হয়ে লাল বর্ণের ধাতব কপার উৎপন্ন করে। CuO + H2=Cu + 2H2O
  • ঘ) ধাতুর সঙ্গে:
  • উত্তপ্ত সোডিয়াম,পটাশিয়াম বা ক্যালসিয়াম ধাতুর সঙ্গে হাইড্রোজেনযুক্ত হয়ে হাইড্রাইড যৌগ উৎপন্ন করে। 2Na +H2=2NaH
  • ঙ ) নাইট্রোজেনের সঙ্গে:
  • 500 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায় 200 বায়ুমণ্ডল চাপে লোহাকে অনুঘটক রূপে ব্যবহার করলে H2 এবং নাইট্রোজেন গ্যাসের বিক্রিয়ায় অ্যামোনিয়া গ্যাস উৎপন্ন হয়। N2 + 3H2 = 2NH3
  • চ) ক্লোরিনের সঙ্গে:
  • হাইড্রোজেনের সঙ্গে ক্লোরিন গ্যাস মিশিয়ে আলোতে রাখলে হাইড্রোজেন-ক্লোরাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়। H2 + Cl2 = 2HCl
  • ছ) উত্তপ্ত সালফারের উপর দিয়ে H2 গ্যাস চালনা করলে পচা ডিমের গন্ধ বিশিষ্ট হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়। H2 + S = H2S
  • জ) অন্তর ধৃতি:
  • কতগুলি ধাতু যথা আয়রন, প্যালাডিয়াম, প্লাটিনাম প্রভৃতি হাইড্রোজেন গ্যাসকে শোষণ করে। শোষিত H2 গ্যাস কঠিন ধাতুতে দ্রবীভূত হয়। ধাতুটিকে উত্তপ্ত করলে হাইড্রোজেন গ্যাস আবার নির্গত হয়। এই ঘটনাকে অন্তর ধৃতি বলে।
  • ঝ) জায়মান হাইড্রোজেন:
  • রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে হাইড্রোজেন ঘটিত কোন যৌগ থেকে সদ্যমুক্ত হাইড্রোজেনকে জায়মান হাইড্রোজেন বলে।
  • হাইড্রোজেনের ব্যবহার

    • H2 এর ব্যবহার বহুধা। নিচে H2 গ্যাসের ব্যবহার সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো
    • ক) H2 গ্যাস বিজারক হিসেবে পরীক্ষাগারে ব্যবহার করা হয়।
    • খ) ঝালাইয়ের কাজে অক্সি-হাইড্রোজেন শিখা 2000 সেন্টিগ্রেড উৎপন্ন করতে পারে এবং হাইড্রোজেন টর্চ রূপে 5000 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড উষ্ণতা সৃষ্টি করতে পারে।
    • গ) সবচেয়ে হালকা বলে H2 গ্যাস বেলুনে ব্যবহার করা হয়।
    • ঘ) তেলকে হাইড্রোজেনীকরন দ্বারা চর্বিতে পরিণত করতে এবং অসম্পৃক্ত জৈব যৌগের সম্পৃক্ত যৌগে পরিণত করতে ব্যবহার করা হয়।
    • ঙ) মিথাইল অ্যালকোহল, HCl এবং কৃত্রিম সার প্রস্তুতিতে H2 ব্যবহার করা হয়।
    • এই ছিল প্রধানত H2 গ্যাসের ব্যবহার।
  • হাইড্রোজেনের সনাক্তকরণ

    • কিভাবে H2 গ্যাস সনাক্ত করতে হয় তার নিম্নলিখিত আলোচনায় বোঝা যাবে।
    • ক) বাতাসে অক্সিজেনের মধ্যে H2 গ্যাস নীল শিখা জ্বলে জল উৎপন্ন করে। উৎপন্ন জল লাল নীল লিটমাসের বর্ণ পরিবর্তন করে না। কিন্তু সাদা কপার সালফেটের সংস্পর্শে নীল হয়।
    • খ) প্যালাডিয়াম নিকেল প্রভৃতি ধাতু দ্বারা H2 গ্যাস হয়।
    • গ) H2 গ্যাসপূর্ণ গ্যাসজারে একটি জ্বলন্ত পাটকাঠি প্রবেশ করালে পাটকাঠির নিভে যাবে কিন্তু জারের মধ্যস্থ H2 গ্যাস নিল শিখায় জ্বলতে থাকবে।
    • এভাবেই আমরা প্রধানত H2 গ্যাসের শনাক্ত করতে পারি।
  • পরীক্ষাগারে হাইড্রোজেন গ্যাস প্রস্তুতি

    H2 গ্যাস প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্য:
    ১. লঘু সালফিউরিক অ্যাসিড
    ২. জিংকের ছিবড়া

    হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরির নীতি:
    সাধারণ তাপমাত্রায় জিংকের ছিবড়ার সঙ্গে লঘু সালফিউরিক এসিডের বিক্রিয়া দ্বারা পরীক্ষাগারে H2 গ্যাস প্রস্তুত করা হয়। বিক্রিয়ার ফলে জিংক সালফেট এবং H2 গ্যাস উৎপন্ন হয়।
    Zn + H2SO4= H2SO4+ H2

  • পরীক্ষাগারে H2 তৈরির পদ্ধতি
  • ১. একটি উলফ বোতলে কিছু জিংকের ছিবরা নিয়ে একমুখে একটি দীর্ঘনল ফানেল এবং অন্য মুখে একটি নির্গমনল কর্কের মধ্যে দিয়ে লাগানো হলো। দীর্ঘনল ফানেলের শেষপ্রান্ত যেন বোতলের তলদেশ পর্যন্ত পৌঁছায়।
  • ২. দীর্ঘনল ফানেলের মধ্যে দিয়ে উল্ফ বোতলের মধ্যে কিছু পরিমাণ জল ঢালা হল, যেন দীর্ঘনল ফানেলের শেষপ্রান্তটি জলে ডুবে থাকে।
  • ৩. এইবার বোতলটি বায়ু নিরুদ্ধ হয়েছে কিনা জানার জন্য নির্গমনলের শেষ প্রান্তে মুখ দিয়ে ফুঁ দেওয়া হল। এর ফলে কিছুটা জল দীর্ঘনল ফানেল বেয়ে উপরে উঠে যাবে। এখন নির্গমনলের শেষপ্রান্তটি বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে বন্ধ করা হলো। দীর্ঘনলের মধ্যে জলস্তম্ভটি যদি স্থির অবস্থায় থাকে তাহলে বোঝা যাবে যে, বোতলটি বায়ু নিরুদ্ধ হয়েছে।
  • ঘ) এইবার দীর্ঘনল ফানেলের মধ্যে দিয়ে লঘু সালফিউরিক অ্যাসিড ঢালা হল।এর ফলে জিংক এর সঙ্গে লঘু সালফিউরিক এসিডের বিক্রিয়ায় H2 গ্যাস নির্গত হতে শুরু করে।
  • ঙ) প্রথমে কিছু গ্যাস বের হয়ে গেলে বোতলের মধ্যস্থিত বাতাস বের হয়ে যায়। এখন নির্গম নল এর শেষ প্রান্তকে একটি জলপূর্ণ গ্যাসদ্রোনীর মধ্যে ডোবানো হল।
  • চ) একটি জলপূর্ণ গ্যাস নির্গমনলের শেষ প্রান্তের উপর উপুর করে দেওয়া হলো।
  • হাইড্রোজেন গ্যাস সংগ্রহ
  • এর ফলে উল্ফ বোতলে উৎপন্ন H2 গ্যাস নির্গমনের মধ্যে দিয়ে এসে বুদবুদের আকারে জলের নিম্ন অপসারণ দ্বারা গ্যাসজারে জমা হয়।




রাসায়ানিক বিক্রিয়ার ফলে H2 ঘটিত কোন যৌগ থেকে সদ্য মুক্ত হাইড্রোজেনকে জায়মান হাইড্রোজেন বলে। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় যখন কোন পদার্থ থেকে H2 উতপন্ন হয়, তখন ওই হাইড্রোজেনের সদ্যজাত অবস্থা , অর্থাৎ ওই H2 অনুতে পরিনত হওয়ার আগের অবস্থাকে জায়মান অবস্থা বলে। এই অবস্থা সল্পকাল স্থায়ী। জিঙ্কের সাথে লঘু সালফিউরিক অ্যাসিডের বিক্রিয়ায় যে সদ্দ্যজাত Hউৎপন্ন হয়, তা প্রথমে পারমানবিক অবস্থায় থাকে। জায়মান হাইড্রোজেন সাধারন হাইড্রোজেনের থেকে অনেক শক্তিশালী ও সক্রিয় কারন এই অবস্থায় H2 পারমানবিক অবস্থায় থাকে।