বাক্যের সংঙ্গা গুণ ও প্রকরণ
মূল উপকরণ বাক্য এবং বাক্যের মৌলিক উপাদান শব্দ। যে সুবিন্যস্ত পদসমষ্টি দ্বারা কোনো বিষয়ে বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয় তাকে বাক্য বলে। কতগুলো পদের সমষ্টিতে বাক্য গঠিত হলেও যে কোনো পদসমষ্টিই বাক্য নয়। বাক্যের বিভিন্ন পদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বা অন্বয় থাকা আবশ্যক। এ ছাড়াও বাক্যের অন্তর্গত বিভিন্ন পদ দ্বারা মিলিতভাবে একটি অখণ্ড ভাব পূর্ণ রূপে প্রকাশিত হওয়া প্রয়োজন তবেই তা বাক্য হবে।
সার্থক বাক্যের গুণ
ভাষার বিচারে বাক্যের তিনটি গুণ রয়েছে। যেমন: আকাঙ্ক্ষা, আসত্তি, যোগ্যতা
আকাঙ্ক্ষা
বাক্যের অর্থ পরিষ্কারভাবে বোঝার জন্য এক পদের পর অন্য পদ শোনার যে ইচ্ছা তাই আকাঙ্ক্ষা। যেমন: ‘চন্দ্র পৃথিবীর চারদিকে’-এটুকু বললে বাক্যটি সম্পূর্ণ মনোভাব প্রকাশ করে না, আরও কিছু ইচ্ছা থাকে। বাক্যটি এভাবে পূর্ণাঙ্গ করা যায়; চন্দ্র পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে। এখানে আকাঙ্ক্ষার নিবৃত্তি হয়েছে বলে এটি পূর্ণাঙ্গ বাক্য।
আসত্তি
মনোভাব প্রকাশের জন্য বাক্যে শব্দগুলো এমনভাবে পর পর সাজাতে হবে যাতে মনোভাব প্রকাশ বাধাগ্রস্ত না হয়। বাক্যের অর্থসঙ্গতি রক্ষার জন্য সুশৃঙ্খল পদবিন্যাসই আসত্তি। যেমন: কাল বিতরণী হবে উৎসব স্কুলে আমাদের পুরস্কার অনুষ্ঠিত। লেখা হওয়াতে পদ সন্নিবেশ ঠিকভাবে না হওয়ায় শব্দগুলোর অন্তর্নিহিত ভাবটি যথাযথ প্রকাশিত হয়নি। তাই এটি একটি বাক্য হয়নি। মনোভাব পূর্ণ ভাবে প্রকাশ করার জন্য সকল পদকে নিম্নলিখিতভাবে যথাস্থানে সন্নিবিষ্ট করতে হয়। যেমন: কাল আমাদের স্কুলে পুরস্কার বিতরণী উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। বাক্যটি আসত্তিসম্পন্ন।
যোগ্যতা
বাক্যস্থিত পদসমূহের অন্তর্গত এবং ভাবগত মিলবন্ধনের নাম যোগ্যতা। যেমন: বর্ষার বৃষ্টিতে প্লাবনের সৃষ্টি হয়। এটি একটি যোগ্যতাসম্পন্ন বাক্য। কারণ বাক্যটিতে পদসমূহের অর্থগত এবং ভাবগত সমন্বয় রয়েছে।
কিন্তু ‘বর্ষার রৌদ্র প্লাবনের সৃষ্টি করে’ - বললে বাক্যটি ভাবপ্রকাশের যোগ্যতা হারাবে। কারণ রৌদ্র প্লাবন সৃষ্টি করে না।
যোগ্যতার বিষয়:
যোগ্যতার সঙ্গে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো জড়িত থাকে-
রীতিসিদ্ধ অর্থবাচকতা:
প্রকৃতি-প্রত্যয়জাত অর্থে শব্দ সর্বদা ব্যবহৃত হয়। যোগ্যতার দিক থেকে রীতিসিদ্ধ অর্থের প্রতি লক্ষ রেখে কতগুলো শব্দ ব্যবহার করতে হয়। যেমন:
শব্দ | রীতিসিদ্ধ | প্রকৃতি + প্রত্যয় | প্রকৃতি+প্রত্যয়জাত অর্থ |
১. বাধিত | অনুগৃহীত বা কৃতজ্ঞ | বাধ + ইত | বাধাপ্রাপ্ত |
২. তৈল | তিল জাতীয় বিশেষ কোনো শস্যের রস | তিল + ষ্ণ | তিলজাত স্নেহ পদার্থ |
দুর্বোধ্যতা
অপ্রচলিত ও দুর্বোধ্য শব্দ ব্যবহার করলে বাক্যের যোগ্যতা বিনষ্ট হয়। যেমন: তুমি
আমার সঙ্গে প্রপঞ্চ করেছ।(চাতুরী বা মায়া অর্থে, কিন্তু বাংলা ‘প্রপঞ্চ’ শব্দটি অপ্রচলিত)
উপমার ভুল প্রয়োগ
ঠিকভাবে উপমা অলংকার ব্যবহার না করলে যোগ্যতার হানি ঘটে। যেমন: আমার হৃদয়-মন্দিরে আশার বীজ উপ্ত হলো। বীজ ক্ষেতে বপন করা হয়, মন্দিরে নয়। কাজেই বাক্যটি হওয়া উচিত: আমার হৃদয়-ক্ষেত্রে আশার বীজ উপ্ত হলো।
বাহুল্য-দোষ
প্রয়োজনের অতিরিক্ত শব্দ ব্যবহারে বাহুল্য দোষ বটে এবং এর ফলে শব্দ তার যোগ্যতা হারায়। যেমন: দেশের সব আলেমগণই এ ব্যাপারে আমাদের সমর্থন দান করেন। ‘আলেমগণ’ বহু বচনবাচক শব্দ। এর সঙ্গে ‘সব’ শব্দটির অতিরিক্ত ব্যবহার বাহুল্য-দোষ সৃষ্টি করেছে।
বাগধারার শব্দ পরিবর্তন
বাগধারা ভাষাবিশেষের ঐতিহ্য। এর যথেচ্ছ পরিবর্তন করলে শব্দ তার যোগ্যতা হারায়। যেমন: অরণ্যে রোদন(অর্থ: নিষ্ফল আবেদন)-এর পরিবর্তে যদি বলা হয়, ‘বনে ক্রন্দন’ তবে বাগধারাটি তার যোগ্যতা হারাবে।
গুরুচণ্ডালী দোষ
তৎসম শব্দের সঙ্গে দেশীয় শব্দের প্রয়োগ কখনো কখনো গুরুচণ্ডালী দোষ সৃষ্টি করে। এ দোষে দুষ্ট শব্দ তার যোগ্যতা হারায়। ‘গরুর গাড়ি’, ‘শবদাহ’, ‘মড়াপোড়া’ প্রভৃতি স্থলে যথাক্রমে ‘গরুর শকট’, ‘শবপোড়া’, ‘মড়াদাহ’ প্রভৃতির ব্যবহার গুরুচণ্ডালী দোষ সৃষ্টি করে।
বাক্যের অংশ (উদ্দেশ্য ও বিধেয়)
প্রতিটি বাক্যে দুটি অংশ থাকে: উদ্দেশ্য ও বিধেয়
উদ্দেশ্য: বাক্যের যে অংশে কাউকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলা হয় তাকে উদ্দেশ্য বলে।
বিধেয়: উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যা বলা হয় তাকে বিধেয় বলে। যেমন:
খোকা এখন বই পড়ছে
(উদ্দেশ্য) (বিধেয়)
বিশেষ্য বা বিশেষ্যস্থানীয় অন্যান্য পদ বা পদসমষ্টিযোগে গঠিত বাক্যাংশও বাক্যের উদ্দেশ্য হতে পারে। যেমন:
সৎ লোকেরাই প্রকৃত সুখী(বিশেষ্যরূপে ব্যবহৃত বিশেষণ)
মিথ্যা কথা বলা খুবই অন্যায়(ক্রিয়াজাত বাক্যাংশ)
উদ্দেশ্যের প্রকারভেদ
সরল উদ্দেশ্য: একটিমাত্র পদবিশিষ্ট কর্তৃপদকে সরল উদ্দেশ্য বলে।
সম্প্রসারিত উদ্দেশ্য: উদ্দেশ্যের সঙ্গে বিভিন্ন পদ যুক্ত করে তাকে বর্ধিত করলে তাকে সম্প্রসারিত উদ্দেশ্য বলে।
উদ্দেশ্যের সম্প্রসারণ: | সম্প্রসারণ | উদ্দেশ্য | বিধেয় |
১. বিশেষণ যোগে- | কুখ্যাত | দস্যুদল | ধরা পড়েছে। |
২. সম্বন্ধ যোগে- | হাসিমের | ভাই | এসেছে। |
৩. সমার্থক বাক্যাংশ যোগে- | যারা অত্যন্ত পরিশ্রমী | তারাই | উন্নতি করে। |
৪. অসমাপিকা ক্রিয়াবিশেষণ যোগে- | চাটুকার পরিবৃত হয়েই | বড় সাহেব | থাকেন। |
৫. বিশেষণ স্থানীয় বাক্যাংশ যোগে- | যার কথা তোমরা বলে থাক | তিনি | এসছেন। |
বিধেয় সম্প্রসারণ প্রক্রিয়া:
সম্প্রসারক: একটি বাক্যের উদ্দেশ্য অংশ ছাড়া কারকসম্বন্ধযুক্ত অন্যান্য পদগুচ্ছ এবং বিধেয় ক্রিয়ার বিশেষণকে অর্থাৎ যে পদ বা পদগুচ্ছের দ্বারা বিধেয় পদের দোষ, গুণ, অবস্থা বা বিধেয় সম্বন্ধে অতিরিক্ত সংবাদ দেওয়া হয় সেগুলোকে বিধেয়ের সম্প্রসারক বলা হয়। যেমন:
রহিম অত্যন্ত চতুর ছেলে।
বিধেয় ক্রিয়ার পরিপূরক: যে পদ বা পদগুচ্ছ বিধেয় ক্রিয়াকে সম্পূর্ণ করে সেগুলোকে বিধেয় পরিপূরক বা বিধেয় সম্পূরক বলে। বিধেয় ক্রিয়ার পরিপূরক কখনো থাকে কখনো থাকে না। বাক্যে বিধেয় ক্রিয়াটি সকর্মক হলে কর্মপদটিই বিধেয় ক্রিয়ার পরিপূরক এর কাজ করে। যেমন: তিনি অত্যন্ত দানশীল ছিলেন। এখানে দানশীল বিধেয় ক্রিয়া। দানশীল ছাড়া নিয়ম অনুসারে বাক্য হলেও অর্থের পূর্ণতা পায় না। তাই এখানে দানশীল বিধেয়ের পরিপূরক।
বিধেয়ের সম্প্রসারণ: | উদ্দেশ্য | সম্প্রসারণ | বিধেয় |
১. ক্রিয়া বিশেষণ যোগে- | ঘোড়া | দ্রুত | চলে। |
২. ক্রিয়া বিশেষণীয় যোগে- | জেট বিমান | অতিশয় দ্রুত | চলে। |
৩. কারকাদি যোগে- | ভুবনের | ঘাটে ঘাটে | ভাসিছে। |
৪. ক্রিয়া বিশেষণ স্থানীয় বাক্যাংশ যোগে- | তিনি | যে ভাবেই হোক | আসবেন। |
৫. বিধেয় বিশেষণ যোগে- | ইনি | আমার বিশেষ | অন্তরঙ্গ বন্ধু(হন)। |
গঠন অনুসারে বাক্যের শ্রেণিবিভাগ
গঠন অনুসারে বাক্য তিন প্রকার। যথা:
১. সরল বাক্য
২. মিশ্র বা জটিল বাক্য
৩. যৌগিক বাক্য
সরল বাক্য
যে বাক্যে একটিমাত্র কর্তা (উদ্দেশ্য) এবং একটিমাত্র সমাপিকা ক্রিয়া (বিধেয়) থাকে তাকে সরল বাক্য বলে। যেমন: পুকুরে পদ্মফুল জন্মে। এখানে ‘পদ্মফুল’ উদ্দেশ্য আর ‘জন্ম’ বিধেয়।
তদ্রূপ : বৃষ্টি হচ্ছে।
তোমরা বাড়ি যাও।
মিশ্র বা জটিল বাক্য
যে বাক্যে একটি প্রধান খণ্ডবাক্যের এক বা একাধিক আশ্রিত বাক্য পরস্পর সাপেক্ষভাবে ব্যবহৃত হয়, তাকে মিশ্র বা জটিল বাক্য বলে। যেমন:
প্রধান খণ্ডবাক্য : যে খন্ডবাক্য নিজের অর্থ প্রকাশে গঠনগত দিক দিয়ে অন্য কোন খন্ডবাক্যের উপর নির্ভর করে না তাকে প্রধান খন্ডবাক্য বলে।
আশ্রিত খন্ডবাক্য : বাক্যস্থিত যে খন্ডবাক্য তার অর্থ সম্পূর্ণরূপে প্রকাশে অন্য বাক্যের উপর নির্ভর করে তাকে আশ্রিত খন্ডবাক্য বলে।
আশ্রিত বাক্য, | প্রধান খণ্ডবাক্য, |
যে পরিশ্রম করে, | সে-ই সুখ লাভ করে।, |
সে যে অপরাধ করেছে, | তা মুখ দেখেই বুঝেছি।, |
আশ্রিত খণ্ডবাক্য তিন প্রকার।
উদাহরণ:
১. বিশেষ্য স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য
২. বিশেষণ স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য
৩. ক্রিয়াবিশেষণ স্থানীয় খণ্ডবাক্য
বিশেষ্য স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য
যে আশ্রিত খণ্ডবাক্য প্রধান খণ্ডবাক্যের যে কোনো পদের আশ্রিত থেকে বিশেষ্যের কাজ করে তাকে বিশেষ্য স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য বলে। যেমন: আমি মাঠে গিয়ে দেখলাম, খেলা শেষ হয়ে গিয়েছে। (বিশেষ্য স্থানীয় খণ্ডবাক্য ক্রিয়ার কর্মরূপে ব্যবহৃত)
তদ্রূপ : তিনি বাড়ি আছেন কিনা, আমি জানি না।
ব্যাপারটি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলে ফল ভালো হবে না।
বিশেষণ স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য
যে আশ্রিত খণ্ডবাক্য প্রধান খণ্ডবাক্যের অন্তর্গত কোনো বিশেষ্য বা সর্বনামের দোষ, গুণ ও অবস্থা প্রকাশ করে তাকে বিশেষণ স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য বলে। যেমন:
লেখাপড়া করে যেই, গাড়ি ঘোড়া চড়ে সেই। (আশ্রিত বাক্যটি ‘সেই’ সর্বনামের অবস্থা প্রকাশ করছে)
তদ্রূপ : খাঁটি সোনার চাইতে খাঁটি, আমার দেশের মাটি।
ধনধান্য পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা।
যে এ সভায় অনুপস্থিত সে বড় দুর্ভাগা।
ক্রিয়াবিশেষণ স্থানীয় খণ্ডবাক্য
যে আশ্রিত খণ্ডবাক্য ক্রিয়াপদের স্থান, কাল ও কারণ নির্দেশক অর্থে ব্যবহৃত হয় তাকে ক্রিয়াবিশেষণ স্থানীয় আশ্রিত খণ্ডবাক্য বলে। যেমন: যতই করিবে দান তত যাবে বেড়ে।
তদ্রূপ :তুমি আসবে বলে আমি অপেক্ষা করছি।
যেখানে আকাশ আর সমুদ্র একাকার হয়ে গেছে সেখানেই দিকচক্রবাল।
জটিল বাক্য তিন প্রকার।
যথা:
১. আশ্রয়-আশ্রিত জটিল বাক্য
২. সাপেক্ষ পদযুক্ত জটিল বাক্য
৩. প্রতিনির্দেশক সর্বনামযুক্ত জটিল বাক্য
আশ্রয়-আশ্রিত জটিল বাক্য
এ বাক্যে আশ্রিত খন্ডবাক্যটি প্রধান খন্ডবাক্যের আশ্রয়ে থেকে প্রধান খন্ডবাক্যের ক্রিয়ার কর্মস্থানীয় হয়ে বা সম্পূরকরূপে কাজ করে। ফলে আশ্রিত খন্ডবাক্যটি বিশেষ খন্ডবাক্য হয়ে থাকে। যেমন: আমি চেয়ে দেখলাম, ‘তুমি চলে গেলে।’
‘এখানে আমি চেয়ে দেখলাম’ প্রধান খন্ডবাক্য। বিধেয় ক্রিয়া ‘দেখলাম’ এখানে দেখলাম ক্রিয়ার কর্ম হচ্ছে ‘তুমি চলে গেলে’। এটি অপ্রধান খন্ডবাক্য এবং সম্পূরক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
সাপেক্ষ পদযুক্ত জটিল বাক্য
সাপেক্ষ পদযুক্ত জটিল বাক্যে অধীন বা আশ্রিত খন্ডবাক্য প্রধান খন্ডবাক্যের বিধেয় ক্রিয়ার সংঘটনের উপর নির্ভর করে। এ ধরনের জটিল বাক্যের প্রধান খন্ডবাক্যে সাধারণত সাপেক্ষ অব্যয় ‘যদি’ এবং অধীন খন্ডবাক্যে তাহলে/তবে/না/হয় ইত্যাদি যুক্ত থাকে। অধীন খন্ডবাক্যটি যদি যুক্ত প্রধান খন্ডবাক্যের বিধেয় ক্রিয়ার ক্রিয়াবিশেষণ স্থানীয় খন্ডবাক্য হয়ে থাকে। যেমন: তুমি যদি না বল তাহলে আমি আর কোনোদিন আসব না।
কখনো কখনো যদি ‘তবে’ উহ্য থাকতে পারে। যেমন: অন্যায় স্বীকার কর, ক্ষমা করে দিব।
প্রতিনির্দেশক সর্বনামযুক্ত জটিল বাক্য
যখন-তখন, যা-তা, যাহা-তাহা,যার-তার, যেখানে-সেখানে ইত্যাদি প্রতিনির্দেশক সর্বনাম ব্যবহার করে জটিল বাক্য গঠন করলে তাকে প্রতিনির্দেশক সর্বনামযুক্ত জটিল বাক্য বলে।
এ ধরনের জটিল বাক্যে যুগ্ম সর্বনামের প্রথম সর্বনামটি অর্থাৎ যখন, যা, যাহা, যার, যেখানে, যথা ইত্যাদি সর্বনামযুক্ত বাক্যটি হয় অধীন বা আশ্রিত খন্ডবাক্য এবং বাক্যটি প্রধান খন্ডবাক্যের কোনো পদের বিশেষণ স্থানীয় হয়। যেমন:
যারা পরিশ্রম করে তারা সফলতা পায়। (কর্তার বিশেষণ স্থানীয়)
যখন সন্ধ্যা নামল তখন আমরা ছাত্রাবাসে ফিরলাম।(সময়বাচক পদের বিশেষণ স্থানীয়)
যতই পড়িবে ততই শিখিবে। কর্তা উহ্য (ক্রিয়াবাচক পদের বিশেষণ স্থানীয়)
যৌগিক বাক্য
পরস্পর নিরপেক্ষ দুই বা ততোধিক সরল বা মিশ্র বাক্য মিলিত হয়ে একটি সম্পূর্ণ বাক্য গঠন করলে তাকে যৌগিক বাক্য বলে।
জ্ঞাতব্য: যৌগিক বাক্যের অন্তর্গত নিরপেক্ষ বাক্যগুলো এবং, ও, কিন্তু, অথবা, অথচ, কিংবা, বরং, তথাপি প্রভৃতি অব্যয় যোগে সংযুক্ত বা সমন্বিত থাকে।
যেমন :নেতা জনগণকে উৎসাহিত করলেন বটে কিন্তু কোনো পথ দেখাতে পারলেন না।
বস্ত্র মলিন কেন, কেহ জিজ্ঞাসা করিলে সে ধোপাকে গালি পাড়ে অথচ ধৌত বস্ত্রে তাহার গৃহ পরিপূর্ণ।
উদয়াস্ত পরিশ্রম করব তথাপি অন্যের দ্বারস্থ হব না।
বাক্যের অর্থগত প্রকরণ
অর্থ অনুসারে বাক্য সাত প্রকার। যেমন:
১. বিবৃতিমূলক বা বর্ণনাত্মক বা নির্দেশাত্মক বাক্য
২. প্রশ্নবোধক বাক্য
৩. অনুজ্ঞাসূচক বাক্য
৪. ইচ্ছা বা প্রার্থনাসূচক বাক্য:
৫. আবেগসূচক বাক্য
৬. কার্যকাণাত্মক বাক্য
৭. সংশয়সূচক বা সন্দেহদ্যোতক বাক্য
১. বিবৃতিমূলক বা বর্ণনাত্মক বা নির্দেশাত্মক বাক্য
যে বাক্যে কোনো ঘটনার ভাব বা তথ্য থাকে এবং সেই বক্তব্যকে সাধারণভাবে বিবৃত বা নির্দেশ করা হয় তাকে বর্ণনাত্মক বা নির্দেশাত্মক বাক্য বলে।
এ ধরনের বাক্যে সাধারণ হ্যাঁ বা না বোঝায়। বিবৃতিমূলক বাক্য দুই প্রকার। যেমন:
অস্তি বাচক বাক্য: যে বাক্যে কোনো ঘটনার ভাব বা তথ্যের অস্তিত্ব হাঁ সূচক বোঝায় তাকে অস্তিবাচক বা অস্ত্যর্থক বাক্য বলে। যেমন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বকবি।
নেতি বাচক বাক্য: যে বাক্যে কোনো ঘটনার ভাব বা তথ্যের অস্তিত্ব না সূচক বোঝায় তাকে নেতিবাচক বাক্য বলে। যেমন: বাবা বাড়ি নেই।
২. প্রশ্নবোধক বাক্য
যে বাক্যে কোন বিষয় সম্পর্কে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করা হয় তাই প্রশ্নবোধক বাক্য। যেমন: কোথায় যাচ্ছ? কী পড়ছ? কেন এসেছ? যাবে নাকি?
প্রশ্নবোধক বাক্য দু ধরনের হতে পারে।
হ্যাঁ-না বাচক: যে ধরনের প্রশ্নবাচক বাক্যের উত্তরে হ্যাঁ-না নিযেই শেষ করা যায় তাকে হ্যাঁ-না প্রশ্নবাচক বাক্য বলে। যেমন: আপনি কি আজ বাজারে গিয়েছেন?
বস্তুগত প্রশ্নবোধক বাক্য : যে ধরনের প্রশ্নবাচক বাক্যের উত্তরে হ্যাঁ-না দিয়ে শেষ হয় না বিষয় বা বস্তুগত উত্তর করতে হয় তাকে বস্তুগত প্রশ্নকোধক বাক্য বলে। যেমন: জাতীয় স্মৃতিসৌধ কোথায়?
৩.অনুজ্ঞাসূচক বাক্য
যে বাক্য দ্বারা বর্তমান ও ভবিষ্যৎকালের আদেশ, অনুরোধ, উপদেশ, নিষেধ, প্রস্তাব ইত্যাদি বোঝায় তাকে
অনুজ্ঞাবাচক বাক্য বলে। যেমন: |
আদেশ | ঘর থেকে বের হয়ে যাও। |
অনুরোধ | দয়া করে সাহায্য করুন। |
উপদেশ | অযথা ঋণ করো না। |
নিষেধ | অনুমতি ছাড়া কখনো অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করবে না। |
প্রস্তাব | চলো কোথাও ঘুরতে যাই। |
৪. ইচ্ছা বা প্রার্থনাসূচক বাক্য
যে বাক্যে ইচ্ছা বা প্রার্থনাসূচক অর্থ প্রকাশ পায় তাকে ইচ্ছা বা প্রার্থনাসূচক বাক্য বলে।
ইচ্ছা | আমার যেতে ইচ্ছে করছে। |
প্রার্থনা | খোদা তোমার সহায় হোক। |
উচ্ছ্বাস | আমি পাস করেছি। |
৫. আবেগসূচক বাক্য
যে বাক্যে আশ্চর্য কিছু বোঝায় তাকে আবেগসূচক বাক্য বলে। যেমন:
বিস্ময় | সমুদ্রের এত বড় ঢেউ! |
ঘৃণা | তুমি এত নীচ! |
বিষাদ | আহা! গাছ থেকে পড়ে পা ভেঙেছে। |
ক্রোধ | আমি তোমাকে দেখে নেব। |
ভয় | আমি অন্ধকার ঘরে একা থাকতে পারব না। |
বিরক্তি | আহ! ভালো লাগছে না। |
আদর | বড্ড শুকিয়ে গেছিস রে! |
৬. কার্যকারণাত্মক বাক্য
যদ্যপি, যদি প্রভৃতি অব্যয়ের সাহায্যে বাক্য গঠিত হয় এবং যাতে কার্যকারণ সম্পর্ক প্রকাশ পায় তাকে কার্যকারণাত্মক বাক্য বলে।
যেমন :দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে(শর্ত)
নিয়ম-কানুন না মানলে জীবনে উন্নতি করা যায় না।(নিয়ম)
বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র।(স্বীকৃতি)
৭. সংশয়সূচক বা সন্দেহদ্যোতক বাক্য
যে ধরনের নির্দেশক বাক্যে বক্তব্য বিষয় সম্পর্কে সংশয়, সন্দেহ, সম্ভাবনা, অনুমান, অনিশ্চয়তা ইত্যাদি ভাব প্রকাশিত হয় তাকে সংশয়সূচক বা সন্দেহদ্যোতক বাক্য বলে।
এ ধরনের বাক্যে হয়তো, বুঝি, বুঝিবা, সম্ভবত, বোধহয়, নাকি, নিশ্চয়, প্রভৃতি ক্রিয়াবিশেষন ব্যবহৃত হয়।
যেমন :লোকটা খারাপ বোধহয়।
মনে হয়, সে পার হবে।
বাক্য রূপান্তর
অর্থের কোনোরূপ রূপান্তর না করে এক প্রকারের বাক্যকে অন্য প্রকার বাক্যে রূপান্তর করার নামই বাক্য রূপান্তর।
সরল বাক্য → মিশ্র বাক্য
Ø মৌলিক অর্থের কোনো পরিবর্তন হয় না।
Ø সরল বাক্যের কোনো অংশকে খণ্ডবাক্যে পরিণত করতে হয়
Ø উভয় খন্ডবাক্যের সংযোগ বিধানে সম্বন্ধসূচক (যদি, তবে, যে, সে প্রভৃতি) পদ ব্যবহার করতে হয়।
সরল বাক্য : ভালো ছেলেরা শিক্ষকের আদেশ পালন করে।
মিশ্র বাক্য : যারা ভালো ছেলে তারা শিক্ষকের আদেশ পালন করে।
সরল বাক্য : তার দর্শনমাত্রই আমরা প্রস্থান করলাম।
মিশ্র বাক্য : যেই তার দর্শন পেলাম সেই আমরা প্রস্থান করলাম।
মিশ্র বাক্য → সরল বাক্যে
Ø মৌলিক অর্থের কোনো পরিবর্তন হয় না।
Ø মিশ্র বাক্যের অপ্রধান খণ্ডবাক্যটিকে সংকুচিত করে একটি পদ বা একটি বাক্যাংশে পরিণত করতে হয়।
মিশ্র বাক্য : যাদের বুদ্ধি নেই তারাই এ কথা বিশ্বাস করবে।
সরল বাক্য : নির্বোধরা/ বুদ্ধিহীনরা এ কথা বিশ্বাস করবে।
মিশ্র বাক্য : যতদিন জীবিত থাকব ততদিন এ ঋণ স্বীকার করব।
সরল বাক্য : আজীবন এ ঋণ স্বীকার করব।
সরল বাক্য → যৌগিক বাক্য
Ø মৌলিক অর্থের কোনো পরিবর্তন হয় না।
Ø সরল বাক্যের কোনো অংশকে নিরপেক্ষ বাক্যে রূপান্তর করতে হয়।
Ø যথাসম্ভব সংযোজক বা বিয়োজক অব্যয়ের(এবং, কিন্তু, তথাপি, তবে) প্রয়োগ করতে হয়।
সরল বাক্য : তিনি আমাকে পাঁচ টাকা দিয়ে বাড়ি যেতে বললেন।
যৌগিক বাক্য : তিনি আমাকে পাঁচটি টাকা দিলেন এবং বাড়ি যেতে বললেন।
সরল বাক্য : পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য এখন থেকেই তোমার পড়া উচিত।
যৌগিক বাক্য : এখন থেকেই তোমার পড়া উচিত তবেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারবে।
যৌগিক বাক্য → সরল বাক্য
Ø মৌলিক অর্থের কোনো পরিবর্তন হয় না।
Ø বাক্যসমূহের একটি সমাপিকা ক্রিয়াকে অপরিবর্তিত রাখতে হয়।
Ø অন্যান্য সমাপিকা ক্রিয়াকে অসমাপিকা ক্রিয়ায় পরিণত করতে হয়।
Ø অব্যয় পদ থাকলে তা বর্জন করতে হয়।
Ø কোনো কোনো স্থলে একটি বাক্যকে হেতুবোধক বাক্যাংশে পরিণত করতে হয়। যেমন:
যৌগিক বাক্য : সত্য কথা বলিনি তাই বিপদে পড়েছি।
সরল বাক্য : সত্য কথা না বলে বিপদে পড়েছি।
যৌগিক বাক্য : তার বয়স হয়েছে কিন্তু বুদ্ধি হয়নি।
সরল বাক্য : তার বয়স হলেও বুদ্ধি হয়নি।
যৌগিক বাক্য → মিশ্র বাক্য
Ø মৌলিক অর্থের কোনো পরিবর্তন হয় না।
Ø নিরপেক্ষ বাক্য দুটির প্রথমটির পূর্বে ‘যদি/যদিও’ এবং দ্বিতীয়টির পূর্বে ‘তাহলে/তথাপি’ অব্যয়গুলো ব্যবহার করতে হয়।
Ø একটি খন্ডবাক্যকে অপ্রধান খন্ডবাক্যে পরিনত করতে হবে।
যৌগিক বাক্য : দোষ স্বীকার কর তবে তোমাকে কোনো শাস্তি দেব না।
মিশ্র বাক্য : যদি দোষ স্বীকার কর তাহলে তোমাকে কোনো শাস্তি দেব না।
যৌগিক বাক্য : তিনি অত্যন্ত দরিদ্র কিন্তু তাঁর অন্তঃকরণ অতিশয় উচ্চ।
মিশ্র বাক্য : যদিও তিনি অত্যন্ত দরিদ্র তথাপি তাঁর অন্তঃকরণ অতিশয় উচ্চ।
সাপেক্ষ অব্যয়ের সাহায্যেও যৌগিক বাক্যকে মিশ্র বাক্যে পরিবর্তন করা যায়।
যৌগিক বাক্য : এ গ্রামে একটি দরগাহ আছে, সেটি পাঠানযুগে নির্মিত হয়েছে।
মিশ্র বাক্য : এ গ্রামে যে দরগাহ আছে, সেটি পাঠানযুগে নির্মিত হয়েছে।
মিশ্র বাক্য → যৌগিক বাক্য
Ø মৌলিক অর্থের কোনো পরিবর্তন হয় না।
Ø খণ্ডবাক্যকে এক একটি স্বাধীন বাক্যে পরিবর্তন করে তাদের মধ্যে সংযোজক অব্যয়ের ব্যবহার করতে হয়।
Ø অপ্রধান খন্ডবাক্যকে প্রধান স্বনির্ভর উপবাক্যে পরিণত করা যায়।
মিশ্র বাক্য : যদি সে কাল আসে তাহলে আমি যাব।
যৌগিক বাক্য : সে কাল আসবে এবং আমি যাব।
মিশ্র বাক্য : যখন বিপদ আসে তখন দুঃখও আসে।
যৌগিক বাক্য : বিপদ এবং দুঃখ এক সময়ে আসে।
নির্দেশক বাক্য → প্রশ্নবোধক বাক্য
Ø প্রথম অংশ বসিয়ে কে, কী, কাকে, কার ইত্যাদি প্রশ্নবোধক শব্দ বসিয়ে বাকি অংশ লিখতে হবে।
Ø বাক্য শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিতে হবে।
Ø বাক্যটি হাঁ বোধক থাকলে প্রশ্নবোধক বাক্যটি না বোধক হয় এবং না বোধক থাকলে তা হা বোধক হবে।
নির্দেশক : আনন্দ সকলের কাম্য।
প্রশ্নবোধক : আনন্দ কার না কাম্য?
নির্দেশক : তাহা আমি বলি নাই।
প্রশ্নবোধক : তাই কি আমি বলিয়াছি?
প্রশ্নবোধক বাক্য → নির্দেশক বাক্য
Ø প্রথম অংশ বসিয়ে কে, কী, কাকে, কার ইত্যাদি প্রশ্নবোধক শব্দ তুলে দিয়ে বাকি অংশ লিখতে হবে।
Ø বাক্য শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন তুলে দিতে হবে।
Ø প্রশ্নবোধক বাক্যটি হাঁ বোধক থাকলে প্রশ্নবোধক বাক্যটি না বোধক হয় এবং না বোধক থাকলে তা হা বোধক হবে।
প্রশ্নবোধক : এদের দোষ কী?
নির্দেশক : এদের দোষ নেই।
প্রশ্নবোধক : আমরা যাব কী করে?
নির্দেশক : আমাদের যাবার উপায় নেই।
অস্তিবাচক বাক্য → নেতিবাচক বাক্য
Ø বাক্যের অর্থ পরিবর্তন না করে অস্তিবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে পরিবর্তন করতে হবে।
Ø অস্তিবাচক বাক্যের সমাপিকা ক্রিয়ার পার্শ্ববর্তী পদের সাথে অ, অন ইত্যাদি নেতিবাচক উপসর্গ যোগ করতে হয় এবং তারপরে না, নয়, নহে ইত্যাদি নঞর্থক অব্যয় ব্যবহার করতে হয় অনেক সময়।
Ø অনেক সময় কোন পদের বিপরীত পদ ব্যবহার করতে হয়।
অস্তিবাচক : সে যথার্থ বলেছে।
নেতিবাচক : সে অযথার্থ বলে নাই।
অস্তিবাচক : ভূমি অনন্ত।
নেতিবাচক : ভূমির অন্ত নেই।
নেতিবাচক বাক্য → অস্তিবাচক বাক্য
Ø বাক্যের অর্থ পরিবর্তন না করে নেতিবাচক বাক্যকে অস্তিবাচক বাক্যে পরিবর্তন করতে হবে।
Ø নেতিবাচক বাক্যের মধ্যে থাকা অ, অন ইত্যাদি নেতিবাচক উপসর্গ অনেক সময় উঠিয়ে দিতে হয়।
Ø তারপরে না, নয়, নহে ইত্যাদি নঞর্থক অব্যয় উঠিয়ে দিতে হয়।
Ø অনেক সময় কোন পদের বিপরীত পদ ব্যবহার করতে হয়।
নেতিবাচক : জগতে কিছুই চিরস্থায়ী নয়।
অস্তিবাচক : জগতে সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী।
নেতিবাচক : বরফ গলিল না।
অস্তিবাচক : বরফ অগলিত রহিল।
নির্দেশক বাক্য → অনুজ্ঞাসূচক বাক্য
Ø অর্থের কোনো পরিবর্তন হয় না।
Ø কর্তা মধ্যম পুরুষ হবে।
Ø নিষেধার্থক বাক্য হলে অনুজ্ঞাবাচক ক্রিয়ার সাথে না অব্যয় যুক্ত হবে।
নির্দেশক : তোমাকে এই খাতায় লিখতে হবে।
অনুজ্ঞাসূচক : তুমি এই খাতা লেখো
নির্দেশক : ভয় করলে হবে না।
অনুজ্ঞাসূচক : ভয় করো না
নির্দেশক বাক্য → বিস্ময়সূচক বাক্য
Ø মৌলিক অর্থের কোনো পরিবর্তন হয় না।
Ø অস্তিবাচক নির্দেশক বাক্যের বিশেষণের পরিবর্তে কী, কেমন, কত, ভারী ইত্যাদি আবেগসূচক ক্রিয়াবিশেষণ যোগ করতে হয়।
Ø নির্দেশক বাক্যটি নেতিবাচক হলে নঞর্থক অব্যয়ের পরিবর্তে সাধারণ ক্রিয়াবিশেষ যুক্ত করে বা বাক্যটিকে প্রশ্নবোধক করে পরিবর্তন করতে হয়।
Ø প্রয়োজেনে বাক্যে উঃ, আঃ, আহা! ইত্যাদি আবেগবোধক অব্যয় যোগ করতে হয়।
নির্দেশক : যা দেখলাম, ভারী সুন্দর।
বিস্ময়সূচক : আহ্ কী দেখলাম!
নির্দেশক : তার গানের গলা ভারি মিষ্টি।
বিস্ময়সূচক : তার গানের গলা কী মিষ্টি!
নির্দেশক : ও কথায় ভুলবার ছেলে নহে।
বিস্ময়সূচক : ও ভারী কথায় ভুলাইবার ছেলে।
বিস্ময়সূচক বাক্য → নির্দেশক বাক্য
Ø মৌলিক অর্থের কোনো পরিবর্তন হয় না।
Ø বিস্ময়সূচক বাক্যের কী, কেমন, কত, ভারী ইত্যাদি আবেগসূচক ক্রিয়াবিশেষণের পরিবর্তে বিশেষণ যোগ করতে হয়।
Ø নঞর্থক ভাবের আবেগবাচক অব্যয় থাকলে প্রশ্নবোধক ভাব পরিহার করতে হয় না, নয় ইত্যাদি নেতিবাচক অব্যয় ব্যবহার করে।
Ø বাক্যের শুরুতে উঃ, আঃ, আহা! ইত্যাদি আবেগবোধক অব্যয় পরিহার করতে হয়।
বিস্ময়সূচক :বাঃ! কি সুন্দর নাম।
নির্দেশক :নামটি খুবই সুন্দর।
বিস্ময়সূচক :কি দারুণ কবিতাটি!
নির্দেশক :কবিতাটি অত্যন্ত দারুণ।
বিস্ময়সূচক :ওখানে যেতে ভারি বয়ে গেছে।
নির্দেশক :ওখানে যাবার কোন প্রয়োজন একেবারেই নেই।
নির্দেশক বাক্য → প্রার্থনাসূচক বাক্য
Ø মৌলিক অর্থের কোনো পরিবর্তন হয় না।
Ø ধাতুর সাথে প্রত্যয়যোগে অসমাপিকা ক্রিয়া এবং তার সাথে ইচ্ছা করি, কামনা করি ইত্যাদি উঠিয়ে হোক, হোন, হও ইত্যাদি ক্রিয়া বসিয়ে বাক্যের সমাপ্তি টানতে হবে।
নির্দেশক : এমন কাজ আর না করার জন্য বলছি।
প্রার্থনাসূচক : এমন কাজ যেন আর না করো।
নির্দেশক : আগামী শ্রক্রবারই যেন বনভোজন হয়, এমন চাইছি।
প্রার্থনাসূচক : আগামী শুক্রবারই বনভোজন হোক।
প্রার্থনাসূচক বাক্য → নির্দেশক বাক্য
Ø মৌলিক অর্থের কোনো পরিবর্তন হয় না।
Ø সমাপিকা ক্রিয়াটি বর্জন করে তার পরিবর্তে এই ক্রিয়ার ধাতুর সাথে প্রত্যয়যোগে অসমাপিকা ক্রিয়া তৈরি করতে হয় এবং তার সাথে ইচ্ছা করি, কামনা করি ইত্যাদি যোগ করতে হয়।
প্রার্থনাসূচক : এমন কাজ যেন আর না করো।
নির্দেশক : এমন কাজ আর না করার জন্য বলছি।
প্রার্থনাসূচক : আগামী শুক্রবারই বনভোজন হোক।
নির্দেশক : আগামী শ্রক্রবারই যেন বনভোজন হয়, এমন চাইছি।
অনুজ্ঞাসূচক বাক্য → নির্দেশক বাক্য
Ø অস্তিবাচক বাক্যের ক্ষেত্রে আবেগবাচক ক্রিয়াবিশেষণের পরিবর্তে পরিমাণবাচক বা অন্য কোনো ক্রিয়া বিশেষণ ব্যবহার করতে হয়।
Ø নঞর্থক ভাবের আবেগবাচক বাক্যের জিজ্ঞাসার ভাব পরিহার করতে হয় না, নয়, নাই ইত্যাদি নেতিবাচক অব্যয় ব্যবহার করে।
অনুজ্ঞাসূচক : মন দিয়ে লেখাপড়া করো
নির্দেশক : মন দিয়ে লেখাপড়া করতে বলছি।
অনুজ্ঞাসূচক : ভীত হইও না।
নির্দেশক : ভীত হওয়ার কিছু নাই।
সন্দেহবাচক বাক্য → নির্দেশক বাক্য
Ø মৌলিক অর্থের কোনো পরিবর্তন হয় না।
Ø বুঝি, বোধ হয়, যেন, হয়তো, মনে হয়, সম্ভবত ইত্যাদি সন্দেহদ্যোতক শব্দ লোপ পায়।
সন্দেহবাচক : সে আমার নাম জানে হয়তো।
নির্দেশক : সে আমার নাম জানে।
সন্দেহবাচক : প্রায় চমকে উঠেছিলাম বোধ হয়।
নির্দেশক : চমকে উঠেছিলাম
বাক্য বিশ্লেষণ
বাক্যের বিভিন্ন অংশ পৃথক করে তাদের পারস্পরিক সম্বন্ধ নির্ণয় প্রণালীকে বাক্য বিশ্লেষণ বলে।
সরল বাক্যের বিশ্লেষণ
১. মহারাজ শুদ্ধোধনের পুত্র শাক্যসিংহ যৌবনে সংসার ত্যাগ করেন।
২. ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা) দীন ইসলামের জন্য তাঁর যথাসর্বস্ব দান করেছিলেন।
ওপরে লিখিত বাক্য দুটিকে উদ্দেশ্য, উদ্দেশ্যের সম্প্রসারক, বিধেয়, বিধেয়ের সম্প্রসারণ এ চারটি অংশে বিশ্লেষণ করতে হবে। যেমন:
বিশ্লেষণ
উদ্দেশ্যের সম্প্রসারক | উদ্দেশ্য | বিধেয়ের সম্প্রসারক | বিধেয় |
মহারাজ শুদ্ধোধনের পুত্র | শাক্যসিংহ | যৌবনে সংসার | ত্যাগ করেন। |
ইসলামের প্রথম খলিফা | হযরত আবু বকর (রা) | দীন ইসলামের জন্য তাঁর যথাসর্বস্ব | দান করেছিলেন। |
মিশ্র বাক্যের বিশ্লেষণ
Ø প্রথমে প্রধান বাক্যটি প্রদর্শন করতে হয়।
Ø খণ্ডবাক্য(গুলো) প্রদর্শন করে তাদের সঙ্গে প্রধান বাক্যের সম্বন্ধ উল্লেখ করতে হয়।
Ø প্রধান ও অপ্রধান খণ্ডবাক্যের মধ্যে কোনো সংযোজক পদ থাকলে তাও দেখাতে হয়। যেমন:
আমি স্থির করলাম যে, এরূপ অল্প বয়স্ক বালককে পাঠাব না। এখানে প্রধান বাক্য, ‘আমি স্থির করলাম।’; সংযোজক পদ, ‘যে’; বিশেষ্য-স্থানীয়-খণ্ডবাক্য, ‘অল্প বয়স্ক বালককে পাঠাব না।’
বিশ্লেষণ
উদ্দেশ্য | বিধেয়ের সম্প্রসারক | বিধেয় | সংযোজক অব্যয় |
আমি |
| স্থির করলাম | যে |
আমি(উহ্য) | অল্প বয়স্ক বালককে | পাঠাব না। | |
যৌগিক বাক্যের বিশ্লেষণ
Ø প্রত্যেকটি স্বাধীন বা নিরপেক্ষ বাক্যকে সরল বাক্যের ন্যায় বিশ্লেষণ করতে হবে।
Ø কোনো সংযোজক অব্যয় থাকলে তা প্রদর্শন করতে হবে।
বিশ্লেষণ
উদ্দেশ্য | বিধেয়ের সম্প্রসারক | বিধেয় | সংযোজক অব্যয় |
ত্যাগ | মানুষকে মুক্তির পথে | পরিচালিত করে | এবং |
জ্ঞান | মানুষকে মুক্তির পথে | পরিচালিত করে | |