সন্ধ্যার পর পাড়া গাঁয়ের চা দোকান গুলোতে "কথার হাঁট" বসে। এক কাপ চা বা একটা বিড়ি হাতে টুলের উপর পা তুলে হাঁটু ভেঙ্গে "দ" এর মত করে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা তুমুল আলোচনা চলে। সামনে একটা টিভিও চলে(গ্রামের দিকে চায়ের দোকানের পূর্বশর্ত হল-ডিশ টিভি)।
এদের আলোচনার বিভিন্ন দিকের মধ্যে গ্রামে কার মেয়ে কোন ছেলের সাথে বাড়ীর পিছনে দেখা করেছে এটা সম্ভবত সবচেয়ে রসালো দিক।কারণ এটা বলার সময় তৃপ্তি নিয়ে চারপাশে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে নিচু গলায় বলতে দেখেছি। এছাড়াও তাদের আলোচনায় সামাজিক-রাজনৈতিক-ধর্মীয়-অর্থনৈতিক সবকিছু স্থান পায়, যেদিন যে টপিক আলোচনায় উঠে।
সারাদিন রিকশা চালিয়ে বা মাঠে কাজকরে সন্ধ্যায় চায়ের দোকানে বসে আমেরিকার নির্বাচনসহ অন্যান্য ভূ-রাজনীতি নিয়ে তুমুল তর্ক করাটা তাদের প্রাত্যহিক রুটিন, যাদের এসবের আদৌ কোন মূল্য বা প্রভাব নেই।
তবুও এরা একটা গ্রুপ হয়ে নির্দিষ্ট দোকানে আড্ডা দেয়। দেশ এবং বর্হিবিশ্বের বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের প্রায় সবারই নিজস্ব আজগুবি ধরনের পক্ষপাতদুষ্ট স্পষ্ট মতামত থাকে, আর এ মতামত দেয়ার সময় তাদের মধ্যে খুব জ্ঞানী একটা ভাব ফুটে উঠে, যেন এ বিষয়টা খুব সিক্রেট, একমাত্র সেই মূল ব্যাপারটা জানে, বাকিরা ধইঞ্চা।
যাইহোক, এসব তর্ক-বির্তকের ক্ষেত্রে দোকানদারের মতের দাম বেশী। যেহেতু দোকানদারের সাথে ঝগড়ার ফলাফল টিভি বন্ধ বা দোকান থেকে বের হয়ে যাওয়া, একারণবশত তাকে একটু বেশী জ্ঞানী মানতে হয়। তবে সত্য একটা ব্যাপার হলো- একজন চায়ের দোকানদারের কাছে অনেক বাড়ির গোপন খবর পাওয়া যায়।
আরো একটা আজব ব্যাপার হলো, গ্রামে কেউ ভালো কোন অবস্থান, নেতা বা ধনী হয়ে গেলে আড্ডাবাজ শ্রেণির কমন একটা মন্তব্য হলো- আরে! এটার বাপ/দাদা আমাদের বাড়িতে জাগির থাকতো, কামলা খাটতো বা আমাদের বাড়ির পান্তাভাত খেয়ে এরা আজ বড়লোক ইত্যাদি ইত্যাদি....
প্রয়োজনীয় সত্য-মিথ্যার সংমিশ্রণের এই অতীতটাই সময়ের সাথে পিছিয়ে পড়া এই শ্রেণির অহংকার বা গর্ব করা একমাত্র অবলম্বন।
#ধারণা করা হয়, গ্রামের এই "কথার হাঁট" শহরে গিয়ে "টক শো" হয়েছে। উপকরণ সবই আগের, চায়ের কাপ, মূল্যহীন তর্ক-বিতর্ক! শুধু একটু ডিজিটাল হয়েছে।
আর "টক শো" রাত এগারটায় শুরু হয় যাতে তার আগেই গ্রামের টকশোবিদরা ঘুমিয়ে পড়। সন্ধ্যায় শুরু করলে জাতি ক্ষতির সম্মুখীন হবে ভেবে জ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত।
######
ফজলুর রাহমান
কলামিস্ট
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
এদের আলোচনার বিভিন্ন দিকের মধ্যে গ্রামে কার মেয়ে কোন ছেলের সাথে বাড়ীর পিছনে দেখা করেছে এটা সম্ভবত সবচেয়ে রসালো দিক।কারণ এটা বলার সময় তৃপ্তি নিয়ে চারপাশে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে নিচু গলায় বলতে দেখেছি। এছাড়াও তাদের আলোচনায় সামাজিক-রাজনৈতিক-ধর্মীয়-অর্থনৈতিক সবকিছু স্থান পায়, যেদিন যে টপিক আলোচনায় উঠে।
সারাদিন রিকশা চালিয়ে বা মাঠে কাজকরে সন্ধ্যায় চায়ের দোকানে বসে আমেরিকার নির্বাচনসহ অন্যান্য ভূ-রাজনীতি নিয়ে তুমুল তর্ক করাটা তাদের প্রাত্যহিক রুটিন, যাদের এসবের আদৌ কোন মূল্য বা প্রভাব নেই।
তবুও এরা একটা গ্রুপ হয়ে নির্দিষ্ট দোকানে আড্ডা দেয়। দেশ এবং বর্হিবিশ্বের বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের প্রায় সবারই নিজস্ব আজগুবি ধরনের পক্ষপাতদুষ্ট স্পষ্ট মতামত থাকে, আর এ মতামত দেয়ার সময় তাদের মধ্যে খুব জ্ঞানী একটা ভাব ফুটে উঠে, যেন এ বিষয়টা খুব সিক্রেট, একমাত্র সেই মূল ব্যাপারটা জানে, বাকিরা ধইঞ্চা।
যাইহোক, এসব তর্ক-বির্তকের ক্ষেত্রে দোকানদারের মতের দাম বেশী। যেহেতু দোকানদারের সাথে ঝগড়ার ফলাফল টিভি বন্ধ বা দোকান থেকে বের হয়ে যাওয়া, একারণবশত তাকে একটু বেশী জ্ঞানী মানতে হয়। তবে সত্য একটা ব্যাপার হলো- একজন চায়ের দোকানদারের কাছে অনেক বাড়ির গোপন খবর পাওয়া যায়।
আরো একটা আজব ব্যাপার হলো, গ্রামে কেউ ভালো কোন অবস্থান, নেতা বা ধনী হয়ে গেলে আড্ডাবাজ শ্রেণির কমন একটা মন্তব্য হলো- আরে! এটার বাপ/দাদা আমাদের বাড়িতে জাগির থাকতো, কামলা খাটতো বা আমাদের বাড়ির পান্তাভাত খেয়ে এরা আজ বড়লোক ইত্যাদি ইত্যাদি....
প্রয়োজনীয় সত্য-মিথ্যার সংমিশ্রণের এই অতীতটাই সময়ের সাথে পিছিয়ে পড়া এই শ্রেণির অহংকার বা গর্ব করা একমাত্র অবলম্বন।
#ধারণা করা হয়, গ্রামের এই "কথার হাঁট" শহরে গিয়ে "টক শো" হয়েছে। উপকরণ সবই আগের, চায়ের কাপ, মূল্যহীন তর্ক-বিতর্ক! শুধু একটু ডিজিটাল হয়েছে।
আর "টক শো" রাত এগারটায় শুরু হয় যাতে তার আগেই গ্রামের টকশোবিদরা ঘুমিয়ে পড়। সন্ধ্যায় শুরু করলে জাতি ক্ষতির সম্মুখীন হবে ভেবে জ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত।
######
ফজলুর রাহমান
কলামিস্ট
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
0 comments:
Post a Comment