Recent Post
Loading...

 


অক্সিজেন O

অক্সিজেনের চিহ্নO
অক্সিজেনের সংকেতO
অক্সিজেনের যোজ্যতা2
অক্সিজেনের পারমাণবিক গুরুত্ব16
অক্সিজেনের আবিস্কারঅক্সিজেন আবিষ্কার করেন জোসেফ প্রিস্টলি 1774 সালে
অক্সিজেন

অক্সিজেন সম্বন্ধে জানার আগ্রহ আমাদের প্রত্যেকেরই অনেকটা বেশি। তার কারণ আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই আর্টিকেলে আমরা দেখব অক্সিজেনের ধর্ম, কিভাবে অক্সিজেন তৈরি হয় এবং অক্সিজেন এর ব্যবহার।

অক্সিজেনের ধর্ম

অক্সিজেন একটি গ্যাস। এর ধর্মকে আমরা প্রাথমিকভাবে দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি।
১. ভৌত ধর্ম এবং ২. রাসায়নিক ধর্ম

১. অক্সিজেনের ভৌত ধর্ম

  • ক) অক্সিজেন বর্ণহীন, স্বাদহীন এবং গন্ধহীন গ্যাস।
  • খ) এই গ্যাস বাতাসের চেয়ে সামান্য ভারী।
  • গ) জলে সামান্য দ্রবীভূত হয়।
  • ঘ) শ্বাসকার্যে সাহায্য করে।

২. রাসায়নিক ধর্ম

  • ক) অক্সিজেন দহনে সাহায্য করে, কিন্তু নিজে দাহ্য নয়। কোন পদার্থ যখন জ্বলে তখন পদার্থটির সঙ্গে অক্সিজেনের রাসায়নিক সংযোগ ঘটে, যার ফলে অগ্নিশিখার সৃষ্টি হয়। এই জাতীয় রাসায়নিক বিক্রিয়াকে দহন বলে।
  • খ) অক্সিজেনের রূপভেদ:
    তিনটি অক্সিজেন পরমাণু যুক্ত হয়ে একটি ওজোন গ্যাসের অনু উৎপন্ন করে। ওজন হলো অক্সিজেনের একটি রূপভেদ। 2O3 = 3O
  • গ) রাসায়নিক স্বক্রিয়তা:
    O2 অত্যন্ত সক্রিয় মৌল। সোনা, প্লাটিনাম প্রভৃতি কয়েকটি মৌল ছাড়া বেশিরভাগ ধাতু এবং অধাতু সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত হয়ে অক্সাইড যৌগ উৎপন্ন করে।
  • ঘ) অধাতুর সঙ্গে বিক্রিয়া-আম্লিক অক্সাইড গঠন:
    অধাতুর সঙ্গে O2 যুক্ত হয় আম্লিক অক্সাইড উৎপন্ন করে।
  • একটুকরো লোহিত তপ্ত কার্বন নিয়ে একটি অক্সিজেন পুর্ন গ্যাসজারে প্রবেশ করালে কার্বন টুকরোটি আরও উজ্জ্বল ভাবে জ্বলবে এবং পুড়ে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হবে। C + O2  = CO2
  • প্রজ্বলন চামচে একটুকরো সালফার জ্বালিয়ে অক্সিজেনপূর্ণ গ্যাসজারে প্রবেশ করালে সালফার নীল শিখা সৃষ্টি করে জ্বলবে। সালফার অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সালফার ডাই অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন করে।
  • এক টুকরো ফসফরাসের আগুন ধরিয়ে একটি অক্সিজেনপূর্ণ গ্যাসজারের মধ্যে প্রবেশ করালে ফসফরাস তীব্রভাবে জ্বলতে থাকে এবং অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ফসফরাস পেন্টা অক্সাইড উৎপন্ন করে।
  • এইভাবে যে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হলো তার সঙ্গে জল মেশালে দেখা যাবে কার্বনিক এসিড উৎপন্ন হয় যা নীল লিটমাসকে লাল করে দেয়। অনুরূপে সালফার ডাই অক্সাইড জলের সঙ্গে মিশে সালফিউরাস এসিড উৎপন্ন করে। ফসফরাস পেন্টা অক্সাইড জলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ফসফরিক এসিড উৎপন্ন করে।
  • ঙ) ধাতুর সঙ্গে বিক্রিয়া ক্ষারীয় অক্সাইড গঠন:
  • ধাতুর সঙ্গে অক্সিজেন যুক্ত হয়ে ক্ষারীয় অক্সাইড উৎপন্ন করে যা জলে দ্রবীভূত হলে হার উৎপন্ন করে।
  • একটি ম্যাগনেসিয়াম ফিতা জ্বালিয়ে অক্সিজেনপুর্ন গ্যাসজারের মধ্যে প্রবেশ করানো হলো। ফিতাটি তীব্রভাবে জ্বলবে এবং ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইডের সাদা চূর্ণ উৎপন্ন করবে। এটি একটি ক্ষারীয় অক্সাইড। 2Mg + O2 = 2MgO
  • প্রজ্বলন চামচে এক টুকরো সোডিয়াম নিয়ে বার্নারে দিয়ে উত্তপ্ত করে অক্সিজেন পূর্ণ গ্যাসজারের মধ্যে প্রবেশ করালে সোনালি শিখাসহ জ্বলবে এবং সোডিয়াম মোনোঅক্সাইড উৎপন্ন করবে। উৎপন্ন সোডিয়াম মোনোঅক্সাইড এর মধ্যে জল দিলে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড ক্ষার উৎপন্ন হবে, যা লাল লিটমাসকে নীল করে দেয়। সুতরাং O2কে ক্ষার উৎপাদক ও বলা যায়।
  • লোহিত তপ্ত লোহা অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে ফেরোসোফেরিক অক্সাইড উৎপন্ন করে।
  • চ) হাইড্রোজেনের সঙ্গে:
  • অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেন গ্যাসের মিশ্রণ এর মধ্যে আগুন দিলে বিস্ফোরণ ঘটে জলীয়বাষ্প উৎপন্ন হয়। জল হল একটি প্রশম অক্সাইড। 2H2 + O2 = 2H2O
  • ছ) নাইট্রোজেনের সঙ্গে:
  • 3000 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায় বিদ্যুত স্ফুলিঙ্গের সাহায্যে অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেন যুক্ত হয়ে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপন্ন হয়। নাইট্রিক অক্সাইড একটি প্রশম অক্সাইড। N2 + O2  = 2NO
  • জ) অক্সিজেন একটি উত্তম জারক:
  • বিভিন্ন পদার্থকে O2 জারিত করতে পারে। বিভিন্ন ধাতু এবং অধাতু অক্সিজেনের ( O) মধ্যে উত্তপ্ত করলে জারিত হয়ে অক্সাইডে পরিণত হয়। 2Cu +O2  = 2CuO
  • এই বিক্রিয়ায় সেই অক্সিজেন এর দ্বারা তাড়িত হয়ে সেই হতে পরিণত হয়েছে।
  • লঘু H2SO4 যুক্ত হালকা সবুজ বর্ণের ফেরাস সালফেট দ্রবণে অক্সিজেন গ্যাস চালনা করলে ফেরাস সালফেট অক্সিজেন দ্বারা জারিত হয়ে বাদামী বর্ণের ফেরিক সালফেট উৎপন্ন করে।
  • ঝ) O2 গ্যাস ক্ষারীয় পাইরোগ্যালেট দ্রবণ দ্বারা শোষিত হয়।

অক্সিজেনের ব্যবহার

  • অক্সিজেনের ব্যবহার নিম্নরূপ–
  • ১. অক্সি হাইড্রোজেন শিখা বিভিন্ন ধাতু গলাতে ব্যবহৃত হয়।
  • ২. অক্সি এসিটিলিন শেখার উষ্ণতা 3000 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। এই শিখাকে ঝালাইয়ের কাজে ব্যবহার করা হয়।
  • ৩. সালফিউরিক এসিড ও নাইট্রিক এসিডের শিল্প উৎপাদন O2 ব্যবহার করা হয়।
  • ৪. প্রাণিজগতের অস্তিত্বের মূলে আছে অক্সিজেন। O2 গ্যাস শ্বাসকার্যে সাহায্য করে।
  • ৫. জলের নিচে ডুবুরিদের জন্য, উড়োজাহাজের চালক ও যাত্রীদের জন্য এবং মরণাপন্ন রোগীর শ্বাসকষ্ট সময় কৃত্রিম উপায়ে O2 গ্যাস সরবরাহ করা হয়।
  • ৬. আগুন ছাড়া আমাদের দৈনন্দিন জীবন চলতে পারে না। অক্সিজেন আগুন জ্বালাতে সাহায্য করে।

O2 গ্যাসের সনাক্তকরণ বা কিভাবে অক্সিজেনকে সনাক্ত করতে হয়

  • ১. শিখাহীন জ্বলন্ত একটি পাটকাঠিকে অক্সিজেন পূর্ণ জারে প্রবেশ করালে কাঠিটি তীব্রভাবে জ্বলে ওঠে।
  • ২. বর্ণহীন নাইট্রিক অক্সাইড গ্যাস অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসলে বাদামী রঙের নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন করে। 2NO+O2=2NO2 ( বাদামি)
  • ৩. ক্ষারীয় পটাশিয়াম পাইরোগ্যালেট দ্রবণে O2 শোষিত হয় এবং দ্রবণের বর্ণ বাদামি হয়।

পরীক্ষাগারে অক্সিজেন প্রস্তুতি

  • ক) পরীক্ষাগারে O2 গ্যাস প্রস্তুত করার জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্য
    ১. পটাশিয়াম ক্লোরেট (KClO3)
    ২. ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড (MnO2)
  • খ) পরীক্ষাগারে অক্সিজেন প্রস্তুত করার নীতি
    পটাশিয়াম ক্লোরেটকে খুব উত্তপ্ত করলে 610 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায় বিশ্লিষ্ট হয়ে পটাশিয়াম ক্লোরাইড এবং অক্সিজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়।
    পটাশিয়াম ক্লোরেট এর সঙ্গে ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড মেশালে কম উষ্ণতায় (200 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে 240 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) সহজে এবং তাড়াতাড়ি অক্সিজেন গ্যাস নির্গত হয়।
    2KClO3 + [MnO2] = 2KCl + 3O+ [MnO2]
    এই বিক্রিয়ায় ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইডের নিজের কোন রাসায়নিক পরিবর্তন হয়না।বিক্রিয়ার সময় ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড উপস্থিত থেকে বিক্রিয়াটিকে দ্রুত করতে সাহায্য করে মাত্র। এই বিক্রিয়ায় ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড অনুঘটক বা ক্যাটালিস্ট রূপে ব্যবহৃত হয়।
    গ) অক্সিজেন তৈরির পদ্ধতি
  • চার ভাগ ওজনের পটাশিয়াম ক্লোরেট এর সঙ্গে একভাগ ওজনের ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড ভালো করে মিশিয়ে মিশ্রণটিকে শক্ত কাঁচের টেস্ট টিউবের মধ্যে অর্ধেক ভর্তি করা হল।
  • টেস্ট টিউবের মুখটি একটি সছিদ্র কর্ক দিয়ে বন্ধ করে ওই ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে একটি নির্গম নল লাগানো হলো। নির্গম নলের শেষ প্রান্তটি একটি গ্যাস দ্রনীর মধ্যে ডোবানো থাকে।
  • টেস্ট টিউবটিকে একটি ক্লাম্পের সাহায্যে স্ট্যান্ড এর সঙ্গে এমন ভাবে আটকানো হল যেন টেস্টটিউবের সামনের দিকটা একটু ঢালু থাকে।
  • এখন টেষ্ট টিউব থেকে একটি বুনসেন বার্নার দিয়ে ধীরে ধীরে সমভাবে উত্তপ্ত করা হলো। কিছুক্ষণ পর নির্গমনলের শেষপ্রান্তে গ্যাস নির্গত হতে দেখা যাবে। কিছুটা গ্যাস বের হয়ে যেতে দেওয়া হল।কারণ টেস্টটিউবের ফাঁকা অংশে যে বায়ু ছিল তাকে এইভাবে বের করে দিতে হবে।
  • এইবার একটি জলপূর্ণ গ্যাস জারকে গ্যাস দ্রোনীর মধ্যে ডোবানো একটি মধুকোষপিঠের উপর উপুড় করে বসানো হলো এবং নির্গম নলের শেষপ্রান্তটি কে মধকোষপিঠের ভেতর প্রবেশ করানো হলো।
  • ঘ) পরীক্ষাগারে অক্সিজেন সংগ্রহ
    টেস্টটিউবে উৎপন্ন O2 গ্যাস নির্গমনলের ভেতর দিয়ে এসে বুদবুদের আকারে গ্যাসজারে জলের নিম্ন অপসারণ দ্বারা জমা হতে থাকে। গ্যাস জারের জল সম্পূর্ণ অপসারিত হলে একটি কাচের চাকতি দিয়ে গ্যাস জারের মুখটি বন্ধ করে গ্যাসদ্রোনী থেকে উঠিয়ে নেওয়া হলো। এইভাবে O2 গ্যাস সংগ্রহ করা হলো।
জায়মান অক্সিজেন কি

জায়মান অক্সিজেন বলতে বিক্রিয়ায় তৈরি হওয়া সদ্যজাত O2 কে বঝায়। বিক্রিয়ায় উতপন্ন হওয়ার পরপরই এরা সমযোজী হয়ে উঠতে পারে না তাই স্বল্পস্থায়ী হয় এবং এটি তীব্র জারন ক্ষমতা ধারন করে। এই জায়মান অক্সিজেন রঙিন বস্তুকে বর্ণহীন করে দেয়। যেমন দাগযুক্ত কাপড়ে ব্লিচিং পাউডার দিয়ে কাপড় দাগমুক্ত করা হয়। ব্লিচিং + কার্বন ডাই অক্সাইড + জল বিক্রিয়া করে হাইপক্লরাস অ্যাসিড উতপন্ন করে। এই হাইপক্লরাস অ্যাসিড বিয়োজিত হয়ে জায়মান অক্সিজেন উতপন্ন করে।



প্রকৃতিতে অ্যালুমিনিয়াম মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় না কিন্তু অ্যালুমিনিয়ামের যৌগের মধ্যে অ্যালুমিনিয়াম বর্তমান থাকে। ভূপৃষ্ঠের সমস্ত ধাতু গুলির মধ্যে অ্যালুমিনিয়ামের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। প্রায় 7% – 8% অ্যালুমিনিয়ামের যৌগ আছে ভূপৃষ্ঠে। বেশিরভাগ অ্যালুমিনিয়াম, সিলিকেট রূপে প্রকৃতিতে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়ামের প্রধান আকরিক হল বক্সাইট ( Al2O3, 2H2O)। বক্সাইটে প্রায় 60% অ্যালুমিনা থাকে। ভারতে মহারাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি বক্সাইট পাওয়া যায়, এছাড়াও উড়িষ্যা, গুজরাট, বিহার, মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি স্থানেও আকরিক হিসেবে বক্সাইট পাওয়া যায়।

বক্সাইট থেকে অ্যালুমিনিয়াম নিষ্কাশন করা হয়। বক্সাইটে 60% – 75% অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড এবং সামান্য বালি (SiO2) মিশ্রিত থাকে।প্রকৃতিতে যেসব মূল্যবান পাথর পাওয়া যায় যেমন চুনি, পান্না, পোখরাজ প্রভৃতি এগুলি হল অ্যালুমিনা (Al2O3)। এই অ্যালুমিনার সঙ্গে সামান্য পরিমাণ অন্যান্য ধাতু অক্সাইড মিশ্রিত থাকায় ওদের বিভিন্ন রং হয়ে থাকে।

বক্সাইট থেকে অ্যালুমিনিয়াম প্রস্তুতি

বক্সাইট আকরিক থেকে প্রথমে বিশুদ্ধ অ্যালুমিনা প্রস্তুত করা হয়। পরে ক্রায়োলাইট ও ফেল্স্পারের গলিত মিশ্রণে অ্যালুমিনাকে দ্রবীভূত করে তড়িৎ বিশ্লেষণ করলে ক্যাথোড অ্যালুমিনিয়াম এবং এনোডে অক্সিজেন উৎপন্ন হয়।

অ্যালুমিনিয়ামের আকরিক বা অ্যালুমিনিয়ামের প্রধান খনিজ

আকরিক যৌগখনিজ পদার্থের নাম
সোদক অক্সাইডডায়াস্পোর Al2O3, H2O
বক্সাইট Al2O3, 2H2O
গিবসাইট Al2O3, 3H2O
ফ্লুওরাইডক্রায়োলাইট AlF3, 3NaF
সালফেটঅ্যালুনাইট K2SO4 , Al2(SO4)3, 4Al(OH)3
সিলিকেটফেল্সপার K2O4, Al2O3, 6SiO2
কেওলিন Al2O3, 2SiO2, 2H2O
মিশ্র অক্সাইডস্পাইনেল MgO, Al2O3,
ক্রাইসোবেরিল BeO, Al2O3,
অক্সাইড রূপেকোরান্ডাম Al2O3
চুনি, হিরা, পান্না, হলদে পোখরাজ প্রভৃতি বহুমূল্য রত্ন আসলে হলো অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড।
অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইডের সঙ্গে অন্যান্য ধাতুর অক্সাইড বিভিন্ন অনুপাতে মিশে থাকার জন্য এইসব রত্নের রং আলাদা হয়।

অ্যালুমিনিয়ামের ধর্ম

অ্যালুমিনিয়াম এর ভৌত ধর্ম

১. অ্যালুমিনিয়ামের রং রুপোর মত সাদা,অশুদ্ধ অবস্থায় থাকলে সামান্য নীল আভা দেখা যায়।
২. এই ধাতু খুব হালকা। এর আপেক্ষিক গুরুত্ব 2.7।
৩. তাপ ও তড়িতের সুপরিবাহী।
৪. এটি নরম এবং নমনীয়, 100° – 150° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ধাতুটি নমনীয় ও প্রসার্য হয় একে সহজেই পাতলা পাত বা সরু তারে পরিণত করা যায় কিন্তু 600°সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা এলুমিনিয়াম ভঙ্গুর হয়ে পড়ে তখন তাকে পাউডারে পরিণত করা যায়।
৫. 659° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় অ্যালুমিনিয়াম গলে যায়। এই অবস্থায় রেখে বিভিন্ন সাথে ঢেলে তার আকৃতি প্রদান করা হয়।

অ্যালুমিনিয়ামের রাসায়নিক ধর্ম

১. বায়ুর সঙ্গে ক্রিয়া
ক) শুষ্ক বায়ুর সঙ্গে অ্যালুমিনিয়ামের কোন বিক্রিয়া ঘটে না।
খ) আদ্র বায়ুতে রাখলে ধাতব ও অ্যালুমিনিয়ামের উপর অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইডের একটি সূক্ষ্ম আস্তরণ পড়ে, যা ধাতুর ক্ষয় রোধ করে।
গ) অ্যালুমিনিয়াম পাত বা তারকে বায়ুর মধ্যে তীব্র উত্তপ্ত করলে উজ্জ্বল সাদা শিখার সঙ্গে জ্বলতে থাকে এবং বায়ুর অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন এর সঙ্গে যুক্ত হয় যথাক্রমে অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড এবং অ্যালুমিনিয়াম নাইট্রাইড উৎপন্ন করে।
4Al+3O2=2Al2O3, 2Al+N2=2AlN
২. জলের সঙ্গে বিক্রিয়া
ক) সাধারণ অবস্থায় অ্যালুমিনিয়াম ধাতুর ওপর Al2O3এর সখ্য আস্তরন থাকায় অ্যালুমিনিয়ামের সঙ্গে বিশুদ্ধ জল বা জলীয়বাষ্পের কোন বিক্রিয়া ঘটে না।
খ) অ্যালুমিনিয়াম চূর্ণ জলে ফোটালে জল বিয়োজিত হয়ে হাইড্রোজেন উৎপন্ন করে এবং অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রোক্সাইড উৎপন্ন হয়ে অধঃক্ষিপ্ত হয়।
2Al+6H2O=3H2+2Al(OH)3
গ) অ্যালুমিনিয়াম ও পারদ এর সংখ্যার ধাতুর সঙ্গে জলের বিক্রিয়া অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও হাইড্রোজেন উৎপন্ন হয়।
ঘ) ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড বা লবণাক্ত জলে অ্যালুমিনিয়াম দ্রবীভূত হয়ে যায়, এবং হাইড্রোজেন ও হাইড্রোক্সাইড উৎপন্ন করে।
৩. লঘু এসিডের সঙ্গে অ্যালুমিনিয়ামের বিক্রিয়া
ক) লঘু সালফিউরিক এসিডের সঙ্গে অ্যালুমিনিয়ামের বিক্রিয়া ঘটে না। লঘু হাইড্রোক্লোরিক এসিডের সঙ্গে অ্যালুমিনিয়ামের বিক্রিয়ায় হাইড্রোজেন এবং অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড উৎপন্ন হয়।
2Al+6HCl=2AlCl3+3H2
খ) লঘু নাইট্রিক এসিড অ্যালুমিনিয়ামের সঙ্গে অতি ধীর গতিতে বিক্রিয়া করে এবং অ্যালুমিনিয়াম নাইট্রেট ও অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট উৎপন্ন করে।
৪. উত্তপ্ত ও গাঢ় এসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া
ক) উষ্ণ ও গাঢ় সালফিউরিক এসিডের সঙ্গে অ্যালুমিনিয়ামের বিক্রিয়ায় অ্যালুমিনিয়াম সালফেট এবং সালফার ডাই অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়।
2Al+6H2SO4=Al2(SO4)3+3SO2+6H2O
খ) গাঢ় নাইট্রিক এসিডের সঙ্গে অ্যালুমিনিয়ামের বিক্রিয়া ঘটে না। নাইট্রিক এসিডের গাঢ়ত্ব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অ্যালুমিনিয়ামের সঙ্গে বিক্রিয়া করার ক্ষমতা কমে যায়।
৫. ক্ষারের সঙ্গে বিক্রিয়া
সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড বা পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইডেরর মত ক্ষারের জলীয় দ্রবণে অ্যালুমিনিয়ামের চূর্ণ ফেলে উত্তপ্ত করলে যথাক্রমে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম অ্যালুমিনেট লবণ ও হাইড্রোজেন উৎপন্ন হয়।
2Al+2NaOH+2H2O=2NaAlO2+3H2
2Al+2KOH+2H2O=2KAlO2+3H2
৬. একইসঙ্গে এসিড ও ক্ষারের সঙ্গে বিক্রিয়া
ক) অ্যালুমিনিয়াম ক্ষার ও এসিড উভয়ের সঙ্গে বিক্রিয়া করে হাইড্রোজেন উৎপন্ন করে।
খ) অ্যালুমিনিয়াম-অক্সাইড এসিড ও ক্ষারের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবণ ও জল উৎপন্ন করে। অর্থাৎ অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড একটি উভধর্মী অক্সাইড।
Al2O3+6HCl=AlCl3+3H2O
Al2O3+NaOH=2NaAlO2+H2O

অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবহার

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্নভাবে অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবহার করে থাকে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজ মেটাতে। নিচে অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবহার সম্বন্ধে প্রধান কয়েকটি বিষয় দেওয়া হল।
১. মোটরগাড়ি ও বিমানের কাঠামো প্রস্তুত করতে অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবহার হয়।
২. তড়িৎবাহী তার এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি তৈরি করতে অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবহার হয়।
৩. থার্মিট পদ্ধতিতে ভাঙাচোরা লোহা জোড়া লাগাতে এবং ক্রোমিয়াম, ম্যাংগানিজ প্রভৃতি ধাতু উৎপাদনে Al ব্যবহার করা হয়।
৪. দৈনন্দিন ব্যবহৃত ঘরের বিভিন্ন সামগ্রী যেমন বাসনপত্র, রন্ধনপাত্র প্রভৃতি রান্নার সরঞ্জাম তৈরি করতে
৫. চেয়ার, টেবিল, টুল, মই প্রভৃতি হালকা আসবাবপত্র ও নিত্য ব্যবহার্য জিনিস অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি করা হয়। মরিচাবিহীন হালকা ও সহজে বহনযোগ্য হওয়ার কারণে এলুমিনিয়ামের মই, কাঠামো প্রভৃতি জিনিস দমকল ও সেনাবাহিনীতে ব্যবহার করা হয়।
৬. চকলেট, সিগারেট, প্রভৃতির মোড়ক ও রাংতা অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি করা হয়।
৭. ফটোগ্রাফিক ফ্ল্যাশ বাল্ব প্রস্তুতিতে অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবহার হয়।
৮. বাজি ও বোমা তৈরি করতে অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবহার হয়
৯. তুলাযন্ত্র, বিমান ও মোটরগাড়ির কাঠামো, বাসনপত্র, মুদ্রা প্রভৃতি প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হালকা ও ঘাতসহ ধাতুসংকর প্রস্তুতি করতে অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবহার হয়। যেমন অ্যালুমিনিয়াম ব্রোঞ্জ, ম্যাগনেসিয়াম, ডুরালুমিন প্রভৃতি ধাতু সংকর।

অ্যালুমিনিয়াম সম্বন্ধীয় প্রশ্নোত্তর

অ্যালুমিনিয়াম পাতে মোড়া চাটনি বা আচার খাওয়া উচিত নয় কেন

অ্যালুমিনিয়ামের পাতে মোড়া চাটনি আচার খাওয়া উচিত নয়। চাটনিতে জৈব এসিড (অ্যাসিটিক অ্যাসিড বা ভিনিগার) থাকে। ওই জৈব এসিড অ্যালুমিনিয়ামের সঙ্গে বিক্রিয়া করে যে লবণ উৎপন্ন করে, তা চাটনির সঙ্গে আমাদের দেহে প্রবেশ করে শরীরের ক্ষতি সাধন করতে পারে। তাই অ্যালুমিনিয়ামের পাতে মোড়া চাটনি বা আচার খাওয়া উচিত নয়।

অ্যালুমিনিয়ামের সংকেত

Al হল অ্যালুমিনিয়ামের সংকেত

অ্যালুমিনিয়ামের পারমাণবিক গুরুত্ব কত

অ্যালুমিনিয়ামের পারমাণবিক গুরুত্ব হলো 26.98

অ্যালুমিনিয়ামের পরমাণু ক্রমাঙ্ক কত

অ্যালুমিনিয়ামের পরমাণু ক্রমাঙ্ক 13

অ্যালুমিনিয়ামের যোজ্যতা কত

অ্যালুমিনিয়ামের যোজ্যতা 3

অ্যালুমিনিয়ামের গলনাঙ্ক 659° C



উদ্ভিদ কোষে অবস্থিত দুটি পর্দা পরিবেষ্টিত এবং বিশেষ বিপাকীয় কাজে লিপ্ত ( রঞ্জক যুক্ত বা রঞ্জক বিহীন) অঙ্গাণুকে প্লাস্টিড বলে।

প্লাস্টিডের আবিষ্কার ও নামকরণ

বিজ্ঞানী স্কিম্পার উদ্ভিদ কোষে সবুজ কণিকার নামকরণ করেন ক্লোরোপ্লাস্ট। মেয়ার এদের অটোপ্লাস্ট নাম দেন এবং অন্য বর্ণের প্লাস্টিডগুলোকে ট্রফোপ্লাস্ট নাম দেন। বিজ্ঞানী মেয়েন উদ্ভিদ কোষে এদের অবস্থান এবং প্রকৃতি সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জানান।

প্লাস্টিডের প্রাপ্তিস্থান বা উৎপত্তি

ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, নীলাভ সবুজ শৈবাল প্রভৃতি উদ্ভিদ ছাড়া অন্য সব ধরনের উদ্ভিদের কোষে প্লাস্টিড থাকে। বিভিন্ন উদ্ভিদে এদের আকৃতি বিভিন্ন ধরনের হয় এবং ভিন্ন ভিন্ন কোষে এরা ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যায় থাকে। শৈবাল কোষে সাধারণত একটি এবং অন্যান্য উদ্ভিদ কোষে একাধিক প্লাস্টিড থাকে। প্লাস্টিড জালিকাকার, সর্পিলাকার, রাশিযুক্ত, চাকতির মত, লাটিমের মত প্রভৃতি আকৃতির হয়।

প্লাস্টিডের শ্রেণীবিভাগ বা প্লাস্টিড কত প্রকার

বর্ণের তারতম্য অনুসারে প্লাস্টিডের শ্রেণীবিভাগ মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা লিউকোপ্লাস্ট, ক্রোমোপ্লাস্ট এবং ক্লোরোপ্লাস্ট

১। লিউকোপ্লাস্ট


লিউকোপ্লাস্টের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য

রঞ্জকবিহীন বর্ণহীন প্লাস্টিড যা উদ্ভিদের বিভিন্ন বিপাকে অংশ নেয় তাদের লিউকোপ্লাস্ট বলে। এরা বর্ণহীন প্লাস্টিড। দেখতে দন্ডাকার বা গোলাকার। ভ্রুণকোশ এবং যেসব কোষে কোন প্রকার সূর্যের আলো পৌঁছাতে পারে না সেইসব কোষে লিউকোপ্লাস্ট থাকে। এরা বিভিন্ন উদ্ভিদ অঙ্গের তরল খাদ্যকে বিভিন্ন ধরনের সঞ্চিত খাদ্য বস্তুতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে—শ্বেতসার, তেল, প্রোটিন। এরা প্রোপ্লাস্টিড থেকে তৈরি হয়।এরা আলোকের উপস্থিতিতে ক্রোমোপ্লাস্ট ও ক্লোরোপ্লাস্টে রূপান্তরিত হয়। এই জাতীয় প্লাস্টিডে ল্যামেলিয় অংশ স্তরীভূত অবস্থায় থাকে না।

২। ক্রোমোপ্লাস্ট


ক্রোমোপ্লাস্টের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য


অসবুজ রঙিন প্লাস্টিড যারা উদ্ভিদের নানা ধরনের কাজে সাহায্য করে তাদের ক্রোমোপ্লাস্ট বলে। এরা হলদে ও কমলা রঙের প্লাস্টিড। এতে কমলা রঙের ক্যারোটিন এবং হলুদ রংয়ের জ্যান্থোফিল রঞ্জক থাকে। এরা গোলাকার লম্বা তারকাকার প্রভৃতি বিভিন্ন আকৃতির হয়। এরা প্রোপ্লাস্টিড থেকে তৈরি হয়। এরা ফুল ফল মূল প্রভৃতি বিভিন্ন উদ্ভিদ অঙ্গে থেকে অঙ্গকে রঞ্জিত করে কিন্তু সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় সরাসরি অংশ নেয় না।

৩। ক্লোরোপ্লাস্ট


ক্লোরোপ্লাস্টের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য


সবুজ রঞ্জক যুক্ত প্লাস্টিড যারা সালোকসংশ্লেষে সরাসরি অংশ নেয় তাদের ক্লোরোপ্লাস্ট বলে।
ক্লোরোপ্লাস্টের সবুজ রঞ্জক ক্লোরোফিল এবং কমলা রঞ্জক ক্যারোটিন থাকে।সব ধরনের প্লাস্টিক এর মধ্যে ক্লোরোপ্লাস্ট সম্বন্ধে বেশি করে জানা সম্ভব হয়েছে।

ক্লোরোপ্লাস্টের উৎপত্তি

ভাজক কলা কোষ এর আদি প্লাস্টিড বা প্রোপ্লাস্টিড জাতীয় বর্ণহীন থলির মতো অঙ্গাণু থেকে এরা সূর্যালোকের উপস্থিতিতে রূপান্তরিত হয়ে ক্লোরোপ্লাস্টে পরিণত হয়।কোষ বিভাজনের সময় ক্লোরোপ্লাস্ট গুলো সমান দুই অংশে বিভাজিত হয়ে অপত্য কোষের মধ্যে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

ক্লোরোপ্লাস্টের বিস্তার


কোষে একটি ক্লোরোপ্লাস্ট থাকলে তা কোন নির্দিষ্ট স্থানে থাকে। কষে অনেকগুলো ক্লোরোপ্লাস্ট থাকলে তা সাইটোপ্লাজমে সমান ভাবে ছড়ানো থাকে।

ক্লোরোপ্লাস্টের আকৃতি

এরা দেখতে চ্যাপ্টা, ডিম্বাকার, গোলাকার, ফিতার মতো, কাপের মতো প্রভৃতি আকৃতির হয়ে থাকে।

ক্লোরোপ্লাস্টের সংখ্যা

স্পাইরোগাইরা, ক্ল্যামাইডোমোনাস প্রভৃতি শৈবাল কোশপ্রতি একটি করে ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে। উন্নত উদ্ভিদের পাতার কোষে এদের সংখ্যা সাধারণত 30 থেকে 50 পর্যন্ত হয়।

ক্লোরোপ্লাস্টের গঠন

উন্নত উদ্ভিদ কোষে ক্লোরোপ্লাস্ট দুটি একক আবরণী দিয়ে আবৃত থাকে। ক্লোরোপ্লাস্টের ভিতরকার সমসত্ব ছাত্রকে স্ট্রোমা বলে। স্ট্রোমা একটি কলয়েড জাতীয় দ্রবন।

প্লাস্টিড এবং ক্লোরোপ্লাস্ট এর কাজ

প্লাস্টিড এবং ক্লোরোপ্লাস্ট এর কাজ নিম্নরূপ

  • সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের খাদ্য তৈরিতে প্লাপ্টিড এবং ক্লোরোপ্লাস্টের কাজ অন্যতম।
  • উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সঞ্চয় করতে সাহায্য করে।
  • ফুল, পাতা ও ফলকে আকর্ষণীয় রঙে রাঙা নিত্য করে এবং কীটপতঙ্গ কে আকৃষ্ট করে পরাগায়ন ঘটাতে সাহায্য করে।
  • প্লাস্টিড এবং ক্লোরোপ্লাস্ট এর কাজ হল উদ্ভিদকে বর্ণময় এবং আকর্ষনীয় করে তোলা।
  • ফটোফসফোরাইলেশান ও ফটোরেস্পিরেশন এ সহায়তা করে।



ভিনিগার হলো অ্যাসিটিক এসিডের 4% থেকে 8% লঘু জলীয় দ্রবণ। বিজ্ঞানী কোলবে কার্বন, হাইড্রোজেন  অক্সিজেনের সাহায্যে পরীক্ষাগার সর্ব প্রথম অ্যাসিটিক অ্যাসিড 1845 সালে তৈরি করেন। অ্যাসিটিক অ্যাসিড কার্বক্সিলিক এসিডের শ্রেণীভূক্ত। একটি অ্যাসিটিক অ্যাসিড অণুতে একটি মিথাইল মূলকের সঙ্গে একটি কারবক্সিল মূলক যুক্ত হয়ে গঠিত হয়।

ভিনিগারের উৎস

১. অ্যাসিটিলিনের জারণ ক্রিয়ার দ্বারা এসিটিক এসিড প্রস্তুত করা হয়। একচুয়ালি ভিনিগার হলো অ্যাসিটিক এসিডের জলীয় দ্রবণ।
২. কাঠের অন্তর্ধূম পাতনে পাইরোলিগনাস এসিড পাওয়া যায়। পাইরোলিগনাস এসিড হল 8%-10% পার্সেন্ট অ্যাসিটিক অ্যাসিড, 2%-4% মিথাইল অ্যালকোহল এবং সামান্য এসিটোনের জলীয় দ্রবণ অর্থাৎ পাইরোলিগনাস এসিডে প্রায় 10% অ্যাসিটিক অ্যাসিড থাকে।
৩. নিম্নমানের ইথাইল অ্যালকোহলকে এসিটোব্যাক্টর অ্যাসেটি বা ব্যাকটেরিয়াম অ্যাসেটি নামে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতিতে বায়ুর অক্সিজেন দ্বারা দারিত করে ভিনেগার প্রস্তুত করা হয়। ভিনিগার প্রস্তুতির এই পদ্ধতিকে কুইক ভিনিগার পদ্ধতি বলে। এভাবে প্রস্তুত ভিনিগারে কিছু টারটারিক এসিড, সাকসিনিক এসিড এবং সামান্য পরিমাণ ওইসব এসিডের এস্টার থাকে।
৪. পুরনো মদে(টক হয়ে যাওয়া মত), কতকগুলি ফলের(জায়ফলের তেল) রসের মধ্যে কয়েকটি উদ্ভিজ্জ তেল এবং কয়েকটি প্রাণীর মলে এসিটিক এসিড পাওয়া যায়।

ভিনিগার এর ব্যবহার

নিচে ভিনিগারের ব্যবহার আলোচনা করা হলো
১. নানা রকম খাবার, আচার ও চাটনি তৈরি করতে ভিনিগার ব্যবহার করা হয়।
২. রবার ঘন করতে ভিনিগার ব্যবহার করা হয়।
৩. মাছ মাংস সংরক্ষণের ভিনেগারের ব্যবহার আছে।
৪. পরীক্ষাগারে বিকারক রূপে ও দ্রাবক হিসাবে ভিনিগারের ব্যবহার হয়।
৫. অ্যাসিটেট লবণ, অ্যাসপিরিন, রেয়ন, সেলুলোজ অ্যাসিটেট জাতীয় প্লাস্টিক প্রভৃতি তৈরি করতে ব্যবহার হয়।
৬. হোয়াইট লেড নামে সাদা রং প্রস্তুত করতে ভিনেগারের ব্যবহার আছে।

ভিনিগার এর ধর্ম

নিচে ভিনিগারের ধর্ম পয়েন্ট আকারে দেওয়া হল
১. এটি তীব্র গন্ধযুক্ত বর্ণহীন তরল।
২. ভিনেগার অ্যাসিটিক এসিডের লঘু জলীয় দ্রবণ, ভিনিগারে সাধারণত 4 থেকে 8 পার্সেন্ট অ্যাসিটিক অ্যাসিড থাকে।
৩. ভিনিগারের ধর্মের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি জলে দ্রাব্য।

ভিনিগারের সংকেত 

ভিনেগারের সংকেত হলো CH3COOH

ভিনিগার এর গঠন

ভিনিগার হল অ্যাসিটিক এসিডের লঘু জলীয় দ্রবণ। একটি মিথাইল মূলকের সঙ্গে একটি কারবক্সিল মূলক যুক্ত হয়ে ভিনেগারের একটি অণু তৈরি করে। CH3COOHভিনিগার



আর্সেনিয়াস অক্সাইড (As₂O₃) এর সাথে 50% গাঢ় নাইট্রিক এসিডকে উত্তপ্ত করলে ডাই নাইট্রোজেন ট্রাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়। উৎপন্ন গ্যাসকে CaCl₂ দ্বারা শুষ্ক করে শেষ শীতল করলে নীল বর্ণের তরল রূপে N₂O₃ জমা হয়।


As₂O₃ + 2HNO₃ +2H₂O -----> N₂O₃ + 2H₃AsO₄


 

অক্সিজেন ও অপর যেকোনো একটি মৌল যোগে গঠিত দ্বিমৌল যৌগকে অক্সাইড বলে। 


যেমনঃ MgO, CaO ইত্যাদি। 


অক্সাইডের প্রকারভেদঃ রাসায়নিক ধর্মের ভিত্তিতে অক্সাইডকে নয় ভাগে ভাগ করা যায়। 

১. অম্লীয় অক্সাইড  

২. ক্ষারীয় অক্সাইড 

৩. উভধর্মী অক্সাইড 

৪. নিরপেক্ষ অক্সাইড 

৫. পার অক্সাইড 

৬. পলি অক্সাইড 

৭. সুপার অক্সাইড 

৮. সাব অক্সাইড 

৯. যৌগিক বা মিশ্র অক্সাইড।


 

শ্বেত ফসফরাস ও লোহিত ফসফরাস এর মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপঃ 


১. শ্বেত ফসফরাস মোমের মত নরম।কিন্তু, লোহিত ফসফরাস অদানাদার গুড়া পদার্থ।

২. শ্বেত ফসফরাস এর গন্ধ রসুনের মতো।
অপরদিকে, লোহিত ফসফরাস গন্ধহীন।

৩. শ্বেত ফসফরাস অত্যন্ত সক্রিয়। কিন্তু লোহিত ফসফরাস কম সক্রিয়।

৪. শ্বেত ফসফরাস উত্তপ্ত ক্ষার দ্রবণের সাথে বিক্রিয়া করে ফসফিন উৎপন্ন করে।
লোহিত ফসফরাস ক্ষারের সাথে কোন বিক্রিয়া করে না।

৫. শ্বেত ফসফরাস কক্ষ তাপমাত্রায় অস্থায়ী। ধীরে ধীরে লোহিত ফসফরাসে পরিণত হয়।
কিন্তু লোহিত ফসফরাস সাধারণ তাপমাত্রায় স্থায়ী।


গ্লিসারিন হল অ্যালকোহলের সমগোত্রীয় শ্রেণীর অ্যালিফেটিক যৌগ। এটি পলি-হাইড্রক্সি অ্যালকোহল। গ্লিসারিন বর্ণহীন তরল এবং মিষ্টি স্বাদ যুক্ত। গ্লিসারিন ফ্যাটি এসিডের সাথে ট্রাই গ্লিসারাইড এস্টার আকারে পাওয়া যায়। গ্লিসারল বা গ্লিসারিন হল অ্যালকোহলজাতীয় যৌগ। 1779 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী শীলে অলিভ অয়েলের সঙ্গে লিখার্জের মিশ্রণকে উত্তপ্ত করে গ্লিসারিন যৌগটি আবিষ্কার করেন। 1811 সালে বিজ্ঞানী শেভ্রেল এই যৌগটির নাম দেন গ্লিসারল। গ্লিসারিনের একটি অণুতে তিনটি কার্বন পরমাণুর সঙ্গে পাঁচটি হাইড্রোজেন পরমাণু এবং তিনটি হাইড্রোক্সিল অনু যুক্ত হয়ে একটি সরল অণু গঠন করে।

গ্লিসারল বা গ্লিসারিনের উৎস

১. নারকেল তেল, অলিভ অয়েল, শূকরের চর্বি প্রভৃতি উদ্ভিজ্জ তেল বা প্রাণিজ চর্বির মধ্যে একটি রাসায়নিক উপাদান হিসেবে গ্লিসারাইড বর্তমান থাকে। উদ্ভিজ্জ তেল বা প্রাণিজ চর্বিকে ক্ষার দ্রবণ দ্বারা আর্দ্র বিশ্লেষিত করলে গ্লিসারল বা গ্লিসারিন পাওয়া যায়।
২. বর্তমান সময়কালে প্রোপিলিন নামে একটি অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন থেকে গ্লিসারল তৈরি করা হয়।

গ্লিসারলের বা গ্লিসারিনের ব্যবহার

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে গ্লিসারিনের ব্যবহার বিভিন্নভাবে আমরা করে থাকি। নিচে গ্লিসারিনের কয়েকটি বিশেষ ব্যবহার সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো।
১. প্লাস্টিক শিল্পে গ্লিসারোল বা গ্লিসারিন ব্যবহার করা হয়।
২. নাইট্রোগ্লিসারিন, ডিনামাইট প্রভৃতি বিস্ফোরক দ্রব্য প্রস্তুত করতে গ্লিসারোল বা গ্লিসারিন ব্যবহার করা হয়।
৩. ধোঁয়াহীন বারুদ জুতার কালি ছাপার কালি তৈরি করতে গিলিসারিন ব্যবহার করা হয়।
৪. সিগারেটের তামাক নরম ও আদ্র করতে, টাইপ মেশিনের ফিতা ও চামড়াকে নরম রাখতে গ্লিসারল ব্যবহার হয়।
৫. খাদ্য দ্রব্য সংরক্ষণে গ্লিসারল ব্যবহার করা হয়।
৬. গ্লিসারিন থেকে ফরমিক এসিড প্রস্তুত করা হয়।
৭. বস্ত্রশিল্পে এর ব্যবহার আছে।
৮. গ্লিসারিন থেকে নানারকম সাবান, প্রসাধন দ্রব্য এবং ওষুধ তৈরি করা হয়।
৯. শৈত্যপ্রধান দেশে মোটরগাড়ির রেডিয়েটরের জলের সঙ্গে হিমায়করোধক হিসেবে গ্লিসারিন ব্যবহার করা হয়।
১০. অ্যালকোহল প্রস্তুতিতে গ্লিসারিনের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য।

গ্লিসারোল বা গ্লিসারিনের ধর্ম

প্রত্যেক পদার্থের মধ্যে গ্লিসারিনের কিছু বিশেষ ধর্ম আছে। আমরা নিচে গ্লিসারিনের ধর্ম পয়েন্ট আকারে আলোচনা করব।
১. গ্লিসারোল বা গ্লিসারিন মিষ্টি স্বাদযুক্ত বর্ণহীন গাঢ় তরল
২. গ্লিসারল হলো অ্যালকোহল সমগোত্রীয় শ্রেণীর অ্যালিফেটিক যৌগ।
৩. গ্লিসারিন জলে দ্রাব্য
৪. গ্লিসারিনের স্ফুটনাঙ্ক 290°C
৫. শুদ্ধ গ্লিসারিন একটি জলাকর্ষী পদার্থ। অর্থাৎ বিশুদ্ধ গ্লিসারলের জলের প্রতি আকর্ষণ খুব বেশি।

গ্লিসারল বা গ্লিসারিনের গঠন

গ্লিসারিনের একটি অনুর মধ্যে তিনটি কার্বন পরমাণুর সঙ্গে পাঁচটি হাইড্রোজেন পরমাণু এবং তিনটি হাইড্রোক্সিল অনু বর্তমান থাকে। নিচের চিত্রে গঠন দেওয়া হল। C3H5(OH)3গ্লিসারল বা গ্লিসারিন


গ্লিসারিনের সংকেত

গ্লিসারিনের সংকেত হলো C3H5(OH)3



কার্বক্সিল মূলক (-COOH) বিশিষ্ট অ্যালিফেটিক জৈব যৌগসমূহকে ফ্যাটি এসিড বলে। 

ফ্যাটি এসিড সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত হতে পারে। 
যেমনঃ সম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড হচ্ছে- স্টিয়ারিক এসিড (C₁₇H₃₅COOH)। 

অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড হচ্ছে- 
ওলিক এসিড (C₁₇H₃₃COOH)।



অ্যালকেন সমূহ সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন। অ্যালকেনে প্রতিটি কার্বন- কার্বন এবং প্রতিটি কার্বন- হাইড্রোজেন শক্তিশালী একক সমযোজী সিগমা বন্ধনের মাধ্যমে গঠিত। এই সিগমা বন্ধন শক্তিশালী হওয়ায় সহজে ভেঙ্গে যায় না। 


অ্যালকিন সমূহ অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন। অ্যালকিনে কার্বন- কার্বন দ্বিবন্ধন বিদ্যমান থাকে। যার একটি সিগমা বন্ধন, অপরটি দুর্বল পাই বন্ধন। অ্যালকিনের এ দুর্বল পাই বন্ধন সহজে ভেঙ্গে গিয়ে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় (যেমনঃ হাইড্রোজেন সংযোজন, হ্যালোজেন সংযোজন, হাইড্রোজেন হ্যালাইড সংযোজন ইত্যাদি) অংশগ্রহণ করে। 
এজন্য অ্যালকেন সমূহ রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ না করলেও অ্যালকিন সমূহ রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে