গ্লিসারিন হল অ্যালকোহলের সমগোত্রীয় শ্রেণীর অ্যালিফেটিক যৌগ। এটি পলি-হাইড্রক্সি অ্যালকোহল। গ্লিসারিন বর্ণহীন তরল এবং মিষ্টি স্বাদ যুক্ত। গ্লিসারিন ফ্যাটি এসিডের সাথে ট্রাই গ্লিসারাইড এস্টার আকারে পাওয়া যায়। গ্লিসারল বা গ্লিসারিন হল অ্যালকোহলজাতীয় যৌগ। 1779 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী শীলে অলিভ অয়েলের সঙ্গে লিখার্জের মিশ্রণকে উত্তপ্ত করে গ্লিসারিন যৌগটি আবিষ্কার করেন। 1811 সালে বিজ্ঞানী শেভ্রেল এই যৌগটির নাম দেন গ্লিসারল। গ্লিসারিনের একটি অণুতে তিনটি কার্বন পরমাণুর সঙ্গে পাঁচটি হাইড্রোজেন পরমাণু এবং তিনটি হাইড্রোক্সিল অনু যুক্ত হয়ে একটি সরল অণু গঠন করে।
গ্লিসারল বা গ্লিসারিনের উৎস
১. নারকেল তেল, অলিভ অয়েল, শূকরের চর্বি প্রভৃতি উদ্ভিজ্জ তেল বা প্রাণিজ চর্বির মধ্যে একটি রাসায়নিক উপাদান হিসেবে গ্লিসারাইড বর্তমান থাকে। উদ্ভিজ্জ তেল বা প্রাণিজ চর্বিকে ক্ষার দ্রবণ দ্বারা আর্দ্র বিশ্লেষিত করলে গ্লিসারল বা গ্লিসারিন পাওয়া যায়।
২. বর্তমান সময়কালে প্রোপিলিন নামে একটি অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন থেকে গ্লিসারল তৈরি করা হয়।
গ্লিসারলের বা গ্লিসারিনের ব্যবহার
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে গ্লিসারিনের ব্যবহার বিভিন্নভাবে আমরা করে থাকি। নিচে গ্লিসারিনের কয়েকটি বিশেষ ব্যবহার সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো।
১. প্লাস্টিক শিল্পে গ্লিসারোল বা গ্লিসারিন ব্যবহার করা হয়।
২. নাইট্রোগ্লিসারিন, ডিনামাইট প্রভৃতি বিস্ফোরক দ্রব্য প্রস্তুত করতে গ্লিসারোল বা গ্লিসারিন ব্যবহার করা হয়।
৩. ধোঁয়াহীন বারুদ জুতার কালি ছাপার কালি তৈরি করতে গিলিসারিন ব্যবহার করা হয়।
৪. সিগারেটের তামাক নরম ও আদ্র করতে, টাইপ মেশিনের ফিতা ও চামড়াকে নরম রাখতে গ্লিসারল ব্যবহার হয়।
৫. খাদ্য দ্রব্য সংরক্ষণে গ্লিসারল ব্যবহার করা হয়।
৬. গ্লিসারিন থেকে ফরমিক এসিড প্রস্তুত করা হয়।
৭. বস্ত্রশিল্পে এর ব্যবহার আছে।
৮. গ্লিসারিন থেকে নানারকম সাবান, প্রসাধন দ্রব্য এবং ওষুধ তৈরি করা হয়।
৯. শৈত্যপ্রধান দেশে মোটরগাড়ির রেডিয়েটরের জলের সঙ্গে হিমায়করোধক হিসেবে গ্লিসারিন ব্যবহার করা হয়।
১০. অ্যালকোহল প্রস্তুতিতে গ্লিসারিনের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য।
গ্লিসারোল বা গ্লিসারিনের ধর্ম
প্রত্যেক পদার্থের মধ্যে গ্লিসারিনের কিছু বিশেষ ধর্ম আছে। আমরা নিচে গ্লিসারিনের ধর্ম পয়েন্ট আকারে আলোচনা করব।
১. গ্লিসারোল বা গ্লিসারিন মিষ্টি স্বাদযুক্ত বর্ণহীন গাঢ় তরল
২. গ্লিসারল হলো অ্যালকোহল সমগোত্রীয় শ্রেণীর অ্যালিফেটিক যৌগ।
৩. গ্লিসারিন জলে দ্রাব্য
৪. গ্লিসারিনের স্ফুটনাঙ্ক 290°C
৫. শুদ্ধ গ্লিসারিন একটি জলাকর্ষী পদার্থ। অর্থাৎ বিশুদ্ধ গ্লিসারলের জলের প্রতি আকর্ষণ খুব বেশি।
গ্লিসারল বা গ্লিসারিনের গঠন
গ্লিসারিনের একটি অনুর মধ্যে তিনটি কার্বন পরমাণুর সঙ্গে পাঁচটি হাইড্রোজেন পরমাণু এবং তিনটি হাইড্রোক্সিল অনু বর্তমান থাকে। নিচের চিত্রে গঠন দেওয়া হল। C3H5(OH)3
গ্লিসারিনের সংকেত হলো C3H5(OH)3
0 comments:
Post a Comment