Recent Post
Loading...

রাসায়নিক বিক্রিয়া এর বিশ্লেষণ ও তাৎপর্য




রাসায়নিক বিক্রিয়া এর বিশ্লেষণ ও তাৎপর্য

১। রাসায়নিক বিক্রিয়া কি?
রাসায়নিক বিক্রিয়া সংগঠনের ৩ টি উপায় বর্ননা কর।

উত্তরঃ রাসায়নিক বিক্রিয়া : এক বা একাধিক বস্তুর রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে নতুন পদার্থ সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে রাসায়নিক বিক্রিয়া বলে।
রাসায়নিক বিক্রিয়া সংগঠনের ৩ টি উপায়: ১) সংস্পর্শ       ২) আলো     ৩) বিদ্যুৎ

১) সংস্পর্শ: কোন রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত    হলে সংস্পর্শ প্রধানতম শর্ত।
যেমন: আয়োডিনের কেলাস ও সাদা ফসফরাস পাশাপাশি একটু ব্যবধানে রাখলে কোন রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে না। কিন্তু     তাদেরকে পরস্পরের সংস্পর্শে আনা মাত্রই এদের মধ্যে তীব্র রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে এবং ফসফরাস ট্রাই আয়োডাইড উৎপন্ন     করে।                                      2P + 3I2 = 2PI3

২) আলো: আলো এক প্রকার শক্তি। কোন রাসায়নিক বিক্রিয়া অন্ধকারে সংঘটিত হয় না।
যেমন: হাইড্রোজেন ও ক্লোরিনের মিশ্রণ অন্ধকারে রেখে দিলে কোনো বিক্রিয়া হয় না। কিন্তু আলোকে আনলে বিস্ফোরণসহ     বিক্রিয়া সংঘটিত হয়।                                          আলো

H2 + Cl2              2HCl

৩) বিদ্যুৎ: অনেক রাসায়নিক বিক্রিয়া বিদ্যুৎ প্রবাহের মাধ্যমে সংঘটিত হয়।
যেমন: সামান্য এসিড মিশ্রিত পানির মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ পরিচালনা করলে এর উপাদান হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন উৎপন্ন     হয়।                                   বিদ্যুৎ প্রবাহ
2H2O                     2H2 + O2

২।    আইসোমারিক / সমানুকরণ / পারমানবিক পূর্ণবিন্যাস / সমানুক বিক্রিয়া কি? উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ যে বিক্রিয়ায় কোন যৌগের অণুতে পরমাণুসমূহ পুনর্বিন্যস্ত হয়ে অন্য সমানু উৎপন্ন করে তাকে আইসোমারিক বিক্রিয়া     বলে।
যেমন: অ্যামোনিয়াম সায়ানেটকে উত্তপ্ত করলে ইউরিয়ায় রুপান্তরিত হয়।
NH4CNO             NH2 – CO – NH2
অ্যামোনিয়াম সায়ানেট                                     ইউরিয়া

৩।    পলিমারকরণ বা বহুযোজন বিক্রিয়া কি? উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ যে বিক্রিয়ায় এ বা একাধিক যৌগের অনেকগুলো অণু পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে বড় অণু সৃষ্টি করে তাকে পলিমারকরণ     বিক্রিয়া বলে।
যেমন: ইথিলিনের বহুসংখ্যক অণু একত্রিত হয়ে পলিািিথলিন তৈরি করে।
n(CH2 =CH2)                                     (– CH2 – CH2 – )n
ইথিলিন         পলিইথিলিন

৪।    প্রভাবক ও প্রভাবন কি? প্রভাবক কত প্রকার ও কি কি?

উত্তরঃ প্রভাবক: প্রভাবক একটি পদার্থ। যা কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া-য় অংশগ্রহন করে না ,কিন্তু রাসায়নিক বিক্রিয়া-য় উপস্থিত     থেকে বিক্রিয়ার গতিকে বৃদ্ধি বা হ্রাস করে তাকে প্রভাবক বলে।

প্রভাবন: প্রভাবক একটি পদার্থ। যা কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া-য় অংশগ্রহন করে না ,কিন্তু রাসায়নিক বিক্রিয়া-য় উপস্থিত     থেকে বিক্রিয়ার গতিকে বৃদ্ধি বা হ্রাস করে তাকে প্রভাবক বলে। এই প্রক্রিয়াটিকেই প্রভাবন বলে।

প্রভাবক চার প্রকার: ১) ধনাত্মক প্রভাবক   ২) ঋনাত্মক প্রভাবক   ৩) অটো বা স্বয়ং প্রভাবক   ৪) আবিষ্ট প্রভাবক

১) ধনাত্মক প্রভাবক: যে প্রভাবক কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া-র স্বাভাবিক গতিকে বৃদ্ধি করে তাকে ধনাত্মক প্রভাবক বলে।
যেমন: পটাসিয়াম ক্লোরেট হতে অক্সিজেন প্রস্তুতির সময় ম্যাংগানিজ ডাইঅক্সাইড ধনাত্মক প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।


                                                                 MnO2

                                              2KClO3      →        2KCl + 3O2

Δ





২) ঋনাত্মক প্রভাবক: যে প্রভাবক কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া-র স্বাভাবিক গতিকে হ্রাস করে তাকে ঋনাত্মক প্রভাবক বলে।
যেমন: হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড এর দ্রবণ ধীরে ধীরে বিয়োজিত হয়ে পানি ও অক্সিজেন উৎপন্ন হয়। এখানে এরা ঋনাত্মক     প্রভাবক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
2H2O2 = 2H2O + O2  (ধীরে ধীরে বিয়োজন)

৩) অটো বা স্বয়ং প্রভাবক: যদি কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া-য় উৎপন্ন পদার্থসমূহের একটি নিজেই প্রভাবকের কাজ করে, তবে     তাকে অটো বা স্বয়োং প্রভাবক বলে।

৪) আবিষ্ট প্রভাবক: একটি বিক্রিয়ার প্রভাবে অন্য কোনো বিক্রিয়া সংঘটিত হয়  তাকে আবিষ্ট প্রভাবক বলে।

৫।    প্রভাবক বিবর্ধক ও প্রভাবক বিষ কি? উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ প্রভাবক বিবর্ধক: যে পদার্থের উপস্থিতিতে প্রভাবকের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় তাকে প্রভাবক বিবর্ধক বা প্রভাবক সহায়ক বা     প্রভাবক উদ্দীপক বলে।
যেমন: হেবার প্রণালিতে অ্যামোনিয়া (NH3) প্রস্তুতির সময় আয়রন প্রভাবকের সাথে সামান্য পরিমাণ মলিবডেনাম উপস্থিত     (গড়) থেকে প্রভাবক সহায়ক হিসেবে প্রভাবকের ক্রিয়াকে বৃদ্ধি করে।
প্রভাবক  ঋব
N2 +3H2         →→                  2NH3
প্রভাবক সহায়ক

প্রভাবক বিষ: যে সমস্ত পদার্থ প্রভাবকের ক্ষমতা নষ্ট করে তাকে প্রভাবক বিষ বলে।
যেমন: এ বিক্রিয়াতে প্লাটিনাম(চঃ)চূর্ণ একটিধনাত্মক প্রভাবক। কিনতু বিক্রয়কের সাথে সামান্য পরিমাণ আর্সেনিয়াস অক্সাইড     (As2O3)     থাকে তবে বিক্রিয়ার গতি হ্রাস পায় অর্থাৎ  প্রভাবকের ক্ষমতা হ্রাস পায়। এখানে(As2O3) প্রভাবক বিষ হিসেবে     কাজ করে।
প্রভাবক চঃ
2SO2 + O2  →→→  2SO3
প্রভাবক বিষ As2O3

৬।    শিল্পক্ষেত্রে প্রভাবকের ৫ টি ব্যবহার লিখ।

উত্তরঃ শিল্পক্ষেত্রে প্রভাবকের ৫ টি ব্যবহার:

১) অ্যামিনিয়া (NH3) উৎপাদনে: হাইড্রোজেন  ও  নাইট্রোজেন  হতে  হেবার  প্রণালিতে  অ্যামোনিয়া (NH3) প্রস্তুতির  জন্য         লোহার গুঁড়া (Fe) প্রভাবক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

২) HCl এর জারণ কার্জে : ডিকন্স প্রণালিতে HCl এর জারণ কার্যে কিউপ্রিক ক্লোরাইড প্রভাবক রুপে ব্যবহৃত হয়।
৩) কৃত্রিম ঘি উৎপাদনে: অসম্পৃক্ত তেলের মধ্যে  হাইড্রোজেন চালনা   করে  কৃত্রিম ঘি বা ডালডা তৈরিতে নিকেল চূর্ণ প্রভাবক         হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

৪) পাইপ সংরক্ষণে: বাণিজ্যিক ভিত্তিতে  পানি  সরবরাহের  পাইপ  ও  বয়লারের লোহার  ক্ষয়রোধের  জন্য  পানি  সরবরাহে         সোডিয়াম ডাইক্রোমেট  ঋনাত্মক প্রভাবক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

৫) গ্যাসোলিন উৎপাদনে: পেট্রোলিয়ামকে তাপ বিয়োজন করে গ্যাসোলিন জ্বালানি প্রস্তুতিতে অ্রালুমিনিয়াম সিলিকেট                                                                                              প্রভাবকরুপে ব্যবহৃত হয়।

কেমিস্ট্রি – ৩য় অধ্যায় (৫৯১৩)
১।    এসিড ও ক্ষারকের আধুনিক ধারনা দাও।

উত্তরঃ এসিড: যে সকল যৌগ জলীয় দ্রবনে সম্পূর্ণরূপে বিয়োজিত হয়ে প্রোটন প্রদান করে তাকে এসিড বলে।

ক্ষারক: যে সকল যৌগ জলীয় দ্রবনে সম্পূর্ণরূপে বিয়োজিত হয়ে হাইড্রোক্সিল আয়ন প্রদান করে তাকে ক্ষারক বলে।

২।    সকল ক্ষারই ক্ষারক কিন্তু সকল ক্ষারক ক্ষার নয়, ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ ক্ষারক: যে সকল যৌগ জলীয় দ্রবনে সম্পূর্ণরূপে বিয়োজিত হয়ে হাইড্রোক্সিল আয়ন প্রদান করে তাকে ক্ষারক বলে।
যেমন: CaO, ZnO, Al2O3 ইহা ক্ষারক কারণ ইহা পানিতে দ্রবণীয় নয়।

ক্ষারঃ শুধুমাত্র যে সকল যৌগ পানিতে দ্রবীভূত হয় তাদেরকে ক্ষার বলে।
যেমন: NaOH, CaO ইহা ক্ষার কারণ ইহা পানিতে দ্রবণীয়।

৩।    এসিডের ক্ষারকতা ও ক্ষারকের এসিডতা কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ এসিডের ক্ষারকতা: কোন এসিডের ক্ষারক প্রসমন করার ক্ষমতাকে এসিডের ক্ষারকতা বলে।
এক ক্ষারকীয় এসিড: যে এসিড একটি মাত্র ক্ষারক প্রসমন করতে পারে তাকে এক ক্ষারকীয় এসিড বলে। যেমন:    HCl
দ্বি – ক্ষারকীয় এসিড: যে এসিড দুইটি ক্ষারক প্রসমন করতে পারে তাকে দ্বি – ক্ষারকীয় এসিড বলে। যেমন:    H2SO4
ত্রি – ক্ষারকীয় এসিড: যে এসিড তিনটি ক্ষারক প্রসমন করতে পারে তাকে ত্রি – ক্ষারকীয় এসিড বলে। যেমন:    H3SO4
ক্ষারকের এসিডতা: কোন এসিডের ক্ষারক প্রসমন করার ক্ষমতাকে এসিডের ক্ষারকতা বলে।
এক এসিডিও ক্ষারক: যে ক্ষারক একটি মাত্র এসিড প্রসমন করতে পারে তাকে এক এসিডিও ক্ষারক বলে। যেমন: Na(OH)
দ্বি – এসিডিও ক্ষারক: যে ক্ষারক দুইটি এসিড প্রসমন করতে পারে তাকে দ্বি – এসিডিও ক্ষারক বলে। যেমন: Ca(OH)2
ত্রি – এসিডিও ক্ষারক: যে ক্ষারক তিনটি এসিড প্রসমন করতে পারে তাকে ত্রি – এসিডিও ক্ষারক বলে। যেমন: Al(OH)3

৪।    দ্বিধাতব লবণ / মিশ্র লবণ / যুগ্ন লবণ ও জটিল লবণ কাকে বলে? উদাহরন দাও।

উত্তরঃ দ্বিধাতব লবন: সমাণুক    মাত্রায় দুটি ভিন্ন লবণের সংমিশ্রণের ফলে কেলাস পানিসহ একক লবণের ন্যায় কঠিন অবস্থায়     যে লবণ কেলাসিত হয় তাকে দ্বিধাতব লবণ বা যুগ্ন লবণ বলে।
যেমন: ফিটকিরি বা পটাশ অ্যালাম: [K2SO4.Al2(SO4)3.24H2O]

জটিল লবণ: নির্দিষ্ট আণবিক মাত্রায় দুটি ভিন্ন একক লবণের সংমিশ্রণের ফলে যদি এমন একটি লবণ উৎপন্ন হয় যার ধর্ম     কঠিন অবস্থায় ও দ্রবণে উৎপাদক লবণদ্বয়ের ধর্ম হতে সম্পূর্ণ পৃথক হয় তবে উৎপন্ন লবণকে জটিল লবণ বলে।
যেমন: পটাসিয়াম ফেরোসায়ানাইট: ক৪[ঋব(ঈঘ)৬]

৫।    CaO / MgO / Al2O3 / Fe2O3 / ZnO / Gi এর এসিডতা বা অম্লতা বের কর।

উত্তরঃ CaO এর এসিডতা বা অম্লতা:

CaO + 2HCl         CaCl2 + H2O
এখানে CaO এর এসিডতা বা অম্লতা ২। কারণ এক অণু CaO দুই অণু HCl কে প্রশমিত করে।

MgO এর এসিডতা বা অম্লতা: MgO + 2HCl         MgCl2 + H2O
এখানে MgO এর এসিডতা বা অম্লতা ২। কারণ এক অণু MgO দুই অণু HCl কে প্রশমিত করে।

ZnO এর এসিডতা বা অম্লতা: ZnO + 2HCl         ZnCl2 + H2O
এখানে ZnO এর এসিডতা বা অম্লতা ২। কারণ এক অণু ZnO দুই অণু ZnO কে প্রশমিত করে।

Al2O3 এর এসিডতা বা অম্লতা: Al2O3 + 6HCl         2AlCl3 + 3H2O
এখানে Al2O3 এর এসিডতা বা অম্লতা ৬। কারণ এক অণু Al2O3 ছয় অণু HCl কে প্রশমিত করে।

Fe2O3 এর এসিডতা বা অম্লতা: Fe2O3 + 6HCl         2FeCl3 + 3H2O
এখানে Fe2O3 এর এসিডতা বা অম্লতা ৬। কারণ এক অণু Fe2O3 ছয় অণু HCl কে প্রশমিত করে।