১৮০৩ সালে ইংরেজ পদার্থ ও রসায়ন বিজ্ঞানী জন ডাল্টন পরমাণু সম্পর্কে একটি তত্ত্ব প্রকাশ করেন যা ডাল্টনের পরমাণুবাদ নামে পরিচিত। তাঁর প্রদত্ত পরমাণুবাদ পাঁচটি স্বীকার্যে বিভক্ত। এই স্বীকার্য পাঁচটি হলো–
1.পদার্থ অতি ক্ষুদ্র কণাসমূহ দ্বারা গঠিত, এই কণাগুলোর নাম পরমাণু।
2.একই পদার্থের পরমাণুসমূহের আকার, ভর এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য একই রকম হয়, ভিন্ন ভিন্ন পদার্থের পরমাণুসমূহের আকার, ভর এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য ভিন্নরকমের হয়।
3.পরমাণুসমূহ বিভাজিত, সৃষ্টি বা ধ্বংস হতে পারে না।
4.সরল পূর্ণসংখ্যক অনুপাতে বিভিন্ন পদর্থের পরমাণু সংযুক্ত হয়ে রাসায়নিক যৌগের সৃষ্টি করে।
5.রাসায়নিক বিক্রয়াসমূহে পরমাণু সংযোজিত, বিভক্ত বা পুনর্বিন্যাসিত হয়।
১৮ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত ডাল্টনের স্বীকার্যসময়হকে বিজ্ঞানীরা মেনে নিয়েছিলেন। কারণ স্বীকার্যসমূহ অস্বীকার করার মতো যথেষ্ঠ তথ্য তাদের ছিল না। ১৮৯৭ সালে জে জে থমসন ইলেক্ট্রন আবিষ্কার করেন। এর ফলে ডাল্টনের তৃতীয় স্বীকার্যের অংশবিশেষ (পরমাণু বিভাজিত হতে পারে না) ভুল প্রমাণিত হয়।
থমসন পরমাণু মডেল
১৮৯৮ সাথে বিজ্ঞানী জে জে থমসন এই মডেল প্রস্তাব করেন। এই মডেল অনুসারে পুডিংয়ের ভিতর কিশমিশ যেমন বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকে পরমাণুতে ঠিক তেমনি নিরবচ্ছিন্নভাবে বন্টিত ধনাত্মক আধানের মধ্যে ইলেক্ট্রন ছড়িয়ে আছে।
রাদারফোর্ডের পরমাণুবাদ
১৯০৯ সালে বিজ্ঞানী আর্নেস্ট রাদারফোর্ড আলফা কণিকা বিক্ষেপণ পরীক্ষা সম্পাদন করেন। পরীক্ষালব্দ্ধ ফলাফল থেকে ১৯১১ সালে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, পরমাণুর কেন্দ্রে ধনাত্মক আধানযুক্ত অত্যন্ত ভারী একটি মূলবস্তু আছে। একে পরবর্তিতে নাম দেওয়া হয় নিউক্লিয়ার্স। পরমাণুর বাকি অংশ জুড়ে রয়েছে ইলেক্ট্রন আর ইলেক্ট্রনগুলো নিউক্লিয়ার্সকে কেন্দ্র করে ঘুরছে।
রাদারফোর্ড প্রস্তাবিত পরমাণু মডেল
নীল্স বোরের পরমাণুবাদ
১৯১৩ সালে ডেনমার্কের পদার্থবিজ্ঞানী নীলস বোর তাঁর পরমাণু মডেলের জন্য দুটি প্রস্তাব রাখেন যা বোরের স্বীকার্য নামে পরিচিত।
•স্থায়ী অবস্থা স্বীকার্য (Postulates of Stationary States)
•কম্পাঙ্ক স্বীকার্য (Postulates of Frequency)
বোর প্রস্তাবিত পরমাণুর মডেল
পরমাণুতে ইলেকট্রন বিন্যাস
কোন পরমাণুর নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেক্ট্রন ঐ পরমাণুর বিভিন্ন শক্তিস্তরের অন্তর্ভুক্ত নির্দিষ্ট উপশক্তিস্তরের বিভিন্ন অরবিটালে নির্দিষ্ট নিয়মে সজ্জিত থাকে, ইলেক্ট্রনের এই সজ্জাকে পরমাণুর ইলেক্ট্রন বিন্যাস বলে। ইলেক্ট্রন বিন্যাস পলির বর্জন নীতি, আউফবাউ নীতি ও হুন্ডের নিয়ম দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়।
পলির বর্জন নীতি
একটি পরামাণুতে দুটি ইলেক্ট্রনের চারটি কোয়ান্টাম সংখ্যার মান কখনও একই হতে পারে না। অন্ততপক্ষে একটির মান দুটি ইলেক্ট্রনের বেলায় ভিন্ন হতে হয়।
আউফবাউ নীতি
পরমাণুতে ইলেক্ট্রনসমূহ বিভিন্ন শক্তিস্তর দখলের সময় প্রথমে সবচেয়ে কম শক্তিসম্পন্ন স্তরে অবস্থান গ্রহণ করবে, নিম্ন শক্তিস্তর পূর্ণ হওয়ার পর পরবর্তী অপেক্ষাকৃত উচ্চতর শক্তি সম্পন্ন স্তরে গমন করবে।
হুন্ডের সূত্র
একই শক্তি সম্পন্ন বিভিন্ন অরবিটালে ইলেক্ট্রনসমূহ এমনভাবে প্রবেশ করে যেন তারা সর্বাধিক পরিমাণে অযুগ্ম বা বিজোড় অবস্থায় থাকতে পারে, এ অযুগ্ম ইলেক্ট্রনসমূহের স্পিন বা ঘূর্ণন একইমুখী হবে। এখানে একই শক্তি সম্পন্ন বিভিন্ন অরবিটাল বলতে ৩টি p অরবিটাল, ৫টি d অরবিটাল ও ৭টি f অরবিটালকে বোঝানো হয়েছে। উল্লেখ্য যে s অর্বিটালের জন্য হুন্ডের সূত্র প্রজোয্য নয়।
0 comments:
Post a Comment