পানি বা জল (অন্যান্য নামঃ বারি, সলিল) হলো একটি রাসায়নিক পদার্থ, যার রাসায়নিক সংকেত হল H2O। জলের একেকটি অণু একটি অক্সিজেন পরমাণু এবং দু'টি হাইড্রোজেন পরমাণুর সমযোজী বন্ধনে গঠিত। সাধারণত পৃথিবীতে জল তরল অবস্থায় থাকলেও এটি কঠিন (বরফ) এবং বায়বীয় অবস্থাতেও (জলীয় বাষ্প) পাওয়া যায়। পৃথিবীতে তরল স্ফটিক রূপেও পানির অস্তিত্ব দেখা যায়। রাসায়নিক যৌগের নামকরণ প্রক্রিয়া অনুসারে জলের বিজ্ঞানসম্মত নাম হল dihydrogen monoxide (ডাইহাইড্রোজেন মোনক্সাইড)। কিন্তু এই নামটি প্রায় কোথাও ব্যবহৃত হয় না।
ভূপৃষ্ঠের ৭০.৯% অংশ জুড়ে জলের অস্তিত্ব রয়েছে এবং পৃথিবীর প্রায় সমস্ত জীবের জীবনধারণের জন্যই জল একটি অত্যাবশ্যক পদার্থ। পৃথিবীতে প্রাপ্ত জলের ৯৬.৫% পাওয়া যায় মহাসাগরে, ১.৭% ভূগর্ভে, ১.৭% হিমশৈল ও তুষার হিসেবে, একটি ক্ষুদ্র অংশ অন্যান্য বড় জলাশয়ে এবং ০.০০১% বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত মেঘ, জলীয় বাষ্প হিসেবে ও বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, ইত্যাদিরূপে। পৃথিবীর জলের মাত্র ২.৫% হল বিশুদ্ধ জল এবং বাকি ৯৮.৮% হল ভূগর্ভস্থ জল ও বরফ। বিশুদ্ধ জলের ০.৩%-এরও কম অংশ পাওয়া যায় নদীতে, হ্রদে ও বায়ুমণ্ডলে এবং তার চেয়েও ন্যূনতর অংশ পাওয়া যায় বিভিন্ন জীবের শরীর ও উৎপাদিত পণ্যে। পৃথিবীতে জল প্রতিনিয়তই বাষ্পীভবন, ঘনীভবন, বাষ্পত্যাগ, ইত্যাদি বিশিষ্ট পানিচক্রের মাধ্যমে ঘূর্ণমান। বাষ্পীভবন ও বাষ্পত্যাগের কারণেই পৃথিবীতে বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, ইত্যাদি ঘটে।
মানব জাতি সহ অন্যান্য প্রাণীর জীবনধারণের জন্য সুপেয় জল অপরিহার্য। গত কয়েক দশকে পৃথিবীর প্রায় সকল প্রান্তেই সুপেয় জলের সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু তবুও প্রায় একশ কোটি মানুষ নিরাপদ জল ও প্রায় আড়াইশ কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার থেকে বঞ্চিত। নিরাপদ জলের ব্যবহারের সাথে মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনের সুস্পষ্ট পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে। কয়েকজন পর্যবেক্ষক অনুমান করেছেন যে ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেকাংশেরও বেশি জল সংক্রান্ত সঙ্কটের সম্মুখীন হবে। নভেম্বর, ২০০৯-এ প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে কয়েকটি উন্নয়নশীল অঞ্চলে যোগানের তুলনায় জলের চাহিদা ৫০% ছাড়িয়ে যাবে। বিশ্ব অর্থনীতিতে জল একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কারণ জল বহু রাসায়নিক পদার্থের দ্রাবক হিসেবে কাজ করে এবং বিভিন্ন শিল্পে শীতলীকরণ এবং পরিবহণের কাজে সহায়তা করে। মানুষের ব্যবহৃত বিশুদ্ধ জলের প্রায় ৭০% ব্যবহৃত হয় কৃষিকার্য।
মনে করা হয় বৃহদাকার গ্রহগুলির অভ্যন্তরে উচ্চ চাপ ও তাপমাত্রায়, জল আয়নিত অবস্থায় থাকে। ওই অবস্থায় জলের অণুগুলি ভেঙ্গে গিয়ে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন আয়নের একটি মাধ্যম তৈরী করে। আরো বেশী চাপে অক্সিজেন কেলাসিত হয়ে গেলেও হাইড্রোজেন আয়নগুলি মুক্তভাবে অক্সিজেন আয়নের কেলাসের সজ্জার মধ্যে ভেসে বেড়ায়। এই বিশেষ অবস্থাকে জলের অতিআয়নিত অবস্থা বলে।
পানির মুখ্য ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মগুলি হল:
কৃষিতে পানির সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার হল সেচে। কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশে সেচে পানির প্রায় ৯০% ব্যবহৃত হয় এবং অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত দেশগুলিতেও পানির সিংহভাগই ব্যবহৃত হয় সেচে (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশুদ্ধ পানির প্রায় ৩০% সেচে ব্যবহৃত হয়)।[১৬]
মানবদেহের আকারের সাপেক্ষে তাতে ৫৫% ৭৮% পানি থাকে।
সক্রিয় থাকার জন্য এবং নিরুদন প্রতিরোধ করার জন্য মানবদেহের প্রতিদিন এক
থেকে সাত লিটার পানির প্রয়োজন হয়। দেহের প্রয়োজনীয় পানির প্রকৃত পরিমাণ
নির্ভর করে কাজকর্মের পরিমাণ, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, ইত্যাদি নানা
পরিস্থিতির উপর। শরীরে গ্রহণ করা পানির মোট পরিমাণের অধিকাংশই সরাসরি পানি
পান করার পরিবর্তে আসে বিভিন্ন খাদ্য এবং অন্যান্য পানীয় থেকে। একজন
স্বাস্থ্যবান মানুষের ঠিক কত পরিমাণ পানির দরকার তা সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ
করা না গেলেও অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই মত প্রকাশ করেছেন যে শরীর সুস্থ রাখতে
মোটামুটি প্রতিদিন ২ লিটার (৬ থেকে ৭ গ্লাস) পানির প্রয়োজন। ব্যায়াম অথবা গরম আবহাওয়া জনিত কারণে শরীর থেকে নির্গত হওয়া পানি বাদ
দিয়ে চিকিৎসা সাহিত্য সাধারণত একজন গড় পুরুষের জন্য ১ লিটার পানি অর্থাৎ
অল্প পানি পান করার পক্ষে মত দেয়। যে সব ব্যক্তি সুস্থ কিডনির
অধিকারী তাদের পক্ষে অতিরিক্তি পানি পান করা অসুবিধাজনক কিন্তু মূলতঃ
ব্যায়াম করলে অথবা আর্দ্র আবহাওয়া থাকলে অল্প পরিমাণ পানি পান করা শরীরের
পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। কোন ব্যাক্তি ব্যায়াম করার সময়
প্রয়োজনাতিরিক্ত পানি পান করতে পারে কিন্তু তা পানির প্রতি অত্যধিক আসক্তি
সৃষ্টি করতে পারে যা, শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক।
একজন ব্যক্তির দৈনিক আট গ্লাস পানি পান করার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে যে
ধারণা বহুল প্রচলিত, বিজ্ঞানে সম্ভবত তার কোন বাস্তব ভিত্তি নেই। একইভাবে দেহের ওজনহ্রাস ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে পানির উপকারিতা বিষয়ে যে ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে।
ভূপৃষ্ঠের ৭০.৯% অংশ জুড়ে জলের অস্তিত্ব রয়েছে এবং পৃথিবীর প্রায় সমস্ত জীবের জীবনধারণের জন্যই জল একটি অত্যাবশ্যক পদার্থ। পৃথিবীতে প্রাপ্ত জলের ৯৬.৫% পাওয়া যায় মহাসাগরে, ১.৭% ভূগর্ভে, ১.৭% হিমশৈল ও তুষার হিসেবে, একটি ক্ষুদ্র অংশ অন্যান্য বড় জলাশয়ে এবং ০.০০১% বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত মেঘ, জলীয় বাষ্প হিসেবে ও বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, ইত্যাদিরূপে। পৃথিবীর জলের মাত্র ২.৫% হল বিশুদ্ধ জল এবং বাকি ৯৮.৮% হল ভূগর্ভস্থ জল ও বরফ। বিশুদ্ধ জলের ০.৩%-এরও কম অংশ পাওয়া যায় নদীতে, হ্রদে ও বায়ুমণ্ডলে এবং তার চেয়েও ন্যূনতর অংশ পাওয়া যায় বিভিন্ন জীবের শরীর ও উৎপাদিত পণ্যে। পৃথিবীতে জল প্রতিনিয়তই বাষ্পীভবন, ঘনীভবন, বাষ্পত্যাগ, ইত্যাদি বিশিষ্ট পানিচক্রের মাধ্যমে ঘূর্ণমান। বাষ্পীভবন ও বাষ্পত্যাগের কারণেই পৃথিবীতে বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, ইত্যাদি ঘটে।
মানব জাতি সহ অন্যান্য প্রাণীর জীবনধারণের জন্য সুপেয় জল অপরিহার্য। গত কয়েক দশকে পৃথিবীর প্রায় সকল প্রান্তেই সুপেয় জলের সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু তবুও প্রায় একশ কোটি মানুষ নিরাপদ জল ও প্রায় আড়াইশ কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার থেকে বঞ্চিত। নিরাপদ জলের ব্যবহারের সাথে মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনের সুস্পষ্ট পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে। কয়েকজন পর্যবেক্ষক অনুমান করেছেন যে ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেকাংশেরও বেশি জল সংক্রান্ত সঙ্কটের সম্মুখীন হবে। নভেম্বর, ২০০৯-এ প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে কয়েকটি উন্নয়নশীল অঞ্চলে যোগানের তুলনায় জলের চাহিদা ৫০% ছাড়িয়ে যাবে। বিশ্ব অর্থনীতিতে জল একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কারণ জল বহু রাসায়নিক পদার্থের দ্রাবক হিসেবে কাজ করে এবং বিভিন্ন শিল্পে শীতলীকরণ এবং পরিবহণের কাজে সহায়তা করে। মানুষের ব্যবহৃত বিশুদ্ধ জলের প্রায় ৭০% ব্যবহৃত হয় কৃষিকার্য।
রাসায়নিক ও ভৌত ধর্ম
জলের রাসায়নিক সংকেত হল H2O: জলের একটি অণুতে দু'টি হাইড্রোজেন পরমাণু একটি অক্সিজেন পরমাণুর সাথে সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। পদার্থের তিনটি অবস্থাতেই পৃথিবীতে জলের অস্তিত্ব বিদ্যমান। জলীয় বাষ্প ও মেঘ হিসেবে আকাশে, সমুদ্রের জল হিসেবে মহাসাগরে, হিমশৈল হিসেবে মেরু অঞ্চলের মহাসাগরে, হিমবাহ ও নদী হিসেবে পর্বতে এবং ভূগর্ভে পানির অস্তিত্ব পাওয়া যায়।মনে করা হয় বৃহদাকার গ্রহগুলির অভ্যন্তরে উচ্চ চাপ ও তাপমাত্রায়, জল আয়নিত অবস্থায় থাকে। ওই অবস্থায় জলের অণুগুলি ভেঙ্গে গিয়ে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন আয়নের একটি মাধ্যম তৈরী করে। আরো বেশী চাপে অক্সিজেন কেলাসিত হয়ে গেলেও হাইড্রোজেন আয়নগুলি মুক্তভাবে অক্সিজেন আয়নের কেলাসের সজ্জার মধ্যে ভেসে বেড়ায়। এই বিশেষ অবস্থাকে জলের অতিআয়নিত অবস্থা বলে।
পানির মুখ্য ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মগুলি হল:
- স্বাভাবিক চাপ ও তাপমাত্রায় জল তরল পদার্থ। জল স্বাদ ও গন্ধহীন। জল ও বরফের নিজস্ব বর্ণ সামান্য নীল হলেও, কম পরিমাণে উপস্থিত থাকলে উভয়ই বর্ণহীন মনে হয়। জলীয় বাষ্পও বর্ণহীন, ফলে অদৃশ্য।
- দৃশ্যমান তড়িচ্চুম্বকীয় বর্ণালীতে স্বচ্ছ হওয়ায় জলে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে, যা জলজ উদ্ভিদের জীবনধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদিও অতিবেগুনী এবং অবলোহিত রশ্মিসমূহের প্রায় সম্পূর্ণ অংশই জলে শোষিত হয়।
- অক্সিজেন পরমাণুর তড়িৎ-ঋণাত্মকতা হাইড্রোজেনের তুলনায় বেশি হওয়ায় তাতে সামান্য ঋণাত্মক তড়িৎআধান থাকে এবং হাইড্রোজেন পরমাণুগুলি সামান্য পরিমাণে ধনাত্মক তড়িৎধর্মী হয়। এরফলে জলের অণুতে একটি দ্বিমেরু ভ্রামকের সৃষ্টি হয়। এই ধর্মের জন্যে জলের অণুগুলি তার আকারের তুলনায় অস্বাভাবিক রকমের বেশি সংখ্যক আন্তঃআণবিক হাইড্রোজেন বন্ধনী তৈরী করতে পারে। এইসব কারণে পানির অণুগুলির মধ্যে সংসক্তি বল অত্যন্ত দৃঢ় হয়। যে কারণে পানির পৃষ্ঠটান এবং কৈশিকীয় বলের মান বেশি হয়। অত্যন্ত সরু নল (কৈশিকীয় নল) দ্বারা মাধ্যাকর্ষণের বিপরীতে জলের ওপরে উঠে যাওয়ার প্রবণতাকে কৈশিকীয় ক্রিয়া বলে। জলের এই ধর্মের জন্যেই মাটি থেকে জল শোষণ করে বেঁচে থাকা উদ্ভিদেরা তা করতে পারে।
- জলের নিজস্ব দ্বিমেরু ভ্রামক থাকায় পানি প্রায় সব তড়িৎযোজী পদার্থকে দ্রবীভূত করতে পারে। এছাড়াও বহু সমযোজী পদার্থও জলে দ্রবীভূত হওয়ায় জল রাসায়নিক পরীক্ষাগারে খুব ভালো দ্রাবক হিসেবে কাজ করে। একারণে জলকে কখনো কখনো সর্বজনীন দ্রাবক বলা হয়ে থাকে। জলে দ্রবীভুত হয় এরকম কিছু পদার্থ হলঃ লবণ, চিনি, অম্ল, ক্ষারক, বেশ কিছু গ্যাস বিশেষত- অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড ইত্যাদি। এছাড়াও কিছু পদার্থ আছে যারা বিশেষ করে জলে দ্রবীভুত হয়না; যেমন- তেল, গ্রিজ় ইত্যাদি।
0 comments:
Post a Comment