Recent Post
Loading...

পরমাণুবাদের জনক জন ডালটন এর ছোট্ট জীবন কাহিনী

প্রাচীনকালে ভারতীয় দার্শনিক মহর্ষি কণাদ ‘কণাবাদ’ তথ্য পরমাণুবাদ প্রথম প্রচার করেছিলেন। তিনি ধরে নিয়েছিলেন, প্রত্যেকটি পদার্থ অতি সূক্ষ সূক্ষ অবিভাজ্য কণা দ্বারা গঠিত। গ্রিক ডিমোক্রিটাসও ওই একই মত পোষণ করেছিলেন। তবুও তাদের মতকে ঠিক ঠিক বিজ্ঞানসম্মত বলা চলে না। কারণ এরা মূলত ছিলেন দার্শনিক যদিচ দর্শন থেকেই বিজ্ঞানের উৎপত্তি তথাপি কণাদ ডিমোক্রিটাস উভয়েই জড় বস্তুর উপর আদৌ গুরুত্ব আরোপ করেননি। বিজ্ঞানের আলোচনা ছিল একেবারে গৌণ। তাদের প্রত্যেকের লেখা পুস্তকে যুক্তি অপেক্ষা কল্পনাই লাভ করেছিল প্রাধান্য। সেইদিক দিয়ে বিচার করলে জন ডালটনকেই প্র্রকৃত পরমাণুবাদের প্রবর্তকরূপে ব্যাখ্যা দেওয়া যায়।

১৭৬৬ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে ইগলসফিল্ড নামক একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ডালটন। গ্রাম্য বিদ্যালয়ের তার প্রথম পড়াশোনা শুরু হয়। অতি বাল্যকাল থেকেই তার প্রতিভার স্ফুরণ ঘটেছিল। কথিত আছে, বিদ্যালয়ে পাঠকালেই তিনি গ্রিক ও ল্যাটিন নামক দুটি দুরূহ ভাষোকে আয়ত্ত করে নিয়েছিলেন। ছেলেবেলায় বিজ্ঞান এবং অঙ্কের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করতেন ভয়ানকভাবে। তাই বিদ্যালয়ের পাঠ সমাপ্ত করার পর ডালটন বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষালাভের জন্য ভর্তি হন কলেজে। সেখানেও রেখেছিলেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর। অবশেষে বিজ্ঞানে এম.এস.সি ডিগ্রি লাভের পর ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন অধ্যপকরূপে। সেই থেকেই তার আরম্ভ হয় গবেষণা। তখন তার বয়স ছিল মাত্র পঁচিশ বছর।
জন ডাল্টনের মৌলিক গবেষণাগুলো প্রথম ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। সে সময় তার গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল বিভিন্ন গ্যাসীয় পদার্থ। ১৮০০ খ্রিস্টব্দে তিনি প্রকাশ করেছিলেন গ্যাস প্রসারণ সূত্র এবং গ্যাসের অংশ চাপ সূত্র। এই সূত্র দুটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানীদের মধ্যে একটা সাড়া পড়ে গিয়েছিল। বহু বিজ্ঞানী সেদিন গিয়ে এসেছিলেন ডালটনের সূত্রগুলোর যাচাই করতে। শেষে তারা সবাই স্বীকার করে নিয়েছিলেন সূত্রগুলোকে এবং ডালটনও প্রসিদ্ধিলাভ করেছিলেন বিশিষ্ট রসায়ন বিজ্ঞানী হিসেবে। এই ঘটনা থেকে রসায়ন বিজ্ঞান ডালটন ব্যতীত আরো বহু বিজ্ঞানীর মতবাদ লাভ করে নিজ ভান্ডার পুষ্ট করেছিল।
গ্যাস আয়তনের সূত্র আবিস্কারের পর ডালটনের মনে পদার্থের গঠন সম্পর্কে চিন্তা স্থার লাভ করেছিল। সেই চিন্তা থেকেই অচিরে জন্মলাভ করেছিল ‘পরমাণুবাদ’ নামক ডালটনের বিখ্যাত মতবাদটি। তার এই মতবাদ অনুসারে প্রতিটি মৌলিক পদার্থ বহুসংখ্যক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ও অবিভাজ্য কণা নিয়ে গঠিত। সেই অন্তিম কণাগুলোর নাম পরমাণু বা এ্যাটম। এই কণাকে ভাঙাও যায় না কিংবা গড়াও যায় না। প্রত্যেকটি মৌলিক পদার্থের পরমাণুরা ওজনে ও ধর্মে এক কিন্তু বিভিন্ন মৌলিক পদার্থের পরমাণুদের ওজনে এবং ধর্মে স্বাতন্ত্র্য আছে। মৌলিক পদার্থের পরমাণুরা আবার সরল ও সুনির্দিষ্ট অনুপাতে যুক্ত হতে পারে।
ডালটন অবশ্য মৌলিক বা যৌগিক যে কোনো পদার্থের সূক্ষতম অন্তিম কণাকে পরমাণু নামে অভিহিত করেছিলেন। এইখানে ছিল তার কল্পনার বড় রকমের ক্রটি। সেই ক্রটি সংশোধিত হয়েছিল অনেক পরে। তাছাড়া পূর্ববর্তী কল্পনা আধুনিক পরমাণুবিজ্ঞান স্বীকার করছে না।
ডালটনের উপরোক্ত সূত্র ও মতবাদগুলো ছাড়া আরো অনেক আবিস্কার আছে। তিনি পরমাণুর সাংকেতিক চিহ্ন এবং পরমাণুর ওজন সম্বন্ধে গবেষণা করে বহু মূল্যবান তথ্য পরিবেশন করেছিলেন। ১৮১১ খ্রিস্টাব্দে তিনি আবিস্কার করেছেলেন গ্যাসের তরলীকরণের উপায়। তিনিই প্রথম ঘোষণা করেছিলেন, উচ্চচাপে এবং নিম্ন তাপমাত্রার সমস্ত গ্যাসকে তরলে রূপান্তরিত করা সম্ভব।
ডালটন জীবদ্দশাতেই বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক হিসেবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছিলেন। পরিচিত হয়েছিলেন, তৎকালীন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের অন্যতম হিসেবে। জীবনে বহু সম্মান এবং পুরস্কার লাভ করেছিলেন তিনি। লন্ডনের বিখ্যাত রয়েল সোসাইটি ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে তার প্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ দান করেছিল সুবর্ণপদক।
আজীবন অধ্যাপনা এবং গবেষণার পর ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে এই মহান বিজ্ঞানী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

0 comments:

Post a Comment