যে কোনো
ধরণের জ্ঞান, হোক সে তথ্য, প্রমাণ, যুক্তি কিংবা বিজ্ঞান- তা সব সময়ই
উত্তম। একজন ভালো নাগরিক, সর্বোপরি, একজন মানুষ মাত্রই এই সকল গুণাবলী তার
মাঝে থাকা প্রয়োজন এবং যৌক্তিক। যদিও আজকালকার রাজনৈতিক বিতর্ক শুনলে
তোমাদের সন্দেহ হতেই পারে, মূর্খতার এমন নিদর্শন কীভাবে উদ্ভব হলো! একটা
কথা আমি সবসময় বিশ্বাস করি, রাজনীতি কিংবা জীবন, কোনোক্ষেত্রেই অজ্ঞতা কোনো
গুণ নয়, কোনো বিষয় না জানা অহমিকার বস্তু নয়। আমাদের পূর্বপ্রজন্মদের
দেখলেই এর প্রমাণ মেলে, যারা কিনা জ্ঞানের আলোকে তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার
হাজারো বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা না করে কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতার মতো বড় বড়
সমস্যার সমাধান করেছেন। কীভাবে পারলেন? কারণ তাদের চিন্তায় যৌক্তিকতা
ছিলো, তাদের বুকে সাহস ছিল, লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আত্মপ্রত্যয় ছিল। এই
আত্মপ্রত্যয়ের ভিত্তিতেই গড়ে উঠেছে আমাদের দেশ, এমনকি গোটা বিশ্ব।
এতদিনের পড়াশোনা শেষে তোমাদের মধ্যে নিশ্চয়ই বেশ ভালো ধারণা হয়েছে, রেজাল্ট যেমন প্রতিভার পরিচয় নয়, ঠিক তেমনি শুধু বইয়ে মুখ গুজে থাকলেই জ্ঞানার্জন সম্ভব নয়। দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা ভিন্ন জিনিস, যা মানুষকে অর্জন করতে হয় জীবনের প্রতি পরতে পরতে, ভাঙ্গা গড়ার খেলার মাঝে মাঝে। এজন্যই আমাদেরকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের যেকোনো বিষয়কে সম্মান করতে হবে, জানতে হবে, কাজে লাগাতে হবে। কার্ল স্যাগান বলেছিলেন, ‘কোনো জাতির উন্নতির পরিমাপ করা যায় তার নাগরিকদের প্রশ্ন করার সাহস ও উত্তরের গভীরতা দেখে, সুন্দরের চেয়ে সত্যকে আলিঙ্গন করার প্রবণতা দেখে।’
সময়ের সাথে সাথে আমাদের যত উন্নতিই হয়েছে, তা কিন্তু রাতারাতি সাফল্যের ফল নয়। বহু বছরের তিল তিল করে একেকটি সাফল্যের ইট গাঁথা হয়েছে। পরিবর্তন একদিনের ফসল নয়, তা সে যেই দেশ হোক, যেই জাতি হোক- সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তোমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, যদি মনে করো দেশের পরিবর্তনে তোমাদের অংশগ্রহণ থাকবে, বিশ্বমানচিত্রে নিজের দেশকে ভালো অবস্থানে দেখতে চাও, তবে এখনই কাজ শুরু করো, তোমার অংশগ্রহণ বাড়াও। সমস্যার কথা হলো, গত এক শতাব্দী ধরে পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা ভারসাম্যহীন হয়ে চলেছে। খোদ আমেরিকার সকল উপার্জনের অর্ধেক থাকে ১০ শতাংশের কাছে বন্দী। আগে যেখানে উপরের পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আয় মাঝামাঝি কর্মীদের আয়ের চেয়ে ৩০ গুণ বেশি ছিল, এখন তা ৩০০ গুণ বেশি! বৈষম্যটা কি কল্পনার খাতায় পরিমাপ করা যাচ্ছে? বোধহয় না!
একটু চিন্তা করে দেখো তো! এই বৈষম্য মেটানোর উপায় কী? হাজারটা উপায় আছে আর এখন ১ মিনিট চিন্তা করলেই অনেক উপায় বের হয়েও যাবে। তারপরও এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না কেন? কারণ সমস্যা সমাধানকারী হচ্ছো তোমরা, আর তোমরাই রাজনীতিতে অনুপস্থিত। দেশের প্রয়োজনে তোমাদের অংশগ্রহণ কম, এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যে কোনো দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি নিষ্ক্রিয় দর্শক বোধহয় তরুণ সমাজ। কেন? কারণ যেই স্বপ্ন এই তরুণ সমাজ দেখে, যেই সমস্যার সমাধান তারা চায় তার বাস্তবায় হয় না। সুতরাং অপেক্ষার আগেই হাল ছেড়ে দিয়ে তারা বসে থাকে। আজকের যত উন্নয়নের মাঝে তোমরা বড় হচ্ছো, সেটা কি একদিনে সম্ভব হয়েছে বলে মনে হয়? মোটেই না! বরং পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় নিয়ামক হলো ধৈর্য এবং ইচ্ছাশক্তি, যার প্রয়োগ তরুণ সমাজ চাইলেই করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। শুধু তাই নয়, পরিবর্তনের জন্য আরও প্রয়োজন আপোষ করা, সে নিজের জন্য হোক কিংবা অন্যের জন্য, দশের জন্য হোক কিংবা দেশের জন্য। এভাবেই গনতন্ত্র এগিয়ে চলে। আদতে অনেক কঠিন মনে হয়, তবে এর ফলাফল বেশ উপাদেয়! মনে রেখো, সকল কাজই পার্টটাইম, শুধু নাগরিকত্ব ফুলটাইম- দেশাত্ববোধ বলে কথা।
আমাদের আরও একটি বড় সমস্যা আমরা অন্যের মতামত শুনতে চাই না, যা গণতান্ত্রিক ব্যাবস্থার মূল ভিত্তি। কারো সাথে মতের অমিল? যুক্তি দাও, খণ্ডন করো, পারলে পাল্টা যুক্তি দাও। সবসময় অন্যের যুক্তির সাথে মিলতে হবে এমন কোনো কথা নেই। অমিল মেনেও একসাথে থাকা যায় এই শিক্ষা গ্রহণ করো। সব বিতর্কের শেষ হারজিত দিয়ে হয় না, শিক্ষা দিয়েও হয়।
আমি মনে করি এই প্রজন্ম পারবে, ইতিবাচকতার শিক্ষা দিতে, উদারতার উদাহরণ হতে, পরিবর্তনের প্রয়োজনে অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে জেগে উঠতে। এই প্রজন্ম শুধু স্বপ্ন দেখতে নয়, স্বপ্ন বাস্তবায়নও করতে জানে। আমাকে খুব ইতিবাচক মানসিকতার মনে হচ্ছে? এই শক্তি দিয়েই ইতিহাসের পাতায় একেকটি জাতি জেগে উঠেছে, বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে। আর সেই জেগে ওঠার পেছনে সর্বদাই মূলশক্তি হিসেবে ছিল তরুণ প্রজন্ম। তোমরাও তার ব্যতিক্রম নও, এ আমার বিশ্বাস!
(সূত্র: রাটগার্স স্টেট ইউনিভার্সিটিতে দেওয়া বারাক ওবামার সমাবর্তন বত্তৃতা, ১৫ মে ২০১৬।
www,facebook.com/emon.raihan
এতদিনের পড়াশোনা শেষে তোমাদের মধ্যে নিশ্চয়ই বেশ ভালো ধারণা হয়েছে, রেজাল্ট যেমন প্রতিভার পরিচয় নয়, ঠিক তেমনি শুধু বইয়ে মুখ গুজে থাকলেই জ্ঞানার্জন সম্ভব নয়। দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা ভিন্ন জিনিস, যা মানুষকে অর্জন করতে হয় জীবনের প্রতি পরতে পরতে, ভাঙ্গা গড়ার খেলার মাঝে মাঝে। এজন্যই আমাদেরকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের যেকোনো বিষয়কে সম্মান করতে হবে, জানতে হবে, কাজে লাগাতে হবে। কার্ল স্যাগান বলেছিলেন, ‘কোনো জাতির উন্নতির পরিমাপ করা যায় তার নাগরিকদের প্রশ্ন করার সাহস ও উত্তরের গভীরতা দেখে, সুন্দরের চেয়ে সত্যকে আলিঙ্গন করার প্রবণতা দেখে।’
সময়ের সাথে সাথে আমাদের যত উন্নতিই হয়েছে, তা কিন্তু রাতারাতি সাফল্যের ফল নয়। বহু বছরের তিল তিল করে একেকটি সাফল্যের ইট গাঁথা হয়েছে। পরিবর্তন একদিনের ফসল নয়, তা সে যেই দেশ হোক, যেই জাতি হোক- সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তোমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, যদি মনে করো দেশের পরিবর্তনে তোমাদের অংশগ্রহণ থাকবে, বিশ্বমানচিত্রে নিজের দেশকে ভালো অবস্থানে দেখতে চাও, তবে এখনই কাজ শুরু করো, তোমার অংশগ্রহণ বাড়াও। সমস্যার কথা হলো, গত এক শতাব্দী ধরে পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা ভারসাম্যহীন হয়ে চলেছে। খোদ আমেরিকার সকল উপার্জনের অর্ধেক থাকে ১০ শতাংশের কাছে বন্দী। আগে যেখানে উপরের পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আয় মাঝামাঝি কর্মীদের আয়ের চেয়ে ৩০ গুণ বেশি ছিল, এখন তা ৩০০ গুণ বেশি! বৈষম্যটা কি কল্পনার খাতায় পরিমাপ করা যাচ্ছে? বোধহয় না!
একটু চিন্তা করে দেখো তো! এই বৈষম্য মেটানোর উপায় কী? হাজারটা উপায় আছে আর এখন ১ মিনিট চিন্তা করলেই অনেক উপায় বের হয়েও যাবে। তারপরও এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না কেন? কারণ সমস্যা সমাধানকারী হচ্ছো তোমরা, আর তোমরাই রাজনীতিতে অনুপস্থিত। দেশের প্রয়োজনে তোমাদের অংশগ্রহণ কম, এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যে কোনো দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি নিষ্ক্রিয় দর্শক বোধহয় তরুণ সমাজ। কেন? কারণ যেই স্বপ্ন এই তরুণ সমাজ দেখে, যেই সমস্যার সমাধান তারা চায় তার বাস্তবায় হয় না। সুতরাং অপেক্ষার আগেই হাল ছেড়ে দিয়ে তারা বসে থাকে। আজকের যত উন্নয়নের মাঝে তোমরা বড় হচ্ছো, সেটা কি একদিনে সম্ভব হয়েছে বলে মনে হয়? মোটেই না! বরং পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় নিয়ামক হলো ধৈর্য এবং ইচ্ছাশক্তি, যার প্রয়োগ তরুণ সমাজ চাইলেই করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। শুধু তাই নয়, পরিবর্তনের জন্য আরও প্রয়োজন আপোষ করা, সে নিজের জন্য হোক কিংবা অন্যের জন্য, দশের জন্য হোক কিংবা দেশের জন্য। এভাবেই গনতন্ত্র এগিয়ে চলে। আদতে অনেক কঠিন মনে হয়, তবে এর ফলাফল বেশ উপাদেয়! মনে রেখো, সকল কাজই পার্টটাইম, শুধু নাগরিকত্ব ফুলটাইম- দেশাত্ববোধ বলে কথা।
আমাদের আরও একটি বড় সমস্যা আমরা অন্যের মতামত শুনতে চাই না, যা গণতান্ত্রিক ব্যাবস্থার মূল ভিত্তি। কারো সাথে মতের অমিল? যুক্তি দাও, খণ্ডন করো, পারলে পাল্টা যুক্তি দাও। সবসময় অন্যের যুক্তির সাথে মিলতে হবে এমন কোনো কথা নেই। অমিল মেনেও একসাথে থাকা যায় এই শিক্ষা গ্রহণ করো। সব বিতর্কের শেষ হারজিত দিয়ে হয় না, শিক্ষা দিয়েও হয়।
আমি মনে করি এই প্রজন্ম পারবে, ইতিবাচকতার শিক্ষা দিতে, উদারতার উদাহরণ হতে, পরিবর্তনের প্রয়োজনে অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে জেগে উঠতে। এই প্রজন্ম শুধু স্বপ্ন দেখতে নয়, স্বপ্ন বাস্তবায়নও করতে জানে। আমাকে খুব ইতিবাচক মানসিকতার মনে হচ্ছে? এই শক্তি দিয়েই ইতিহাসের পাতায় একেকটি জাতি জেগে উঠেছে, বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে। আর সেই জেগে ওঠার পেছনে সর্বদাই মূলশক্তি হিসেবে ছিল তরুণ প্রজন্ম। তোমরাও তার ব্যতিক্রম নও, এ আমার বিশ্বাস!
(সূত্র: রাটগার্স স্টেট ইউনিভার্সিটিতে দেওয়া বারাক ওবামার সমাবর্তন বত্তৃতা, ১৫ মে ২০১৬।
www,facebook.com/emon.raihan
0 comments:
Post a Comment