Recent Post
Loading...



দ্রুতি (speed):

কোনো বস্তু একক সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে, সাধারণভাবে তাকে দ্রুতি বলে। প্রকৃতপক্ষে একটি বস্তুর বেগের মানই হচ্ছে তার দ্রুতির পরিমাপ। অন্য কথায়: একটি বস্তু একক সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে, তাকেই দ্রুতি বলা যেতে পারে। ক্যালকুলাস অনুযায়ী, দ্রুতি হলো সময়ের সাথে দূরত্বের পরিবর্তনের হার। দ্রুতি একটি স্কেলার রাশি; অর্থাৎ এর কোনো দিক নেই। কারণ দূরত্বেরও কোনো দিক নেই, দিক আছে সরণের। দ্রুতির ভেক্টর রাশি হচ্ছে বেগ। দ্রুতির মাত্রা হচ্ছে [LT-1] এবং একক হচ্ছে ms-1। দূরত্বকে d এবং সময়কে t দ্বারা প্রকাশ করলে দ্রুতির রাশিমালা দাড়ায়: V= d/t ।

বেগ (Velocity):

গতিবেগ বা বেগ হল সময়ের সাপেক্ষে কোন বস্তুর সরণের হার। নির্দিষ্ট দিকে বস্তুর দ্রুতিকেই তার গতিবেগ বলা হয়। অর্থাৎ বেগ হল প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে বস্তুর অবস্থান পরিবর্তনের হার এবং সেই সাথে সময়ের একটি ফাংশন। বেগ একটি সদিক রাশি, আর দ্রুতি হল অদিক রাশি। চিরায়ত বলবিদ্যায় গতিবিদ্যার মৌলিক ধারণাগুলোর মধ্যে বেগ একটি। যেমন 10 m/s‍ উত্তর দিকে হল কোন বস্তুর বেগে। গতিবেগকে সাধারণত v, v, v1 দ্বারা সূচিত করা হয়।

বেগ এমন একটি ভৌত রাশি যা মান ও দিক উভয়ই প্রকাশ করে, পক্ষান্তরে বেগের মানকে দ্রুতি বলে যার শুধু মান রয়েছে কিন্তু দিক নেই। একারণে বেগ ঋণাত্নক হলেও দ্রুতি কখনও ঋণাত্নক হতে পারে না।

দ্রুতি ও বেগের মধ্যে পার্থক্যঃ

১। সরল ও বক্রপথে চলমান বস্তুর অবস্তার পরিবর্তনের হারকে দ্রুতি বলে । পক্ষান্তরে নিদিষ্ট দিকে কোন বস্তুর অবস্তার পরিবর্তনের হারকে বেগ বলে ।

২। দ্রুতি স্কেলার রাশি। পক্ষান্তরে বেগ ভেক্টর রাশি ।

৩। মানের পরিবর্তনে দ্রুতির পরিবর্তন ঘটে । পক্ষান্তরে মান ও দিক উভয়ের পরিবর্তনে বেগের পরিবর্তন ঘটে।

৪। দ্রুতির যোগ বা বিয়োগ সাধারণ গাণিতিক নিয়মে করা যায় । পক্ষান্তরে বেগের যোগ বা বিয়োগ সাধারণ গাণিতিক নিয়মে করা যায় না।

৫। বেগের মানেই দ্রুতি । পক্ষান্তরে নিদিষ্ট দিকে দ্রুতিই বেগ।



বেগ (Velocity):

গতিবেগ বা বেগ হল সময়ের সাপেক্ষে কোন বস্তুর সরণের হার। নির্দিষ্ট দিকে বস্তুর দ্রুতিকেই তার গতিবেগ বলা হয়। অর্থাৎ বেগ হল প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে বস্তুর অবস্থান পরিবর্তনের হার এবং সেই সাথে সময়ের একটি ফাংশন। বেগ একটি সদিক রাশি, আর দ্রুতি হল অদিক রাশি। চিরায়ত বলবিদ্যায় গতিবিদ্যার মৌলিক ধারণাগুলোর মধ্যে বেগ একটি। যেমন 10 m/s‍ উত্তর দিকে হল কোন বস্তুর বেগে। গতিবেগকে সাধারণত v, v, v1 দ্বারা সূচিত করা হয়।

বেগ এমন একটি ভৌত রাশি যা মান ও দিক উভয়ই প্রকাশ করে, পক্ষান্তরে বেগের মানকে দ্রুতি বলে যার শুধু মান রয়েছে কিন্তু দিক নেই। একারণে বেগ ঋণাত্নক হলেও দ্রুতি কখনও ঋণাত্নক হতে পারে না।

ত্বরণ (Acceleration):

কোন বস্তু যদি সুষম বেগে না চলে তাহলে বস্তুর বেগের মানের কিংবা দিকের বা উভয়ের পরিবর্তন হতে পারে। বস্তুর বেগের পরিবর্তন হলে আমরা বলি ত্বরণ হচ্ছে। কোন বস্তুর আদিবেগ যদি u হয় এবং t সময় পরে তার শেষ বেগ যদি v হয় তাহলে t সময়ে বেগর পরিবর্তন = v-u
তাহলে, একক সময়ে বেগের পরিবর্তন হবে = (v-u) / t
অতএব ত্বরণ হচ্ছে একক সময়ের বেগের পরিবর্তন হার, অর্থাৎ a = (v-u) / t

সুতরাং ত্বরণ = বেগের পরিবর্তন / সময়
সরল চলমান বস্তুর সময়ের সাথে বেগ বৃদ্ধির হারকে ধনাত্মক ত্বরণ এবং সময়ের সাথে বস্তুর বেগ হ্রাসের হারকে ঋণাত্মক ত্বরন বলা হয় । অনেক সময় ঋণাত্মকক ত্বরণকে মন্দন বলা হয়।

বেগ এবং ত্বরণের মধ্যে পার্থক্যঃ

১। কোনও বস্তুর বেগ একটি নির্দিষ্ট দিকের গতিকে বোঝায়। পক্ষান্তরে ত্বরণ সময়ের সাথে সম্মানের সাথে অবজেক্টের বেগের কোনও পরিবর্তনকে বোঝায়।

২। বেগ হ’ল বাস্তুচ্যুতির পরিবর্তনের হার ছাড়া আর কিছুই নয়। পক্ষান্তরে ত্বরণটি সময়ের সাথে সম্মানের সাথে বেগ পরিবর্তনের হার।

৩। বেগ গতির দিকের সাথে চলমান বস্তুর গতিও নির্ধারণ করে। পক্ষান্তরে ত্বরণ একটি সময়কালে চলন্ত বস্তুর গতিবেগের পরিবর্তনের গতি নির্ধারণ করে।

৪। বেগটি স্থান গ্রহণ হিসাবে সময় গ্রহণ করা সময় দ্বারা বিভক্ত হিসাবে গণনা করা হয়। পক্ষান্তরে ত্বরণ হিসাবে গণনা করা যেতে পারে: পরিবর্তন হওয়ার সময় নেওয়া সময় দ্বারা বিভক্ত বেগের পরিবর্তন।

৫। বেগের একক S.I. পদ্ধতিতে মিটার/সেকেন্ড ও C.G.S. পদ্ধতিতে সেন্টিমিটার/সেকেন্ড। পক্ষান্তরে ত্বরণের একক S.I. পদ্ধতিতে মিটার/সেকেন্ড^2 ও C.G.S. পদ্ধতিতে সেন্টিমিটার/ সেকেন্ড^2 ।

৬। বেগের মাত্রা [MLT−1] পক্ষান্তরে ত্বরণের মাত্রা [MLT−2]।



বাষ্পীভবনঃ

বাষ্পীভবন বা যৌগের বাষ্পীকরণ হল পদার্থকে তরল পর্যায় থেকে বাষ্পে পর্যায়ে রূপান্তর । বাষ্পীভবনের দুটি প্রকার রয়েছে:
(১) বাষ্পে পরিনত
(২) ফুটন ।

বাষ্পীভবন একটি পাত্রে ঘটে, যেখানে ফুটন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বাষ্পীভবন হ’ল তরল পর্যায় থেকে বাষ্প পর্যায়ে রূপান্তর । বাষ্পীভবন হবার সময় প্রদত্ত চাপে স্ফুটনাংকের নীচের তাপমাত্রায় ঘটে। বাষ্পীভবন পৃষ্ঠতলে ঘটে। বাষ্পীভবন তখনই ঘটে যখন কোনও পদার্থের বাষ্পের আংশিক চাপ ভারসাম্যের বাষ্পের চাপের চেয়ে কম থাকে । উদাহরণস্বরূপ, ক্রমাগত নিম্ন চাপের কারণে, দ্রবণ থেকে বের করে দেওয়া বাষ্পগুলি শেষ পর্যন্ত একটি ক্রায়োজেনিক তরলকে নীচে ফেলে রাখে।

ফুটন এছাড়াও তরল পর্যায় থেকে গ্যাস পর্যায়ে পর্যায়ক্রমে রূপান্তর হয়। তবে ফুট্ন তরল পৃষ্ঠের নীচে একপ্রকার বাষ্প বুদবুদ হিসাবে বাষ্পের গঠন করে। উদ্বেগ ঘটে যখন পদার্থের ভারসাম্যীয় বাষ্পের চাপ পরিবেশগত চাপের চেয়ে বেশি বা সমান হয়। যে তাপমাত্রায় ফুটন্ত ঘটে তা হল ফুটন তাপমাত্রা। ফুটন তাপমাত্রা পরিবেশের চাপের সাথে পরিবর্তিত হয়।

ঘনীভবনঃ

ঘনভবন হল গ্যাসীয় থেকে পদার্থের অবস্থাকে তরল পর্যায়ে পরিবর্তন করা এবং এটি বাষ্পীভবনের বিপরীত। শব্দটি প্রায়শই জলচক্রকে বোঝায়। বায়ুমণ্ডলের মধ্যে কোন তরল বা কঠিন পদার্থ বা মেঘের ঘন নিউক্লিয়ির সংস্পর্শে এলে জলীয় বাষ্পের তরল জল বা জলীয় অবস্থার পরিবর্তন করে। আর এই থেকে এটি সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে। যখন বায়বীয় পর্যায় থেকে সরাসরি কঠিন পর্যায়ে রূপান্তর ঘটে তখন পরিবর্তনের উর্ধ্বপাতন বলা হয় ।

ঘনীভবন ও বাষ্পীভবনের মধ্যে পার্থক্যঃ

ঘনীভবন ও বাষ্পীভবন সাধারণত পানিচক্রের ক্ষেত্রে দেখা যায় । ঘনীভবন ও বাষ্পীভবন পরস্পর বিপরীত দুইটি প্রক্রিয়া । নিচে পার্থক্য দেখানো হলো-

১। জলিও বাষ্প যখন ঠান্ডা হয়ে পুনরায় জল এ পরিণত হয় তখন সেই প্রক্রিয়াকে ঘনিভবন বলে। অন্যিদিকে জল যখন লীনতাপ গ্রহণ করে বাষ্পে পরিণত হয় তখন সেই প্রক্রিয়াকে বাস্পীভবন বলে।

২। গ্যাসীয় পদার্থ থেকে তাপ বের করে নিতে থাকলে এর তাপমাত্রা হ্রাস পেতে থাকে এবং একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় গ্যাসটি ঘনীভূত বা তরলীভূত হতে শুরু করে। এটিকে তরলীভবন বা ঘনীভবন বলি। অন্যদিকে পদার্থেরও তাপ যোগ করার সাথে সাথে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এটি গ্যাসীয় পদার্থে পরিণত হতে শুরু করে,যাকে আমরা বাষ্পীভবন বলি, এই সময় যুক্ত তাপকে বাষ্পীভবনের লীন তাপ বলি। অবস্থার পরিবর্তনের কারণে এই সময় পদার্থের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় না।

৩। ঘনীভবন বাষ্পকে শীতল করে তরলে পরিণত করে থাকে। অন্যদিকে বাষ্পীভবনঃ তরলকে তাপ দিয়ে বাষ্পে পরিণত করে থাকে।

৪। ঘনীভবন অর্থ কোনো গ্যাসীয় দার্থকে শীতল করে বিন্দু বিন্দু তরলে পরিণত করা। অপরদিকে কোনো তরল পদার্থে তাপ প্রয়োগ করে তাকে বাষ্পে পরিণত করা।

৫। ঘনীভবন প্রক্রিয়াতে তাপের বর্জন ঘটে। অন্যদিকে বাষ্পীভবন প্রক্রিয়াতে তাপের গ্রহণ হয়।



কাজ (Work):

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ‘কাজ’ ও ‘শক্তি’ বহুল ব্যবহৃত দুটি শব্দ। কৃষক মাঠে কাজ করে ফসল উৎপাদন করেন, শ্রমিক কারখানায় কাজ করেন। শিল্পী ক্যানভাসে প্রকৃতিকে তুলে ধরেন, বৈমাণিক বিমান চালিয়ে মানুষকে একমহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে স্থানান্তর করেন। আবার যার শক্তি বেশি সে বেশি কাজ করতে পারে এমন বিশ্বাস আমাদের সকলেরই আছে। যাদের শারিরীক সামর্থ্য বেশি তারা বেশি পরিশ্রম করতে পারে, বেশি সময় কাজ করতে পারে। সাধারণভাবে আমাদের ধারণার মধ্যে কাজ ও শক্তি সমার্থক শব্দ। যার শক্তি বেশি সে বেশি কাজ করতে পারে। কাজের সাথে শারীরিক সামর্থ্য সম্পর্কিত। তবে সকল কাজকে কাজ হিসাবে বিবেচনা করা যায় না। কাজের সাথে ফলাফল সম্পৃক্ত। কাজ সম্পন্নের পর ফলাফল পাওয়া না গেলে কাজ সার্থক হয়েছে বলা যাবে না। সারা বছর পড়াশোনা করে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে না পারলে সারা বছরে সম্পন্ন কাজ সফল হয় না। আমাদের বাস্তব জীবনের মতই পদার্থবিজ্ঞানেও কাজ সম্পন্ন তখনই হবে যখন কাজের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট পরিমাপযোগ্য ফলাফল পাওয়া যাবে। বস্তুর উপর বল প্রয়োগে যদি বস্তুর অবস্থায় পরিবর্তন ঘঠে তখন বল দ্বারা কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলা হবে। বল এবং বল প্রয়োগে সৃষ্ট সরণের গুণফল দ্বার কজের পরিমাপ করা হয়। কোনো একটি বস্তুকে ভুমি হতে উপরের দিকে উঠালে বস্তুটি অভিকর্ষীয় বলের বিরুদ্ধে কাজ করে। আবার উপর হতে কোন বস্তু ভুমিতে পতিত হলে বস্তুটি অভিকর্ষীয় বলের দিকে কাজ করে। উভয় ক্ষেত্রে বস্তুর সরণ ঘটেছে বলে কাজ সম্পন্ন হয়।

শক্তি (Energy):

পদার্থবিজ্ঞানে কাজ করার সামর্থ্যই হলো শক্তি। পদার্থবিজ্ঞানে কাজ ও শক্তির সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্ট অর্থ আছে। কাজ ও শক্তি পরস্পর পরিপূরক। কাজের পরিমাণ করে শক্তি নির্ণয় করা যায়। কোনো ব্যবস্থা দ্বারা সম্পন্ন কাজ পরিমাপ করে ঐ ব্যবস্থার শক্তি পরিমাপ করা যায়। পদার্থবিজ্ঞানে কাজ সম্পন্ন করতে হলে বলের প্রয়োজন হয়। আবার বল প্রয়োগে বস্তু গতি প্রাপ্ত হয়। গতির কারণে বস্তু গতিশক্তি লাভ করে। বস্তুর এই গতিশক্তিই বস্তু কর্তৃক সম্পন্ন কাজের পরিমাপক। বস্তুকে অভিকর্ষের বিরুদ্ধে উপরে উঠালে যে কাজ সম্পন্ন হয় তা বস্তুতে বিভবশক্তি হিসাবে সঞ্চিত থাকে। কাজ পরিমাপের সাহায্যে স্থিতিশক্তির পরিমাপ করা যায়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, কাজ ও শক্তি পরস্পরের পরিপূরক মাত্র। কাজ ও শক্তির একক অভিন্ন। কোন ব্যবস্থার (system) শক্তি পরিমাপের মধ্যে দিয়ে ব্যবস্থাটি কি পরিমাণ কাজ করতে সমর্থ হবে তা নির্ণয় করা যায়। একই ভাবে একটি ব্যবস্থা কর্তৃক সম্পন্ন কাজ পরিমাপ করে ব্যবস্থাটির শক্তির পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়। কাজ হচ্ছে শক্তির যান্ত্রিক স্থানান্তর। বস্তুর উপর বল প্রয়োগের ফলে বস্তুর অবস্থার পরিবর্তন ঘটলে শক্তির যে স্থানান্তর ঘটে তাই হচ্ছে কাজ।

                 এক্ষেত্রে সম্পন্ন কাজ (W) = স্থানান্তরিত যান্ত্রিক শক্তি (E) 

শক্তির একটি বিশেষ তাৎপর্য আছে জীববিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্যবিজ্ঞানে। আমরা খাদ্য গ্রহণ করি। খাদ্য হতে বিপাকীয় প্রক্রিয়া মানুষ শক্তি লাভ করে। এই শক্তি মানুষকে কাজ করার সামর্থ্য যোগায়। খাদ্য হতে মানুষ যে শক্তি গ্রহণ করে তা কাজ, তাপীয় শক্তি এবং ফ্যাট সঞ্চয়ে রূপান্তরিত হয়। যে ব্যক্তি বেশি শক্তি লাভ করে তার কাজ করার সামর্থ্য বেশি হয়। অর্থাৎ কাজ এবং শক্তি পরস্পরের পরিপূরক। শক্তির একক জুল।

কাজ ও শক্তির মধ্যে পার্থক্যঃ

১। কোনো বস্তুকে আপনি বল প্রয়োগ করে যেটুকু সরণ করতে পারবেন সেটাই আপনার কাজ। অন্যদিকে কোনো বস্তুর উপর আপনি কত হারে বল প্রয়োগ করছেন সেই হার টাই আপনার শক্তি।

২। আপনি যদি কোনো বস্তুকে ২ কি.মি. ঘুরিয়ে এনে আবার আগের অবস্থানে রেখে দেন তাহলে আপনার সরণ হবে শূন্য।সরণ শূন্য হলে আপনার কোনো কাজই হলো না।। আপনার কাজও হবে শূন্য।।

৩। প্রতিদিনের ব্যবহারে, মানুষের কর্মের চেয়ে শক্তির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কার্যকারিতার জন্য কতগুলি ক্ষমতা দরকার, তা নির্দেশ করতে প্রায় সব ডিভাইসগুলি শক্তি রেটিংগুলি ব্যবহার করে। কাজের জন্য মূল্যগুলি কম গুরুত্বের এবং বাস্তব জগতে সম্পর্কযুক্ত আরও কঠিন কারণ প্রকৃত ব্যবহারটি দৈর্ঘ্যের ভ্রমণ, দূরত্ব এবং ভ্রমণের উপর নির্ভর করে খুব পরিবর্তনশীল।

৪। শক্তি একটি বস্তুর দ্বারা আবিষ্ট কাজ তার ক্ষমতা পরিপ্রেক্ষিতে এইভাবে মাপা হয়। শক্তির একক তাই, কাজ, যে, joule এর যে হিসাবে একই. 1 জে শক্তির কাজ 1 joule তা করার প্রয়োজন আছে. কখনো কখনো একটি শক্তির মাপের একক নামক কিলোগ্রাম joule (kJ) ব্যবহৃত হয়. 1 kJ 1000 জে সমান।

৫। কাজ মানে শক্তির পরিবর্তন। মানে কৃতকাজ = গতিশক্তির পরিবর্তন সমবেগের ক্ষেত্রে গতিশক্তির পরিবর্তন হয় না তাই কোনো কাজ হয় না।



তরঙ্গ (Wave):

পুকুর বা জলাশয়ের পানিতে এক টুকরো ঢিল ফেললে চারিদিকে পানির ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। সমুদ্রের সৈকতে বা বিশাল জলাশয়ের পাড়ে পানির ঢেউ আছড়ে পড়ে। এই ঢেউ বিজ্ঞানের ভাষায় তরঙ্গ। আমাদের চারিদিকে বিভিন্ন রকম তরঙ্গের মধ্যে একটি হলো পানির তরঙ্গ। অন্যান্য তরঙ্গ হলো শব্দ তরঙ্গ, আলোক তরঙ্গ, বেতার তরঙ্গ, বিভিন্ন ধরনের তাড়িতচুম্বকীয় তরঙ্গ ইত্যাদি। তরঙ্গের মাধ্যমে শক্তি সঞ্চারিত হয়। পুকুরের তরঙ্গ সম্পর্কে আমাদের কিছু ধারণা আছে সত্য, কিন্তু বিভিন্ন প্রকার তরঙ্গের পর্যাপ্ত এবং সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে তরঙ্গ সম্পর্কে আমাদের আরও কিছু জানা দরকার। শব্দ এক রকম তরঙ্গ। যে পর্যাবৃত্ত আন্দোলন কোনো জড় মাধ্যমের একস্থান থেকে অন্যস্থানে শক্তি সঞ্চালিত করে কিন্তু মাধ্যমের কণাগুলোকে স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত করে না তাকে তরঙ্গ বলে।

শব্দ (sound):

শব্দ এক প্রকার শক্তি। বস্তুর কম্পনের ফলে শব্দ সৃষ্টি হয়। শব্দ সঞ্চারণের জন্য জড় মাধ্যম প্রয়োজন। জড় মাধ্যমের মধ্যে কোন বস্তুর কম্পন হলে মাধ্যমের কণাগুলো আন্দোলিত হয়ে তরঙ্গের সৃষ্টি করে। এই তরঙ্গ জড় মাধ্যমের মধ্য দিয়ে সঞ্চারিত হয়ে আমাদের কানে প্রবেশ করে। কানের মধ্যে বিভিন্ন যান্ত্রিক কৌশলের মাধ্যমে মস্তিষ্কে শব্দের অনুভুতি সৃষ্টি হয়। আমরা শব্দ শুনতে পাই। শব্দ শ্রবণ প্রক্রিয়ার উত্তেজনা হিসাবেও দেখা যায় যা শব্দের উপলব্ধির ফলস্বরূপ। এক্ষেত্রে শব্দ একধরনের সংবেদন।

তরঙ্গ ও শব্দ এর মধ্যে পার্থক্যঃ

তরঙ্গ ও শব্দ বৈশিষ্ট্য গত দিক থেকে উভয়ের মধ্যে কিছু মিল থাকলেও, এদের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। নিম্নে তরঙ্গ ও শব্দ পার্থক্য দেখানো হলো-

১. কোনো জড় মাধ্যমের একস্থান থেকে অন্যস্থানে শক্তি সঞ্চালিত করে কিন্তু মাধ্যমের কণাগুলোকে স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত করে না তাকে তরঙ্গ বলে। অন্যদিকে শব্দবিজ্ঞান হলো আন্তঃশৃঙ্খলা বিজ্ঞান যা কম্পন, শব্দ, শ্রবণাতীত শব্দ এবং অবশ্রাব্য শব্দসহ গ্যাস, তরল এবং কঠিনের মধ্যে যান্ত্রিক তরঙ্গ অধ্যয়নের বিষয়।

২. মাধ্যমের কণার স্পন্দন গতির ফলে তরঙ্গ উৎপন্ন হয়। অন্যদিকে কোনো বস্তুর কম্পনের ফলে শব্দ তরঙ্গ উৎপন্ন হয়, অর্থাৎ শব্দের উৎস বস্তুর কম্পন।

৩. মাধ্যমের কণাগুলো সাম্য অবস্থান থেকে উপরে নিচে অথবা সামনে পেছনে স্পন্দিত হতে থাকে। তরঙ্গ মাধ্যমের মধ্য
দিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয় না। অন্যদিকে মাধ্যমের ঘনত্ব এবং চাপের মধ্যে একটি জটিল সম্পর্কের দ্বারা। তাপমাত্রা দ্বারা প্রভাবিত এই সম্পর্কটি মাধ্যমের মধ্যে শব্দের গতি নির্ধারণ করে।

৪. তরঙ্গ মাধ্যমের এক স্থান থেকে অন্যস্থানে শক্তি ও তথ্য সঞ্চারণ বা স্থানান্তর করে। অন্যদিকে শব্দ তরঙ্গের বেগ মাধ্যমের প্রকৃতি (ঘনত্ব, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ইত্যাদি)-এর ওপর নির্ভরশীল।

৫. তরঙ্গের কণাগুলো বিভিন্ন বেগে স্পন্দিত হয়। স্পন্দনের বেগ পর্যায়ক্রমে কমে বাড়ে। কিন্তু তরঙ্গ সুষম বেগে
সঞ্চারিত হয়। অর্থাৎ কণাগুলোর স্পন্দন গতি এবং তরঙ্গ বেগ এক নয়। অন্যদিকে শব্দের তীব্রতা তরঙ্গের বিস্তারের বর্গের সমানুপাতিক।



স্কেলার রাশি (scalar):

যে সকল ভৌত রাশিকে শুধু মান দ্বারা সম্পুর্ণ ভাবে প্রকাশ করা যায়, দিক নিদের্শের প্রয়োজন হয়না তাদের স্কেলার রাশি বলে। দ্রুতি, কাজ, ক্ষমতা, শক্তি, ঘনত্ব, তাপ, তাপমাত্রা, ভর ,সময়, আয়তন, তরঙ্গদৈর্ঘ্য, কম্পাংক, বিস্তার, দীপনমাত্রা, দীপন ক্ষমতা, বিদ্যুৎ প্রবাহমাত্রা, রোধ, চার্জ, জনসংখ্যা, মৃত্যুহার, জন্মহার, প্রতিসরাঙ্ক, স্ফুটনাঙ্ক, চৌম্বক বিভব,বৈদ্যুতিক বিভব, বিচ্যুতি ইত্যাদি স্কেলার রাশির উদাহরণ।

ভেক্টর রাশি (vector):

যে সকল ভৌত রাশিকে সম্পুর্ণরুপে প্রকাশের জন্য মান ও দিক উভয়ের প্রয়োজন হয় তাদেরকে ভিক্টর রাশি বলে। যেমন; বেগ, ভরবেগ,সরণ, ত্বরণ, মন্দন, বল, বলের ঘাত, বলের ভ্রামক, চৌম্বক ভ্রামক, চৌম্বক দৈর্ঘ্য, চৌম্বক প্রাবাল্য, বৈদ্যূতিক প্রাবাল্য, ওজন, পৃস্টটান, সান্দ্রতা, গুনাঙ্ক, অভিকর্ষজ ত্বরণ ইত্যাদি।

স্কেলার ও ভেক্টর রাশির মধ্যে পার্থক্যঃ

১। স্কেলার রাশির শুধুমাত্র মান আছে, কিন্তু কোনো দিক নেই। অপরদিকে, ভেক্টর রাশির মান ও দিক উভয়ই আছে।

২। দিক পরিবর্তন হলেও স্কেলার রাশির মানের কোনো পরিবর্তন হয় না। অপরদিকে দিক পরিবর্তনের সাথে সাথে ভেক্টর রাশির মানেরও পরিবর্তন হয়।

৩। স্কেলার রাশি প্রকাশে শুধু মান ও এককের প্রয়োজন হয়। অপরদিকে ভেক্টর রাশির ক্ষেত্রে মান ও এককের সাথে দিকেরও প্রয়োজন হয়।

৪। স্কেলার রাশি একমাত্রিক প্যারামিটার। অপরদিকে, ভেক্টর রাশি একমাত্রিক, দ্বিমাত্রিক এমন কি ত্রিমাত্রিক প্যারামিটারও হতে পারে।

5। স্কেলার রাশির উদাহরণ হলো দৈর্ঘ্য, ক্ষেত্রফল, আয়তন, ভর, সময়, তাপমাত্রা, কার্য, দ্রুতি ইত্যাদি। অপরদিকে ভেক্টর রাশির উদাহরণ হলো বল, ওজন, সরণ, বেগ, ত্বরণ, ভরবেগ ইত্যাদি।



ডিএনএ (DNA):

ডোসিরিবোনউইক্লিক এসিড (DNA) হল সকল ইউক্যারিয়টের জিনগত উপাদান এবং কিছু প্রোকিওরোট। এটি একটি নিউক্লিওটাইড শৃঙ্খল যা প্যারেন্টস দ্বারা আবদ্ধ একটি প্যান্টোস চিনি দ্বারা আবদ্ধ। ডিএনএ (DNA) নিউক্লিওটাইড অ্যাডেনাইন, থিমিন, সাইটোসাইন এবং গুয়েনের তৈরি।

ডিএনএ(DNA) মূলত দুটি নিউক্লিওটাইডের সাথে দ্বিগুণ। এডিনাইন (A) থীমাইন (T) এর সাথে জোড়া এবং গায়ানা (G) সাথে সায়োটাসিন (C) জোড়া। অতএব, A এর পরিমাণ সবসময় T এর সমান এবং C হল G. ফসফেট এবং চিনির moieties এর সমান হয় যা হেলিক্সের বাইরে অবস্থিত, যেখানে ঘাঁটি হেলিক্সের অভ্যন্তরে অবস্থিত। এই strands বিপরীত দিকের মধ্যে চালানো। ডাবল হেলিক্স আরও হীটোনগুলির সাথে ঘন কুঁচকে থাকে এবং ইউক্যারিওটসগুলিতে ক্রোমোজোমের মত অত্যন্ত সংকুচিত এবং অবশিষ্ট থাকে।

আরএনএ (RNA):

আরএন (RNA)এর রক্তক্ষরণ সংক্রামক অ্যাসিড আরএনএ(RNA) ক্রোমোসোমের অবিচ্ছেদ্য অংশ নয়। প্রোটিন উৎপাদনের জন্য তারা ডিএনএ(DNA) থেকে উদ্ভূত হয়। তাই এটি একটি তথ্য স্থানান্তর অণু হয়। ডিএনএ(DNA) থেকে উদ্ভূত mRNAটি প্রসেসর উৎপাদনের জন্য আরও অনুবাদ প্রক্রিয়া দ্বারা পরীক্ষা করা হয়।অধিকাংশ অংশের জন্য আরএনএ(RNA) একক ভ্রমন হিসাবে বিদ্যমান, কিন্তু এটি একক ভ্রমনের মধ্যে পরিপূরক বেস জোড়া জোড়া থাকার কারণে বেশ কয়েকটি কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য তৈরি করতে পারে।

ডিএনএ(DNA) এবং আরএনএ(RNA) এর মধ্যে পার্থক্যঃ

১। ডিএনএ(DNA) হল দ্বিসুত্রক বা double helics যুক্ত অর্থাৎ দুই পলিনিউক্লিওটাইড শৃঙ্খলবিশিষ্ট। পক্ষান্তরে আরএনএ(RNA) হল একসুত্রক বা single helics যুক্ত অর্থাৎ এক পলিনিউক্লিওটাইড শৃঙ্খলবিশিষ্ট ।

২। ডিএনএ(DNA) তে deoxy-ribose sugar থাকে। অর্থাৎ এর পেন্টোজ সুগার গঠনের ২নং কার্বনে অক্সিজেন থাকেনা। পক্ষান্তরে আরএনএ(RNA) তে শুধু ribose sugar থাকে। অর্থাৎ ২নং কার্বনে অক্সিজেন থাকে।

৩। ডিএনএ(DNA) তে ইউরাসিল (Uracil) থাকে না। পক্ষান্তরে আরএনএ(RNA) তে থাইমিন (thymine) থাকে না।

৪। ডিএনএ(DNA) রেপলিকেশনের মাধ্যমে নতুন DNA তৈরী করতে পারে। পক্ষান্তরে আরএনএ(RNA) তে রেপ্লিকেশন হয়না।

৫। ডিএনএ(DNA) থেকে ট্রান্সক্রিপশনের মাধ্যমে আরএনএ(RNA) তৈরী হয়। পক্ষান্তরে আরএনএ(RNA) থেকে ট্রান্সলেশনের মাধ্যমে প্রোটিন তৈরী হয়।

৬। ডিএনএ(DNA) প্রোটিন সরাসরি তৈরী করতে পারেনা।পক্ষান্তরে কিন্তু আরএনএ(RNA) প্রোটিন তৈরী করতে পারে।

৭। ডিএনএ(DNA) এর কোন প্রকারভেদ নেই। পক্ষান্তরে আরএনএ(RNA) প্রধানত তিন প্রকার- mRNA, tRNA, rRNA ।

৮। ডিএনএ(DNA) বংশগতি বৈশিষ্ট্য বহন করে। অর্থাৎ জীবের মুল জেনেটিক বস্তু DNA। পক্ষান্তরে কতিপয় ভাইরাস ছাড়া অধিকাংশ জীবে আরএনএ(RNA) বংশগতি বৈশিষ্ট্য বহন করেনা।

৯। ডিএনএ(DNA) কার্যগতভাবে চিরস্থায়ী।পক্ষান্তরে আরএনএ(RNA) ক্ষণস্থায়ী।

১০। ডিএনএ(DNA) প্রধানত নিউক্লিয়াসের ক্রোমোজোমে পাওয়া যায়। এছাড়া কখনো মাইটোকন্ড্রিয়া ও ক্লোরোপ্লাস্টেও পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে আরএনএ(RNA) ক্রোমোজোম, নিউক্লিওলাস, সাইটোপ্লাজম ও রাইবোজোমে পাওয়া যায়।

১১। ডিএনএ(DNA) তে নিউক্লিওটাইডের সংখ্যা অনেক বেশি। পক্ষান্তরে আরএনএ(RNA) তে অনেক কম।

১২। ডিএনএ(DNA) এর আনবিক ওজন দশলক্ষ থেকে বহুকোটি পর্যন্ত হতে পারে। পক্ষান্তরে আরএনএ(RNA) এর আনবিক ওজন কয়েক লক্ষের বেশি হয়না।



উদ্ভিদকোষঃ

উদ্ভিদকোষ, মূলত ইউক্যারিওটিক প্রকৃতির। একটি আদর্শ উদ্ভিদ কোষ বিভিন্ন অংশ নিয়ে গঠিত-কোষ প্রাচীর,কোষ ঝিল্লি, সাইটোপ্লাজম, নিউক্লিয়াস ।

প্রাণী কোষঃ

কোষ হলো জীবদেহের গঠন ও কাজের একক। ইট দিয়ে যেমন ইমারত তৈরি হয় তেমনি কোষ আমাদের দেহ গঠন করে। যে কোষ প্রাণী দেহ গঠন করে তাকে প্রাণী কোষ বলে।

প্রাণীকোষ এবং উদ্ভিদ কোষের মধ্যে পার্থক্যঃ

১। প্রাণীর কোষগুলি সাধারণত উদ্ভিদের কোষের চেয়ে ছোট হয়। প্রাণীকোষ গুলির দৈর্ঘ্য 10 থেকে 30 মাইক্রোমিটার পর্যন্ত হয়, যখন উদ্ভিদের কোষগুলি 10 এবং 100 মাইক্রোমিটার দৈর্ঘ্যের হয়।

২। প্রাণী কোষ বিভিন্ন আকারে আসে এবং বৃত্তাকার বা অনিয়মিত আকার ধারণ করে। গাছের কোষগুলি আকারে আরও সমান এবং সাধারণত আয়তক্ষেত্রাকার বা ঘনক্ষেত্র আকারযুক্ত।

৩। প্রাণী কোষগুলি জটিল কার্বোহাইড্রেট গ্লাইকোজেন আকারে শক্তি সঞ্চয় করে। অন্যদিকে উদ্ভিদ কোষগুলি স্টার্চ হিসাবে শক্তি সঞ্চয় করে।

৪। প্রোটিন উত্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ২০ টি অ্যামিনো অ্যাসিডের মধ্যে কেবলমাত্র 10 টি প্রাণীর কোষে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত হতে পারে। অন্যান্য তথাকথিত প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিডগুলি অবশ্যই ডায়েটের মাধ্যমে গ্রহণ করা উচিত। গাছপালা সমস্ত 20 এমিনো অ্যাসিড সংশ্লেষ করতে সক্ষম।

৫। প্রাণীর কোষগুলিতে, কেবল স্টেম সেলগুলি অন্য কোষের ধরণের রূপান্তর করতে সক্ষম। অন্যদিকে বেশিরভাগ উদ্ভিদ কোষের প্রকারভেদ গুলি পার্থক্য করতে সক্ষম।

৬। কোষ বিভাজনের সময় সাইটোপ্লাজমের বিভাজন সাইটোকিনেসিস প্রাণীর কোষে ঘটে যখন একটি ক্লিভেজ ফেরো গঠন করে যা কোষের ঝিল্লিকে অর্ধেক করে দেয়। অন্যদিকে উদ্ভিদ কোষ সাইটোকেইনসিসে একটি সেল প্লেট নির্মিত হয় যা কোষকে বিভক্ত করে।

৭। প্রাণীর কোষগুলিতে লাইসোসোম থাকে যা এনজাইমগুলি ধারণ করে যা সেলুলার ম্যাক্রোমোকলিকুলস হজম করে। অন্যদিকে উদ্ভিদের কোষগুলিতে খুব কমই লাইসোসোম থাকে কারণ উদ্ভিদের শূন্যস্থান অণুর ক্ষয় পরিচালনা করে।



পরমাণু হল পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা। যদিও এখন এর থেকেও ক্ষুদ্র কণা পাওয়া যায় পদার্থে। একটা পদার্থকে ভাংলে পাওয়া যায় তার অণু। এই অণুকে ভাংলে পাওয়া যায় তার পরমাণু। সুতরাং, অণু আসলে পরমাণু দিয়ে গঠিত। সহজভাবে বলা যায় যে, পরমাণু হল অণুর ক্ষুদ্রতম একক। আবার পরমাণুকে ভাংলে কণিকা পাওয়া যাবে যেগুলা পরমাণু থেকেও ছোট।

অণু
অণু শব্দের অর্থ ক্ষুদ্র। মৌলিক বা যৌগিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা ঐ পদার্থের ধর্মাবলী অক্ষুন্ন রেখে     স্বাধীনভাবে অবস্থান করতে পারে তাকে অণু বলে।

পরমাণু
‘পরম’ শব্দের অর্থ অত্যন্ত আর অণু শব্দের অর্থ ক্ষুদ্র। পরমাণু শব্দের অর্থ অত্যন্ত ক্ষুদ্র। মৌলিক পদার্থের যে     ক্ষুদ্রতম কণা অবিভাজ্য অবস্থায় রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহন করে এবং যার মধ্যে মৌলিক পদার্থটির সকল ভৌত ও     রাসায়নিক ধর্ম বর্তমান থাকে তাকে পরমাণু বলে।

অণু ও পরমাণু এর মধ্যে পার্থক্যঃ

১। অণু মৌলিক বা যৌগিক পদার্থের বৈশিষ্ট রক্ষাকারী ক্ষুদ্রতম কণা।রক্ষাকারী অত্যন্ত ক্ষুদ্রতম    কণা।
পক্ষান্তরে পরমাণু মৌলিক পদার্থের বৈশিষ্ট

২। অণু সরাসরি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহন করে  না। পক্ষান্তরে পরমাণু সরাসরি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহন করে।

৩। অণুর স্বাধীন সত্তা আছে। পক্ষান্তরে অধিকাংশ পরমাণুর স্বধীন সত্তা নেই।
৪। অণুকে বিশ্লেষণ করলে একই বা ভিন্ন প্রকারের   পরমাণু পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে পরমাণুকে অধিক বিভক্ত করলে  মৌলের  নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য লোপ পায়।

৫। অণু স্থায়ী। পক্ষান্তরে পরমাণু অস্থায়ী


 

যে পদার্থকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করলে ওই পদার্থ ছাড়া অন্য কোনো পদার্থ পাওয়া যায় না, তা-ই মৌলিক পদার্থ। যেমন: কার্বন (C), হাইড্রোজেন (H), লৌহ (Fe) ইত্যাদি। কার্বনকে যত ভাগে ভাগ করা হোক না কেন কার্বনই পাওয়া যাবে। একইভাবে হাইড্রোজেনকে ভাগ করলেও শুধু হাইড্রোজেনই পাওয়া যায়। আর যৌগিক পদার্থ হলো সেই সকল পদার্থ, যাদেরকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করলে একাধিক মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায়। যেমন– পানি (H2O) একটি যৌগিক পদার্থ। এখানে পানিকে ভাগ করলে হাইড্রোজেন (H2) ও অক্সিজেন (O) পাওয়া যাবে। মৌলিক পদার্থের সংখ্যা সীমিত হলেও যৌগিক পদার্থের অসীম সংখ্যক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তাই মৌলিক ও যৌগিক পদার্থের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে ।

মৌলিক পদার্থ

যে পদার্থকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করলে ওই পদার্থ ছাড়া অন্য কোনো পদার্থ পাওয়া যায় না, তা-ই মৌলিক পদার্থ।
যেমন : হাইড্রোজেন (H2), সোডিয়াম (Na)।
হাইড্রোজেনকে যত ভাগে ভাগ করা হোক—হাইড্রোজেনই পাওয়া যাবে। একইভাবে সোডিয়ামকে ভাগ করলেও শুধু সোডিয়ামই পাওয়া যায়।

যৌগিক পদার্থ 

যে পদার্থকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করলে একাধিক পদার্থ পাওয়া যায়, তা-ই যৌগিক পদার্থ। যেমন : সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) 
এখানে সোডিয়াম ক্লোরাইডকে ভাগ করলে সোডিয়াম (Na) ও ক্লোরিন (Cl) পাওয়া যাবে।
অন্যবাবে বলা যায়, যে সকল পদার্থ ভাঙ্গলে একের অধিক মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায় তাদেরকে যৌগিক পদার্থ বলে । যেমন- চকের এক টুকরোকে ভাঙতে ভাঙতে এক সময় এমন ছোট অংশ পাওয়া যাবে যে, সে গুলোকে আর খালি চোখে দেখা যাবে না । আর ভাঙা অংশ গুলোতে চকের গুণ বা বৈশিষ্ট্য পাওয়া যাবে না। চকের পরিবর্তে ভাঙা অংশগুরোতে ক্যালসিয়াম, কার্বন ও অক্সিজেন গুণ বা বৈশিষ্ট্য পাওয়া যাবে। তাই এখানে চক একটি যৌগিক পদার্থ ।

মৌলিক ও যৌগিক পদার্থের মধ্যে পার্থক্যঃ

১। যে পদার্থকে রাসায়নিক পদ্ধতিতে বিভাজিত করে দুই বা ততোধিক ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থে বিশ্লিষ্ট করা যায় না, অর্থাৎ যে পদার্থ হতে সাধারণভাবে সেই পদার্থ ব্যতীত অন্য কোন নূতন পদার্থ পাওয়া যায় না, তাকে মৌল বা মৌলিক পদার্থ বলে। পক্ষান্তরে, যে পদার্থ থেকে দুই বা ততোধিক সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায়, সেই পদার্থকে যৌগ বা যৌগিক পদার্থ বলে। 

২। মৌলিক পদার্থ হলো-  কার্বন, হাইড্রোজেন, লৌহ ইত্যাদি। আর,  যৌগিক পদার্থ হলো- পানি, এসিড, লবন ইত্যাদি।

৩। মৌলিক পদার্থের একক হলো- পরমানু। আর, যৌগিক পদার্থের একক- অনু।

৪। মৌলিক পদার্থকে বিশ্লেষন করলে ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন পাওয়া যায়। আর, যৌগিক পদার্থকে বিশ্লেষন করলে মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায়।

৫। মৌলিক পদার্থের সংখ্যা সীমিত। কিন্তু, যৌগিক পদার্থের সংখ্যা অসীম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।


 

আমাদের শরীরে যেসব রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে তাদোর মধ্যে এসিড-ক্ষার বিক্রিয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ । এছাড়া কোনো একটা দ্রবণের pH কত সেটার উপর ভিত্তি করে সেই দ্রবণটিকে ক্ষারীয় বলা হয় । তাই pH আমাদোর শরীরের একটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয় । এছাড়া প্রোটিন এবং DNA এর সর্বশেষ গঠন কেমন হবে সেটাও নির্ভর করে pH এর মানের উপর ।

এসিড
এসিড হচ্ছে একটি রাসায়নিক পদার্থ। যৌগের অণুতে এক বা একাধিক প্রতিস্থাপনীয় হাইড্রোজেন পরমাণু থাকে এবং ঐ প্রতিস্থাপনীয় হাইড্রোজেনকে ধাতু বা যৌগমূলক দ্বারা আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে প্রতিস্থাপিত করা যায় এবং যা ক্ষারকের সাথে প্রশমন বিক্রিয়া করে লবণ ও পানি উৎপন্ন করে তাকে অম্ল বা অ্যাসিড বলে। যে সকল যৌগ জলীয় দ্রবণে H+ আয়ন উৎপন্ন করে তাকে বলা হয় এসিড। কোনো কিছুর pH মান 7 হতে কম হলে সেটি এসিড ।

ক্ষার 
ক্ষার এক শ্রেণির রাসায়নিক যৌগ যা হাইড্রোজেন আয়ন গ্রহণ করতে সক্ষম। যেমন ধাতুর অক্সাইড বা হাইড্রোক্সাইডসমূহ ক্ষার। জলে দ্রবণীয় ক্ষারক যা হাইড্রোক্সাইড আয়ন প্রদান করে তাকে ক্ষার বলা হয়। আর যে সকল যৌগ জলীয় দ্রবণে OH- আয়ন উৎপন্ন করে ও পানিতে দ্রবীভূত হয় তাকে বলা হয় ক্ষার। কোনো কিছুর pH মান 7 এর বেশি ও পানিতে দ্রবীভূত হলে সেটি ক্ষার জাতীয়।

এসিড এবং ক্ষারের মধ্যে পার্থক্য

১। এসিডে এক বা একাধিক প্রতিস্থাপনীয় হাইড্রোজেন থাকে পক্ষান্তরে ক্ষারকে অক্সাইড বা হাইড্রোক্সাইড বা হাইড্রোক্সিল আয়ন থাকে।

২। এসিড ক্ষারক  সাথে বিক্রিয়া করে লবন ও পানি উৎপন্ন করে পক্ষান্তরে ক্ষারক এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে লবন ও পানি উৎপন্ন করে।

৩। এসিড নীল লিটমাসকে লাল করে পক্ষান্তরে ক্ষারক লাল লিটমাসকে নীল করে।

৪। এসিড ধাতুর সাথে বিক্রিয়া করে লবন ও হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে পক্ষান্তরে খুব কম ক্ষারক ব্যাতিত অধিকাংশ ক্ষারক ধাতুর সাথে ক্রিয়া করেনা। অধিক শক্তিশালী ক্ষারক হলে একাধিক ধাতুর জটিল যৌগ সৃষ্টি করে।

৫। এসিড খুবই শক্তিশালী হয়, মানবদেহকে বিশ্লিষ্ট(পুড়িয়ে) দিতে পারে পক্ষান্তরে ক্ষারক মানব শরীরে ক্ষতি করতে পারলেও তা এসিডের মত মারাত্মক হয়না।


 

অরবিট(Orbit)ঃ

পরমাণুতে নিউক্লিয়াসের চতুর্দিকে ইলেকট্রন আবর্তনের জন্য কতগুলো নির্দিষ্ট শক্তি বিশিষ্ট কক্ষপথ রয়েছে। এদের প্রধান শক্তিস্তর বা শেল বলে। এই প্রধান শক্তি স্তরই অরবিট নামে পরিচিত।

অরবিটাল(Orbital)ঃ

নিউক্লিয়াসের চারদিকে যে নির্দিষ্ট ত্রিমাত্রিক স্থানে কোন নির্দিষ্ট শক্তিস্তরে ইলেকট্রনের অবস্থানের সম্ভাবনা বেশি থাকে তাকে অরবিটাল বলে। অর্থাৎ নিউক্লিয়াসের চতুর্দিকে ইলেকট্রনের আবর্তনের সর্বাধিক সম্ভাব্য অঞ্চলকে অরবিটাল বলে।

অরবিট ও অরবিটাল এর মধ্যে পার্থক্যঃ

১। অরবিট নিউক্লিয়াসের চারিদিকে সামতলিকভাবে অথবা দ্বি-মাত্রিকভাবে অবস্থান করে। এর ইলেকট্রন-ধারণ সংখ্যা 2n2 , যেখানে n = কক্ষপথের ক্রমিক সংখ্যা। নিউক্লিয়াসের ধনাত্মক এনার্জি এবং ইলেকট্রনের ঋণাত্মক এনার্জির পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলে সচল ইলেকট্রনের কৌণিক ভরবেগ আবর্তনকালে সর্বদা একই থাকে, ফলে কক্ষপথের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে, অরবিটাল হল পরমাণুর অন্তঃস্থ এমন একটি অনির্দিষ্ট স্থান বা অঞ্চল যেখানে ইলেকট্রন পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী। হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা সূত্র থেকে আমরা বুঝতে পারি যে একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তে ইলেকট্রনের গতিবেগ ও অবস্থান একসঙ্গে বলা সম্ভব নয়, তাই এমন একটি অনির্দিষ্ট স্থান নির্বাচন করা হয়, যেখানে কোন এক মুহূর্তে ইলেকট্রন পাওয়ার সম্ভাবনা সবথেকে বেশী, আর তাকেই অরবিটাল বলা হয়। অরবিটাল বাস্তবে পরমাণুর মধ্যে, তথা নিউক্লিয়াসের চারদিকের ত্রিমাত্রিক স্থানকে নির্দেশ করে।

২। প্রধান শক্তিস্বর বা প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যাই অরবিট। অন্যদিকে উপস্তরের সম্ভাব্য অঞ্চলটাই অরবিটাল ।

৩। অরবিটকে K,L,M,N,O ইত্যাদি দ্বারা প্রকাশ করা হয়। অন্যদিকে অরবিটালকে S, Px, PY ,PZ ইত্যাদি দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

৪। একটি অরবিটে সর্বাধিক 2n2 ইলেকট্রন থাকতে পারে। অন্যদিকে একটি অরবিটালে সর্বাধিক 2টি ইলেকট্রন থাকতে পারে।

৫। অরবিট হলো নির্দিষ্ট কক্ষপথ যাকে কেন্দ্র করে ইলেক্ট্রন ঘুরে। অন্যদিকে অরবিটাল হলো নিউক্লিয়াসের চারদিকের এমন একটি স্থান যেখানে ইলেক্ট্রনের আধিক্য বেশি।


 

মূলকঃ

একাধিক মৌলের একাধিক পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত একটি পরমাণু গুচ্ছ যা একটি আয়নের ন্যায় আচরণ করে এবং বিক্রিয়া শেষে অপরিবর্তিত থাকে, সেসব পরমাণু গুচ্ছকে যৌগমূলক বলে। যেমনঃ সালফেট (SO₄² – ) যৌগমূলক। কারণ এখানে সালফার ও অক্সিজেন এই দুটি মৌলের পাঁচটি পরমাণু যুক্ত হয়ে একটি পরমাণু গুচ্ছ গঠন করে যার নির্দিষ্ট আধান -2 আছে। যৌগমূলকের যে চার্জ বা আধান থাকে সেই চার্জ বা আধান থেকে ধনাত্মক বা ঋণাত্মক চিহ্ন বাদ দিলে যে সংখ্যাটি থাকে তাই ঐ যৌগমূলকের যোজনী নির্দেশ করে। যেমনঃ কার্বনেট (CO₃² -) যৌগমূলকের আধান বা চার্জ -2. এখান থেকে ঋণাত্মক (-) চিহ্ন টি বাদ দিলে দুই (2) থাকে। এই দুই হচ্ছে কার্বনেট যৌগমূলকের যোজনী।

যৌগঃ

যৌগ হল একপ্রকারের পদার্থ যা দুই বা ততোধিক ভিন্ন মৌলিক উপাদানের মধ্যে রাসায়নিক বন্ধনের মাধ্যমে গঠিত হয়। মৌলিক উপাদানসমূহ নির্দিষ্ট ভরের অনুপাতে যুক্ত হয়ে রাসায়নিক যৌগ গঠন করে এবং যৌগ ভাঙ্গলে এর মৌলিক উপাদানসমূহ পাওয়া যায়। অথাৎ বলা যায় দুই বা ততোধিক মৌলের পরমাণুর বিক্রিয়ার মাধ্যমে যৌগ গঠিত হয়।

যৌগ ও মূলকের মধ্যে পার্থক্যঃ

১.দুই বা ততোধিক মৌলের পরমাণুর বিক্রিয়ার মাধ্যমে যৌগ গঠিত হয়। অন্যদিকে দুই বা ততোধিক মৌলের একাধিক পরমাণুর সংযুক্ত হওয়ার ফলে একটি পরমাণু গ্রুপ গঠন করলে তাকে যৌগমূলক বলে।

২. প্রত্যেকটি যৌগের রয়েছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং তা যৌগের ন্যায় আচরণ করে। অন্যদিকে যৌগমূলক নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকলে তা কেবলমাত্র একটি পরমাণুর ন্যায় আচরণ করে।

৩. বিভিন্ন যৌগ বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে নতুন পদার্থ উত্‍পন্ন করে। অন্যদিকে যৌগমূলক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণের পর অপরিবর্তিত থাকে।

৪. যৌগের উদাহরণ: H2SO4 , H2,O2, । অন্যদিকে মুলকের উদাহরণ: অ্যমোনিয়াম: NH4+ , সালফেট: SO4–, সালফাইট SO3-

৫. যৌগ কখনো ধনাত্নক বা ঋণাত্নক হয় না। অন্যদিকে যৌগমূলক ধনাত্নক ও ঋণাত্নক উভয়ই হতে পারে। যেমন: ধনাত্নক যৌগ মূলক: NH4+,ঋণাত্নক যৌগমূলক:SO4-



স্থূল সংকেত (Empirical Formulae):

যে সংকেত অণুতে বর্তমান বিভিন্ন মৌলের পরমাণুর সরল অনুপাত প্রকাশ করে তাকে স্থূল সংকেত বলে। উদাহরণস্বরূপ, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড (H2O2)-এর অণুতে দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু ও দুটি অক্সিজেন পরমাণু আছে এবং পরমাণুগুলোর সংখ্যার অনুপাত হচ্ছে ১ঃ১। সুতরাং হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের স্থূল সংকেত HO। অনুরূপভাবে বেনজিন ও এসিটিলিনের স্থুল সংকেত CH। পদার্থের অণুতে বিভিন্ন মৌলের শতকরা পরিমাণ ও তাদের পারমাণবিক ভর থেকে স্থূল সংকেত গণনা করা হয়।

আণবিক সংকেত (Molecular formula):

কোন যৌগের অণুতে উপস্থিত উপাদান মৌলসমূহের পরমাণুর প্রকৃত সংখ্যা সহ উপস্থাপনাকে আণবিক সংকেত বলে। যেমন, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের একটি অণুতে দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু ও দুটি অক্সিজেন পরমাণু আছে। সুতরাং হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের আণবিক সংকেত H2O2 হবে। আণবিক সংকেত স্থূল সংকেতের সরল গুণিতক। স্থূল সংকেত যদি CH হয়, তবে আণবিক সংকেত CH, C₂H₂, C3H3, C4H4, C5H5, C₆H₆ ইত্যাদি হতে পারে। আণবিক ভর জানা থাকলে মূল সংকেত থেকে আণবিক সংকেত বের করা যায়। বস্তুর আণবিক ভরকে স্থুল সংকেত অনুসারে বস্তুটির ভর দ্বারা ভাগ করে যে সংখ্যা পাওয়া যায় তা বস্তুটিতে বর্তমান মৌলসমূহের পরমাণুর সংখ্যার পরিমাণ নির্দেশ করে। সে অনুযায়ী আণবিক সংকেত লিখতে হয়। যেমন বেনজিনের আণবিক ভর 78। স্থুল সংকেত অনুসারে ভর 13। সুতরাং বেনজিন বর্তমান কার্বন ও হাইড্রোজেন পরমাণুর সংখ্যা 76÷13=6. অতএব বেনজিনের স্থুল সংকেত CH হলেও আণবিক সংকেত C₆H₆।

স্থুল সংকেত ও আনবিক সংকেতের মধ্যে পার্থক্যঃ

১। কোন যৌগের অণুস্থিত প্রতিটি মৌলের পরমাণুগুলোর প্রকৃত সংখ্যাকে প্রতীকের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত রূপে প্রকাশ করাকে যৌগটির আণবিক সংকেত বলে। অন্যদিকে, যে সংকেত দ্বারা অণুতে বিদ্যামান পরমাণুসমূহের সরল অনুপাত প্রকাশ করে তাকে স্থূল সংকেত বলে।

২। আণবিক সংকেত দ্বারা বিভিন্ন যৌগে মৌলের পরমাণু সমূহের প্রকৃত সংখ্যা জানা যায়। অন্যদিকে স্থূল সংকেত দ্বারা যৌগের বিভিন্ন মৌলের পরমাণু সমূহের প্রকৃত সংখ্যা জানা যায় না।

৩। আণবিক সংকেত মৌল অথবা যৌগের হতে পারে। অন্যদিকে স্থূল সংকেত শুধুমাত্র যৌগের ক্ষেত্রে হতে পারে।

৪। একটি আণবিক সংকেত কেবল একটি নির্দিষ্ট যৌগের ক্ষেত্রে হয়। যেমনঃ অ্যাসিটিলিনের আণবিক সংকেত C₂H₂ ও বেনজিনের আণবিক সংকেত C₆H₆ . অন্যদিকে একটি স্থূল সংকেত একাধিক যৌগের হতে পারে। যেমনঃ অ্যাসিটিলিন ও বেনজিন উভয়ের স্থূল সংকেত CH.

৫। বস্তুর আণবিক ভরকে স্থুল সংকেত অনুসারে বস্তুটির ভর দ্বারা ভাগ করে যে সংখ্যা পাওয়া যায় তা বস্তুটিতে বর্তমান মৌলসমূহের পরমাণুর সংখ্যার পরিমাণ নির্দেশ করে। অন্যদিকে পদার্থের অণুতে বিভিন্ন মৌলের শতকরা পরিমাণ ও তাদের পারমাণবিক ভর থেকে স্থূল সংকেত গণনা করা হয় 


 

ক্ষারঃ

যে সব ক্ষারক পানিতে দ্রবীভূত হয় তাকেই ক্ষার বলে। অর্থাৎ ক্ষার একটি ক্ষারীয় ধাতু বা ক্ষারীয় ধাতব ধাতুর উপাদানগুলির একটি মৌলিক হাইড্রক্সাইড বা আয়নিক লবণ, যা পানিতে দ্রবণীয়। জলে দ্রবণীয় ক্ষারকীয় ধর্ম বিশিষ্ট ধাতব হাইড্রক্সাইডকে ক্ষার (Alkali) বলে । যেমন – ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইড (Ca(OH)2, টাশিয়াম হাইড্রক্সাইড (KOH), সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড (NaOH), অ্যামোনিয়াম হাইড্রক্সাইড (NH4OH) ইত্যাদি।
সুতরাং আমরা বলতে পারি, যে সকল ক্ষারক অতিমাত্রায় পানিতে দ্রবণীয় তাদেরকে ক্ষার বলে।

ক্ষারকঃ

ক্ষারক এক শ্রেণির রাসায়নিক যৌগ যা হাইড্রোজেন আয়ন গ্রহণ করতে সক্ষম। যেমন ধাতুর অক্সাইড বা হাইড্রোক্সাইডসমূহ ক্ষার। জলে দ্রবণীয় ক্ষারক যা হাইড্রোক্সাইড আয়ন (OH−) প্রদান করে তাকে ব্রনস্টেড-লাউরির মতবাদ অনুযায়ী ক্ষার বলা হয়। ক্ষারকের অন্যান্য মতবাদ বা সংজ্ঞার্থের মধ্যে রয়েছে ইলেক্ট্রন জোড় দান, হাইড্রোক্সাইড আয়নের উৎস বা আরহেনিয়াস মতবাদ। এইসব রাসায়নিক যৌগ জলে দ্রবীভূত হয়ে হাইড্রোজেন আয়ন অবমুক্ত করে দ্রবণের pH এর মান প্রশম পানির চেয়ে বেশি অর্থাৎ ৭ এর বেশি করে। সবচেয়ে প্রচলিত ক্ষারকসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড, অ্যামোনিয়া। রাসায়নিকভাবে অম্লের বিপরীতধর্মী পদার্থ হল ক্ষারক। অম্ল এবং ক্ষারকের মধ্যে বিক্রিয়াকে বলা হয় প্রশমন বিক্রিয়া। অম্ল এবং ক্ষারককে বিপরীতধর্মী হিসেবে বিবেচনা করা হয় কারণ অম্ল পানিতে হাইড্রোনিয়াম আয়নের ঘনমাত্রা বৃদ্ধি করে ; অপরদিকে ক্ষারক তা হ্রাস করে। ক্ষারক অম্লের সাথে প্রশমন বিক্রিয়া করে লবণ এবং পানি উৎপন্ন করে।

যেমন: Ca(OH)2(ক্ষারক) + H2SO4(এসিড) ——-> CaSO4(লবণ) + 2H2O(পানি)।


ক্ষার এবং ক্ষারকের মধ্যে পার্থক্যঃ


১। ক্ষার ধাতু বা ধাতুর অক্সাইড পানির সাথে দ্রবীভূত হয়ে ক্ষার উৎপন্ন করে। অন্যদিকে মৃতক্ষার ধাতু বা ধাতুর অক্সাইড পানিতে অদ্রবনীয় বা সামান্য দ্রবীভূত হয়ে ক্ষারক সৃষ্টি করে। অক্সাইড নিজেই ক্ষারক।

২। ক্ষারক পানিতে দ্রবীভুত হতেও পারে বা নাও হতে পারে। অন্যদিকে ক্ষার পানিতে দ্রবীভুত হবেই।

৩। ক্ষারের ph মান সাধারনত 7 এর বেশি। অন্যদিকে ক্ষারকের এটির মান ৭ অপেক্ষা কম।

৪। রাসায়নিকভাবে অম্লের বিপরীতধর্মী পদার্থ হল ক্ষারক। অন্যদিকে ক্ষারক অম্লের সাথে প্রশমন বিক্রিয়া করে লবণ এবং পানি উৎপন্ন করে

৫। সকল ক্ষারক ক্ষার নয়। অন্যদিকে সকল ক্ষারই ক্ষারক।

৬। ক্ষার অনেকক্ষন রেখে দিলে তলানি জমে না।যেমন- NaOH. অন্যদিকে ক্ষারক অনেকক্ষন রেখে দিলে তলানি পড়ে ও পানি পরিস্কার হয়। যেমন- CaCO3.



 সাইটোপ্লাজম (Cytoplasm):

সাইটোপ্লাজম হচ্ছে কোষের ভেতরে বেশির ভাগ অংশ জুড়ে অবস্থিত স্বচ্ছ, সমসত্ব, জেলি-সদৃশ পদার্থ। সাইটোপ্লাজমের অভ্যন্তরে অবস্থিত কোষের বিভিন্ন জৈবনিক ক্রিয়াকলাপের সাথে সংশ্লিষ্ট সজীব বস্তুসমূহকে একত্রে সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণু বলা হয় । সাইটোপ্লাজমের ৮০ শতাংশই পানি এবং সাধারণত বর্ণহীন।
১৮৬২ সালে বিজ্ঞানী রুডলফ ভন কলিকার সর্বপ্রথম সাইটোপ্লাজম শব্দটি ব্যবহার করেন। কোষের অধিকাংশ কার্যাবলি সাইটোপ্লাজমেই সম্পাদিত হয়। সাইটোপ্লাজমে ক্যালসিয়াম আয়নের আসা-যাওয়া বিপাক ক্রিয়ার সংকেত হিসেবে সংঘটিত হয়। উদ্ভিদকোষে কোষগহবর ঘিরে সাইটোপ্লাজমের নড়াচড়াকে সাইটোপ্লাজমিক স্ট্রীমিং বলে। সাইটোপ্লাজম এর কাজ :

  1. বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় বিক্রিয়া বা বিপাক সাইটোপ্লাজমে ঘটে।
  2. কোষের গঠন বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  3. বিভিন্ন কোষীয় অঙ্গানুর কাজে সমন্বয় সাধন ঘটায়।
  4. প্রোটোজোয়ার গমনে সাহায্য করে। যেমন – অ্যামিবা

প্রোটোপ্লাজম (Protoplasm):

কোষের অভ্যন্তরে অংশ অর্ধস্বচ্ছ আঠালো এবং জেলির ন্যায় অর্ধতরল,কলয়ডালধর্মী সজীব পদার্থকে প্রোটোপ্লাজম বলে।প্রোটোপ্লাজমই কোষের তথা দেহের সকল মৌলিক জৈবিক কার্যাদি সম্পন্ন করে থাকে।এ জন্যই প্রোটোপ্লাজমকে জীবনের ভিত্তি বলা হয়। দ্য প্রোটোপ্লাজম এটি কোষের জীবন্ত উপাদান। এই কাঠামোটি প্রথম 1839 সালে প্রাচীর থেকে পৃথক তরল হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এটি স্বচ্ছ, সান্দ্র এবং এক্সটেনসিবল পদার্থ হিসাবে বিবেচিত হত। এটি কোনও কাঠামো হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল যার কোনও আপাত সংগঠন নেই এবং অসংখ্য অর্গানেলস রয়েছে। প্রোটোপ্লাজম কোষের পুরো অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হয় যা প্লাজমা ঝিল্লির অভ্যন্তরে পাওয়া যায়। তবে কিছু লেখক প্রোটোপ্লাজমের মধ্যে কোষের ঝিল্লি, নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজমের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

প্রোটোপ্লাজম ও সাইটোপ্লাজমের মধ্যে পার্থক্যঃ

সাইটোপ্লাজম এবং প্রোটোপ্লাজমের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হ’ল সাইটোপ্লাজমের নিউক্লিয়াস থাকে না তবে প্রোটোপ্লাজমের নিউক্লিয়াস থাকে এর কাঠামো। নিচে পার্থক্য দেখানো হলো-

১। একটি কোষের কোষপর্দার ভিতরে ভ্যাকুওল বাদে সমগ্র অংশ কে প্রোটোপ্লাজম বলে। অন্যদিকে প্রোটোপ্লাজমের ভিতরে নিউক্লিয়াস বাদে সমগ্র অংশ কে সাইটোপ্লাজম বলে।

২। প্রোটোপ্লাজম এর তিনটি অংশ- কোষঝিল্লি, নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম। অন্যদিকে সাইটোপ্লাজমের দুটি অংশ- সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণু ও মাতৃকা।

৩। প্রোটোপ্লাজমে নিউক্লিয়াস থাকায় বংশগতির ধারক ও বাহক। অন্যদিকে সাইটোপ্লাজমের বংশগতির ধারক ও বাহক নয়।

৪। পরিবেশ অনুযায়ী জেলি থেকে তরলে এবং তরল থেকে জেলিতে পরিবর্তিত হতে পারে। অন্যদিকে বস্তু বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে, সাইটোপ্লাজম কোষের সোল-জেল হিসেবে আচরণ করে।

৫। প্রোটোপ্লাজম জীবনের আধার হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে সাইটোপ্লাজম কোষীয় অঙ্গাণুর আধার হিসেবে কাজ করে।


 

ঐচ্ছিক পেশী (Skeletal striated muscle):

যে পেশী অনুপ্রস্থে রেখাযুক্ত ও ব্যক্তির ইছামত নিয়ন্ত্রিত হয়,এবং যা দেহের কঙ্কালের উপর থাকে তাকে ঐচ্ছিক পেশী বা কঙ্কাল পেশী বা সরেখ পেশী বলে। প্রতিদিন এক থেকে দুই শতাংশের মধ্যে পেশী ভেঙে পুনর্নির্মাণ হয়। নিষ্ক্রিয়তা, অপুষ্টি, রোগ এবং জরাগ্রস্ততাজনিত ভাঙ্গন পেশী সংশ্লেষ বা সারকোপেনিয়ার দিকে ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে । কঙ্কাল পেশীগুলি দেহের কঙ্কাল তথা অস্থির সাথে অস্থিসন্ধির মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে। যেহেতু আমরা কঙ্কাল পেশীগুলির নড়াচড়া আমাদের ইচ্ছানুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, তাই এগুলিকে ঐচ্ছিক পেশীও বলা হয়। পেশীগুলির দেখতে ডোরাকাটা বলে এগুলিকে রেখাঙ্কিত পেশীও বলা হয়।

অনৈচ্ছিক পেশি (Involuntary muscle):

যে সমস্ত পেশিকলার সংকোচন ও প্রসারণ প্রাণীর ইচ্ছাধীন নয় তাকে অনৈচ্ছিক পেশি বলে। স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা এ পেশির সংকোচন ও প্রসারণ নিয়ন্ত্রিত হয়। মসৃণ পেশীগুলি অন্ননালী, পাকস্থলী, অন্ত্র, শ্বাসনালী, মূত্রথলী, মূত্রনালী, রক্তনালী, এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ অঙ্গের দেয়ালে বা আস্তরণে অবস্থান করে। এগুলি সচেতন জ্ঞান ছাড়াই নিজে নিজে সংকুচিত-প্রসারিত হয়। তাই এগুলি অনৈচ্ছিক পেশী, অর্থাৎ এগুলিকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। যেমন, আমরা শত চেষ্টা করলেও পাকস্থলীকে দ্রুত বা আস্তে খাবার হজম করার নির্দেশ দিতে পারি না। হৃৎপেশী হলো হৃৎপিণ্ডের দেওয়ালে অবস্থিত পেশী যার কাঠামো ঐচ্ছিক পেশীর মত হলেও এর কার্যক্রম অনৈচ্ছিক। এগুলি সর্বক্ষণ কাজ করতে থাকে এবং কখনোই ক্লান্ত হয় না। মসৃণ পেশীগুলির মত এগুলিও অনৈচ্ছিক পেশী।

ঐচ্ছিক পেশি ও অনৈচ্ছিক পেশির মধ্যে পার্থক্যঃ

যে সমস্ত পেশিকলার সংকোচন ও প্রসারণ প্রাণীর ইচ্ছাধীন নয় তাকে অনৈচ্ছিক পেশি বলে। ঐচ্ছিক পেশি ও অনৈচ্ছিক পেশির মধ্যে পার্থক্য নিচে দেখানো হলো-

১। যে পেশী অনুপ্রস্থে রেখাযুক্ত ও ব্যক্তির ইছামত নিয়ন্ত্রিত হয়,এবং যা দেহের কঙ্কালের উপর থাকে তাকে ঐচ্ছিক পেশী বা কঙ্কাল পেশী বা সরেখ পেশী বলে। অন্যদিকে যেসব পেশি আমাদের ইচ্ছামতো সংকুচিত ও প্রসারিত হয় না,তাদের অনৈচ্ছিক পেশি বলে।

২। ঐচ্ছিক পেশি আমরা ইচ্ছামতো সংকুচিত ও প্রসারিত করতে পারি।অন্যদিকে,অনৈচ্ছিক পেশি আমরা ইচ্ছামতো সংকুচিত করতে পারিনা।

৩। ঐচ্ছিকপেশির সাহায্যে বিভিন্ন অঙ্গ সংঞ্চালন করতে পারি।অন্যদিকে,অনৈচ্ছিক পেশির সাহায্যে আমরা কোনো অঙ্গ সংঞ্চালন করতে পারি না।

৪। এ পেশি হাড়ের সাথে লেগে থেকে আমাদের অঙ্গ সংঞ্চালনে সাহায্য করে। অন্যদিকে এ পেশি হাড়ের সাথে লেগে থাকে না।

৫। বহিঃত্বক,হাত,পা ইত্যাদি এ পেশি দ্বারা গঠিত। অন্যদিকে বিশেষ করে অন্তঃত্বক যেমন:পাকস্থলী হৃৎপিন্ড,যকৃৎ ইত্যাদি এ পেশি দ্বারা গঠিত।

 


স্ফুটানাঙ্কঃ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে স্ফুটানাঙ্ক হলো একটি তাপমাত্রা যাতে পৌঁছালে তরল পদার্থ বাষ্পে পরিণত হয়। অতঃএব, যে তাপমাত্রায় কোন তরল পদার্থ বাষ্পে পরিণত হতে শুরু করে তাকে উক্ত পদার্থের ‘স্ফুটানাঙ্ক’ বলা হয়। অর্থাৎ যে তাপমাত্রায় কোন তরল পদার্থের বাষ্পীয় চাপ এক বায়ুমণ্ডল (1 atm) চাপের সমান হয় এবং তরলটি বুদবুদসহ ফুটতে থাকে,তাকে সেই তরল পদার্থের স্ফ‌ুটনাঙ্ক বলে। তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তরলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে থাকলে এক পর্যায়ে তাপমাত্রা স্থির হয়ে যায়। এর পর আর তাপ প্রয়োগ করলেও তাপমাত্রার কোন পরিবর্তন হয়না। একটি নির্দিষ্ট সময় পর অর্থাৎ যতক্ষণে সম্পূর্ণ তরল বাষ্পে পরিণত হয় ততক্ষণ পর আবার তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এই স্থির তাপমাত্রাটিই হল স্ফুটানাঙ্ক। প্রকৃতপক্ষে এই স্থির তাপমাত্রায় যে তাপ প্রয়োগ করা হয় তা কেবল তরল থেকে পদার্থকে বাষ্পে পরিণত করতে ব্যবহৃত হয়। নিচে কয়েকটি তরলের স্ফুটনাংক দেওয়া হল:

তরলের নাম – স্ফুটনাঙ্ক

ইথাইল – ৭৮°C
বেঞ্জিন – ৮০°C
জল – ১০০°C
গ্লিসারিন – ২৯০°C
পারদ – ৩৫৭°C
তরল হাইড্রোজেন- ২৫৩°C
তরল অক্সিজেন – ১৮৩°C
ইথার – ৩৫°C
অ্যাসিটোন – ৫৬°C
ক্লোরোফর্ম – ৬১°C

বাষ্পীভবনঃ

বাষ্পীভবন বা যৌগের বাষ্পীকরণ হল পদার্থকে তরল পর্যায় থেকে বাষ্পে পর্যায়ে রূপান্তর । বাষ্পীভবনের দুটি প্রকার রয়েছে:
(১) বাষ্পে পরিনত
(২) ফুটন ।

বাষ্পীভবন একটি পাত্রে ঘটে, যেখানে ফুটন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বাষ্পীভবন হ’ল তরল পর্যায় থেকে বাষ্প পর্যায়ে রূপান্তর । বাষ্পীভবন হবার সময় প্রদত্ত চাপে স্ফুটনাংকের নীচের তাপমাত্রায় ঘটে। বাষ্পীভবন পৃষ্ঠতলে ঘটে। বাষ্পীভবন তখনই ঘটে যখন কোনও পদার্থের বাষ্পের আংশিক চাপ ভারসাম্যের বাষ্পের চাপের চেয়ে কম থাকে । উদাহরণস্বরূপ, ক্রমাগত নিম্ন চাপের কারণে, দ্রবণ থেকে বের করে দেওয়া বাষ্পগুলি শেষ পর্যন্ত একটি ক্রায়োজেনিক তরলকে নীচে ফেলে রাখে।

ফুটন এছাড়াও তরল পর্যায় থেকে গ্যাস পর্যায়ে পর্যায়ক্রমে রূপান্তর হয়। তবে ফুট্ন তরল পৃষ্ঠের নীচে একপ্রকার বাষ্প বুদবুদ হিসাবে বাষ্পের গঠন করে। উদ্বেগ ঘটে যখন পদার্থের ভারসাম্যীয় বাষ্পের চাপ পরিবেশগত চাপের চেয়ে বেশি বা সমান হয়। যে তাপমাত্রায় ফুটন্ত ঘটে তা হল ফুটন তাপমাত্রা। ফুটন তাপমাত্রা পরিবেশের চাপের সাথে পরিবর্তিত হয়।

বাষ্পায়ন এবং স্ফুটনের মধ্যে পার্থক্যঃ

বাষ্পায়ন এবং স্ফুটন বাষ্পীভবনেরই অংশ কিন্তু বাষ্পায়ন এবং স্ফুটনের মধ্যে পার্থক্য আছে। বাষ্পায়ন ও স্ফুটনের পার্থক্য নিম্নরূপ—

১। বাষ্পায়ন সব উষ্ণতায় ঘটে। অন্যদিকে প্রমাণ চাপে, স্ফুটন একটি নির্দিষ্ট উষ্ণতায় ঘটে।

২। বাষ্পায়ন খুব ধীরে হয়, উষ্ণতা বাড়লে বাষ্পায়নের হার বাড়ে। অন্যদিকে স্ফুটনে অতি দ্রুত গতিতে বাষ্পায়ন হতে থাকে। যতক্ষণ স্ফুটন হয়, ততক্ষণ তরলের উষ্ণতা বাড়ে না স্থির থাকে।

৩। বাষ্পায়নে প্রয়োজনীয় লীন তাপ তরল নিজেদের থেকে সংগ্রহ করে, ফলে তরলের উষ্ণতা কমে। অন্যদিকে স্ফুটনে প্রয়োজনীয় লীনতাপ, তরলটি প্রযুক্ত তাপ থেকে সংগ্রহ করে, তাই তরলের উষ্ণতা একই থাকে।

৪। তরলের সমস্ত অংশ থেকে বাষ্পায়ন হয় না। বাষ্পায়ন তরলের শুধু অপর দল থেকেই হয়। অন্যদিকে স্ফুটন তরলের সমস্ত অংশ থেকে হয়।

৫। বাষ্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় লীন তাপ উষ্ণতার উপর নির্ভর করে। যেমন- ঘরের উষ্ণতায় জলের বাষ্পায়নের জন্য লীন তাপ অনেক বেশী। উষ্ণতা যত বাড়ে লীন তাপ কত কমে। অন্যদিকে স্ফুটনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট তরলের নির্দিষ্ট লীনতাপ আছে। যেমন- জলের বাষ্পীভবনের লীন তাপ 537 ক্যালোরি।

৬। যেকোনো চাপে বাষ্পায়ন হয়। অন্যদিকে স্ফুটনে তরলের উপরের বাষ্প চাপ বাইরে বায়ুর চাপের সমান হয়।