Recent Post
Loading...

জৈব যৌগের সমাণুতা-(শেষ পর্ব)

শিখনফল: যৌগের সংকেত (আণবিক অথবা গাঠনিক) থেকে  সম্ভাব্য সমাণুগুলি নির্ণয় করতে পারবে।





আগের পর্বে আমরা যৌগের সমাণুতার প্রকারভেদ সম্পর্কে জেনেছি।


এই পর্বে আমরা শিখব কিভাবে যৌগের সংকেত থেকে সমাণু নির্ণয় করতে হয়।

সাধারণত যৌগের আনবিক সংকেতের সমাণু নির্ণয় করতে বলা হলে গাঠনিক সমাণু নির্ণয়ের চেষ্টা করতে হয় এবং গাঠনিক সংকেতের সমাণু নির্ণয় করতে বলা  হলে স্টেরিও সমাণু নির্ণয়ের চেষ্টা করতে হয়। তবে সম্ভাব্য সকল সমাণু নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সবরকম সমাণুর গঠন সম্ভব কিনা চেষ্টা করে দেখতে হবে।

গাঠনিক সমাণু নির্ণয়ের ক্ষেত্রে নিচের নিয়মগুলো অনুসরণ করতে হবে-

  • প্রথমেই প্রদত্ত যৌগের সংকেত থেকে যৌগটির সমগোত্রীয় শ্রেণী নির্ধারণ করতে হবে। একটি যৌগ শুধুমাত্র তার সমগোত্রীয় শ্রেণীর সমাণু গঠন করবে। নিচে যৌগের সাধারণ সংকেত ও তার সমগোত্রীয় শ্রেণী দেখানো হল-

আনবিক সংকেত
সমগোত্রীয় শ্রেণী
CnH2n+2
অ্যালকেন
CnH2n
অ্যালকিন, সাইক্লো অ্যালকেন
CnH2n-2
অ্যালকাইন, সাইক্লো অ্যালকিন, ডাই-ইন
CnH2n+2O
অ্যালকোহল, ইথার
CnH2n+1OH
অ্যালকোহল
CnH2nO
কার্বনাইল (অ্যালডিহাইড, কিটোন)
CnH2nO2
কার্বোক্সিলিক এসিড, এস্টার
CnH2n+3N
সম্পৃক্ত অ্যালিফেটিক অ্যামিন

  • কার্বন সংখ্যা অনুযায়ী সবচেয়ে দীর্ঘ শিকল তৈরী করতে হবে।
  • কার্বনের সংখ্যা কমিয়ে বিভিন্ন শাখা শিকল তৈরী করতে হবে। মূল শিকলে যতগুলি কার্বন সংখ্যা কমানো হবে শাখা শিকলে ঠিক ততগুলো কার্বন যুক্ত করতে হবে।
  • শিকলের সম্ভাব্য সকল স্থানে কার্যকরী মূলক বসাতে হবে।


সম্ভাব্য সকল গাঠনিক সমানু পাওয়ার পর স্টেরিও সমাণু হয় কিনা দেখতে হবে।

স্টেরিও সমাণু:

দ্বিবন্ধন যুক্ত যৌগ অথবা চাক্রিক যৌগ জ্যামিতিক সমাণুতা প্রদর্শণ করে। (অর্থাৎ যদি যৌগটি দ্বিবন্ধনযুক্ত যৌগ অথবা চাক্রিক যৌগ হয় তাহলে সেটি সিস-ট্রান্স সমাণু গঠণ করে কিনা দেখতে হবে)

কাইরাল কার্বন যুক্ত যৌগ আলোক সমাণুতা প্রদর্শণ করে। (অর্থাৎ যদি যৌগটিতে একটি কাইরাল কার্বন থাকে তবে ঐ কার্বন পরমাণুর স্বাপেক্ষে পরস্পর অসমপাতিত দর্পণ প্রতিবিম্ব তৈরী করতে হবে)

এইবার এই নিয়ম গুলো অনুসরণ করে আমরা  C4H8 এর সম্ভাব্য সকল সমাণু নির্ণয় করি-

১. যৌগের সংকেত থেকে সমগোত্রীয় শ্রেণী নির্ণয়-

C4Hঅর্থাৎ CnH2n  সাধারণ সংকেত বিশিষ্ট যৌগের সমগোত্রীয় শ্রেণী হল অ্যালকিন এবং সাইক্লো অ্যালকেন (অর্থাৎ যৌগটির শুধুমাত্র অ্যালকিন ও সাইক্লো অ্যালকেন সমাণু থাকবে)।

২. যেহেতু এই যৌগে ৪টি কার্বন পরমাণু তাই সবচেয়ে দীর্ঘ শিকলটি হবে ৪ কার্বন এর। আবার যেহেতু এটি অ্যালকিন সমগোত্রীয় শ্রেনীর যৌগ তাই দীর্ঘ শিকলে অবশ্যই একটি দ্বিবন্ধন থাকবে। তাহলে আমরা ৪ কার্বনের যে সমাণুগুলি সাজাতে পারছি তা হল-

(i) 

(ii)

(iii) 



(লক্ষ্য কর, আপাতদৃষ্টিতে (i) ও (iii) গাঠনিকভাবে ভিন্ন মনে হলেও জৈব যৌগের নামকরণের নিয়ম থেকে আমরা জানি এই দুটি আসলে একই গঠন এবং একই যৌগ। তাই (i) ও (iii) আসলে একই সমাণু। এদের দুইটি আলাদা সমাণু হিসেবে লেখা যাবে না।)

৩. ৪ কার্বনের পর দীর্ঘ শিকলে কার্বনের সংখ্যা কমিয়ে অনুরূপভাবে শিকল কাঠামো তৈরী করতে হবে। এক্ষেত্রে ৩ কার্বনের শুধুমাত্র নিম্নোক্ত গঠনের একটিমাত্র যৌগ তৈরী করা সম্ভব হয়।

(আপাত দৃষ্টিতে ভিন্ন কিন্তু একই গঠনের এবং একই নামের এই একটি যৌগই সম্ভব)


যেহেতু এই যৌগটি দিয়ে ২ কার্বনের আর কোন শিকল গঠন সম্ভব হয় না তাই আমরা পরবর্তী সমগোত্রক অর্থাৎ সাইক্লো অ্যালকেন সমাণু সাজানোর চেষ্টা করি-
৪.(ক) প্রতিটি কার্বন (৪টি) দিয়ে চক্রিয় কাঠামোর অ্যালকেন-


৪.(খ) কার্বনের সংখ্যা কমিয়ে চক্রিয় কাঠামোর অ্যালকেন-

(আপাত দৃষ্টিতে ভিন্ন কিন্তু একই গঠনের এবং একই নামের এই একটি যৌগই সম্ভব)

এভাবে সবগুলি গাঠনিক সমাণু নির্ণয় করার পর আমরা দেখব এই যৌগটির স্টেরিও সমাণু সম্ভব কিনা-

আমরা জানি দ্বিবন্ধন ও চক্রীয় যৌগ জ্যামিতিক সমাণু প্রদর্শন করে।

এর মধ্যে বিউট-২-ইন সমাণু গঠনটি সিস-ট্রান্স জ্যামিতিক সমাণুতা প্রদর্শণ করে- 


যেহেতু এই যৌগে কোন কাইরাল কার্বন নেই তাই এটি আলোক সমাণুতা প্রদর্শন করবে না।

তাহলে C4Hএর সম্ভাব্য সকল সমাণুগুলি হচ্ছে

গাঠনিক সমাণু:


স্টেরিও সমাণু:



এইবার আমরা জৈব যৌগের সমাণুতা-১ পর্বে বিভিন্ন প্রকারের সমাণু শেখার সেময় যে কাজগুলি ছিল সেগুলি মিলিয়ে দেখি-

C5H12-এর শিকল সমাণু নির্ণয় করার চেষ্টা কর-

(C5H12  অ্যালকেন সমগোত্রক। মূল শিকলে কার্বনের সংখ্যা কমিয়ে সম্ভাব্য সমাণু নির্ণয় করতে হবে)



C4H8এর অবস্থান সমাণু নির্ণয় করার চেষ্টা কর-

C4H8 অ্যলকিন সমগোত্রক, তাই দ্বিবন্ধনের অবস্থান দিয়ে সমাণুতা নির্ণয় করতে হবে)

C2H6O-এর কার্যকরী মূলক সমাণুতা নির্ণয় করার চেষ্টা কর-

(C2H6O এর সমগোত্রক অ্যালকোহল ও ইথার তাই এই দুটি কার্যকরী মূলকযুক্ত সমাণু নির্ণয় করতে হবে)

C4H10O –এর মেটামার নির্ণয় করার চেষ্টা কর-


(C4H10O এর সমগোত্রক অ্যালকোহল ও ইথার। আমরা জানি, ইথার, কিটোন ও সেকেন্ডারি অ্যামিনসমূহ মেটামারিজম প্রদর্শন করে। তাই ইথার মূলকের দুই পাশে ভিন্ন সংখ্যক কার্বন পরমাণু লিখে মেটামার সমাণু নির্ণয় করতে হবে)

CH3-CH(NH2)-COOH -এর আলোক সমাণু নির্ণয়-



(যৌগের দ্বিতীয় কার্বন পরমাণু টি কাইরাল কার্বন। এটির স্বাপেক্ষে দুটি একে অপরের অউপরিস্থাপণীয় দর্পন প্রতিবিম্ব অর্থাৎ আলোক সমাণু গঠিত হয়)

আশা করি, এই নিয়ম গুলো অনুসরণ করে এবং বেশী বেশী অনুশীলন করে আমরা জৈব যৌগের সমাণু নির্ণয় করতে পারবো।


নিম্নলিখিত যৌগসমূহের সমাণুতা নির্ণয় কর-

(i) C5H10O2
(ii) C6H5-CH-CH(NH2)-COOH

0 comments:

Post a Comment