শিখনফল: IUPAC পদ্ধতিতে জৈব যৌগের নামকরণ করতে পারবে।
জৈব যৌগের নামকরণ-১
আগের পর্বে আমরা সরল শিকল অ্যালকেনের নামকরণ শিখেছি। এই পর্বে আমরা দেখব কিভাবে শাখাশিকল যুক্ত অ্যালকেনের নামকরণ করতে হয়। নিচের উদাহরণ লক্ষ্য করি-
শাখা শিকল যুক্ত অ্যালকেনের নামকরণের জন্য-
- মূল হাইড্রোকার্বন শিকল বা প্রধান শিকল নির্ণয় করতে হবে। যেভাবে হিসেব করলে শিকলে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক কার্বন পরমাণু পাওয়া যাবে সেটিই মূল শিকল।
- মূল শিকলে শাখা শিকলটির অবস্থান নির্ণয়ের জন্য মূল শিকলটিকে এমনভাবে সংখ্যায়িত করতে হবে যেন শাখাশিকলটি ন্যূনতম অবস্থান লাভ করে। অর্থাৎ যেদিক থেকে সংখ্যায়িত করলে শাখা শিকলটি আগে পাওয়া যাবে সেদিক থেকে সংখ্যায়িত করতে হবে। নামকরণের শুরুতেই এই অবস্থান সূচক সংখ্যাটি লিখতে হবে।
- শিকলে সংযুক্ত অ্যালকাইল মূলকের নাম লিখতে হবে। (অ্যালকেন (CnH2n+2) থেকে একটি হাইড্রোজেন সরালে যে মূলক (-CnH2n+1) পাওয়া যায় তাকে অ্যালকাইল মূলক বলে। যেমন-মিথেন থেকে মিথাইল, প্রোপেন থেকে প্রোপাইল ইত্যাদি)।
- মূল শিকলে কার্বন পরমাণুর সংখ্যা অনুসারে হাইড্রোকার্বনের নামকরণ করতে হবে।
এই নিয়মগুলো অনুসরণ করে উপরের যৌগটির নামকরণ করি-
দেখা যাচ্ছে চিত্রের মতকরে সংখ্যায়িত করলে কার্বন শিকলটি দীর্ঘতর (৬টি C পরমানু) হয় এবং ন্যূনতম অবস্থানে (৩ নং) প্রতিস্থাপিত মূলক বা শাখা শিকল (মিথাইল মূলক) পাওয়া যায়। তাই যৌগটির নাম ৩-মিথাইলহেক্সেন।
লক্ষ্য কর, শিকলের অবস্থান সূচক সংখ্য ও নামের আগে একটি হাইফেন (-) বসেছে। আর প্রতিস্থাপিত মূলক ও মূল হাইড্রোকার্বন শিকলের নামের আগে কোন স্পেস নেই। দুটি নাম একসাথে লিখতে হবে।
এবার আমরা নিচের যৌগদুটির নামকরণ করি-
- দীর্ঘতম কার্বন শিকল নির্ণয় করি।
- ন্যূনতম অবস্থানে শাখা রেখে মূল শিকল সংখ্যায়িত করি।
- নামকরণ করি।
আগের উদাহরণ টি বুঝে থাকলে আমরা নিশ্চই এতক্ষণে বুঝে গেছি এই দুটি আসলে একই যৌগ। ২-মিথাইল পেন্টেন।
নামরকরণ করি-
উত্তর: যৌগদুটির নাম
৩-মিথাইলপেন্টেন
২-মিথাইল বিউটেন।
এইবার আরও একটি উদাহরণ লক্ষ্য করি-
এই যৌগের ২,৩ ও ৪ নং অবস্থানে একই প্রতিস্থাপিত মূলক রয়েছে। তাই একই প্রতিস্থাপিত মূলকের প্রতিটি অবস্থান নির্দেশক সংখ্যা পর পর কমা (,) দিয়ে লেখা হয়েছে এবং মূলকটি তিনবার আছে বলে ট্রাই শব্দটি বসেছে।
অনুরুপভাবে ২,৪,৫,৬,৭,৮ ইত্যাদি বারের একই প্রতিস্থাপিত মূলকের জন্য যথাক্রমে ডাই, টেট্রা, পেন্টা, হেক্সা, হেপ্টা, অক্টা ইত্যাদি শব্দ বসবে।
- একই অবস্থানে একাধিকবার প্রতিস্থাপিত মূলক থাকলে প্রতিবারের জন্য অবস্থান নির্দেশক সংখ্যাটি লিখতে হবে। যেমন-
- একই মূল শিকলে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিস্থাপিত মূলক থাকলে তাদের নাম ইংরেজী বর্ণমালার ক্রম অনুসারে লিখতে হবে। যেমন-
প্রথমে ethyl -এর e, তারপর methyl -এর m ও সবশেষে propyl -এর p। লক্ষ্য কর যদিও মিথাইল এর আগে ট্রাই অর্থাৎ 't' শব্দটি ইংরেজী বর্ণানুক্রমানুসারে 'p' -এর পরে কিন্তু মনে রাখতে এটি মূলকের নাম নয় এটি মূলকের সংখ্যা। তাই এটি হিসেব হবে না। শুধুমাত্র মূলকের নামের বর্ণানুক্রম অনুসরণ করতে হবে।
- যদি দুই দিক থেকে একই অবস্থানে প্রতিস্থাপিত মূলক থাকে তবে দ্বিতীয় প্রতিস্থাপিত মূলকের ন্যুনতম অবস্থান হিসাব করতে হবে-
ডান ও বাম দুই দিক থেকেই এই যৌগটির ২ নং এ প্রথম প্রতিস্থাপক মূলক পাওয়া যায়। কিন্তু ডান দিক থেকে ৩ নং এ এবং বাম দিক থেকে ৫ নং এ দ্বিতীয় প্রতিস্থাপক মূলক পাওয়া যায়। তাই যৌগটির প্রধান শিকল ডান দিক থেকে সংখ্যায়িত করে নামকরণ করা হয়েছে।
- শাখা শিকলের অবস্থান নির্দেশক সংখ্যার যোগফল যে দিক থেকে ক্ষুদ্রতর হবে সে দিক থেকে প্রধান শিকল সংখ্যায়িত করতে হবে। যেমন-
দুই দিক থেকে একই ২ নং অবস্থানে প্রতিস্থাপিত মূলক রয়েছে এবং দ্বিতীয় কোন প্রতিস্থাপক নেই। ডান দিক থেকে সংখ্যায়িত করলে অবস্থান নির্দেশক সংখ্যার যোগফল হয় (২+৪+৪=১০)। তাই বাম দিক থেকে (২+২+৪=৮) অর্থাৎ ক্ষুদ্রতর দিক থেকে সংখ্যায়িত করে নামকরণ করা হয়েছে।
- যদি দুই বা ততোধিক ভিন্ন প্রকৃতির মূলক একই অবস্থানে থাকে তবে ইংরেজী বর্ণানুক্রমানুসারে যে মূলকটি আগে আসে তার অবস্থান টি আগে হিসেব করতে হবে।
ইথাইল ও মিথাইল উভয়ই ৩ নং অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু বর্ণানুক্রমানুসারে ইথাইলের অবস্থান ৩ হয়েছে।
- সমসংখ্যক কার্বন পরমানুর দুটি আলাদা প্রধান শিকল সম্ভব হলে অধিক সংখ্যক বা মূলকযুক্ত কার্বন শিকলকে প্রধান শিকল হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
- শাখাশিকলে দুই এর অধিক কার্বন পরমাণুর জটিল প্রতিস্থাপক থাকলে শাখাটিকে পৃথকভাবে সংখ্যায়িত করে শাখাটির অবস্থান সূচক সংখ্যা লিখে নাম বন্ধনীর মধ্যে লিখতে হবে। যেমন-
এই নিয়মগুলো বারবার অনুশীলনের মাধ্যমে আয়ত্ত্ব করতে পারলে পরবর্তীতে অন্য যেকোন ধরনের জৈব যৌগের নামকরণ খুব সহজেই করা যায়।
0 comments:
Post a Comment