Recent Post
Loading...

বাস্তব ক্ষেত্রে সংঘটিত কয়েকটি রাসায়নিক বিক্রিয়া

 


বাস্তব ক্ষেত্রে সংঘটিত কয়েকটি রাসায়নিক বিক্রিয়া

মৌমাছি পোকার কামড়ের ক্ষতস্থানে পোকার শরীর থেকে যে বিষ প্রবেশ করে তাতে অম্লীয় উপাদান থাকে । মানুষ পোকার কামড়ের জ্বালাযন্ত্রনা নিবারণ করার জন্য ক্ষতস্থানে চুন বা মধু ব্যবহার করে । চুন ও মধু ক্ষারধর্মী পদার্থ , এটা অম্লীয় উপাদানের সাথে প্রশমন বিক্রিয়া করে ।

বাস্তব ক্ষেত্রে সংঘটিত কয়েকটি রাসায়নিক বিক্রিয়া

মিথেন গ্যাস বা প্রাকৃতিক গ্যাসকে পুড়িয়ে বা দহন করে যে তাপ পাওয়া যায় তা রান্নাসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হয় (সনাতন পদ্ধতিতে কোন যৌগের সাথে অক্সিজেন বা ঋনাত্বক অংশের সংযোগকে জারণ বলা হয়) ।

CH_4 + 2O_2 \rightarrow CO_2 + 2H_2O

একইভাবে কার্বন, সালফার, হাইড্রোজেন এবং ম্যাগনেশিয়ামকে দহন করলে তাদের অক্সাইড উৎপন্ন হয় ।

প্রশমন বিক্রিয়া পরীক্ষার মাধ্যমে প্রদর্শন

এসিড ও ক্ষারের জলীয় দ্রবণকে একত্রে মিশ্রিত করলে লবণ ও পানি উৎপন্ন হয় ।

এসিড + ক্ষার \rightarrow লবণ + পানি

রাসায়নিক পরিবর্তন বা রাসায়নিক বিক্রিয়ার শ্রেনীবিভাগ

দুই বা ততোধিক যৌগ বা মৌল একত্রে যুক্ত হয়ে নতুন যৌগ উৎপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়ার নাম সংযোজন বিক্রিয়া ।

H_2(g) + Cl_2 (g) 
ightarrow 2HCl (g)

সংযোজন বিক্রিয়ায় দুই বা ততোধিক মৌলিক পদার্থ একত্রে যুক্ত হয়ে নতুন যৌগ উৎপন্ন হলে, একে সংশ্লেষণ (synthesis) বিক্রিয়া বলে ।

বাস্তব ক্ষেত্রে সংঘটিত কয়েকটি রাসায়নিক বিক্রিয়া

জিংক সালফিউরিক এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে জিংক সালফেট ও হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে । বিক্রিয়ায় অধিক সক্রিয় জিংক ধাতু কম সক্রিয় হাইড্রোজেনকে প্রতিস্থাপন করে (সক্রিয়তার তুলনার জন্য খনিজসম্পদ(ধাতু/অধাতু) অধ্যায় দেখ )।

H_2SO_4 + Zn \rightarrow ZnSO_4 + H_2

জারণ সংখ্যা নির্ণয়

মৌলের জারণ সংখ্যা মূলত তার ইলেকট্রন বিন্যাসের সাথে সম্পর্কিত। একটি যৌগে কোনো মৌলের জারণ সংখ্যা যৌগে বিদ্যমান অন্যান্য মৌলের জারণ সংখ্যার উপর নির্ভরশীল। যৌগে কোনো একটি মৌলের জারণ সংখ্যা নির্ণয় করার জন্য যৌগে বিদ্যমান অন্যান্য মৌলের প্রমাণ জারণ সংখ্যা (Standard oxidation number) ব্যবহার করা হয়। 

 

খাদ্য

আমাদের শরীরে খাদ্য থেকে শক্তি উৎপন্ন হয় রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে । শর্করাজাতীয় খাদ্য ; স্টার্চ (ভাত, রুটি ) , চিনি , গ্লুকোজ ইত্যাদি বায়ু থেকে গ্রহন করা অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, পানি ও শক্তি উৎপন্ন করে । মানুষের শরীরে সংঘটিত এই প্রক্রিয়াকে শ্বসন (Respiration) বলে । অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়ার পূর্বে স্টার্চ ও চিনি বিশ্লেষিত হয়ে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজে পরিণত হয় ।

শর্করা জাতীয় খাদ্যশর্করা জাতীয় খাদ্য   +     অক্সিজেন      \rightarrow  কার্বন-ডাই-অক্সাইড   +   পানি  +    শক্তি


বিপাক

মানবদেহের বিপাক ক্রিয়ায় যে সকল ব্যক্তির পাকস্থলিতে অতিরিক্ত হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস (HCl) উৎপন্ন হয় তারা ডাক্তারের সাজেশন অনুযায়ী এন্টাসিড জাতীয় ঔষধ সেবন করেন । এন্টাসিড জাতীয় ঔষধে ধাতব  হাইড্রোক্সাইড থাকে যা ক্ষারধর্মী এবং হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস (HCl) এসিডধর্মী । ক্ষারধর্মী এন্টাসিড এসিডধর্মী হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCl) গ্যাসকে প্রশমন বিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রশমিত করে ।

3HCl \;\;+\;\; Al(OH)_3\;\; \rightarrow \;\; AlCl_3\;\;+\;\;3H_2O

2HCl \;\;+\;\; Mg(OH)_2\;\; \rightarrow \;\; MgCl_2\;\;+\;\;2H_2O

কলাগাছ

বর্ষাকালে অনেকসময় পুকুর বা খালের নিকটবর্তী কলাগাছ পানির সংস্পর্শে আসলে মরে যায় । এসিডবৃষ্টির কারণে বর্ষাকালে পানি অম্লীয় হয় । কলাগাছে ক্ষারীয় উপাদান থাকে । পানির এসিড কলাগাছের ক্ষারকে প্রশমিত করে । ফলে গাছ মারা যায় ।

বিক্রিয়ার হার

প্রতি একক সময়ে কোন একটি বিক্রিয়াপাত্রে যে পরিমাণে উৎপাদের ঘনমাত্রা বৃদ্ধি পায় বা বিক্রিয়কের ঘনমাত্রা হ্রাস পায় তাকে বিক্রিয়ার হার বা গতিবেগ বলে । বিক্রিয়কের এবং উৎপাদের ঘনমাত্রাকে molL^-^1 । অতএব বিক্রিয়ার হারের একক হবে molL^-^1s^-^1 ।

অধঃক্ষেপণ বিক্রিয়া

একটি নির্দিষ্ট দ্রাবকে দ্রবণীয় দুটি যৌগকে মিশ্রিত করার পর ঐ দ্রাবকে অদ্রবণীয় বা স্বল্প দ্রবণীয় নতুন যৌগ উৎপন্ন হলে যৌগটি বিক্রিয়াপাত্রের তলদেশে কঠিন পদার্থ হিসেবে জমা হয়। উৎপন্ন নতুন যৌগ দ্রাবকে দ্রবীভূত না হয়ে কঠিন পদার্থ হিসেবে জমা হলে তাকে অধঃক্ষেপ বলে। যে বিক্রিয়ায় উৎপন্ন যৌগ অধঃক্ষেপ হিসেবে পাত্রের তলদেশে জমা হয় তাকে অধঃক্ষেপণ বিক্রিয়া বলে। অধঃক্ষেপণ বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী বিক্রিয়ক দুটি সাধারণত আয়নিক যৌগ হয়। একটি বিক্রিয়ায় উৎপন্ন যৌগ অধঃক্ষেপ হিসেবে জমা হবে কি না তাহা বিক্রিয়ায় ব্যবহৃত দ্রাবকের উপর নির্ভর করে। কোনো বিক্রিয়া উৎপন্ন যৌগ পানি দ্রাবকে অধঃক্ষিপ্ত হলেও অন্য কোনো দ্রাবকে অধঃক্ষিপ্ত না-ও হতে পারে। অধিকাংশ রাসায়নিক বিক্রিয়া পানি দ্রাবকে সম্পন্ন করা হয়। তাই উৎপন্ন যৌগের মধ্যে যে কোনো একটি যৌগ পানিতে অদ্রবণীয় হলে বিক্রিয়াটিকে অধঃক্ষেপণ বিক্রিয়া বলে।

বিক্রিয়ার হার নির্ধারক

বিক্রিয়ার হার বা গতিবেগ বিক্রিয়ার তাপমাত্রা, বিক্রিয়ার ঘনমাত্রা, বিক্রিয়কের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল এবং বিক্রিয়ায় ব্যবহৃত প্রভাবকের উপর নির্ভরশীল । বিক্রিয়ার তাপমাত্রা, বিক্রিয়ার ঘনমাত্রা, বিক্রিয়কের পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল বৃদ্ধির সাথে বিক্রিয়ার হার বৃদ্ধি পায় । প্রভাবক ব্যবহারে বিক্রিয়ার হার বৃদ্ধি এবং হ্রাস উ্ভয়ই হতে পারে । বিক্রিয়ায় ব্যবহৃত প্রভাবকের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে হার বা গতিবেগ বৃদ্ধি বা হ্রাস পায় । এমনকি প্রভাবকের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে উৎপাদ ও ভিন্ন হয় ।

বিক্রিয়ায় তাপের প্রভাব

যে সকল উভমুখী বিক্রিয়ায় তাপের পরিবর্তন হয় সে সকল বিক্রিয়ার সাম্যবস্থার উপর তাপের প্রভাব থাকে । যেমন ,

A\;\;+\;\;B\;\;\rightleftharpoons \;\;C\;\;+\;\;D,\;\;\Delta H= -X\; KJ

 উভমুখী বিক্রিয়াটির সম্মুখমুখী অংশটি তাপউৎপাদী এবং বিপরীত বিক্রিয়াটি তাপহারী । এই বিক্রিয়ার সাম্যবস্থায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে বিক্রিয়ার সাম্যবস্থা বাম দিকে অগ্রসর হয়ে বিক্রিয়কের পরিমাণ বৃদ্ধি করবে । অর্থাৎ তাপহারী বিক্রিয়া বৃদ্ধির মাধ্যমে তাপ বৃদ্ধিজনিত ফলাফল প্রশমিত করবে । একইভাবে বিক্রিয়ার সাম্যবস্থায় তাপমাত্রা হ্রাস করলে সাম্যবস্থা ডান দিকে অগ্রসর হবে । অর্থাৎ তাপউৎপাদী বিক্রিয়া বৃদ্ধি পাবে । যে সকল উভমুখী বিক্রিয়ায় তাপের পরিবর্তন হয় না সে সকল বিক্রিয়ার সাম্যবস্থার উপর তাপের প্রভাব নেই ।

ঘনমাত্রার প্রভাব

সকল বিক্রিয়ার সাম্যবস্থার উপর বিক্রিয়কের ঘনমাত্রার প্রভাব রয়েছে । বিক্রিয়ার সাম্যবস্থায় যে কোন একটি বিক্রিয়কের ঘনমাত্রা বৃদ্ধি করলে  বিক্রিয়ার সাম্যবস্থা ডান দিকে অগ্রসর হয়ে বিক্রিয়কের ঘনমাত্রা হ্রাস করে পরিবর্তনের ফলাফলকে প্রশমিত করে এবং উৎপাদের পরিমাণ বৃদ্ধি করে । একইভাবে সাম্যবস্থায় যে কোন একটি উৎপাদের ঘনমাত্রা বৃদ্ধি করলে সাম্যবস্থা বাম দিকে অগ্রসর হয়ে উৎপাদের পরিমাণ হ্রা্স করে ।

আর্দ্রবিশ্লেষন বিক্রিয়া

পানির অণুতে ধনাত্মক হাইড্রোজেন আয়ন (H^+) ও ঋণাত্মক হাইড্রোক্সিল আয়ন (OH^-) থাকে। কোনো যৌগের দুই অংশ পানির বিপরীত আধানবিশিষ্ট দুই অংশের সাথে যুক্ত হয়ে নতুন যৌগ উৎপন্ন করে। এই বিক্রিয়াকে আর্দ্রবিশ্লেষন বিক্রিয়া বলে। আর্দ্রবিশ্লেষন বিক্রিয়া, দ্বি-প্রতিস্থাপন বিক্রিয়ার অনুরূপ (অধঃক্ষেপণ বিক্রিয়ায় আলোচিত)। তবে এই বিক্রিয়ায় পানি অংশগ্রহণ করায় একে আর্দ্রবিশ্লেষন বলে এবং বিক্রিয়ায় কোনো ইলেকট্রনের স্থানান্তর ঘটে না। অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড পানির সাথে বিক্রিয়া করে অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রক্সাইড ও হাইড্রোক্লোরিক এসিড উৎপন্ন করে। এখানে অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইডের অ্যালুমিনিয়াম আয়ন (Al^3^+) পানির হাইড্রোক্সিল আয়নের (OH^-) সাথে এবং ক্লোরাইড আয়ন (Cl^-) পানির হাইড্রোজেন আয়নের (H^+) সাথে যুক্ত হয়। বিক্রিয়ায় উৎপন্ন অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রক্সাইড পানিতে অদ্রবণীয়, তাই উৎপাদটি অধঃক্ষেপ হিসেবে বিক্রিয়াপাত্রের তলদেশে জমা হয়।

AlCl_3\;\; +\;\; 3H_2O\;\;\rightarrow \;\;Al(OH)_3\;\;+\;\;3HCl

লিটমাস

এসিডের জলীয় দ্রবণের কয়েকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকে। যেমন, এই দ্রবণে ভেজা লাল লিটমাস কাগজ প্রবেশ করালে নীলবর্ণে পরিণত হয়। দ্রবণের  pH 7 -এর কম থাকে। অনুরূপভাবে ক্ষারের জলীয় দ্রবণের কয়েকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকে। যেমন, এই দ্রবণে ভেজা নীল লিটমাস কাগজ প্রবেশ করালে লালবর্ণে পরিণত হয়। দ্রবণের  pH 7-এর বেশি থাকে।

প্রশমন বিক্রিয়া

প্রশমন বিক্রিয়া : এই বিক্রিয়াকে এসিড-ক্ষার বিক্রিয়া বলা হয়। এসিডের জলীয় দ্রবণের কয়েকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকে। যেমন, এই দ্রবণে ভেজা লাল লিটমাস কাগজ প্রবেশ করালে নীলবর্ণে পরিণত হয়। দ্রবণের pH 7 -এর কম থাকে। অনুরূপভাবে ক্ষারের জলীয় দ্রবণের কয়েকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকে। যেমন, এই দ্রবণে ভেজা নীল লিটমাস কাগজ প্রবেশ করালে লালবর্ণে পরিণত হয়। দ্রবণের  pH 7-এর বেশি থাকে। এসিড ও ক্ষারের জলীয় দ্রবণকে একত্রে মিশ্রিত করলে লবণ ও পানি উৎপন্ন হয়।

এসিড + ক্ষার   \rightarrow  লবণ + পানি

জলীয় দ্রবণে এসিড ও ক্ষার বিক্রিয়া করে লবণ ও পানি উৎপন্ন হওয়ার সময় দ্রবণের pH 7 -এর নিকটবর্তী হয়। প্রশমন বিক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে pH -এর মান 7  হয়।

পরিবর্তন

ভৌত পরিবর্তনে পরিবর্তিত পদার্থকে সহজে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া যায় কিন্তু রাসায়নিক পরিবর্তনে পরিবর্তিত পদার্থকে সম্পূর্ণরূপে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া যায় না।

মরিচা

আয়রনের (লোহা) তৈরি দ্রব্যকে বায়ুতে মুক্ত অবস্থায় রেখে দিলে অক্সিজেন ও জলীয়বাষ্পের সাথে বিক্রিয়ায় অংশগ্রহন করে । আয়রন বায়ুর জলীয়বাষ্পের সাথে বিক্রিয়া করে আয়রনের অক্সাইড (মরিচা) উৎপন্ন করে । মরিচার রাসায়নিক সংকেত  Fe_2O_3.nH_2O । মরিচার প্রতি অণুতে যুক্ত পানির অণুর সংখ্যা অজ্ঞাত । তাই যুক্ত পানির অণুর সংখ্যাকে n দ্বারা প্রকাশ করা হয় । মরিচার সংকেতকে FeO(OH) হিসেবেও প্রকাশ করা হয় । 

লা শাতেলিয়ারের নীতি

বিক্রিয়ার সাম্যবস্থায় সম্মুখমুখী ও বিপরীতমুখী উভয় বিক্রিয়া চলমান থাকে । রাসায়নিক বিক্রিয়ার এই অবস্থায় উৎপাদের পরিমাণ বিক্রিয়ার নিয়ামক ( তাপমাত্রা, চাপ ও বিক্রিয় ঘনমাত্রা ) দ্বারা প্রভাবিত হয় । উভমুখী বিক্রিয়ার সাম্যবস্থায় উৎপাদের পরিমাণ লা শাতেলিয়ারের নীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় । 

লা শাতেলিয়ারের নীতি :

উভমুখী বিক্রিয়ার সাম্যবস্থায় বিক্রিয়ার যে কোন একটি নিয়ামক ( তাপমাত্রা/চাপ/বিক্রিয়কের ঘনমাত্রা ) পরিবর্তন (হ্রাস/বৃদ্ধি) করলে বিক্রিয়ার সাম্যবস্থা এমনভাবে পরিবর্তন হয় যেন নিয়ামক পরিবর্তনের ফলাফল প্রশমিত হয় ।

জারণ সংখ্যা

ধাতুসমূহের জারণ সংখ্যা ধনাত্মক এবং অধাতুসমূহের জারণ সংখ্যা ঋণাত্মক হয়।

ভৌত পরিবর্তন

বরফকে বায়ুতে মুক্ত অবস্থায় রেখে দিলে পরিবেশ থেকে তাপ শোষণ করে তরল পানিতে পরিণত হয় এবং তরল পানিকে ১০০^oC তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে জলীয়বাষ্প উৎপন্ন হয়। বরফ, তরল পানি এবং জলীয়বাষ্পের রাসায়নিক সংকেত H_2O । প্রত্যেকটি উপাদানে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের শতকরা সংযুতি অভিন্ন। পদার্থের এই পরিবর্তনকে ভৌত পরিবর্তন বলে ।


দহন বিক্রিয়া

কোনো মৌলকে বা যৌগকে বায়ুর অক্সিজেনের উপস্থিতিতে পুড়িয়ে তার উপাদান মৌলের অক্সাইডে পরিণত করার প্রক্রিয়াকে দহন বিক্রিয়া বলে। দহন বিক্রিয়ায় সাধারণত তাপ উৎপন্ন হয়। মিথেন গ্যাস বা প্রাকৃতিক গ্যাসকে পুড়িয়ে বা দহন করে যে তাপ পাওয়া যায় তা রান্নাসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হয় (সনাতন পদ্ধতিতে কোনো যৌগের সাথে অক্সিজেন বা ঋণাত্মক অংশের সংযোগকে জারণ বলা হয়) ।


মোম

মোমের প্রধান উপাদান বিভিন্ন হাইড্রোকার্বনের মিশ্রণ। মোম জ্বালালে তার কিছু অংশ শুধু ভৌত পরিবর্তনের মাধ্যমে গলে কঠিন অবস্থা থেকে তরল অবস্থায় রূপান্তরিত হয় এবং ঠাণ্ডা হয়ে পুনরায় কঠিন অবস্থায় পরিণত হয়। একইসাথে মোমের কিছু অংশ অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে কার্বন-ডাই:-অক্সাইড ও জলীয়বাষ্প উৎপন্ন করে। অর্থাৎ মোম জ্বালানোর সময় ভৌত পরিবর্তন এবং রাসায়নিক বিক্রিয়া উভয় পরিবর্তন সংঘটিত হয়। মোমকে জ্বালালে হাইড্রোকার্বনের কার্বন ও হাইড্রোজেন বায়ুর অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও জলীয়বাষ্প উৎপন্ন করে। মোম জ্বালালে যেহেতু নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয় তাই এই পরিবর্তন একটি রাসায়নিক পরিবর্তন বা রাসায়নিক বিক্রিয়া। রাসায়নিক পরিবর্তনে পদার্থের পরমাণুসমূহের মধ্যবর্তী বন্ধন ভেঙে নতুন বন্ধন গঠিত হয়। পরমাণুসমূহের মধ্যবর্তী বন্ধন ভাঙা ও নতুন বন্ধন গঠিত হওয়ায় তাপশক্তির পরিবর্তন হয়।
রাসায়নিক বিক্রিয়াটি নিম্নরূপ :

C_xH_y ;+ (frac{x+y}{2})O_2;
ightarrow ; xCO_2 + yH_2O + energy

একমুখী বিক্রিয়া

একমুখী বিক্রিয়ায় শুধুমাত্র বিক্রিয়ক পদার্থ বা পদার্থসমূহ উৎপন্ন পদার্থে পরিণত হয়। বিক্রিয়ায় উৎপন্ন একাধিক উৎপাদের মধ্যে যে কোনো একটি উৎপাদকে বিক্রিয়া মাধ্যম থেকে অপসারণ করা হলে উৎপন্ন পদার্থসমূহ বিক্রিয়া করে বিক্রিয়কে পরিণত হতে পারে না। একমুখী বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে বিক্রিয়ক ও উৎপাদের মধ্যে একমুখী তীর চিহ্ন (→ ) ব্যবহার করে বিক্রিয়ার সমীকরণ উপস্থাপন করা হয়।

চুনাপাথর (ক্যালসিয়াম কার্বনেট; CaCO_3 ) কে উচ্চতাপে উত্তপ্ত করলে চুনাপাথর বিযোজিত হয়ে চুন (ক্যালসিয়াম অক্সাইড; CaO ) ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে। খোলা পাত্রে সংঘটিত এই বিক্রিয়া একমুখী হয়।


বিক্রিয়ায় উৎপন্ন পদার্থ কঠিন ক্যালসিয়াম অক্সাইড ও গ্যাসীয় কার্বন-ডাই-অক্সাইড। খোলা পাত্রে এই বিক্রিয়া সম্পন্ন করা হলে গ্যাসীয় উৎপাদ কার্বন-ডাই-অক্সাইড বিক্রিয়াপাত্র থেকে অপসারিত হয়। ফলে ক্যালসিয়াম অক্সাইড (CaO) ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড বিক্রিয়া করে ক্যালসিয়াম কার্বনেট (CaCO_3 ) উৎপন্ন করতে পারে না; অর্থাৎ বিপরীত বিক্রিয়া সম্পন্ন করে না।

উভমুখী বিক্রিয়া

উভমুখী বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক পদার্থসমূহ বিক্রিয়া করে উৎপাদে পরিণত হয়, একইসাথে উৎপন্ন পদার্থসমূহ বিক্রিয়া করে পুনরায় বিক্রিয়কে পরিণত হয়। উভমূখী বিক্রিয়ায় একইসাথে দুটি বিক্রিয়া চলমান থাকে। একটি বিক্রিয়ায় বিক্রিয়কসমূহ বিক্রিয়া করে উৎপাদে পরিণত হয়। একে সম্মুখমুখী বিক্রিয়া বলে। অপরটি বিক্রিয়ায় উৎপন্ন পদার্থসমূহ বিক্রিয়া করে বিক্রিয়কে পরিণত হয়। একে বিপরীতমুখী বিক্রিয়া বলে ।বিপরীতমুখী বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে মূল বিক্রিয়ায় উৎপন্ন পদার্থ বিক্রিয়ক হিসেবে ক্রিয়া করে। উভমুখী বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে বিক্রিয়ক ও উৎপাদের মধ্যে উভমুখী তীর চিহ্ন ( \rightleftharpoons ) ব্যবহার করে বিক্রিয়ার সমীকরণ উপস্থাপন করা হয়।

অজৈব এসিডের ( H^+ ) উপস্থিতিতে ইথানল ও জৈব এসিড বিক্রিয়া করে এস্টার উৎপন্ন করে। এটি একটি উভমুখী বিক্রিয়া। এই বিক্রিয়ার উৎপন্ন এস্টার ভেঙে ইথানল ও জৈব এসিডে পরিণত হয়।

\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;\;O\\CH_3CH_2OH\; +CH_3COOH \;\;\overset{H^+}{\rightleftharpoons }CH_3CH-O-\overset{\parallel }{C}-CH_3

জারণ সংখ্যা

যৌগ গঠনের সময় কোনো মৌল যত সংখ্যক ইলেকট্রন বর্জন করে ধনাত্মক আয়ন উৎপন্ন করে অথবা যত সংখ্যক ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আয়ন উৎপন্ন করে তাকে মৌলের জারণ সংখ্যা বলে। নিরপেক্ষ বা মুক্ত মৌলের জারণ সংখ্যা শূন্য (০) ধরা হয়। ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আয়নে পরিণত হলে মৌলের জারণ সংখ্যাকে ঋণাত্মক জারণ সংখ্যা এবং ইলেকট্রন বর্জন করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হলে মৌলের
জারণ সংখ্যাকে ধনাত্মক জারণ সংখ্যা বলে। ধাতুসমূহের জারণ সংখ্যা সাধারণত ধনাত্মক, অধাতুসমূহের জারণ সংখ্যা ঋণাত্মক এবং যৌগমূলকের জারণ সংখ্যা তাদের আধান অনুসারে হয়।

জারক ও বিজারক

জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ার সময় সাধারণত একটি বিক্রিয়ক ইলেকট্রন গ্রহণ করে এবং অপর বিক্রিয়ক ইলেকট্রন বর্জন করে। যে বিক্রিয়ক ইলেকট্রন গ্রহণ করে তাকে জারক (Oxidant) এবং যে বিক্রিয়ক ইলেকট্রন বর্জন করে তাকে বিজারক (Reductant) বলে। ধাতব জিংক (দস্তা) কপার সালফেটের সাথে বিক্রিয়া করে জিংক সালফেট ও কপার ধাতু উৎপন্ন হয়। এটি একটি জারণ-বিজারণ বিক্রিয়া। জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ার দুটি অংশ- জারণ ও বিজারণ।

Zn + CuSO_4 \rightarrow ZnSO_4+ Cu

বিক্রিয়ার আয়নিক রূপ :

Zn + Cu^2^+ \rightarrow Zn^2^+ + Cu

 

জারণ ও বিজারণ

জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ার সময় বিক্রিয়ক থেকে ইলেকট্রন বর্জন বা অপসারণ প্রক্রিয়াকে জারণ বলে। উপরের বিক্রিয়ায় বিক্রিয়কে Zn -এর জারণ সংখ্যা শূন্য (০) এবং উৎপাদ ZnSO_4 এ Zn -এর জারণ সংখ্যা +২। অর্থাৎ বিক্রিয়ায় Zn দুটি ইলেকট্রন অপসারণ করে জারিত হয় এবং ZnSO_4 -এ পরিণত হয়। বিক্রিয়ার জারণ অংশকে নিম্নের সমীকরণের সাহায্যে উপস্থাপন করা হয়।

Zn - 2e^- \rightarrow Zn^2^+

জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ার সময় বিক্রিয়ক কর্তৃক ইলেকট্রন গ্রহণ প্রক্রিয়াকে বিজারণ বলে। উপরের বিক্রিয়ায় বিক্রিয়ক CuSO_4 এ Cu -এর জারণ সংখ্যা +২ এবং উৎপাদে Cu -এর জারণ সংখ্যা শূন্য
(০)। অর্থাৎ বিক্রিয়ায় CuSO_4 দুটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে বিজারিত হয় এবং Cu -এ পরিণত হয়। বিক্রিয়ার বিজারণ অংশকে নিম্নের সমীকরণের সাহায্যে উপস্থাপন করা হয়।

Cu^2^+ + 2e^- \rightarrow Cu

প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া

কোনো যৌগের একটি মৌল বা যৌগমূলককে অপর কোনো মৌল বা যৌগমূলক দ্বারা প্রতিস্থাপন করে নতুন যৌগ উৎপন্ন করার প্রক্রিয়ার নাম প্রতিস্থাপন বিক্রিয়া। সাধারণত অধিক সক্রিয় মৌল বা মূলক দ্বারা কম সক্রিয় মৌল বা মূলক প্রতিস্থাপিত হয়। জিংক সালফিউরিক এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে জিংক সালফেট ও হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে । বিক্রিয়ায় অধিক সক্রিয় জিংক ধাতু কম সক্রিয় হাইড্রোজেনকে প্রতিস্থাপন করে (সক্রিয়তার তুলনার জন্য খনিজসম্পদ(ধাতু/অধাতু) অধ্যায় দেখ )।

H_2SO_4 + Zn \rightarrow ZnSO_4 + H_2

বিযোজন বিক্রিয়া

কোনো যৌগকে ভেঙ্গে একাধিক যৌগ বা মৌলে পরিণত করার প্রক্রিয়ার নাম বিযোজন বিক্রিয়া। ফসফরাস পেন্টাক্লোরাইডকে তাপে উত্তপ্ত করলে ফসফরাস ট্রাইক্লোরাইড ও ক্লোরিন উৎপন্ন হয়। এটি একটি উভমুখী বিক্রিয়া (সনাতন পদ্ধতিতে কোনো যৌগ থেকে ক্লোরিন বা ঋণাত্মক অংশের অপসারণকে বিজারণ বলা হয়)।

PCl_5 \overset{\Delta}{\rightarrow} PCl_3 + Cl_2

টলেন বিকারক

ক্ষারীয় সিলভার নাইট্রেট দ্রবণকে টলেন বিকারক বলে। টলেন বিকারক জলীয় দ্রবণে অ্যালডিহাইড শ্রেণির
জৈব যৌগের সাথে বিক্রিয়া করে কঠিন ধাতব সিলভার অধঃক্ষেপ হিসেবে বিক্রিয়াপাত্রের তলদেশে জমা হয়। এই বিক্রিয়ায় সিলভার নাইট্রেটের সিলভার আয়ন (Ag^+) একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে বিজারিত হয় এবং ধাতব সিলভার হিসেবে অধঃক্ষিপ্ত হয়।

সমাণুকরণ বিক্রিয়া

ইথানল ও ডাইমিথাইল ইথারের আনবিক সংকেত অভিন্ন কিন্তু তাদের ধর্ম ভিন্ন । ইথানল ও ডাইমিথাইল ইথার পরস্পরের সমানু । কোন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় যৌগের পরমাণুসমূ্হের পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে একটি সমানু থেকে অপর একটি সমানু উৎপন্ন হলে তাকে সমানুকরণ বিক্রিয়া বলে । এই বিক্রিয়ায় একই অণুর মধ্যে পরমাণুসমূহ পূনর্বিন্যস্ত হয়, তাই এখানে ইলেকট্রনের স্থানান্তর সম্ভব নয় ।

আ্যমোনিয়াম সায়ানেট ও ইউরিয়া পরস্পরের সমানু । আ্যমোনিয়াম সায়ানেটকে উত্তপ্ত করলে তার সমানু ইউরিয়া উৎপন্ন হয় ।

NH_4CNO \rightarrow NH_2-CO-NH_2

পানিযোজন বিক্রিয়া

আয়নিক যৌগ কেলাস (Crystal lattice) গঠনের সময় এক বা একাধিক সংখ্যক পানির অণুর সাথে যুক্ত হয়। এই বিক্রিয়াকে পানিযোজন (hydration) বিক্রিয়া বলে। আয়নিক যৌগের সাথে যুক্ত পানিকে কেলাস পানি বা হাইড্রেটেড পানি বলে।

CaCl_2 + 6H_2 O\rightarrow CaCl_2 . 6H_2 O

চাপের প্রভাব

গ্যাসীয় বিক্রিয়ায় সাম্যবস্থায় চাপ পরিবর্তন করলে বিক্রিয়ার সাম্যবস্থার পরিবর্তন হয় । যে সকল বিক্রিয়াব গ্যাসীয় অণুর সংখ্যা পরিবর্তন হয় (হ্রাস/বৃদ্ধি) হয় সে সকল বিক্রিয়ার সাম্যবস্থার উপর চাপের প্রভাব রয়েছে । যেমন,


বিক্রিয়াটি সম্মুখমুখী হলে অণুর সংখ্যা হ্রাস পায় । ফলে একই আয়তনে চাপ হ্রাস পায় । বিক্রিয়ার সাম্যবস্থায় চাপ বৃদ্ধি করলে সাম্যবস্থা ডান দিকে অগ্রসর হয় । অর্থ্যাৎ সম্মুখমুখী বিক্রিয়া বৃদ্ধির মাধ্যমে চাপ হ্রাস করবে এবং চাপ বৃদ্ধিজনিত ফলাফল প্রশমিত করবে । বিক্রিয়ার সাম্যবস্থায় চাপ হ্রাস করলে সাম্যবস্থা বাম দিকে অগ্রসর হয়ে বিক্রিয়কের পরিমাণ বৃদ্ধি করবে । যে সকল বিক্রিয়ায় গ্যাসীয় অণুর সংখ্যার পরিবর্তন হয় না সে সকল বিক্রিয়ার সাম্যবস্থার উপর চাপের প্রভাব নেই । 

সাম্যবস্থা

উভমুখী বিক্রিয়ার প্রাথমিক অবস্থায় বিক্রিয়কসমূহ উৎপাদে পরিণত হয় । কিছু সময় পর যখন উৎপাদের পরিমাণ বা ঘনমাত্রা বৃদ্ধি পায় তখন উৎপাদসমূহ বিক্রিয়কে পরিণত হওয়া শুরু করে । প্রাথমিক অবস্থায় বিক্রিয়কের ঘনমাত্রা বেশি থাকে, তাই সম্মুখমুখী বিক্রিয়ার হার বা গতিবেগ বেশি থাকে । সময়ের সাথে বিক্রিয়কের পরিমান হ্রাস পায়, সম্মুখমুখী বিক্রিয়ার হার হ্রাস পেতে থাকে এবং উৎপাদের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে বিপরীত বিক্রিয়ার হার বৃদ্ধি পেতে থাকে । পরিবর্তনের এক সময় উভয় বিক্রিয়ার হার সমান হয় । এই অবস্থায় বিক্রিয়ক এবং উৎপাদের পরিমাণ বা ঘনমাত্রার কোন পরিবর্তন হয় না । বিক্রিয়ার এই অবস্থাকে উভমুখী বিক্রিয়ার সাম্যবস্থা বলে ।  

জ্বালানি

জ্বালানির দহনে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, পানি ও তাপশক্তি উৎপন্ন হয় । তবে অক্সিজেনের সরবরা্হ কম হলে জ্বালানির আংশিক দহনে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর পরিবর্তে কার্বন-মনো-অক্সাইড/কার্বন এবং তাপ উৎপন্ন হয় ।


তাপউৎপাদী বিক্রিয়া

বিক্রিয়ক থেকে উৎপাদ উৎপন্ন হওয়ার সময় তাপশক্তি উৎপন্ন হলে তাকে তাপউৎপাদী বিক্রিয়া বলে। তাপউৎপাদী বিক্রিয়ায় বিক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার সাথে বিক্রিয়া পাত্র ও বিক্রিয়া-দ্রবণ গরম হতে থাকে। এই বিক্রিয়ায় উৎপন্ন তাপকে উৎপাদের সাথে যোগ দিয়ে অথবা ΔH হিসেবে প্রকাশ করা হয়। তাপউৎপাদী বিক্রিয়ায় ΔH -এর মান ঋণাত্মক হয়।

তাপহারী বিক্রিয়া

বিক্রিয়ক থেকে উৎপাদ উৎপন্ন হওয়ার সময় তাপশক্তি শোষিত হলে তাকে তাপহারী বিক্রিয়া বলে। তাপহারী বিক্রিয়ায় বিক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার সাথে বিক্রিয়াপাত্র ও বিক্রিয়া-দ্রবণ শীতল বা ঠাণ্ডা হতে থাকে। এই বিক্রিয়ায় শোষিত তাপকে উৎপাদের সাথে বিয়োগ দিয়ে বা বিক্রিয়কের সাথে যোগ দিয়ে অথবা ΔH হিসেবে প্রকাশ করা হয়। তাপহারী বিক্রিয়ায় ΔH এর মান ধনাত্মক হয়।

পলিমারকরণ বিক্রিয়া

উচ্চ তাপ ও চাপের প্রভাবে একই যৌগের অসংখ্য অনু পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে বৃ্হৎ আণবিক ভরবিশিষ্ট নতুন যৌগের অণু গঠন করে । যে সকল ক্ষুদ্র অণু যুক্ত হয় তাদের প্রত্যেককে মনোমার এবং যে বৃ্হৎ নতুন অণু উৎপন্ন হয় তাকে পলিমার বলে । যে বিক্রিয়ায় অসংখ্য মনোমার থেকে পলিমার উৎপন্ন হয় তাকে পলিমারকরণ বিক্রিয়া বলে । উচ্চ তাপ ও চাপের প্রভাবে ভিনাইল ক্লোরাইড অসংখ্য অণু পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে বৃ্হৎ আণবিক ভরবিশিষ্ট নতুন যৌগ পলিভিনাইল ক্লোরাইড(PVC) গঠন করে ।

nH_2C = CHCl \xrightarrow{high\;temperature\; and\; pressure} (-CH_2-CHCl-)_n

0 comments:

Post a Comment